কলকাতার লোকাল ট্রেন সবসময়ই ভিড়ভাট্টায় ভর্তি। দুপুরের ট্রেনটা তুলনায় একটু ফাঁকা হলেও জানালার পাশে বসার সৌভাগ্য সবার হয় না। সেদিন ঈশা জানলার ধারে বসে বই পড়ছিল। তার চারপাশের কোলাহল যেন একেবারে দূরের জগৎ, সে একা ডুবে ছিল কাহিনির পাতায়।
ঠিক তখনই পাশের সিটে বসে পড়ল এক অচেনা ছেলে। এক মুহূর্তের জন্য ঈশা তাকিয়ে দেখল—চোখে দুষ্টুমি ঝিলিক, ঠোঁটে হালকা হাসি। ছেলেটি হঠাৎই বলে উঠল,
“তুমি কি সব সময় বইয়ের ভেতরেই ডুবে থাকো?”
ঈশা বিরক্ত হয়ে তাকাল। অপরিচিত কেউ হঠাৎ এমন প্রশ্ন করলে সাধারণত সে উত্তর দেয় না। তবু তার চোখে কেমন যেন এক টান ছিল। ঈশা বইয়ের পাতা উল্টে বলল,
“আমি গল্প পড়ি, বিরক্ত করার জন্য নয়।”
ছেলেটি হেসে বলল,
“ভালো কথা। তবে পড়া শেষ হলে আমাকেও শোনাবে, প্লিজ। একা একা পড়ার থেকে দু’জন মিলে শোনা বেশি ভালো না?”
ঈশার মুখ গম্ভীর, তবু ঠোঁটের কোণে এক ফোঁটা হাসি ফুটে উঠল। ট্রেন তখন সিঙ্গুর ছাড়িয়ে যাচ্ছিল। বাতাসে বইয়ের পাতা উড়ে যাচ্ছিল, আর বুকের ভেতরে যেন অজানা কাঁপুনি।
ছেলেটি পরিচয় দিল না। নাম, বাড়ি, কিছুই বলল না। শুধু এক চিলতে দৃষ্টি রেখে গেল ঈশার উপর। ট্রেন যখন স্টেশনে থামল, ঈশা নেমে গেল। একবারও পেছনে তাকায়নি, তবু মনে হচ্ছিল ছেলেটির চোখ তার উপরেই আটকে আছে।
সেদিন রাতটা ঈশার অদ্ভুত কেটেছিল। ঘুম আসছিল না। ডায়েরি খুলে লিখতে গিয়েও থমকে গেল। কলমের নিবে বারবার ভেসে উঠছিল সেই প্রশ্ন—
“তুমি কি সব সময় বইয়ের ভেতরেই ডুবে থাকো?”
কেন যেন মনে হচ্ছিল, এই প্রশ্নটা কেবল মজা করে বলা নয়। যেন ওর ভেতরে লুকিয়ে আছে এক অচেনা গল্পের সূত্র।
পরের দিন কলেজে গিয়ে ঈশা আবার বই খুলল। বন্ধুরা গল্প করছিল, হাসছিল, অথচ তার মন যেন আটকে ছিল সেই অচেনা ছেলেটির চোখে। কে সে? আবার দেখা হবে কি? নাকি সেদিনের মতোই হারিয়ে যাবে ভিড়ের মাঝে?
ঠিক তখনই জানালার বাইরে দিয়ে এক ঝলক সুর ভেসে এলো—কারো গিটারের সুর। ঈশার বুক ধক করে উঠল। মনের ভেতর কেমন একটা অদ্ভুত টান। হয়তো আবার দেখা হবে… হয়তো ভাগ্যই চাইছে একটা নতুন অধ্যায় শুরু হোক।
কিন্তু ঈশা জানত না, যে গল্পটা শুরু হতে চলেছে, তার ভেতরে শুধু ভালোবাসা নয়, লুকিয়ে আছে অনেক অন্ধকার রহস্যও।
------
অচেনা ছেলেটি, যাকে ঈশা হালকা আলাপ করে ভুলে যেতে চাইছিল, সে-ই আসলে তার জীবনের সবচেয়ে বড়ো অধ্যায় হতে চলেছে। কিন্তু সেই অধ্যায়ের প্রথম পাতাই যেন রক্তমাখা কলমে লেখা।
-------
অচেনা চোখের শুরু
নিঃশব্দ বিকেল নেমে আসে ধীরে,
জানালার ফাঁক দিয়ে আলো খেলে যায়।
বইয়ের পাতায় হারিয়ে ফেলা মেয়ে—
মন তার ভাসে গল্পের নদীর হাওয়ায়।
ঈশা বসে থাকে, নিঃসঙ্গতার সুরে,
হঠাৎ যেন কণ্ঠ ভেসে আসে দূরে।
গিটারের তারে নেচে ওঠে রাগিনী,
এক অচেনা ছেলের চোখে অদ্ভুত বাণী।
চোখে চোখ পড়ে, থমকে যায় সময়,
হাসির ফাঁকে লুকিয়ে থাকে অজানা অভয়।
কে তুমি, কোন ভোরের গান নিয়ে এলে?
নাকি শুধু স্বপ্নের ছদ্মবেশে মেলে?
মনে হয় প্রতিটি মুহূর্তে লেখা হয় কাব্য,
প্রথম স্পর্শে কেঁপে ওঠে অন্তরাভ্যন্তর।
কেন এত সহজে হৃৎপিণ্ড কাঁপে?
কেন অচেনা আলো জীবনে জ্বলে ওঠে?
ঈশা বোঝে না, এ কি কেবল কাকতালীয়,
নাকি নিয়তির লেখা প্রেমের আভাস?
একটা বিকেল, একটা গান, একজোড়া চোখ,
আর জীবনের পাতা ভরে ওঠে নতুন প্রকাশ।
অভ্র দাঁড়ায় পাশে, নীরবতায় বলে—
“হয়তো গল্প শুরু হলো আজই তোমার আমার।”
আর ঈশার বুকের ভেতর ঝড় বয়ে যায়,
ভালোবাসা নাকি রহস্য—অভিশাপ না উপহার?
গল্পের শেষ পর্যন্ত সঙ্গে থাকার জন্য সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। 💌 লিখতে গিয়ে কোথাও ভুল হলে তা ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আপনাদের প্রতিটি মন্তব্য আমার কাছে অত্যন্ত মূল্যবান, কারণ পাঠকের প্রতিক্রিয়াই লেখকের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। আপনারা কীভাবে গল্পটা অনুভব করলেন, কোন অংশ ভালো লেগেছে বা কোথায় আরও ভালো করা যেত—সবটাই জানালে আমার পরবর্তী লেখাগুলোতে নতুন রঙ যোগ হবে। আপনাদের ভালোবাসা আর মতামতই আমার কলমের জ্বালানি। তাই দয়া করে মন্তব্য করতে ভুলবেন না। 🌸