Featured Books
বিভাগ
শেয়ারড

অলৌকিক - প্রথম 2

মসজিদের সামনে প্রায় মিনিট কুড়ি দাঁড়িয়ে আলোচনা করার পরে হঠাৎ সত্যর চোখ আটকে গেলো মসজিদের দেওয়ালের এক কোণায়।একটা অদ্ভুতরকমের শামুক। কাছে গিয়ে ও বুঝলো এটা যে সে শামুক নয়, এটা বিষাক্ত মার্বেলকোন স্নেইল যার একফোঁটা বিষ মানুষ মারার জন্য যথেষ্ট।

"কিন্তু এই শামুক এখানে কীভাবে এলো, এর থাকার কথা সেই অস্ট্রেলিয়ায়।"

"সত্য,আমি এখানের কয়েকজনকে জিজ্ঞাসা করলাম, কেউই এই প্রাণীর ব্যাপারে কোনোদিন কিছু শোনেনি । তাহলে...?"

"নাহ,যত দেখছি শুনছি কেস ঘোরালো হচ্ছে! চন্দনগঞ্জের মন্দিরে কুড়িজন স্নান জল খেল কিন্তু একজনের পেটে একোনাইট ... লালগড়ের মসজিদের দেওয়ালে অস্ট্রেলিয়ার কোন স্নেইল !"

"কী যে দিনকাল পড়লো, দু' দু'খানা মৃত্যু আবার অস্বাভাবিক ! গোয়েন্দা পুলিশমহল সব কী করছে?"---কিছুটা বিরক্তির সাথে বলে উঠলেন ধনঞ্জয়বাবু।

"আরে মশাই, আজকের পেপারটা দেখলেন? মৃতদের ডিটেইলস যেটুকু দিয়েছে দেখলাম বেশ মালদার লোক দুজনেই। ওই সম্পত্তিই হয়তো অভিশাপ হয়েছে রামেশ্বর ভটচাজ আর জসীমউদ্দীন শাহ্-এর কপালে।" বললেন বীরেনবাবু।

বীরেন তরফদার, ধনঞ্জয় মিত্রের প্রতিবেশী । প্রায়দিনই সকালে বিপত্নীক ধনঞ্জয় বাবুর বাড়ি চলে আসেন চায়ের টেবিলে। দেড়-দু'ঘন্টা আড্ডা মেরে,পেপার পড়ে বাড়ি ফেরেন বীরেনবাবু।

"নাম দুটো কী যেন বললেন?" , চমকে উঠে বললেন ধনঞ্জয়বাবু ।

"রামেশ্বর আর জসীমউদ্দীন.... কেন?"

"নাহ্ মানে ঠিক শুনছি আমি?.. নিউজটা কোথায়? দেখি পেপারটা । "

"বুঝলেন মশাই আসলে অস্বাভাবিক বলে কিছু হয়না কোনোদিন, সবকিছুই স্বাভাবিক। যার সাক্ষাতে ঘটে সে জানে স্বাভাবিকত্বটা।"--- বলে চললেন বীরেনবাবু কিন্তু বিস্ফারিত চোখে পেপার হাতে নিয়ে বিস্মিত ধনঞ্জয় মিত্রের কানে তখন কিছুই ঢুকছে না


ডিং ডং... ডিং ডং

"আসছি"

কলিং বেলের শব্দে মহিলা কন্ঠের সাড়া এলো ভিতর থেকে।

দরজা খুললেন একজন ভদ্রমহিলা,"আপনি?" "হ্যা আমি সত্যজিৎ বিশ্বাস আর আমার সঙ্গে..... এনাকে তো চেনেন আশা করি, দারোগা প্রিয়তোষবাবু । "

"হুমম..."

"আপনি রামেশ্বরবাবুর ওয়াইফ? কিছু জিজ্ঞাসা করবো ওনার মৃত্যুর কেসটা নিয়ে।" "হ্যাঁ বলুন"

"ওনার সাথে কি কারুর কোনো শত্রুতা ছিল ?"

"না তেমন কিছু শুনিনি কখনও। ১৬ বছর ধরে ওর সাথে আছি,ভদ্রভাবে সবার সাথে মিশতো দেখেছি আর ওই ঠাকুর দেবতা নিয়ে থাকতে পছন্দ করত।"

"আপনাদের বিয়ের ১৬ বছর হচ্ছে তাহলে রামেশ্বরবাবুর বড়ো ছেলের বয়েস যে শুনলাম ৪৮... তবে কি আপনি ওনার সেকেন্ড ওয়াইফ?"

"হ্যা ও আমার সৎ ছেলে। আমার একটাই ছেলে,১৫ বছরের মনোজ। আর আমিই ওর প্রথম স্ত্রী,কিন্তু মানে বড়ো ছেলের মা..." বলতে বলতে রামেশ্বরবাবুর স্ত্রী মলিনাদেবী মাথাটা নিচু করে মুখে আঁচল টেনে চুপ করে গেলেন।

"কী হলো বলুন,থামলেন কেন?" আগ্রহী গলায় বললেন প্রিয়তোষ দারোগা ।

ডুকরে উঠলেন মলিনাদেবী,"সেসব লজ্জার কথা কোন মুখে বলবো নিজের হাসব্যান্ড সম্পর্কে।বিয়ের আগে জানতে পারলে এই বিয়ে হতো না কোনোদিন। ওই রিলেশনশিপ থাকতেও কেন আমায় বিয়ে করেছিল বুঝিনা বাবা।আমি প্রেগন্যান্ট সেসময় হঠাৎ একদিন বাড়িতে ও নিয়ে এলো বড়ো ছেলে রাতুলকে, কোথাকার কোন মেয়েছেলের সাথে ফষ্টিনষ্টির ফল। সেই বেশ্যা মেয়েমানুষটা তো রোগভোগে মরল আর অবৈধ ওই বাচ্চাকে আমার সংসারে এনে তুললো আমার সৎ চরিত্রবান স্বামী। মনোজ তখন গর্ভে না এলে আমি এই অনাচার সহ্য না করে ডিভোর্স দিতাম।"

"বুঝলাম এরকম ব্যাপার। দুই ছেলের মধ্যে তো ভীষণ ভাব মনে হলো, একসাথে বসে বাইরের বারান্দায় গল্প করছে।"

"হ্যা ওদের আর কী দোষ, আর এখন অত কিছু ওদের জানানো হয়নি। রাতুল পরে সব জানতে পারলে যে তখন কী হবে....

"আচ্ছা আজ তবে আসি। পরে দরকার পড়লে আসব আবার। সাবধানে থাকবেন।"

"হুমম, আর কীই বা জানার আছে। আপদ নিজে মরল আমার ঘাড়ে এত কাজের বোঝা চাপিয়ে দিয়ে। এখন এই জেরার উটকো ঝামেলা কদ্দিন যে পোয়াতে হবে কী জানি!"

"ধন্যবাদ এতো ইনফরমেশন দেওয়ার জন্য। আসছি।"


"কিহে সত্য, কী বুঝলে কালকে মলিনা ভট্টাচার্যর কথা শুনে? ভদ্রমহিলা বেশ চটে আছেন হাসব্যান্ড-এর ওপরে।খুন করাটাও অস্বাভাবিক নয়।"

"হুমম সম্পত্তির ভাগ রাতুলকে না দেওয়ার জন্য হয়তো স্বামীকে সরিয়ে দিলেন যাতে করে সৎ ছেলেকে সরানোর পথ সহজ হয়।"

"তাহলে কি আরেকটা খুন হতে চলেছে ওই পরিবারে?"

(চলবে...)