Featured Books
বিভাগ
শেয়ারড

হরিচাঁদের আশীর্বাদ - 3


           ✨ তৃতীয় অধ্যায় : স্নান ও জাগরণ

বারুণীর ডাক

ফাল্গুন মাস। হাওয়ায় কাশফুলের গন্ধ, মাঠে পাকা ধানের সুবাস ভাসছে। গ্রামের ঠাকুরবাড়ি থেকে ঢাক-করতালের শব্দ আসছে।
সবার মুখে একটাই কথা—
“বারুণীর স্নান আসছে।”
মতুয়া সমাজের কাছে এই স্নান শুধু জলস্নান নয়, এটি আত্মার পরিশুদ্ধি, ঐক্যের প্রতীক, ভক্তির উৎসব।
গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে মানুষ জড়ো হচ্ছে। পুরুষরা সাদা ধুতি পরে এসেছে, মহিলাদের গায়ে লাল পাড় সাদা শাড়ি। শিশুদের কোলাহলে চারদিক ভরে উঠেছে।
কৃষ্ণপদ মায়ের হাত ধরে ভিড়ের দিকে এগোল। সে প্রথমবার এই বিশাল উৎসব দেখতে যাচ্ছে।

নদীর ধারে জনসমাগম

কালো কাদামাটির পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে কৃষ্ণপদ দেখল—নদীর ধারে যেন মেলা বসেছে।
শত শত মানুষ গঙ্গাজল নিতে এসেছে, কেউ আবার প্রদীপ জ্বালাচ্ছে। চারদিকে ধূপ-ধুনোর গন্ধ।
বৃদ্ধ ভক্তরা উচ্চারণ করছে—
“হরিবোল… জয় হরিচাঁদ… জয় গুরুচাঁদ…”
কৃষ্ণপদর চোখ বিস্ময়ে ভরে গেল। এতদিন শুধু ঠাকুরবাড়িতে সামান্য ভক্তি-আসরে গিয়েছে, কিন্তু আজকের এই দৃশ্য তার মনে এক অন্যরকম আলো জাগাল।

ঠাকুরবাড়ির মহাত্মা

নদীর ধারে এক মঞ্চে দাঁড়িয়ে আছেন এক মহাত্মা—ঠাকুরবাড়ির গুরু।
গভীর কণ্ঠে তিনি বলছেন—
“ভাই-বোনেরা, আজকের এই বারুণী স্নান কোনো আচার মাত্র নয়। এটি আমাদের জাগরণের পথ।
জল যেমন মাটি পরিষ্কার করে, তেমনি ভক্তি আমাদের মনের অন্ধকার মুছে দেয়।”
ভিড় থেকে সবাই একসাথে সাড়া দিল—
“জয় হরিচাঁদ!”
কৃষ্ণপদর বুকের ভেতরে কাঁপন ধরল। মনে হলো, এই ডাক যেন তাকে নতুন করে জাগিয়ে তুলছে।

কৃষ্ণপদের অনুভূতি

স্নানের আগে সে নদীর ধারে দাঁড়িয়ে নদীর ঢেউয়ের শব্দ শুনছিল।
তার মনে হচ্ছিল—
“এতোদিন যা কষ্ট দেখেছি, আজ স্নান করে আমি নতুন মানুষ হব।”
সে চোখ বন্ধ করে কল্পনা করল, জল যেন তার সব দুঃখ মুছে ফেলবে।
বৈষম্যের দাগ, অপমানের ক্ষত, সমাজের অবহেলা—সব ধুয়ে যাবে।

ভোরের আলো

অধীর প্রতীক্ষার রাত শেষ হলো। ভোরের আকাশে তখন হালকা আভা ফুটেছে। মাটিতে এখনও শিশির ভিজে। দূরে শালিকের ডাক, বাঁশবাগানের পাতায় বাতাসের মৃদু শব্দ।
গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে আগুন জ্বলে উঠেছে, হাঁড়িতে চা ফুটছে, মহিলারা পরপর কলসিতে জল ভরছেন।
কৃষ্ণপদ ছোট্ট ঝোলা কাঁধে নিয়ে প্রস্তুত। ভেতরে রাখা আছে প্রসাদ—গুড়-মুড়ি, নারকেল, কিছু লুচি। মা তাকে বারবার বুঝিয়ে দিচ্ছেন—
“ভিড়ের মধ্যে হাত ছাড়িস না, বাবা।”

মিছিলের সূচনা

সূর্য ওঠার আগেই গ্রামময় ঢাকের শব্দ বেজে উঠল। সবাই বুঝল, এবার রওনা দেওয়ার সময়।
গ্রাম থেকে লম্বা মিছিল বের হলো। সামনে ছেলেরা হাতে তুলেছে রঙিন পতাকা, মাঝখানে মহিলারা ফুলে ভরা ঝুড়ি নিয়ে হাঁটছেন, আর পেছনে চলছে ঢোল-করতালের আসর।
ঢোলের তালে, করতালের ঝঙ্কারে, গলা ছেড়ে সবাই একসাথে গাইতে লাগল—
“হরিবোল… জয় হরিচাঁদ… জয় গুরুচাঁদ…”

কৃষ্ণপদের ভেতরের আবেগ

কৃষ্ণপদ এই দৃশ্য দেখে চোখ বড় করে তাকিয়ে রইল। এত মানুষ, এত আওয়াজ, এত উৎসাহ—এ যেন অন্য জগৎ।
সে ভাবছিল—
“আমি তো ভেবেছিলাম আমরা ছোট, অবহেলিত। কিন্তু আজ দেখছি আমরা কত শক্তিশালী! আমাদের কণ্ঠস্বর আকাশ ছুঁয়ে যাচ্ছে।”
তার বুক ধকধক করছিল। মনে হচ্ছিল, সে এই মিছিলেরই একজন যোদ্ধা।

গ্রামের বাইরে পথচলা

মিছিল যখন গ্রামের সীমানা ছাড়িয়ে কাঁচা রাস্তা ধরে এগোল, তখন পথের দুই পাশে দাঁড়িয়ে গেল মানুষজন। কারও হাতে প্রদীপ, কারও হাতে খেজুরগুড়ের মোয়া। সবাই ভক্তদের জল-প্রসাদ দিয়ে আশীর্বাদ করছিল।
কৃষ্ণপদ দেখল, দূরের গ্রাম থেকেও মানুষ এই মিছিলে যোগ দিচ্ছে। কারও গলায় করতাল, কারও হাতে বাঁশি, কারও হাতে ছোট ঢোল।

ভক্তির স্রোত

মিছিলের ভেতরে কোথাও বয়স্করা মন্ত্র জপ করছেন, কোথাও মহিলারা পদাবলি গাইছেন, আবার কোথাও শিশুরা দৌড়ঝাঁপ করছে।
একটা সময় মনে হলো, এই মিছিল শুধু মানুষের নয়, এ এক ভক্তির স্রোত, যা নদীর মতো একত্রিত হয়ে গঙ্গার দিকে ছুটে চলেছে।

কৃষ্ণপদর উপলব্ধি

হেঁটে হেঁটে কৃষ্ণপদ হঠাৎ থেমে গেল। আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবল—
“এ কি শুধু স্নান? না, এর মধ্যে আছে এক নতুন শক্তি, যা আমাদের বাঁধন ভাঙতে শিখাচ্ছে। এই যাত্রা শুধু গঙ্গার দিকে নয়, আমাদের মুক্তির দিকে।”
তার চোখে তখন আনন্দ আর দৃঢ়তার মিশ্র জল।

গঙ্গার ঘাটে পৌঁছনো

মিছিল কয়েক ঘণ্টার পথ অতিক্রম করে পৌঁছল গঙ্গার ঘাটে। ভোরের আকাশে তখন সূর্য উঠতে শুরু করেছে, লাল আভা পুরো আকাশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। গঙ্গার জল ঝলমল করছে, ঢেউগুলো যেন ভক্তদের আহ্বান করছে।
দূর থেকে ভেসে আসছে শঙ্খের ধ্বনি, ঘাটে হাজার হাজার মানুষ ভিড় জমিয়েছে। সবার মুখে একটাই স্লোগান—
“হরিবোল… জয় হরিচাঁদ… জয় গুরুচাঁদ…”
কৃষ্ণপদ চোখ বড় করে তাকিয়ে রইল। এত মানুষ, এত উচ্ছ্বাস, এত ভক্তি—এ যেন সে স্বপ্ন দেখছে।

মায়ের হাত ধরে

মা কৃষ্ণপদের হাত শক্ত করে ধরলেন। তিনি বললেন—
“চল, বাবা। আজকের দিনটাই তো আমাদের আত্মার দিন। গঙ্গার জলে নামলেই শুধু শরীর শুদ্ধ হয় না, মনও শুদ্ধ হয়।”
কৃষ্ণপদ মায়ের হাত আঁকড়ে ধরে ভিড়ের সঙ্গে এগোতে লাগল। ঠান্ডা বাতাস, ঢোল-করতালের শব্দ আর মানুষের কণ্ঠস্বর তার অন্তরকে শিহরিত করছিল।

গঙ্গায় নামার মুহূর্ত

ঘাটে পৌঁছে কৃষ্ণপদ মায়ের সঙ্গে গঙ্গার জলে নামল। প্রথমেই পায়ে ঠান্ডা ঢেউ আছড়ে পড়ল। সারা শরীরে কাঁপন ধরল।
মা দু’হাত জোড় করে জলে ডুব দিলেন। কৃষ্ণপদও মায়ের মতো চোখ বন্ধ করে ডুব দিল।
মুহূর্তের মধ্যেই সে অনুভব করল—
“আমার সমস্ত দুঃখ, সমস্ত অবহেলা, সমস্ত লজ্জা এই জলের সঙ্গে ভেসে যাচ্ছে।”
যেন তার ভিতর থেকে এক নতুন আলো জন্ম নিচ্ছে।

স্নানের তাৎপর্য

পাশেই একজন বৃদ্ধ ভক্ত উচ্চস্বরে বলছিলেন—
“এই স্নান মানে শুধু শরীর ধোয়া নয়। এর মানে হলো—অহংকার, অপমান, দুঃখ—সব ধুয়ে ফেলে নতুন মানুষ হয়ে ওঠা।”
কৃষ্ণপদ শুনে মনে মনে বলল—
“হ্যাঁ, আজ থেকে আমি নতুন হব। আমি আর সেই অপমানিত কৃষ্ণপদ নই, আমি হব শক্তিশালী কৃষ্ণপদ।”

ভক্তদের আনন্দ

স্নানের পর সবাই ঘাটে বসে নামসংকীর্তন শুরু করল। ঢোল, করতাল, খোলের তালে ভেসে আসছিল গান—
“হরিবোল… জয় হরিচাঁদ… জয় গুরুচাঁদ…”
মহিলারা গঙ্গাজল দিয়ে মাথা ধুইয়ে নিচ্ছেন, কেউ ফুল ভাসাচ্ছেন, কেউ ছোট প্রদীপ জ্বালিয়ে গঙ্গার জলে ছেড়ে দিচ্ছেন।
ঘাট জুড়ে আলো, ভক্তি আর আনন্দের স্রোত।

কৃষ্ণপদের আত্মিক জাগরণ

স্নান শেষে কৃষ্ণপদ একটু দূরে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকাল। ভোরের সূর্য ধীরে ধীরে ওপরে উঠছে। তার মনে হলো, এই সূর্যের মতোই তার ভেতরে এক নতুন আলো জেগে উঠছে।
সে ভাবল—
“আজ থেকে আমি সমাজের অবহেলা নিয়ে ভয় পাব না। আমি শিক্ষিত হব, মানুষের পাশে দাঁড়াব। এই স্নান আমাকে নতুন জীবন দিল।”
তার চোখে তখন জল, কিন্তু সেটা দুঃখের জল নয়, আনন্দ আর দৃঢ়তার জল।

মহাজাগরণের বাণী


কীর্তনের ঢেউ

গঙ্গাস্নান শেষে ভক্তরা দল বেঁধে মেলার মাঠের দিকে এগোল। দূর থেকেই শোনা যাচ্ছিল খোল-করতালের শব্দ, শঙ্খধ্বনি আর ভক্তদের সমবেত কণ্ঠ—
“হরিবোল… জয় হরিচাঁদ… জয় গুরুচাঁদ…”
চারদিকে ঢোলের তালে গাওয়া হচ্ছিল ‘হরিলুট’, যেখানে সবাই মিলে নাচছে, গাইছে। নারী, পুরুষ, বৃদ্ধ, শিশু—সবার চোখেমুখে এক অদ্ভুত আনন্দ।
কৃষ্ণপদ ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে ছিল। সে অনুভব করছিল, এই কীর্তনের সুর যেন তার হৃদয়ের গভীরে ঢুকে যাচ্ছে।

মহাজাগরণের মঞ্চ

মেলার মাঠের কেন্দ্রে বিশাল মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। মঞ্চে বসেছেন কয়েকজন প্রবীণ আচার্য ও সমাজের গুরুজন। চারপাশে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়েছে, আকাশ যেন মানুষের গর্জনে কেঁপে উঠছে।
একজন ঘোষক মাইকে বললেন—
“ভাই ও বোনেরা, আজকের দিন আমাদের সমাজের জাগরণের দিন। আজকের দিন আমাদের আত্মপরিচয়ের দিন। চলুন, গুরুচাঁদের বাণী শ্রবণ করি।”

গুরুচাঁদের বাণী

মঞ্চে উঠে আসলেন সাদা পোশাক পরা এক প্রবীণ ভক্ত। তিনি গুরুচাঁদের বাণী পাঠ করতে শুরু করলেন—
“শিক্ষা ছাড়া মুক্তি নেই।”
“সমাজের ঐক্যই আমাদের শক্তি।”
“মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ভাঙো, সবাইকে সমান চোখে দেখো।”
ভিড় থেকে একযোগে ধ্বনি উঠল—
“জয় গুরুচাঁদ!”
কৃষ্ণপদ শিউরে উঠল। এত সহজ অথচ এত শক্তিশালী বাণী—যেন তার জীবনের অন্ধকার দূর করে দিচ্ছে।

বক্তাদের আহ্বান

এরপর কয়েকজন বক্তা একে একে সমাজের ইতিহাস ও সংগ্রামের কথা বললেন। কেউ বললেন,
“আমাদের পূর্বপুরুষরা অসম্মান সহ্য করেছেন, কিন্তু ভেঙে পড়েননি।”
কেউ বললেন,
“আজ শিক্ষা, সংগঠন আর ঐক্যের মাধ্যমে আমরা নতুন সমাজ গড়ে তুলব।”
একজন নারী বক্ত্রী উঠে বললেন—
“আমাদের মেয়েদেরও শিক্ষা চাই, কারণ শিক্ষা ছাড়া আমরা অন্ধকারেই থেকে যাব।”
এই কথায় ভিড় করতালি দিয়ে সমর্থন জানাল।

কৃষ্ণপদের উপলব্ধি

কৃষ্ণপদ মনে মনে ভাবছিল—
“এতদিন আমি ভেবেছিলাম আমরা শুধু অবহেলিত মানুষ। কিন্তু আজ বুঝলাম, আমরা আসলে শক্তি। শুধু ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, শিক্ষিত হতে হবে, তাহলেই সব বদলাবে।”
তার বুকের ভিতরে নতুন আলো জ্বলে উঠল। মনে হলো, এই কীর্তন, এই বাণী, এই স্নান—সব মিলিয়ে তার জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু হলো।

রাতের মহাজাগরণ

সন্ধ্যা নামতেই মঞ্চের চারপাশে আলো জ্বলে উঠল। কীর্তন আবার শুরু হলো, চারদিক ঢোল, খোল আর করতালের শব্দে মুখরিত। ভক্তরা সারারাত নাচতে নাচতে গান করল।
কৃষ্ণপদ মায়ের কোলের পাশে বসে চোখ বন্ধ করে সেই সুর শুনছিল। তার মনে হচ্ছিল—
“আমি আজ সত্যিই জেগে উঠেছি। এই সমাজের জাগরণের সঙ্গে আমার জাগরণও হলো।”


রাত্রির আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা ও কৃষ্ণপদের প্রতিজ্ঞা

রাতের আকাশ ও দীপশিখা

গঙ্গার ঘাট থেকে মহাজাগরণের মঞ্চে সারাদিনের অনুষ্ঠান শেষে চারদিকে নেমেছে শান্ত অন্ধকার। আকাশে তখন অগণিত তারা, দূরে পূর্ণিমার চাঁদ গঙ্গার জলে সাদা আলো ছড়িয়ে দিয়েছে। মেলার চারপাশে জ্বলছে অসংখ্য প্রদীপ। প্রতিটি প্রদীপ যেন জেগে ওঠা আত্মার প্রতীক।
কৃষ্ণপদ ঘাসের ওপর বসে এই দৃশ্য দেখছিল। মনে হচ্ছিল, প্রকৃতিও যেন অংশ নিয়েছে এই মহাজাগরণে।

সারারাতের নামকীর্তন

মঞ্চে তখনো চলছে নামকীর্তন। ঢোল-খোলের তালে ভক্তরা গাইছে—
“হরিবোল… জয় হরিচাঁদ… জয় গুরুচাঁদ…”
মহিলারা করতালে সুর মেলাচ্ছেন, শিশুরা দৌড়ে বেড়াচ্ছে আনন্দে।
এক মুহূর্তের জন্যও মনে হচ্ছিল না, এই মানুষগুলো কোনোদিন অবহেলিত ছিল।
সেই রাত যেন ছিল মুক্তির রাত—আত্মপরিচয়ের রাত।

কৃষ্ণপদের অন্তরের আলো

কৃষ্ণপদ চোখ বন্ধ করল। সারাদিনের অভিজ্ঞতা তার চোখের সামনে ভেসে উঠতে লাগল—
গঙ্গাস্নানের শিহরণ, গুরুচাঁদের বাণী, ভক্তদের একতা, আর ভক্তির অগ্নি।
তার ভেতরে যেন এক অদ্ভুত আলো জন্ম নিল।
সে অনুভব করল,
“আজ আমি কেবল কৃষ্ণপদ নই। আমি এই সমাজের প্রতিনিধি। আমার জীবন হবে সমাজের জন্য।”

গুরুজনের বাণী

ঠিক তখনই পাশে এসে বসলেন এক প্রবীণ গুরুজন। তিনি কৃষ্ণপদের মাথায় হাত রেখে বললেন—
“বাবা, আজকের দিন তোমার জন্য এক নতুন জন্মের দিন। মনে রেখো, শিক্ষা আর ঐক্য—এই দু’টিই আমাদের অস্ত্র। তুমি যদি এগিয়ে যাও, তবে তোমার সঙ্গে গোটা সমাজ এগিয়ে যাবে।”
কৃষ্ণপদ মাথা নত করে গুরুজনের পা ছুঁয়ে প্রণাম করল। তার চোখে তখন অশ্রু ঝরছে, কিন্তু সেটা আনন্দের অশ্রু।

প্রতিজ্ঞার মুহূর্ত

রাত গভীর হলো। কীর্তনের সুর ধীরে ধীরে থেমে এলো। ভক্তরা দীপ জ্বালিয়ে প্রার্থনা করল।
কৃষ্ণপদ দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকাল, তারপর মনের মধ্যে প্রতিজ্ঞা করল—
“আমি প্রতিজ্ঞা করছি, শিক্ষার আলো ছড়াবো।
আমি প্রতিজ্ঞা করছি, আমাদের সমাজকে অবহেলার অন্ধকার থেকে মুক্ত করব।
আমি প্রতিজ্ঞা করছি, গুরুচাঁদের বাণীকে হৃদয়ে ধারণ করে মানুষের পাশে দাঁড়াব।”
তার ঠোঁট থেকে ধীরে ধীরে বেরিয়ে এলো শব্দ—
“হরিবোল…”
মনে হলো, রাতের আকাশ, গঙ্গার ঢেউ আর হাজার হাজার মানুষের আত্মা সেই প্রতিজ্ঞার সাক্ষী হয়ে গেল।

নতুন ভোরের অপেক্ষা

ভোর হতে আর বেশি দেরি নেই। পাখির কূজন শুরু হয়েছে। কৃষ্ণপদ মায়ের কোলের কাছে গিয়ে শুয়ে পড়ল।
তার চোখ বন্ধ হতে না হতেই মনে হলো, আজকের রাতের আলো চিরকাল তার জীবনে জ্বলবে।
সে জানত—এ রাতের অভিজ্ঞতা তাকে বদলে দিয়েছে, তাকে নতুন মানুষ করেছে।