Read Letter by Bubai in Bengali Horror Stories | মাতরুবার্তি

Featured Books
  • Mission Indiana - 5

    পর্ব - 5********Secret Of Titan****************ত্রিশ বছর আগে...

  • LOVE UNLOCKED - 10

    Love Unlocked :10Pritha :"What happened ! এরম ভাবে তাকিয়ে আ...

  • ঝরাপাতা - 17

    ঝরাপাতাপর্ব - ১৭বৌদির অভিযোগ শুনেই নিজের আর্জি নিয়ে রনি দাদ...

  • ভোটের রঙ - 2

    অধ্যায় ২: শহরের পোস্টারভোরের আলো ফুটতেই কলকাতার শহর যেন নতু...

  • চিঠি

    আজ সারাদিন ধরে মুশোল ধারে বৃষ্টি হচ্ছে। আমি এই মাত্র অফিস থে...

বিভাগ
শেয়ারড

চিঠি

আজ সারাদিন ধরে মুশোল ধারে বৃষ্টি হচ্ছে। আমি এই মাত্র অফিস থেকে এসে, জামা কাপর ছেড়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে খবরের কাগজ নিয়ে পড়তে বসেছি। এটা আমার প্রতিদিনের অভ্যাস,কারণ সকালে অফিস যাওয়ার তারার জন্য খবরের কাগজ পড়ে উঠতে পারি না, তাই ফিরে এসে টানা একঘন্টা পরি,তারপর খাওয়াদাওয়া সেরে শুতে চলে যায়। আজ আবার সকাল থেকে লোডশেডিং, তাই লণ্ঠনের আলোতে পড়তে হচ্ছে। মনোযোগ দিয়ে পেপার পড়ছি হঠাৎ দরজায় টোকা দেওয়ার আওয়াজ "ঠক ঠক" আমি হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি সাড়ে আটটা বাজছে, এত রাতে ঝড় বৃষ্টির মধ্যে কে এলো? 

আমি লণ্ঠনটা হাতে নিয়ে দরজার কাছে যায় দরজা খুলতে।

দরজা খুলে দেখি কেও কোথাও নেই, আমি তো অবাক কি বেপার? দরজায় টোকা দেওয়ার আওয়াজ আমি স্পষ্ট শুনেছি, হওয়াতে তো এমনি আওয়াজ হবে না! আমি বাইরে বেরিয়ে লণ্ঠনের আলোতে চারপাশটা ভালো করে দেখলাম না কেও তো নেই। আমি ফিরে ঘরে ঢুকতে যাব,তখনি দরজার চৌকাঠের সামনে একটা কাগজের টুকরো লক্ষ করলাম,আমি হাতে তুলে নিয়ে দেখি এটা তো কাগজের টুকরো নয়,এটা তো একটা চিঠি।

তাহলে আমি ভুল শুনিনি। কিন্তু কে? এই চিঠিটা এমনি করে রেখে চোরের মত পালিয়ে গেল? আমি চিঠিটা নিয়ে ঘরে ঢুকে,পড়ার টেবিলে বসে খামটা খুলে দেখি এটা তো আমার বন্ধু বিক্রমের লেখা চিঠি।

তাহলে কি "পরেশ জ্যাঠা এসেছিল চিঠিটা নিয়ে? তাহলে আমার সাথে দেখা না করে চিঠিটা দরজার বাইরে রেখে চলে গেল কেন?

বিক্রম আমার ছোটবেলার বন্ধু। আমরা দুজনে ছোট থেকে একসাথে বড় হয়েছি। এমনকি স্কুল থেকে কলেজ আমরা একসাথে একি জায়গা থেকে পাস করেছি। গ্রামের লোকেরা আমাদের বন্ধুত্ব দেখে বলত আমারা নাকি দুই ভাই। বিক্রম ছিল জমিদার বাড়ির ছেলে,আমি ছিলাম সাধারণ মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে, তাতেও আমাদের বন্ধুতের মধ্যে কোনদিন বিভেদ সৃষ্টি হয়নি। বিক্রমের বাবা,মা আমাকে নিজের ছেলের মতো ভালোবাসতো। আমার বাবা,মা ও বিক্রম কে নিজের ছেলের মতোই দেখতো। আমার বিক্রমের বাড়িতে অবাধ যাতায়াত ছিল।

পরেশ জ্যাঠা ছিল বিক্রমদের বাড়ির চাকর। কিন্তু আমরা দুজনে কোনদিন বিক্রম জ্যাঠা কে চাকর হিসাবে দেখিনি,আমরা জ্যাঠা হিসাবে দেখতাম। পরেশ জ্যাঠা ও আমাদের নিজের ভাইপো হিসাবে দেখতো। আমদের যা আবদার ছিল তা পরেশ জ্যাঠা কে বলতাম,আবার যদি কোন রকমের দুষ্টুমি করতম পরেশ জ্যাঠা সেটা মিটমাট করে দিত যাতে আমাদের বাবা,মার কানে খবর না যায়।

কলেজ পাশ করার পর চাকরির সূত্রে আমি বাবা,মা কে নিয়ে শহরে চলে আসি। আর বিক্রম নিজের জমিদারি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যায়। তবুও আমরা একে অপরকে প্রতি মাসে চিঠি লিখি। বিক্রম আর পরেশ জ্যেঠু অনেকবার আমার এই শহরে বাড়িতে এসেছে।

পরেশ জ্যেঠু যদি কোন কাজে শহরে আসতো তাহলে আমাদের বাড়িতে রাতে থেকে পরের দিন ফিরতো, তাহলে আজ কেনো চিঠিটা রেখে এই ঝড় বৃষ্টির রাতে কিছু না বলে চলে গেল? আমার মনে খুব রাগ হলো। এমন কি তারা? যে চিঠিটা হাতে দিয়ে যেতে পারল না?

আমি চিঠিটা পড়া শুরু করলাম,"ভাই কেমন আছিস?" বিক্রম আমাকে ভাই বলে ডাকতো।"তোকে এক মাস কোনো চিঠি দেওয়া হয়নি,বাবার শরীরটা ভালো যাচ্ছিল না তাই তোকে চিঠি লেখার টাইম পাই নি।" আমিও চিঠি দিতে পারিনি ঘরের কাজে ব্যস্ত থাকার দরুন। "বাবার শরীর আরো খারাপ অবস্থায় পৌঁছে গেছে, তাই তোকে চিঠিটা লিখলাম। তুই যদি পারিস তো একটু আয় এখানে তুই পাশে থাকলে আমার ও বাবার দুজনেরি মনোবল বাড়বে। চিঠিটা পরেশ জ্যেঠুর হাত দিয়ে পাঠালাম,ডাকে পাঠালে পৌঁছাতে দেরি হতো।" কাকুর শরীর খারাপ কথাটা শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেলো,ছোট্ট বেলার সব কথা মনে পড়তে লাগলো।

আমি ঠিক করলাম কালকে অফিসে গিয়ে তিন,চার দিনের ছুটি নিয়ে নেবো। 

কথা মতই কাজ করলাম পরের দিন অফিসে গিয়ে ছুটি নিয়ে নিলাম। অফিস থেকে ফিরে বাবা,মা কে জানিয়ে,পরের দিন রওনা দিলাম 'পদ্যপুকুরের' উদ্যেশ্যে।

পদ্যপুকুর যখন পৌছালাম তখন দুপুর গড়িয়ে বিকেল। পায়ে হেঁটে রওনা দিলাম বিক্রমের বাড়ির উদ্যেশ্যে। বাড়ির গেটের কাছে পৌঁছে গেট খুলতে দেখি বিক্রম বসে আছে গালে হাত দিয়ে। দেখে মনে হলো ওর মন ঠিক নেই। আমাকে আসতে দেখে দৌড়ে এসে বলল 'তুই হঠাৎ?' 'আমি বললাম হঠাৎ মানে? তুই তো চিঠি লিখে আস্তে বলেছিস।' বিক্রম বললো ' চিঠি তো আমি লিখেছিলাম কিন্তু তুই পেলি কোথা থেকে?' কেনো তুই তো পরেশ জ্যেঠুর হাত দিয়ে পাঠিয়েছিল,ভুলে গেছিস নাকি? কথা শুনে বিক্রমের মুখটা কেমন যেনো শুকিয়ে গেল। 

আমি জিজ্ঞেস করলাম 'কি রে কি হয়েছে?' বিক্রম বললো 'পরেশ জ্যেঠু তোকে চিঠি দিয়েছে?' আমি বললাম 'হ্যা তুই যখন পরেশ জ্যেঠুর হাত দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছিস,তাহলে আর কে দেবে? পরেশ জ্যেঠু কে ডাক আমি জিজ্ঞেস করি কেনো দরজার বাইরে চিঠিটা ফেলে পালিয়ে এলো।' দেখলাম কথাটা শুনে বিক্রমের চোখ দিয়ে জল পরতে লাগলো আর কাঁপা কাঁপা গলায় বললো ' চিঠিটা আমি পরেশ জ্যেঠুর হাত দিয়ে পাঠিয়েছিলাম ঠিকই কিন্তু তোর বাড়ি পৌঁছাবার আগে এক্সিডেন্টে মারা যান।' আমি তো কথাটা শুনে থ! আমি চিঠিটা বিক্রমের হাতে দিলাম।

চিঠিটা হাতে নেবার পর আমারা একে অপরের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম।

আমার আর বিক্রমের মনে অনেক প্রশ্ন চাপা পড়ে রইলো।

তাহলে চিঠিটা আমার বাড়ির সামনে রেখে কে গেল??

পরেশ জ্যেঠু নাকি তার আত্মা??