Featured Books
বিভাগ
শেয়ারড

অচেনা আলো - 3

 “আমি তোমাকে চাই”


কলেজের রুটিন এখন মিশা আর ইশানিকে এক অদ্ভুত জালে বেঁধে ফেলেছে। প্রতিদিন দেখা, একসাথে খাওয়া, আড্ডা, পড়াশোনা—সব যেন এক অদৃশ্য নিয়মে বাঁধা। কিন্তু সেই নিয়মের ভেতরে জমে উঠছে এমন কিছু, যার নাম তারা কেউ স্পষ্টভাবে উচ্চারণ করতে পারছে না।



---


মিশার চোখে নতুন কিছু


ইশানি লক্ষ্য করছিল, মিশা এখন আগের চেয়ে আলাদা।


ক্লাসে হঠাৎ হঠাৎ তার দিকে তাকিয়ে থাকা,


ছোট্ট ভুল হলে চুপচাপ সেটা ঠিক করে দেওয়া,


আর মাঝে মাঝে কথার ফাঁকে এমন কিছু বলে ফেলা, যা সরাসরি প্রেম না হলেও প্রেমের মতো শোনায়।


একদিন ক্যান্টিনে বসে হঠাৎ মিশা বলল,

— “তুমি জানো, আমি যদি কোনোদিন পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাই, তবে আমার খোঁজে প্রথম কে কাঁদবে বলে মনে হয়?”


ইশানি ভ্রু কুঁচকে তাকাল।

— “এমন বাজে কথা বলো কেন?”


— “না রে, সত্যি। আমার মনে হয়… সেই মানুষটা তুমি।”


ইশানির বুক কেঁপে উঠল। সে কিছু বলতে পারল না। কফির কাপটা হাতে নিয়ে শুধু চুপচাপ মিশার দিকে তাকিয়ে রইল।



---


এক চিঠির গল্প


লাইব্রেরিতে একদিন মিশা হঠাৎ একটা চিঠি বের করে ইশানির সামনে রাখল।

— “এটা তুমি লিখেছ, তাই না?”


ইশানি ভয়ে কাঁপতে লাগল।

— “কোন চিঠি?”


মিশা ডায়েরির ভাঁজ থেকে বের করা ছোট্ট কাগজটা দেখাল—যেটা ইশানি গোপনে রেখেছিল।

মিশার চোখে হাসি।

— “তুমি ভেবেছিলে আমি চিনতে পারব না? প্রতিটি শব্দে তোমার গন্ধ আছে, ইশানি।”


ইশানির গলা শুকিয়ে গেল।

সে বলল না কিছুই, শুধু চোখ নামিয়ে নিল।


মিশা ধীরে ধীরে তার হাত ধরল।

— “তুমি কেন লুকাও? আমি তো চাই তুমি সত্যি বলো… আমাকে নিয়ে তোমার মনে কি আছে।”



---


প্রথম স্বীকারোক্তি


সেদিন বিকেলে, কলেজ থেকে ফেরার পথে হঠাৎ বৃষ্টি নামল। রাস্তাটা ভিজে গেল, সবাই ছুটে পালাল। মিশা আর ইশানি একটা বড় গাছের নিচে দাঁড়াল।


জলভেজা চুল, ঠান্ডা হাওয়া, আর চারপাশে শুধু বৃষ্টির শব্দ।

মিশা হঠাৎ বলল,

— “ইশানি, তুমি যদি আজও না বলো, আমি তবে বলে ফেলি—আমি তোমাকে চাই।”


ইশানি অবাক হয়ে তাকাল।

— “তুমি… তুমি কি জানো, তুমি কি বলছ?”


— “হ্যাঁ। আমি জানি। আমি তোমার সাথে থাকতে চাই, তোমার সাথে হাসতে চাই, তোমার সাথে কাঁদতে চাই। আমি তোমাকে শুধু বন্ধু হিসেবে চাই না, আমি তোমাকে আমার সবকিছু হিসেবে চাই।”


ইশানির চোখ ভিজে উঠল। ঠোঁট কাঁপছিল।

সে আস্তে আস্তে বলল,

— “আমি… আমিও তোমাকে চাই, মিশা। সেই প্রথম দিন থেকে।”


মিশা হেসে উঠল, তারপর হঠাৎ ইশানিকে জড়িয়ে ধরল।

বৃষ্টির মধ্যে দু’জনের শরীর কাঁপছিল, কিন্তু বুকের ভেতর শান্তি জমছিল।



---


নতুন পথের শুরু


সেই দিনটা যেন তাদের জীবনে নতুন অধ্যায় খুলে দিল।


মিশা এখন খোলাখুলি তার অনুভূতি প্রকাশ করে।


ইশানি আর লুকোতে চায় না।


তাদের মধ্যে এখন এক অদৃশ্য নয়, দৃশ্যমান সম্পর্ক তৈরি হয়েছে।


কিন্তু তারা দু’জনেই জানত, এই পথ সহজ নয়।

সমাজের চোখ, পরিবারের শাসন—সব মিলিয়ে এই ভালোবাসাকে টিকিয়ে রাখা সহজ হবে না।


কিন্তু সেই মুহূর্তে, বৃষ্টির ভেজা পথে দাঁড়িয়ে, তারা শুধু একটাই

প্রতিজ্ঞা করল—

"যাই হোক না কেন, আমরা একে অপরকে ছেড়ে যাব না।"



---

তুমি আমি দু’জন পাশাপাশি,

ভালোবাসার শপথে বাঁধা,

ঝড় এলে ধরব হাত শক্ত করে,

হার মানব না কোনো বাধা।


চোখে চোখে জমে আছে স্বপ্ন,

হৃদয়ে আগুনের আলো,

তুমি আছো বলেই আমি বাঁচি,

তুমি ছাড়া সবই কালো।


চারপাশে হাজার কথা,

হাজার প্রশ্ন, হাজার শাসন,

কিন্তু আমরা জানি ভালোবাসা

শক্তির সবচেয়ে বড় ভাষণ।


অন্ধকার যতই আসুক সামনে,

আমরা জ্বালাব আশার প্রদীপ,

জীবন যদি পথ রুখে দেয়,

তবু থাকব একসাথে গভীর।


তোমার কাঁধে মাথা রেখে

সারা দুঃখ ভুলে যাই,

তুমি আমার চাওয়া-পাওয়া,

তুমি আমার সকল জ্বালাই।


যে প্রেম লুকিয়ে ছিল এতদিন,

আজ সে কথা গায় খোলা গানে,

জীবন যদি কঠিন হয় 

আমরা থাকব পাশাপাশি প্রাণে।

----

গল্পের শেষ পর্যন্ত সঙ্গে থাকার জন্য সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। 💌 লিখতে গিয়ে কোথাও ভুল হলে তা ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আপনাদের প্রতিটি মন্তব্য আমার কাছে অত্যন্ত মূল্যবান, কারণ পাঠকের প্রতিক্রিয়াই লেখকের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। আপনারা কীভাবে গল্পটা অনুভব করলেন, কোন অংশ ভালো লেগেছে বা কোথায় আরও ভালো করা যেত—সবটাই জানালে আমার পরবর্তী লেখাগুলোতে নতুন রঙ যোগ হবে। আপনাদের ভালোবাসা আর মতামতই আমার কলমের জ্বালানি। তাই দয়া করে মন্তব্য করতে ভুলবেন না। 🌸