Pygmalion & Galate
পিগমালিয়ন ও গালাটিয়া
Matrubharti
© COPYRIGHTS
This book is copyrighted content of the concerned author as well as Matrubharti.
Matrubharti has exclusive digital publishing rights of this book.
Any illegal copies in physical or digital format are strictly prohibited.
Matrubharti can challenge such illegal distribution / copies / usage in court.
Pygmalion & Galate
প্রাচীন গ্রীসের সাইপ্রাস দ্বীপে পিগমালিয়ন নামে এক সুপুরুষ ও প্রতিভাশালী ভাস্কর ছিলেন। তিনি তাঁর কাজকে খুব ভালবাসতেন। তিনি ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাতির দাঁতের ওপর সুন্দর সুন্দর মূর্তি খোদাই করার কাজে নিমগ্ন হয়ে থাকতেন। এই শিল্প কর্মে ডুবে থাকাটা ছিল তাঁর জন্য সবচেয়ে সুখের মুহুর্ত।
একদিন উনি অনেক বড় একখন্ড হাতির দাঁত বেছে নিয়ে অনেক সময় ধরে এর ওপর খোদাইয়ের কাজ চালাচ্ছিলেন। যতক্ষন না কাজটি সম্পূর্ণ হচ্ছে ততক্ষন তিনি এর ওপর খোদাই করেই চলছিলেন। তিনি এক সুন্দরী মহিলার মূর্তি তৈরি করছিলেন। মূর্তিটি এত নিখুঁতভাবে খোদাই করছিলেন যে জীবন্ত এক মহিলা বলে মনে হচ্ছিল।
পিগমালিয়ন তাঁর এই সৃষ্টির প্রেমে পরে গেলেন। তাঁর মনে হল़এ এত সুন্দর। এই ভেবে তিনি মূর্তিটিকে পোশাক পরিয়ে দিলেন़ হাতে কানে গলায় অলঙ্কার দিলেন़ নাম দিলেर्ন গালাটিয়া। এর অর্থ হল “সুপ্ত ভালবাসা”।
গালাটিয়াকে নিজের প্রেমিকা বলে মনে করতে শুরু করলেন।তিনি তাঁর ঐ হাতির দাঁতের মূর্তির জন্য নুড়ি পাথর़ ছোট্ট পাখি আর নানান রঙের ফুল़ যা কিছু তিনি মনে করতেন যে তাকে পরিতৃপ্ত করবে সেই সব কিছু নিয়ে এলেন। তাঁর প্রেমে তিনি অন্ধ হয়ে গেলেন।
বুঝতেই পারছেন যে़ পিগমালিয়ন নিজের শিল্পকর্মে এতটাই আবিষ্ট ছিলেন যে তিনি প্রতিজ্ঞা করলেন যে তিনি আর বিয়েই করবেন না। মেয়েদের জন্য তাঁর কাছে কোন সময়ই ছিল না। তিনি সবসময় বলতেন़ শুধুমাত্র তাঁর শিল্প আর তাঁর ভাস্কর্য এই ছিল তাঁর জীবন।
মহিলাদের প্রতি বিতৃষ্ণার একটি বড় কারন ছিল। সাইপ্রাসের ঐ অঞ্চলের মহিলারা প্রেমের দেবী আফ্রোদিতেকে শ্রদ্ধা জানাতে ব্যর্থ ছিলেন।আফ্রোদিতে ছিলেন সাইপ্রাসের রক্ষাকর্তা ।
মহিলাদের এই অশ্রদ্ধার শাস্তি হিসেবে আফ্রোদিতি़ সেখানকার সকল নারীকে প্রেমবিহীন পতিতালয়ের জীবন কাটাবার অভিশাপ দিলেন। এইজন্যই পিগমালিয়নের মহিলা বা বিশেষ কোন নারীর প্রতি আসক্তি সৃষ্টি হয় নি।
তবুও যতই তিনি গালাটিয়াকে দেখছেন ততই তাঁর মনে হচ্ছে़ যদি সত্যি সত্যিই এর মত স্ত্রী তিনি পেতে পারতেন। মূর্তিটি এতই সুন্দর আর এতই নিখুঁত ছিল যে তিনি রক্ত মাংসের মানুষ বলে তাকে স্বপ্নে দেখতেন। তিনি স্বপ্নে দেখতেন যেন মূর্তিটি তাঁর কথার জবাব দিতে পারছে আর তাকে ছুঁতেও পারছে।
প্রেম এবং সৌন্দর্যের দেবী আফ্রোদিতেকে শ্রদ্ধা প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে আয়োজিত এক উৎসবের দিনে আফ্রোদিতের মন্দিরে গিয়ে পিগমালিয়ন তাঁর তৈরি মূর্তির আদলে কাউকে স্ত্রী হিসেবে পাবার জন্য দেবীর কাছে প্রার্থনা করেন। তাঁর প্রার্থনা এতই আকুল আর আন্তরিক ছিল আর তাঁর আবেগ এতই গভীর ছিল যে তা দেবীর কানে পৌঁছায়।
ব্যাপারটি কি যা নিয়ে ভাস্কর এত আবেগপ্রবন হয়ে পড়েছে তা জানার জন্য স্বয়ং আফ্রোদিতে পিগমালিয়নের বাড়িতে উপস্থিত হন আর সেখানে হাতির দাঁতের ভাস্কর মূর্তি গালাটিয়াকে সচোক্ষে দেখে বিস্মিত হন। মূর্তিটি এতই নিখুঁত ছিল যে দেবী ভাবতে বাধ্য হন যে মূর্তিটি ঠিক যেন তাঁর আদলে তৈরি।
প্রকৃতপক্ষে़ পিগমালিয়ন তাঁর তৈরি মূর্তিটি অপরূপ সুন্দরী আফ্রদিতের আদলে তৈরি করেছিলেন।
আফ্রদিতে সন্তুষ্ট হয়ে़ এমনকি পিগমালিয়ন বাড়ি ফেরার আগেই তৎক্ষনাত মূর্তিটিতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করলেন। পিগমালিয়ন বাড়ি ফিরে অভ্যেস মত গালাটিয়াকে চুমু খেতেই তিনি উষ্ণতা অনুভব করলেন। ধীরে ধীরে মূর্তিটির মধ্যে প্রান সঞ্চার হচ্ছে এটি উপলব্ধি করে তিনি উল্লসিত হয়ে উঠলেন। গালাটিয়া তাঁর প্রিয় স্রষ্টার দিকে হাসি মুখে তাকিয়ে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলতে শুরু করলেন।
গালাটিয়া़ পিগমালিয়নকে বলল যে़ তাঁর গভীর প্রেমের ফলস্বরূপ দেবী সন্তুষ্ট হয়ে তাঁর তৈরি মূর্তিতে প্রাণ সঞ্চার করেছেন। তারা দুজনেই মহান আফ্রোদিতেকে শ্রদ্ধা সহকারে ধন্যবাদ জানালেন।
এরপর তারা দুজনে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিলেন এবং তাদের বিয়েতে আফ্রোদিতেকে বিশেষ অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানালেন। পিগমালিয়ন তাঁর এই সৌভাগ্যের জন্য আফ্রোদিতেকে শ্রদ্ধা জানাতে ভুলতেন না। সে এবং গালাটিয়া দুজনে মিলে সারা জীবন ধরে আফ্রোদিতেকে উপহার দিতে এবং তাঁর প্রার্থনা সঙ্গীত গেয়ে গেছেন।
আফ্রোদিতে এর বিনিময়ে তাদের প্রেমময় সুখী জীবনের আশীর্বাদ করেন এবং তাদের দীর্ঘায়ু ও সুখী জীবনের অনুমতি প্রদান করেন। তাদের দুই সন্তান জন্ম নিল একটি পুত্র ও অপরটি কন্যা। ছেলের নাম রাখা হল পাফোজ আর মেয়ের নাম দিল মেথারমে। তাদের ছেলের নামেই সাইপ্রাসের শহরের নাম পাফোজ রাখা হয়।
মহিলাদের বিরুদ্ধে পিগমালিয়নের মনে এত বিদ্বেষ ভরা ছিল যে কামের প্রতি তাঁর মনে ঘৃণার সৃষ্টি হয়েছিল এবং তিনি অবিবাহিত থাকার সংকল্প নিলেন। তিনি ছিলেন একজন ভাস্কর। তাঁর তৈরি হাতির দাঁতের মূর্তি এতই নিখুঁত এতই সুন্দর হত যে কোন রক্ত মাংসের নারী এর ধারেকাছে যেতে পারত না।
তাঁর তৈরি মূর্তি এতই নিখুঁত হত যে জীবন্ত নারী বলে ভুল হত। তাঁর শিল্প কর্ম এতই নিখুঁত ছিল যে তাঁর তৈরি মূর্তি প্রকৃতির সৃষ্টিকর্ম বলে ভুল হত।
পিগমালিয়ন নিজেই নিজের কাজের প্রশংসা করতেন এবং অবশেষে নিজের সৃষ্টির প্রেমে পরে যেতেন। প্রায়শই মূর্তির গায়ে হাত বুলিয়ে নিজেকে আস্বস্ত করতেন़ এটি জীবন্ত কিনা তা পরখ করে দেখতেন তবুও বিশ্বাস হত না যে মূর্তিটি নকল़ হাতির দাঁতের তৈরি।
মূর্তিটিকে সযত্নে আদরে তরুণীরা যা কিছু ভালবাসে তাই তাকে উপহার দিত। উজ্জ্বল পাথর़ ছোট ছোট পাখি ও নানান রঙ্গের ফুল़ পাথরের মালা এনে তাকে সাজাত।
তাঁর অঙ্গে পড়িয়ে দিত পরিচ্ছদ़ আঙুলে অলঙ্কার़ গলায় নেকলেস। কানে দিত কানের দুল আর মুক্তোর মালা দিয়ে সুডোল বক্ষ আচ্ছাদন করে দিত। পোশাক़ অলঙ্কার তাকে সুন্দর করে তুলত কিন্তু বিনা পোশাক পরিচ্ছদেও তাঁর কমনীয়তা এতটুকু কম হত না।
টাইরিয়ানে রাঙানো কাপড় বিছানো শয্যায় তাকে শুইয়ে রাখতো আর তাকে নিজের স্ত্রী বলে ভাবত। অনেক যত্নে পালকের বালিশে তাঁর মাথা রাখত।
ভেনাসह्यআফ্রোদিতেहृ উৎসব আসন্ন – সাইপ্রাসে উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে এই উৎসব উদযাপন করা হত। পূজার বেদী ধূপে আচ্ছাদিত হয়ে উঠত। চারদিকের বাতাস ধুপকাঠির গন্ধে ভরে থাকত।
পিগমালিয়ন মহাসমারোহে বেদীর সামনে দাড়িয়ে ভীত কন্ঠে প্রার্থনা করতেर्ন “হে ঈশ্বর़ আপনি সবকিছু করতে পারেন़ আমি আপনার কাছে আমার সহধর্মিণীর প্রার্থনা করছি”। “আমার হাতির দাঁতের মূর্তি” না বলে তিনি বললেন़ আমার তৈরি মূর্তির মত একজনকে স্ত্রী হিসেবে পাওয়ার জন্য প্রার্থনা করছি।
ভেনাস ह्यআফ্রোদিতেहृ ঐ উৎসবে সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি তাঁর প্রার্থনা শুনতে পেলেন এবং পিগমালিয়নের মনের কথা বুঝতে পারলেন। ভেনাস তাঁর মনোকামনা পূর্ণ করার ইঙ্গিত স্বরূপ বেদীর সামনে জলন্ত প্রদীপের আলো তিনবার উজ্জ্বলভাবে জ্বলে উঠল।
বাড়ি ফেরার পর़ পিগমালিয়ন অভ্যাসমত তাঁর তৈরি মূর্তি দেখতে গেল। শয্যার সামনে গিয়ে উপুড় হয়ে তাঁর ঠোঁটে এঁকে দিল এক চুম্বন। তিনি যেন উষ্ণতা অনুভব করলেন। তিনি আবার তাঁর ঠোঁট চেপে ধরলেন মূর্তির ঠোঁটে़ দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরলেন তাকে।তিনি অনুভব করলেন তাঁর ছোঁয়ায় মূর্তিটি যেন নিজেকে তাঁর কাছে সমর্পণ করল।
খুশিতে হতবাক হয়ে গেলেন তিনি। ভয়़ সন্দেহ সব মিলেমিশে হতভম্ব অবস্থার মধ্যে প্রেমিকের আকুলতা নিয়ে তিনি বারবার তাঁর ভালবাসা़ তাঁর আশার আলোকে হাত দিয়ে স্পর্শ করে চলছিলেন।
জীবন্তॐ আঙ্গুল দিয়ে স্পর্শ করে বুঝলেন মূর্তিতে প্রানের সঞ্চার হয়েছে। অবশেষে ভেনাসের পূজারী़ দেবীকে ধন্যবাদ জানাবার জন্য মুখে কথা ফুটল। তিনি দেবীকে ধন্যবাদ জানালেন। এবার নিজের ঠোঁট তাঁর ঠোঁটের ওপর চেপে ধরে উষ্ণতা অনুভব করলেন।
চুম্বনের ফলে তরুণী লজ্জা পেয়ে ধীরে ধীরে দুচোখ তুলে তাকাল। প্রেমিকের মুখে দৃষ্টি নিবদ্ধ করল। ভেনাস তাদের পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হবার আশীর্বাদ করলেন। পাফোস নামে তাদের একটি পুত্র সন্তান জন্ম নিল। পবিত্র ভেনাসের এই সন্তানের নামেই সাইপ্রাসের একটি শহরের নামকরণ হয়েছে।