Read A Cup of Tea by Ruksana Khatun in Bengali Short Stories | মাতরুবার্তি

Featured Books
বিভাগ
শেয়ারড

এক কাপ চা

নিউইয়র্কের এক বহুতল আবাসনের কক্ষে কাঁচের দেওয়ালের সামনে দাঁড়িয়ে ব্যস্ত রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে স্নেহা।কলকাতার এক সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে ও,জীবনে ঘুরতে যাওয়া বলতে বাঙালির ‘দী-পু-দা’ আর আশেপাশের কিছু এলাকা।পশ্চিমবঙ্গ ছেড়ে কখনো বাইরে যাওয়ার কথা যে কখনো ভাবেনি,সে কিনা আজ মহাদেশের গন্ডি ছাড়িয়ে কলকাতা থেকে বহুদূরে ভিন্ন দেশে ,ভাবা যায়! তবে এসবই ওর বর ঋষভ-এর কৃতিত্ব।

গতকালই ওর বিয়ে হয়েছে কলকাতায়,আর আজই ও এখানে।ঋষভ একজন জনপ্রিয় নিউরোসার্জন। এখানকার একটি হাসপাতালে ও প্র্যাকটিস করে। এই বিয়েতে স্নেহার একটুও মত ছিলোনা। প্রবাসী জীবন ওর চিরকালের অপছন্দের।তাছাড়া ঋষভকে ও সেভাবে চেনেনা, বিয়ের আগে মাত্র দুবার দেখা হয়েছিল, এরকম একটা অপরিচিত ছেলেকে বিয়ে করতে ওর মন কখোনোই সায় দেয়নি। 

আজকে ওর মনটা আরো বেশি খারাপ। নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে করায় মনতো খারাপ ছিলোই, তার উপর ছিলো বাবা-মা কে ছেড়ে শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার কষ্ট, পাশাপাশি গোদের উপর বিষফোঁড়ার 
মতো ঋষভ বললো একটা ইমার্জেন্সি কারণে ওকে সমস্ত ছুটি ভুলে সেদিনই কাজে ফিরতে হবে।

শীতপ্রধান দেশ আমেরিকায় গ্রীষ্ম খুবই স্বল্পকালীন। বছরের বহু সময়ই তুষারপাত হয়। এখন রাত দশটা, বাইরে কুয়াশার আস্তরণ জমা শুরু হয়েছে। ঋষভ এখনও ফেরেনি। সেই যে সকালে ওকে ফ্ল্যাটে পৌঁছে দিয়ে বেরিয়েছে তারপর, একবার খোঁজ ও নেয়নি। নতুন জায়গায় ও ঠিকঠাক আছে কিনা, খেয়েছে কিনা এসব নিয়ে ওর যেনো কোনো হুঁশই নেই। 

ঋষভ কে নিয়ে মনের মধ্যে বিরূপ ভাব ক্রমশ বেড়েই চলেছে। হিসাব মতো আজ ওদের ফুলশয্যা, কিন্তু স্বামী নামক প্রাণীটির সাথে এখনও অবধি দুটো কথা হয়নি, এমনকি সে রাতে ফিরবে কিনা তাও জানেনা স্নেহা। ওর মনে পড়ে যাচ্ছে প্রবাসীদের জীবন নিয়ে পড়া গল্পগুলো, যেখানে দেশের মেয়েদের বিয়ে করে এনে পুরুষরা অবহেলা করে, তাদের ঠকায়।

দরজা ঠকঠকানির আওয়াজে সেদিকে ফিরে তাকায় স্নেহা। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে ঋষভ। বাইরের পোশাক ছেড়ে বাড়ি পড়া পোশাক পরিধান করা আছে ও।তারমানে বেশ কিছুক্ষণ আগেই ও ফিরে এসেছে।

"আসতে পারি? " জিজ্ঞাসা করলো ঋষভ।

অভিমানে ওর দিকে না তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলো স্নেহা, কিছু বললো না। উত্তরের অপেক্ষায় না থেকে ভিতরে প্রবেশ করলো ও। মোবাইলটা চার্জে দিয়ে আবার বেরিয়ে গেলো ঋষভ, একটি কথাও না বলে। 

ঋষভ বেরিয়ে যাওয়ার সময় মুখ তুলে চাইলো স্নেহা, অভিমানে, কষ্টে ওর দুচোখ ফেটে জল বেরিয়ে আসতে চাইলো। মনের দুঃখে, এই তীব্র ঠান্ডার মধ্যেও ও ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়ালো। 

কিছুক্ষণ পর হালকা কাশির আওয়াজে ও বুঝলো ঋষভ এসেছে। ঘুরে না তাকিয়ে বললো,"কিছু বলবেন? "

স্নেহার পাশে এসে দাঁড়ালো ঋষভ। "তোমাকে কিছু বলার ছিলো। "

"বলুন। "

"আমাকে কি খুব খারাপ দেখতে? "

ভ্রু কুঁচকে ঘুরে দাঁড়ালো স্নেহা। ঋষভ বললো, "না মানে অন্য দিকে তাকিয়ে ছিলে তো তাই ভাবছিলাম আমাকে বোধহয় খুব খারাপ দেখতে। "

শান্ত স্বরে স্নেহা বললো, "কিছু বলবেন বলছিলেন..."

স্নেহার দিকে একটা কফি কাপ এগিয়ে দিয়ে ঋষভ বললো, "টেক ইটস। "

"স্যরি, আই ডোন্ট লাইক কফি। "

"ইটস টি। "

প্রত্যুত্তরে কিছু বললো না স্নেহা। কয়েক মুহূর্ত চুপ থেকে ঋষভ বললো, "আমি জানি, তুমি আমাকে মেনে নিতে পারোনি। সত্যি বলতে আমিও যে তোমাকে অ্যাক্সেপ্ট করতে পেরেছি, তা নয়। তবে আমি চাই আমাদের সম্পর্কটা স্বাভাবিক হোক। আর প্রতিটা সম্পর্কের সূচনা তো হয় ফ্রেন্ডশিপ থেকেই। তাই আমরা হাজব্যান্ড-ওয়াইফ না হোক, একে অপরের বন্ধু হয়ে তো থাকতেই পারি তাইনা? "

ঋষভের দিকে চোখ তুলে তাকালো স্নেহা, কিন্তু কী বলবে ভেবে পেলোনা। ওকে চুপ থাকতে দেখে ঋষভ আবার বললো, "আমি রাগী, কাজ পাগল একজন মানুষ। যে কাজ পেলে সবকিছু ভুলে যায়। তবুও কাজ শেষে বাড়ি ফিরে তোমার রাগের কারণ হতে চাই, দেবে সেই অধিকার? "

চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো স্নেহা। "চা টা আপনি বানিয়েছেন? "

"হ্যাঁ, মানে.... "

"যদি প্রতিবার এমন চা বানিয়ে রাগ ভাঙাতে রাজী থাকেন তবে প্রতি কাপ চায়ে শুধু তোমাকেই চাই। "

"তবে তাই হোক... "বলে স্নেহার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো ঋষভ। হাতের উপর হাত দিয়ে ওর দিকে তাকালো স্নেহা। হেসে উঠলো দুজনেই। ঋষভ ইউটিউবে গান চালিয়ে দিলো, " এক কাপ চায়ে শুধু তোমাকেই চাই.... "
                 --------সমাপ্ত-------

#এই অ্যাপে আমি সম্পূর্ণ নতুন এসেছি, যদি পাঠক বন্ধুদের সাপোর্ট না পায়, তাহলে হয়তো কিছুদিনের মধ্যেই অ্যাপ ছেড়ে চলে যাবো। তাই, পাঠক বন্ধুদের কাছে আমার অনুরোধ, যদি আমার লেখা ভালো লাগে, তাহলে আমার লেখায় রেটিং-রিভিউ দিয়ে পাশে থাকবেন প্লিজ!