Featured Books
বিভাগ
শেয়ারড

অচেনা আলো - 6

অচেনা আলো

 “অজানা গুঞ্জন”



---


গুঞ্জনের শুরু


কলেজে এখন মিশা আর ইশানির নাম যেন একসাথে উচ্চারণ হয়।

প্রথমে তা ছিল হালকা মজা, পরে তা রটে গেল গসিপে, গসিপ থেকে অভিযোগে।


ক্যান্টিনে ঢুকলেই কেউ না কেউ ফিসফিস করে—

“ওরাই না সেই দুইজন?”

“আজকাল নাকি একসাথে বাড়ি ফেরে!”


ইশানির বুক কেঁপে উঠত, চোখ নামিয়ে চলত সে।

কিন্তু মিশা প্রতিবার মাথা উঁচু করে হাঁটত, যেন এই দুনিয়ার সামনে নিজেকে লুকোনোর কোনো কারণ নেই।



---


দূরত্বের ছায়া


একদিন ক্লাস শেষে ইশানি বলল—

— “আমরা একটু দূরে থাকি, কিছুদিন।”


মিশা থমকে গেল, গলাটা শুকিয়ে গেল।

— “দূরে? কেন?”


— “সবাই কথা বলছে। মা-ও টের পাচ্ছে। আমি চাই না আমার পরিবার ভাবুক আমি কিছু ভুল করছি।”


মিশা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।

তার চোখের কোণে একফোঁটা জল চিকচিক করে উঠল, কিন্তু সে হাসল—

— “ঠিক আছে, যদি তাতে তোমার শান্তি আসে।”


ইশানি মুখ ঘুরিয়ে ফেলল। নিজের বুকের ভেতরটা ফেটে যাচ্ছিল, কিন্তু সে জানত এখন একটু থামা দরকার।



---


নীরব যন্ত্রণা


পরের সপ্তাহগুলো যেন এক অনন্ত শূন্যতার মতো কেটেছে।

ক্লাসে মিশা একা বসত, ক্যান্টিনে একা খেত, এমনকি লাইব্রেরির কোণেও একা জানালার দিকে তাকিয়ে থাকত।


ইশানি মাঝে মাঝে তার দিকে চেয়ে থাকত, কিন্তু কাছে যেতে পারত না।

মিশার চোখের নিচে কালি জমে গিয়েছিল, আর হাসিটা হারিয়ে ফেলেছিল সেই পুরোনো উজ্জ্বলতা।


রাতগুলোতে মিশা লিখত—

“ভালোবাসা যদি অপরাধ হয়, তবে আমি আজীবন অপরাধী হতে রাজি।”



---


এক চিঠির ফিরে আসা


এক বিকেলে হঠাৎ ইশানির ব্যাগে একটা পুরনো চিঠি পাওয়া গেল।

মিশার হাতের লেখা—


> “তুমি যদি আমার থেকে দূরে থেকেও আমাকে অনুভব করো, তাহলে জানো আমি ঠিক তোমার পাশেই আছি।

ভালোবাসা কখনো দূরত্বে মাপে না, সে শুধু অপেক্ষা শেখায়।”




চিঠিটা পড়ে ইশানির চোখে জল এলো।

সে বুঝল—যে মানুষটা এত নিরব থেকেও ভালোবাসতে পারে, তাকে কখনো হারানো যায় না।



---


নতুন সাহস


পরের দিন কলেজে ইশানি আবার মিশার পাশে গিয়ে বসল।

চারপাশে গুঞ্জন শুরু হলো, কেউ হাসল, কেউ তাকাল—

কিন্তু এবার ইশানি পিছিয়ে গেল না।


মিশা অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিল।

ইশানি আস্তে বলল—

— “আমি ভেবেছিলাম দূরে থাকলে শান্তি পাব, কিন্তু আমি ভুল করেছিলাম।

তুমি আমার অশান্তিরও অংশ, মিশা… আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারি না।”


মিশা চুপচাপ তার হাতটা ধরল, কোনো শব্দ না করে শুধু চোখে হাসল।


চারপাশের সব গুঞ্জন মিলিয়ে গেল বাতাসে—

কারণ সেই মুহূর্তে, তাদের দু’জনের নীরবতা কথার চেয়েও শক্তিশালী

হয়ে উঠেছিল।



 অচেনা আলো

“ঝড়ের কেন্দ্রবিন্দু”


---

সংকটের দিন

কলেজের করিডোরে হঠাৎ করে হইচই পড়ে গেল।
কেউ একজন তাদের ছবি তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করেছে—
ছবিতে মিশা আর ইশানি হাত ধরাধরি করে নদীর ঘাটে বসে আছে।

ছবির নিচে মন্তব্যের ঝড়।
“লজ্জা নেই!”
“ছেলে পাওয়া যায়নি?”
“এইসব এখন কলেজে চলছে!”

সকালে কলেজে পৌঁছানোর পর সবাই যেন তাদের দিকে আঙুল তুলছে।
ইশানির বুক ধুকপুক করছে, গলাটা শুকিয়ে যাচ্ছে।
মিশা নিরব, কিন্তু তার চোখে তীব্র আগুন জ্বলছে।


---

প্রিন্সিপালের ঘরে

তাদের ডেকে পাঠানো হলো।
প্রিন্সিপালের কণ্ঠে ঠান্ডা রাগ—
— “তোমরা জানো কলেজের নাম এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরছে?”

ইশানি কাঁপা গলায় বলল, “স্যার, আমরা কিছু ভুল করিনি…”
প্রিন্সিপাল কঠিন চোখে তাকিয়ে বললেন,
— “তোমরা যা করছ তা সমাজে মানানসই নয়। কলেজের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।”

মিশা এবার চুপ করে থাকতে পারল না।
সোজা চোখে তাকিয়ে বলল—
— “স্যার, ভালোবাসা কি লজ্জার কিছু?”

ঘরে এক মুহূর্তে নীরবতা নেমে এলো।
প্রিন্সিপাল স্তব্ধ হয়ে গেলেন, তারপর ধীরে বললেন—
— “তুমি বুঝবে না, মিশা। সমাজ এমন ভালোবাসা মেনে নেয় না।”


---

অন্ধকারের রাত

সেই সন্ধ্যায় ইশানি ঘরে ফিরেই কেঁদে ফেলল।
মা ছবি দেখে ফেলেছেন।
চিৎকার করে বললেন—
“এইসব কীর্তি করছ? লোকের সামনে মুখ দেখাতে পারব না আমি!”

ইশানি নিজেকে ঘরে আটকে ফেলল।
মোবাইলের স্ক্রিনে মিশার নামটা বারবার জ্বলছিল, কিন্তু সে ধরতে পারছিল না।

অন্যদিকে মিশা পুরো রাত নদীর ঘাটে বসে ছিল, যেখানে তারা প্রথম একে অপরকে “আমি তোমাকে চাই” বলেছিল।
বাতাসে ভেসে আসছিল বৃষ্টির গন্ধ, আর মনে হচ্ছিল—
ভালোবাসা আজ সত্যিই ঝড়ের কেন্দ্রে এসে পড়েছে।


---

শেষ মুহূর্তের দৃঢ়তা

ভোরের দিকে ইশানি দরজা খুলে বেরিয়ে এল।
চোখ লাল, কিন্তু মুখে দৃঢ়তা।
সে ফোন তুলে মিশাকে মেসেজ করল—

> “আমি পালাচ্ছি না।
যদি ভালোবাসা ভুল হয়, তাহলে আমি সেই ভুলটা বারবার করব।”



মিশা পড়ে হাসল।
তার চোখের জল হাওয়ায় উড়ে গেল।


---

এক নতুন সূচনা

সকালে তারা আবার কলেজে গেল।
যারা হাসছিল, ফিসফিস করছিল, তারা এবার থেমে গেল।
দু’জন হাত ধরেই ক্লাসে ঢুকল, মাথা উঁচু করে।

কেউ কিছু বলল না—
কারণ যে সাহস তাদের চোখে, সেটা অনেকের নেই।


---

সেদিনই তারা বুঝল—
ঝড় সবকিছু উড়িয়ে দেয় না,
কখনও কখনও ঝড়ই আসল সাহসের জন্ম দেয়।


---