রাজনৈতিক তরজা
অশোক ঘোষ
গরীবের দুঃখ দেখে জল এসে যায় নেতার চোখে
সইতে নারে যতেক নেতাগণ।
ঘটা করি সভা ডেকে নেতাগণ কয় হেঁকে
সবাকার দুঃখ মোরা করিব মোচন।।
মোদেরকে দাও ভোট হয়ে সব একজোট
করিব সবার ভালো মোরা।
গরীবের ঘরে ঘরে ধন-দৌলত দেব ভরে
দুঃখ কষ্ট সব হয়ে যাবে সারা।।
ফকিরের মতো হয়ে পরহিত ব্রত নিয়ে
করবো সেবা দেশ-মাতৃকার ।
অপরাধ করলে পরে দমন করিব তারে
সাজা হতে না পাবে নিস্তার।।
জনতা হাসিয়া কয় শুন নেতা মহাশয়
শুনিয়াছি অজস্র নেতার ভাষণ।
কুমিরের মাতৃগণ ভুলিয়াছে ক্রন্দন
দরশিয়া তোমাদের সজল নয়ন।।
ভোটে জিতে নেতাগণ বলে শোনো জনগণ
মন দিয়া করহ শ্রবণ।
পাঁচটি বছর ধরে খাটবো দেশের তরে
নিময়ে সামান্য লইবো বেতন।।
বছরে অর্ধেক কোটি তার সাথে সুরম্য বাটি
নানাবিধ লইব সুযোগ।
ঘুরবো দেশ দেশান্তরে ইয়ার বন্ধু সঙ্গে করে
জীবনটা করবো উপভোগ।।
শুন হে নেতাগণ আরো করি বর্ণন
শুনেছি যা নেতাগণ কয়।
যায় যদি জিতে ভোটে খাবে সব চেটেপুটে
জনতার করের টাকায়।।
আমাদের ভোটে জিতে বসে রাজ গদিতে
অঙ্গীকার করিতেছো আজ।
বেকার গরীব যত আছে দেশে শত-শত
পাইবে শতেক দিনের কাজ।।
আড়াইশো টাকা দিনে পাইবে প্রত্যেক জনে
কঠোর শ্রমের বিনিময়ে।
শতদিন মজুরী পাবে বছরটা চলে যাবে
পরিবার পরিজন লয়ে।।
জনগণ অতি বোকা সহজেই খায় ধোঁকা
শুনিয়া নেতার বচন।
কোন দল কি বা বলে আম জনতাকে ছলে
হেথায় করিনু বর্ণন।।
*****
“ক” বলে যদি মোরা আসি ক্ষমতায়,
গরীব কেহ থাকবে নাকো এই দেশটায়।
যেভাবেই হোক না কেন গরীবের ঘরে,
আশা দেব ভরসা দেব স্বপ্ন দেব ভরে।
যখন ছিলাম মোরা রাজাসনে বসে,
বুঝি নাই গরীবের দুঃখ ঘুচবে কিসে।
এবার জিতলে ভোটে করবো নাকো ভুল,
আম-জনতার দুঃখ মিটাবো বিলকুল।
বিরোধিরা মোদের নামে অপপ্রচার করে,
বিশ্বাস কোরো নাকো ওদের অপপ্রচারে।
যুদ্ধবিমান কিনতে কেহ করছে ঘোটালা,
চৌকিদার চোর হয়েছে এমনই তার লীলা৷
তাইতো বলি হে জনগণ জেতাও মোদের ভোটে,
বিরোধিদের গণ্ডদেশে চড় মেরে সপাটে।
“বি” বলে সাতটি দশক থেকে ক্ষমতায়,
দেশের বারো বাজিয়ে ওরা পাঠিয়েছে গোল্লায়।
ক্ষমতায় থেকে ওদের যত নেতাগণ,
লুঠিয়া লয়েছে সব জনতার ধন।
কতশত ঘোটালায় লক্ষ কোটি টাকা,
পকেট ভরেছে করি রাজকোষ ফাঁকা।
পেয়েছি ক্ষমতা মোরা দিয়ে আশ্বাস,
ঘোটালায় জড়িতকে দেব কারাবাস।
মোদের কাছে প্রিয় অতি গরীব জনতা,
তার চেয়ে অধিকতর প্রিয় গোমাতা।
মন্দির বানাবো মোরা না জুটুক অন্ন,
সইবনা যদি কেউ মত দেয় ভিন্ন।
আমাদের নেতাগণ সব সাধূ-সন্ত,
স্বভাবে নম্র অতি ধীর-স্থির শান্ত।
শুধুমাত্র ভিন্নমত সহিতে না পারি,
নানাভাবে ভয় দেখিয়ে তাদের জব্দ করি।
পূর্বদিশার নেত্রী এক মূখরা দুর্দান্ত,
সকল সময় ছটফটায় কখনও নয় শান্ত।
গান বাঁধে সে ছবি আঁকে রচে কবিতা,
কোটি টাকার বিনিময়ে বিকিয়ে যায় তা।
তার দলেতে কর্মীরা সব অকর্মার ঢেঁকি,
লুঠপাটে সব দক্ষ অতি আসল কাজে ফাঁকি।
নেত্রীর অনুপ্রেরণা বিনা কিছু নাহি করে,
প্রকৃতির ডাকেও সাড়া দিতে নাহি পারে।
আর কিছু নেতা আছে কম্যুনিষ্ট নামে,
দক্ষিণ এড়িয়ে তারা অনুগামী বামে।
শিক্ষা চেতনা আনে লিখিত দেওয়ালে,
বিপ্লব ঘটাবে তারা সচেতন হলে।
তাইতো শিক্ষার দফা করে দিয়ে রফা,
বিপ্লবের পিণ্ডি চটকে দিয়েছিল তোফা।
এখন সে বামেরা ডোডোপাখী যেন,
নেতাহীন বলহীন জরদ্গব হেন।
আরও কিছু দল আছে জোচ্চোরে ভরা,
জনহিতকর কিছু করে নাকো তারা।
তাই বলি দেশবাসী ভোট দাও মোরে,
সবাইকে দেব টাকা পনেরো লাখ করে।
আগে দিতে পারি নাই নানা ঝামেলাতে,
পঞ্চবর্ষ কাটলো কালো টাকা উদ্ধারেতে।
অন্যদের মিছে কথায় ভুলো নাকো ভাই,
আসছে ভোটে আমাদের জিতিয়ে দেওয়া চাই।
--------
“ত” বলে শুনিলাম অনেক বোল-চাল,
ওরাই করেছে দেশের সর্বনাশা হাল।
ক-এর ঘরে রাজনীতিতে আমার হাতে খড়ি,
ওই দলটা অসৎ বলে নতুন দল গড়ি।
পায়ের নীচে মাটি পেতে বি-এর হাত ধরি,
মওকা বুঝে বি-কে ছেড়ে ক-র সাথে জোট করি।
রাজ্যজুড়ে করেছিনু এমন আন্দোলন,
কারখানাটি ছেড়ে বণিক করল পলায়ন।
রাজ্যের বারো বাজুক তবু ক্ষমতা মোর চাই,
তা না হলে জনহিত কেমনে করবো ভাই।
দুই হাতে বিলাইব আমি জনতার অর্থ,
পাবে তারা যারা মোর রক্ষিবে স্বার্থ।
মদ খেয়ে যদি কেউ অকালেতে মরে,
দুই লাখ টাকা দেব তার পরিবারে।
ইমাম আছেক যত পাইবেক ভাতা,
ক্লাবগুলিও টাকা পাবে, আমি কর্ণ দাতা।
যতই আঁধার আসুক জনতার জীবনে,
পথ-ঘাট আলোকিত করিবো নিওনে।
বি-দলটা দেশের মধ্যে সবথেকে বদমাশ,
আমার সোনা ছেলেদেরকে করায় কারাবাস।
রোজভ্যালি সারদা-রা লোটে জনধন,
তদন্তের লাগিয়া করি SIT-এর গঠন।
তাহাতে বাগড়া দিতে এল সিবিআই,
ধরে মোর ছেলেদের ছেড়ে রেখে চাঁই।
সোনার টুকরো সব ছেলেদের মোর,
গারদে পুরিয়া দিল যেন দাগী চোর।
অনেক সহিয়া শেষে পাইয়া মওকা,
সিবিআই-কে দিয়াছি সমুচিত শিক্ষা।
আমার নগরপাল সেরা ধরণীতে,
সিবিআই চায় তাকে গারদে পুরিতে।
সন্ধ্যার আঁধারেতে আসিয়া সদলে,
নগরপাল-গৃহে চায় ঢুকিতে সবলে।
দ্বারপ্রান্তে রক্ষীসব আটক করিয়া,
সিবিআই-কে ভাগাইল ঘাড়ধাক্কা দিয়া।
মন দিয়ে মোর কথা জনগণ শোনো,
আমাকে হারানেবালা মরদ নেই কোনো।
রাম শ্যাম মাওবাদি হয়ে একজোট,
আমার বিরুদ্ধে সব পাকাচ্ছে ঘোঁট।
জনগণ ভুলিবেনা বাম জমানাকে,
ধ্বংস করিয়া গেছে এই রাজ্যটাকে।
প্রাণ থাকিতে মোর এই বঙ্গভূমে,
জয়ী হতে দেবো নাকো রাম কিংবা বামে।
আমলা, পুলিশ আর মোর ছেলেগণ,
সোল্লাসে জনভোট করিবে গ্রহণ।
আসছে ভোটে অন্য কেহ যদি যায় জিতে,
ভিড়িবে আমার দলে সন্দেহ নাই তাতে।
--------
“সি” বলে জনগণ কর অবধান,
বুর্জোয়া দলের কথায় দিয়ো নাকো কান।
আমরাই একমাত্র গরীবের ত্রাতা
বাকি সব দল শুধু দিয়ে যায় ভাঁওতা।
শ্রমিকের স্বার্থরক্ষা করিবার তরে,
শতশত কারখানা দিয়েছি বন্ধ করে।
অভাবে শ্রমিক কত মরে হেথা হোথা,
তবুও ধনীর কাছে নোয়াইনি মাথা।
ছোট ছোট ছেলে-মেয়ে সুকুমার মতি,
ইংরাজী শেখা থেকে দিয়েছি নিস্কৃতি।
আমাদের মুখ্যমন্ত্রী কত কষ্ট করে,
বিদেশে যেতেন তিনি প্রত্যেক বছরে।
জনতার অর্থব্যয়ে মাসাধিক ধরে,
বিদেশে ভ্রমিতেন রাজ্যে বিনিয়োগ তরে।
আমাদের ডোডো বলে বালখিল্য সব,
৩-২-১৯শে তার দিয়েছি জবাব।
দূর-দূরান্ত থেকে লক্ষ জনে আসে,
জনতার জোয়ারেতে ব্রিগেড যায় ভেসে।
দেশের এখন ভাই বড় দুর্দিন,
কেন্দ্রে শাসন করে তুঘলক বিন।
বঙ্গে আছেন যিনি কম তিনি নন,
স্বভাবে তুঘলকের সাক্ষাৎ বোন।
জেনে রাখো ইতিহাস চক্রবৎ ঘোরে,
ক্ষমতা হারাবে ওরা অতি অহঙ্কারে।
--------
নেতাদের বচন শুনে তালা লেগে যায় কানে
দেশে যত আম-জনতার।
সভয়ে ঈশ্বরে স্মরে বিনীত প্রার্থনা করে
প্রভু মোদের করগো উদ্ধার।।
রাজনীতি করে যারা পরগাছা সম তারা
নিরন্তর জনগণে করিছে শোষণ।
মিথ্যা ভাষণে ভাই নেতাদের জুড়ি নাই
নানাভাবে জনতাকে করিছে পেষণ।।
জনতার সেবার ছলে লোটে ধন সবে মিলে
রাজনীতি যত লোকে করে।
ওরা অভিনয় করে গালি দেয় পরস্পরে
জনগণে বোকা বানাবারে।।
হে প্রভু মিনতি করি হেনে বাজ শিরোপরি
নেতাগণে করগো নিধন।
করেতে কুঠার দিয়ে পরশুরামে দাও পাঠিয়ে
বধিবারে রাজনেতাগণ।।
🙏🙏🙏