Featured Books
বিভাগ
শেয়ারড

মৃত্যুর পরেও ভালোবাসাকে খোঁজে !!

আজ যে ঘটনাটা আমি আপনাদের বলবো, সেটা আমার মাসির কাছ থেকে শোনা । মাসির সাথে ঘটে যাওয়া একটা সত্যি ভৌতিক অভিজ্ঞতার কথা।

 

আমি যে সময়ের কথা বলছি তা অনেক আগেকার কথা। মাসি তখন একটা ছোট্ট বেসরকারি প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষিকা ছিলেন, সেই স্কুলের মাইনে বেশি ছিলো না, তাই মাসি কে প্রাইভেট পড়াতে হতো। মাসি আর মামা এক সাথে একটা ভাড়া বাড়িতে থাকতো। মামা আর মাসি দুজনে বিয়ে করেনি। মামা ও টিউশন পড়াতো। এইভাবে তারা জীবিকা নির্বাহ করতো।

 

মাসি স্কুল থেকে এসে বিশ্রাম নিয়ে বিকালের দিকে রোজ পড়াতে যেতো ছাত্র ছাত্রীদের বাড়িতে। মাসি যে সময়ের কথা আমায় বলেছে সেটা ছিল শীতকাল।

 

মাসি রোজকার মতো স্কুল থেকে এসে, খাবার খেয়ে , একটু বিশ্রাম নিয়ে বিকাল পাঁচটার সময় টিউশন পড়াতে বেরিয়ে গেলো। 

 

মাসি যে  পারাতে থাকতো তার নাম ছিলো কতুলি। মাসি পড়াতে যেতো রাজবাঁধ বলে একটা জায়গায়। রাজবাঁধ যেতে মাসি কে একটা মুসলিম পারা পার করে রাজবাঁধ পৌঁছাতে হতো। মুসলিম পারার শেষের মুখে একটা বড়ো কবরস্থান ছিলো বিরাট পাঁচিল দিয়ে ঘেরা। কবরস্থান টা পার করে কিছুটা হাঁটলে রাজবাঁধ।

 

মাসি যখন টিউশন পরিয়ে বাড়ি যাবার জন্য বের হলো তখন রাত প্রায় সাড়ে নটা। শীতকালের রাত সাড়ে নটা মানে অনেকটাই রাত, রাস্তা ঘাট ফাঁকা। তখনকার সময় রাস্তায় বেশি লাইট থাকতো না, একটা দুটো স্ট্রীট লাইট জ্বলতো তাও আবার একটার থেকে আরেকটা লাইট কিছুটা দূরে। লাইটের বেশি পাওয়ার ছিলো না শুধু যেখানে লাইটের পোল থাকতো তার আশপাশটা একটু আলোকিত হতো বাকিটা সেই অন্ধকার।

 

মাসি নিজের মনে উল দিয়ে সোয়েটার বুনতে বুনতে যাচ্ছিলো। তখনকার সময়ে অনেক মহিলারা উল দিয়ে সোয়েটার বানাতো,এখন আর কেও বানাই কিনা জানিনা না,কারণ কাওকে আর বুনতে দেখি না। যাক সেসব কথা।  

 

সোয়েটার বুনতে বুনতে হাতের উলের বল টা কখন রাস্তায় পড়ে গেছে খেয়াল করে নি। হঠাৎ পিছন দিক থেকে একটা খনা গলায় কে বলে উঠলো দিদিমনি আপনার উলটা। মাসি চমকে পিছনে তাকিয়ে দেখে অন্ধকারে ঠিক মতো দেখা যায় না মনে হলো কোনো ছায়া মূর্তি এগিয়ে আসছে। সামনে এসে বললো " দিদিমনি আপনার উলটা রাস্তায় পড়ে গেছিল এই নিন" বলে উপর থেকে মাসির হাতে দিয়ে দিলো। মাসি বললো "ধন্যবাদ"। ছেলেটা একটু হেসে বললো "দিদিমনি আপনি কি এই পারাতে থাকেন? মাসি বললো না এর পরের পারাতে থাকি, কেনো বলো তো? "কিছু না আসলে আমি বাইরে থেকে এসছি তো একজন কে খুঁজছি, সে নাকি এই মুসলিম পারাতে থাকে আপনি যদি চেনেন তাই জিজ্ঞেস করলাম"। মাসি বললো "কাকে খুঁজছো কি নাম"?? ছেলেটি বললো " আমি একটা মেয়েকে ভালবাসি তার এখানে বিয়ে হয়েছে নাম রেশমি, আমি তার সাথে একবার দেখা করতে এসেছি আপনি কি চিনেন"?মাসি বললো "না আমি তো চিনি না"।

 

মাসি কথা বলছে আর মনে মনে ভাবছে কে রে এই ছেলেটা? অন্ধকারে ঠিক মুখও দেখা যাই না। মাসি মনে মনে ঠিক করলো কথা বলতে বলতে একে আলোর কাছে নিয়ে যেতে হবে তাহলে দেখতে পাবো ছেলেটি কে, এতো রাতে বাইরে থেকে এসে একটা মেয়েকে খুজে বেড়াচ্ছে, যার কি না আবার বিয়ে হয়ে গেছে।

 

একটু দুরে কবরস্থানের গেটের কাছে আলোটা দেখা যাচ্ছিল মাসি ভাবলো যাক এবার মুখটা দেখতে পাবো কে ছেলেটা। আলোর একটু কাছে আসতে ছেলেটা বলে উঠলো "ঠিক আছে দিদিমনি আপনি তাহলে আসুন আমি যাই"। বলে অন্ধকারের মধ্যে মিলিয়ে গেলো।

 

মাসি ভাবলো এতক্ষণ কথা বলতে বলতে এলাম আর লাইটের কাছে আসতে চলে গেলো, যা আর মুখটাই দেখা হোলো না। যাক আর কি করা যাবে ভেবে ঘরের দিকে হাটা লাগালো।

 

ঘর পৌঁছে খেতে বসে, মামা মাসি কে বললো "দিদি একটা ঘটনার কথা শুনেছিস"? মাসি বললো "না কিছু শুনিনি তো"! মামা বললো " টিউশন পরিয়ে আসার সময় শুনলাম, মুসলমান পারার ওইখানে নাকি একটা ছেলে সুইসাইড করেছে, তাকে আজকে সন্ধ্যার সময় কবরস্থানে কবর দিয়েছে, ছেলেটি নাকি এখানকার নয় বাইরে থেকে এসেছিল। মাসি বললো "সুইসাইড করেছে কেনো"? মামা বললো " আরে ছেলেটি নাকি কোন মেয়ে কে ভালোবাসতো, সেই মেয়েটির নাকি এই মুসলিম পারাতে বিয়ে হয়েছে।ছেলেটা খুঁজতে এসেছিল খুঁজে না পেয়ে ওইখানে সুইসাইড করেছে । 

মাসি তো কথা টা শুনে থ!! তাহলে যার সাথে আমি কথা বলতে বলতে এলাম, যে আমাকে উলটা কুড়িয়ে এনে দিলো তাহলে কি ওটা ছেলেটি ছিলো না ছিলো তার অতৃপ্ত আত্মা?? 

মরার পরেও সে তার নিজের ভালোবাসা কে ভুলতে পারেনি একবার দেখার জন্য ঘুরে বেড়াচ্ছে!!

 

মাসি পুরো ঘটনাটা মামা কে জানাই। মামা তো শুনে খুব রাগারাগি করে বলে, " তুই রাতে কবরস্থানের রাস্তাটা দিয়ে কেনো আসিস? অন্য রাস্তা দিয়ে আস্তে পারিস না, কোনদিন দেখবি কেও তোর ঘাড় মোটকে মেরে ফেলবে"সেদিন বুঝবি।

 

 

আপনাদের কি মনে হয়?? যে সত্যি ভালোবাসে, সে মৃত্যুর পরও  তার ভালবাসা কে একবার দেখার জন্য ফিরে আসে???