Featured Books
বিভাগ
শেয়ারড

রূপসী বঙ্গ - ষড় ঋতুরঙ্গ

রূপসী বঙ্গ - ষড় ঋতুরঙ্গ

 

সুজলা সুফলা শস্য-শ্যামলা পরমা রূপসী বঙ্গ,

দক্ষিণে সাগরে বহে উচ্ছ্বল তরঙ্গ।

তুষার কিরীট মাথে উত্তরে হিমালয়,

কলকল নাদে পবিত্র গঙ্গা সাগরের পানে ধায়।

ঋতু বদলের সাথে সাথে বঙ্গের রূপ বদলায়,

সুনিপুন চিত্রকর যেন চিত্রপটে ছবি এঁকে যায়।

 

ষড়ঋতু

 

বাংলা মায়ের রূপে আহা অপূর্ব বাহার,

বারো মাসে ষড়ঋতুর বৈচিত্র অপার।

বৈশাখ আর জ্যৈষ্ঠ মিলে হয় গ্রীষ্মকাল,

সহকার শাখে শোভে অমৃত রসাল।

গ্রীষ্ম অন্তে বর্ষাকাল আষাঢ় শ্রাবণ,

রিমিঝিমি জলদের ধারা বরিষণ।

তারপর শরৎকাল ভাদ্র আর আশ্বিনে,

মেতে ওঠে বঙ্গবাসী দুর্গার আবাহনে।

হেমন্ত ঋতু হয় কার্তিক অগ্রহায়ণে,

কৃষকের আঙ্গিনা ভরে স্বর্ণকান্তি ধানে।

হেমন্ত হলে শেষ পৌষ মাঘ আসে,

নিদারুণ শীতকাল এই দুই মাসে।

পিঠে পুলি পায়স আর খেজুরের রসে,

রসনা তৃপ্ত হয় পরম আয়েশে।

ফাল্গুন আর চৈত্র শেষে বছরের অন্ত,

এই দুই মাসে মিলে ঋতুরাজ বসন্ত।

*********

 

গ্রীষ্মকাল

 

বৈশাখ জ্যৈষ্ঠের সঙ্গে        গ্রীষ্মকাল আসে বঙ্গে

নির্দয় নিদাঘ সূর্য বরষে অনল,

খাল বিল জলাশয়          সকলই শুকায়ে যায়

তৃষিত বক্ষে চাহে বরষার জল।

কখনো হঠাৎ করে          ঘন কৃষ্ণ জলধরে

সুনিল গগন যায় ছাইয়া,

ওঠে কালবৈশাখী ঝড়    বাজ পড়ে কড়কড়

ঝরঝর বারিধারা পড়ে ঝরিয়া।

পাইয়া বৃষ্টির পরশ          ধরার বক্ষ হয় সরস

তরুলতা হয়ে ওঠে সজীব শ্যামল,

দোলে সহকার শাখে       ফলরাজ কহে লোকে

আাস্বাদনে অমৃতের সমান রসাল।

 *********

 

বর্ষাকাল

 

গ্রীষ্মের অবসানে আষাঢ় শ্রাবণ,

বরষার ঋতু রূপে করে আগমন।

তৃষায় আকুল গ্রীষ্মে তাপদগ্ধ ধরা,

সুশীতল করে তারে বরষার ধারা।

নীলাকাশ ছেয়ে যায় নব জলধরে,

বাদলের ধারা ঝরে অবিরাম ধারে।

ঘনমেঘ গরজায় গুরু গুরু ধ্বনি,

মাঝে মাঝে চমকে রূপসী দামিনী।

পথ-ঘাট বরষার জলে ভরপুর,

গাহে গান ঊচ্চ রবে পুলকে দাদুর।

হরষে পেখম মেলে নৃত্য করে কেকা,

জনহীন হাট-বাট পথ-ঘাট ফাঁকা।

বরিষণে সরস ধরা সজীব তরুলতা,

বরষায় অবগাহি ধরা পুলকিতা।

********* 

 

শরৎকাল

 

জলধর সরিয়া যায়         বর্ষা ঋতু লহে বিদায়

মেঘমুক্ত বিকশিত সুনীল গগন,

ভাদ্র আশ্বিন মাস           নদীতটে পুষ্পিত কাশ

শরৎ ঋতুর হয় শুভ আগমন।

মহানন্দে ওঠে মাতি        আপামর বাঙ্গালী জাতি

মহা ধুমধামে করে দুর্গার পূজন,

নতুন নতুন অঙ্গবাসে       ধনী দরিদ্র নির্বিশেষে

আনন্দে উচ্ছ্বাসে করে দেবী দরশন।

শহরে কিংবা গ্রামে          নব নব নানা থিমে

চক্ষু ধাঁধিয়ে যায় অপরূপ রূপে,

বিজলী আলোকে সাজে    ঢাক ঢোল কাঁসি বাজে

নয়নাভিরাম সব পূজা মন্ডপে।

********* 

 

হেমন্তকাল

 

ভাদ্র আশ্বিন শেষে শরতের অন্ত,

কার্তিক অগ্রহায়ণ মিলে আসিল হেমন্ত।

ভক্তিভরে পূজিতা হন লক্ষ্মী এবং কালী,

অমানিশার আঁধার ঘুচায় আলোর দীপাবলি।

ধরার বক্ষে নানান শস্য স্বর্ণকান্তি ধান,

কৃষকের মুখে হাসি চিত্তে খুশীর বান।

বাতাসে হিমের পরশ সুনীল আকাশ,

গৃহস্থের ঘরে ঘরে নবান্নের সুবাস।

********* 

 

শীতকাল

 

হেমন্তকাল হৈলে গত       শীত ঋতু সমাগত

পৌষ মাঘ দুই মাস থাকে,

প্রবহে শীতল সমীর         নিশীথে ঝরে শিশির

কুয়াশায় নিশাকাশ ঢাকে।

নানা সব্জি ভরা ক্ষেত্র       বৃক্ষ হোতে ঝরে পত্র

হিমেল শুষ্ক শীতের পরশে

নানান পিষ্টক পায়েস       সুস্বাদু মিষ্টান্ন সরেস

গৃহস্থ বানায় গৃহে খেজুরের রসে।

বহু দূরদেশ থেকে           উড়ে আসে ঝাঁকে ঝাঁকে

অগণিত পরিযায়ী পাখি,

দিবাভাগ হ্রাস পায়          রজনী সুদীর্ঘ হয়

সুখনিদ্রায় নিমীলিত আঁখি।

********* 

 

বসন্তকাল

 

শীতকাল অন্তে ঋতুরাজ বসন্ত ফাল্গুন চৈত্র দুই মাস,

রক্তিম ফুলে ছাইয়া যায় কৃষ্ণচূড়া শিমুল পলাশ।

কিশলয়ে ভরিয়া যায় পত্রহীন রিক্ত তরুশাখা,

ফুলে ফুলে এসে প্রজাপতি বসে দুলিয়ে রঙিন পাখা।

মুখরিত চারিদিক কোকিলের সুমধুর কুহুতানে,

পুষ্পসৌরভ আসে ভেসে দখিনা মলয় সমীরণে।

_________