অদৃশ্য টান
কলেজের দিনগুলোতে মিশা আর ইশানির বন্ধুত্ব এখন সবার চোখে পড়তে শুরু করেছে। ক্লাসে তারা পাশাপাশি বসে, লাইব্রেরিতে পাশাপাশি পড়ে, ক্যান্টিনে একসাথে খায়। অন্য বন্ধুরা মজা করে বলে ওঠে,
— “ওই দেখো, জুটি আসছে।”
মিশা হেসে উড়িয়ে দেয়, কিন্তু ইশানির বুক কেমন কেঁপে ওঠে। ও কি সত্যিই জুটি? নাকি শুধু বন্ধুত্ব?
---
ছোট ছোট মুহূর্ত
একদিন দুপুরে ক্যান্টিনে বসে সবাই গল্প করছিল। হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেল। ভিড়ের মধ্যে মিশা ইশানির হাত ধরে বলল,
— “চল, বাইরে যাই।”
অন্ধকার ক্যান্টিন থেকে বেরিয়ে তারা দু’জন ছাদে গেল। আকাশ ভরে আছে মেঘে। হাওয়া বইছে জোরে। মিশা হেসে বলল,
— “এমন আবহাওয়া মানে কফির কাপ চাই। তুমি যদি কবি হও, তবে আমিই তোমার কফি বানাব।”
ইশানি লাজুক হেসে তাকাল।
— “তুমি সবসময় এমন বলো কেন? অকারণেই আমার ভেতর অস্থিরতা হয়।”
মিশা ভুরু কুঁচকে বলল,
— “অস্থিরতা মানে কি খারাপ কিছু? নাকি খুব ভালো কিছু?”
ইশানি চোখ নামিয়ে নিল। উত্তর দিল না। কিন্তু তার বুকের ভেতরে সেই মুহূর্তে এক অদৃশ্য টান জেগে উঠল, যা সে লুকোতে পারল না।
---
গোপন চিঠি
সেদিন রাতে ইশানি হোস্টেলের ঘরে ফিরে এক টুকরো কাগজে লিখল—
"তুমি আমার জীবনের সবচেয়ে উজ্জ্বল হাসি,
তোমার উপস্থিতি ছাড়া প্রতিটা দিন ফাঁকা মনে হয়।
আমি জানি না এই অনুভূতির নাম কি,
কিন্তু আমি শুধু চাই তুমি আমার পাশে থাকো… সবসময়।"
কাগজটা গোপনে লাইব্রেরির মিশার বইয়ের মধ্যে রেখে দিল।
পরের দিন মিশা সেটা পেয়ে অবাক হয়ে গেল। চোখে পানি এসে গেল। সে বুঝল না কে লিখেছে, কিন্তু ভেতরে ভেতরে মনে হলো—এটা নিশ্চয়ই ইশানির লেখা।
মিশা চুপচাপ বইটা বন্ধ করে রাখল, কিন্তু হাসিটা সারা দিন মুখে লেগে রইল।
---
প্রথম ঈর্ষা
কয়েকদিন পর কলেজে নতুন এক ছেলে এসে ভর্তি হলো। নাম অয়ন। সে খুব সহজেই সবার সাথে মিশে গেল। একদিন ক্লাস শেষে অয়ন এসে মিশার পাশে দাঁড়িয়ে গল্প শুরু করল।
ইশানি দূর থেকে দেখছিল। বুকের ভেতরে কেমন যেন চাপা আগুন জ্বলছিল। সে বুঝতে পারছিল না, কেন এত কষ্ট হচ্ছে। মিশা তো শুধু তার বন্ধু, তবুও কেন অন্য কারও সাথে কথা বললেই চোখে জল চলে আসে?
সেদিন সন্ধ্যায় মিশা ফোন করল।
— “কী হলো? এত চুপচাপ কেন?”
ইশানি প্রথমে কিছু না বলে এড়িয়ে গেল। তারপর হঠাৎ বলেই ফেলল,
— “তুমি অয়নের সাথে অনেক কথা বলছিলে আজ… তোমাদের খুব ভালো জমছে।”
মিশা হেসে উঠল।
— “ওরে বাবা! তুমি কি তবে… ঈর্ষা করছো?”
ইশানি লজ্জা পেয়ে ফোন কেটে দিল। কিন্তু বুকের ভেতরে এক অদ্ভুত স্বস্তি এল। অন্তত মিশা বুঝেছে, সে অন্যরকম অনুভব করছে।
---
একান্ত সময়
কয়েকদিন পর কলেজে পিকনিকের আয়োজন হলো। সবাই মিলে বড় একটা মাঠে ঘুরতে গেল। খাওয়া-দাওয়া, গান, আড্ডা—সবকিছুতে ভিড়।
কিন্তু বিকেলের দিকে মিশা ইশানিকে টেনে নিয়ে গেল কাছের একটা বাগানের দিকে। সেখানে কেউ ছিল না। শুধু গাছের ফাঁকে রোদের ছায়া, আর হাওয়ার শব্দ।
মিশা হঠাৎ গম্ভীর গলায় বলল,
— “ইশানি, আমি তোমায় একটা প্রশ্ন করব। কিন্তু চাই তুমি সত্যি উত্তর দেবে।”
ইশানি নার্ভাস হয়ে বলল,
— “কি প্রশ্ন?”
— “তুমি কি আমার জন্য একটু হলেও আলাদা কিছু অনুভব করো?”
ইশানি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। বুকের ভেতরে যেন ঝড় উঠল। সে কথা বলতে পারল না। ঠোঁট শুকিয়ে গেল।
মিশা এগিয়ে এসে তার হাতটা ধরে নিল।
— “তুমি না বললেও আমি জানি… তোমার চোখ সব বলে দেয়।”
সেই মুহূর্তে দু’জনের চোখে চোখ আটকে গেল।
হাওয়া বইছিল, চারপাশে পাতা ঝরছিল। আর তাদের মধ্যে জন্ম নিচ্ছিল এক অদৃশ্য, অজানা প্রেমের বন্ধন।
---
প্রথম স্বীকারোক্তির ছায়া
সেদিন রাতে ইশানি অনেকক্ষণ ডায়েরির সামনে বসে ছিল। লিখল না কিছুই, শুধু ভাবছিল—
"আজ মিশার চোখে আমি এমন কিছু দেখলাম, যা আগে কখনো দেখিনি। এটা কি সত্যিই প্রেম? নাকি শুধু ভ্রম? যদি প্রেম হয়, তবে আমি কি সেটা বলার সাহস রাখি?"
অন্যদিকে মিশাও বিছানায় শুয়ে বারবার কাগজের সেই গোপন চিঠিটা পড়ছিল। মনে মনে হাসছিল, আবার চোখ ভিজে যাচ্ছিল।
— “ইশানি, তুমি না বললেও আমি জানি… তুমি আমায় ভালোবাসো।”
---
শেষ দৃশ্য (দ্বিতীয় পর্ব)
রাতের আকাশে তখন পূর্ণিমার চাঁদ।
দু’জন আলাদা জায়গায় থেকেও যেন একই চাঁদের নিচে একে অপরকে ভাবছিল।
এক অদৃশ্য টান ক্রমেই দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে।
---
✨ (চলবে…)
---
গল্পের শেষ পর্যন্ত সঙ্গে থাকার জন্য সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। 💌 লিখতে গিয়ে কোথাও ভুল হলে তা ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আপনাদের প্রতিটি মন্তব্য আমার কাছে অত্যন্ত মূল্যবান, কারণ পাঠকের প্রতিক্রিয়াই লেখকের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। আপনারা কীভাবে গল্পটা অনুভব করলেন, কোন অংশ ভালো লেগেছে বা কোথায় আরও ভালো করা যেত—সবটাই জানালে আমার পরবর্তী লেখাগুলোতে নতুন রঙ যোগ হবে। আপনাদের ভালোবাসা আর মতামতই আমার কলমের জ্বালানি। তাই দয়া করে মন্তব্য করতে ভুলবেন না। 🌸