Featured Books
বিভাগ
শেয়ারড

গ্রিক প্রেমের গল্প 4 - PYRAMUS THISBE

PYRAMUS & THISBE

পিরামস ও থিবস


Matrubharti



© COPYRIGHTS

This book is copyrighted content of the concerned author as well as Matrubharti.

Matrubharti has exclusive digital publishing rights of this book.

Any illegal copies in physical or digital format are strictly prohibited.

Matrubharti can challenge such illegal distribution / copies / usage in court.


PYRAMUS & THISBE

ব্যাবিলনে़ যেখানে সেমিরামিসের আধিপত্য ছিল़ সেখানে পিরামাস ছিলেন একজন সুপুরুষ যুবক আর থিবস ছিল অতীব সুন্দরী তরুণী। তাঁরা দুটি পাশাপাশি বাড়িতে বাস করত। পাশাপাশি বাস করার জন্য দুজনে একে অপরের কাছে চলে আসে এবং দুজনের মধ্যে ভালবাসা গড়ে উঠে।

তাঁরা বিয়ে করতে চাইল কিন্তু তাদের মা বাবা এ ব্যাপারটা ভাল চোখে দেখে নি। একটা কথা তাঁরা মানতে বাধ্য যে़ উভয়ের আকুলতায় ভালবাসা উদ্ভাসিত হয়ে উঠে। তাঁরা দুজনে আকারে ইঙ্গিতে কথা বলত এবং বাঁধা পেয়ে দুজনের অন্তরেই জ্বলন্ত প্রেমের শিখা আরও প্রবল উজ্জ্বল হয়ে উঠে।

দুই বাড়ির মাঝখানে যে দেওয়াল ছিল তাতে একটি ফাটল ছিল। এটি কারুর চোখে পরেনি কিন্তু দুই প্রেমিকের তা নজর এড়ায় নি। ভালবাসা কি না করতে পারেॐ এই ফাটলের মধ্যে দিয়ে দুজনে রোজ চাপা গলায় কথা বলত।

পিরামাস দেওয়ালের একদিকে আর থিবস দেওয়ালের অন্য দিকে দাড়িয়ে থাকত আর তাদের হৃদস্পন্দন মিশে যেত। “নিষ্ঠুর দেওয়াল” তাঁরা বলত़ “ কেন তুমি দুই প্রেমিককে আলাদা করেছোऋ কিন্তু আমরা অকৃতজ্ঞ নই। আমরা তোমার কাছে ঋণী হয়ে থাকব। আমরা স্বীকার করছি़ প্রেমের বার্তা প্রেমীর কাছে পৌঁছানোর জন্য আমরা তোমার কাছে কৃতজ্ঞ।

দেওয়ালের দুই দিক থেকে এইভাবে তাঁরা কথা বিনিময় করত़ আর রাত হলে তাঁরা একে অপরকে বিদায় জানাত़ আর এই ভাবেই কাছে না এসেও তাঁরা দুজনে দেওয়ালের দুদিক থেকে নিজেদের ঠোঁট দেওয়ালের উপর চেপে ধরে চুম্বনের স্বাদ পাবার চেষ্টা করত।

পরদিন সকালে যখন ভোরের আলো তাঁরাদের ঢেকে ফেলল़ সূর্যের কিরণ ঘাসের অপর থেকে বরফ গলিয়ে দিল़ তাঁরা আগে থেকে ঠিক করে রাখা স্থানে মিলিত হল।

তারপর তাঁরা তাদের দুর্ভাগ্যকে দোষারোপ করে़ তাঁরা স্থির করল़ পরদিন রাতের বেলা যখন সবাই ঘুমিয়ে থাকবে তখন সকলের নজর এড়িয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে নগর প্রান্তের এক নির্জন বনভূমিতে নিনাসের স্মৃতিস্তম্ভের কাছে তাঁরা মিলিত হবে এবং যে আগে আসবে একটি নির্দিস্ট গাছের নিচে অপেক্ষা করবে।

নির্জন ঝর্ণার ধারে একটি সাদা ম্যালবেরি গাছ ছিল। সব কিছু স্থির করে তাঁরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে লাগলো কখন সূর্য ডুববে আর অন্ধকার হবে।

অবশেষে থিবস পরিবারের সকলের নজর এড়িয়ে একটি ওড়নায় নিজের মুখ ঢেকে নির্দিস্ট স্মৃতিস্তম্ভের উদ্দেশ্যে যাবার জন্য রাস্তায় বেরিয়ে পড়ল। সেখানে পৌঁছে থিবস নির্দিস্ট গাছের নিচে এসে বসলো। রাতের অন্ধকারে একা একা বসে থাকতে হটাত একটি সিংহীর গর্জন শুনতে পেল़ সদ্য শিকারের চিহ্ন তার মুখে লেগে আছে। সে তৃষ্ণা দূর করার জন্য ঝর্ণার দিকে আসছিলো।

সিংহীর গর্জন শুনে থিবস প্রাণভয়ে একটি গুহার মধ্যে আশ্রয় নি। প্রাণভভয়ে ছোঁটার সময় তাঁর ওড়নাটা খুলে পরে গেল। সিংহী জল খেয়ে নিজের তৃষ্ণা মিটিয়ে জঙ্গলে ফেরার পথে মাটিতে ওড়নাটি দেখতে পেয়ে রক্তাক্ত মুখে সেটি ছিঁড়ে খুঁড়ে ফেলল।

একটু পরেই পিরামাস নির্দিস্ট স্থানে এসে উপস্থিত হলেন। সে বালির ওপরে সিংহের পায়ের ছাপ এবং তার মুখ থেকে যে রক্ত বেড়িয়েছিল তার চিহ্ন দেখতে পেল।

সে হটাত রক্তমাখা শতছিন্ন ওড়নাটি দেখতে পেয়ে চিৎকার করে উঠল़ “হায় রেॐ হতভাগ্য মেয়ে। আমিই ওর মৃত্যুর জন্য দায়ী। আমার চাইতে ওর জীবন অনেক মুল্যবান ছিল। আমিই আসল অপরাধী़ কারন এমন একটা বিপদসংকুল স্থানে তাকে আসতে বাধ্য করেছি। হে সিংহ পাহাড় থেকে বাইরে বেরিয়ে এসে তোমার ধারালো দাঁত নখ দিয়ে আমার এই শরীরটাকে ছিন্ন ভিন্ন করে দাও”।

সে ওড়নাটিকে বুকে জড়িয়ে নির্দিস্ট গাছটির নিচে এসে দাঁড়াল। ওড়নাটা বুকে জড়িয়ে চোখের জলে ভিজিয়ে বারবার চুম্বন করতে লাগলো। “ আমার রক্তেও ভিজে যাক এই ওড়নাটা” এই বলে তাঁর তরবারি কোষমুক্ত করে বসিয়ে দিল নিজের বুকে।

তাঁর শরীর থেকে রক্তের ধারা বেরিয়ে সাদা ম্যালবেরি গাছ লাল হয়ে গেল আর রক্ত মাটি ভিজে সেই রক্তের ধারা বয়ে গাছের কান্ড দিয়ে বয়ে গাছের ফলও রঙ্গিন করে দিল।

ইতিমধ্যে़ থিবস তখনও ভয়ে কাঁপছিল কিন্তু তাঁর ভালবাসার মানুষটি যাতে নিরাশ হতে না হয় সেই ভেবে সাবধানে বাইরে বেরিয়ে এল। কি বিপদের মধ্যে পরেছিল তা তাকে জানাবার জন্য চারদিকে পিরামাসকে খুঁজতে লাগল। যখন সে নির্দিস্ট স্থানে এসে পৌঁছে ম্যালবেরি গাছের বদলে যাওয়া রং দেখে অবাক হয়ে ভাবল़ এটাই কি সেই জায়গা এখানে তাদের দেখা করার কথা ছিল।

থিবসের মনে যখন সন্দেহের উদ্রেক হল তখনই তাঁর মনে হল কেউ যেন মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছে। পিছনে ফিরে তাকিয়ে তাঁর মেরুদন্ড দিয়ে শীতল স্রোত বয়ে গেল।

তাঁর প্রেমিককে চিনতে পেরে পিরামাসের রক্তাক্ত বুকের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। তাঁর নিঃস্পন্দ দেহ জড়িয়ে ধরে চোখের জলে ভাসিয়ে তাঁর শীতল ঠোঁটে বারবার চুম্বন করতে লাগল।

“ও পিরামাস”़ সে বুক ফাটা আর্তনাদ করে উঠলো। “এটা কি করে হলऋ জবাব দাও़ পিরামিস़ দেখ़ তোমার থিবস কথা বলছে। শুনতে পাচ্ছ़ দয়া করে মুখ তোল”।

থিবসের নাম শুনে পিরামাস অনেক কষ্টে চোখ খুলল़ খুলেই আবার তা বন্ধ হয়ে গেল। থিবস দেখল তাঁর ওড়নাটি রক্তে ভেসে যাচ্ছে আর তরবারির কোষ খালি।

“আমার জন্য নিজের হাতে এই সর্বনাশ করলে” থিবস আর্তনাদ করে উঠল। আমিও এই দুঃসাহসিক কাজ করতে পারি़ আর আমার ভালবাসাও তোমার ভালবাসার মতই গভীর। আমিও মৃত্যুকে বরণ করে নেব। একমাত্র মৃত্যুই আমাদের আলাদা করতে পারবে। আর আমাদের অসুখী মা বাবা আমাদের প্রত্যাখ্যান করতে পারে কিন্তু আমাদের মৃত্যুকে নয়। আমরা মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে চিরদিনের জন্য মিলিত হব। আমাদের যে একসাথে সমাধিস্থ করা হয় এবং এই গাছ যেন চিরদিন আমাদের স্মৃতিচিহ্ন বহন করে।

এই বলে থিবস তাঁর বুকে তরবারি বসিয়ে দিল। তাঁর মা বাবা এবং ঈশ্বরও তাদের শেষ ইচ্ছে পূর্ণ করলেন। দুটি দেহই একসাথে সমাধিস্থ করা হল এবং সেদিন থেকেই ম্যালবেরি গাছে বেগুনি ফল ফলতে শুরু করল।