Featured Books
বিভাগ
শেয়ারড

কবিতামঞ্জরী - কবির কবিতাগুচ্ছ

শ্রেষ্ঠ প্রাণী

অশোক ঘোষ

 

ধরণীর মাঝে যত প্রাণী আছে সবা হতে আমি শ্রেষ্ঠ,

আমি আপনার মেধায় আপনি মোহিত চাপড়াই মম পৃষ্ঠ।

আমি ছাড়া আর অবনীর বুকে বিচরিছে যত প্রাণী,

নিকৃষ্ঠ তারা জ্ঞান-বোধহীন ইতর বলিয়া মানি।

আমি নানা নামেতে ঈশ্বর আর ধর্ম করিয়া সৃজন,

হিংসা-দ্বেষ ঘৃণা ছড়ায়েছি আমি করেছি আমার বিভাজন।

লোতে ভরপুর আমার চিত্ত বাসনার সীমা নাই,

ধরিত্রীর বক্ষে যা হেরি চক্ষে সকলই আমার চাই।

বিষাই আমি বারি সমীরণ, ধরণীকে করি দীর্ণ,

করি আপন মেধার অপব্যবহার বাসনা করিতে পূর্ণ।

নিদারুণ তাপে যে তরুছায়া মোরে সদা করে সুশীতল,

সুমিষ্ট ফলে তৃপ্ত করে মোরে, মিটায় জঠরানল।

করিয়া শোধন বায়ুর দূষণ যোগায় অম্লজান,

সেই শুরুবরে নির্মূল করে বনভূমি করেছি শ্মশান।

আমি অগণিত প্রাণী করিয়া হনন উদর পুরেছি নিত্য,

সর্বভূক আমি তাই সবকিছু খাই রসনা করিতে তৃপ্ত।

আমি আপন মেধায় বানিয়েছি অস্ত্র বিশ্ব বিনাশকারী,

আমি গগন ভেদিয়া আকাশযানে হয়েছি মহাকাশচারী।

আমি জ্ঞানান্ধ হয়ে ধরিত্রী মাতাকে সরাজ্ঞান সদা করি,

আমি মহাজ্ঞানী সবকিছু জানি অসীম অহংকারী।

আমার অসীম লোভের আগুনে বসুমতী ছারখার,

সবা হ'তে আমি শ্রেষ্ঠ প্রাণী মানুষ নামে জানোয়ার।

                    -------------

অলীক সুখের সন্ধানী

অশোক ঘোষ

 

তিনটি জিনিষ জীবনযাত্রায় নিত্য প্রয়োজন,

উদর পূরণ রোজ দুইবার,

অঙ্গবস্ত্র সঙ্গে তাহার

মাথর উপর একটু আচ্ছাদন ৷

প্রয়োজন যায় গো মিটে অতি সহজে,

তবু মোরা হইনা খুশী,

চলছি ছুটে দিবানিশি,

অনাবশ্যক অলীক সুখের খোঁজে ৷

সকল জীবের খাদ্য আছে ধরাবক্ষ ভরা,

মানুষ ছাড়া যতেক প্রাণী,

সেই খাবারেই তুষ্ট জানি,

সর্বভূক তাইতো কভু হইনা খুশী মোরা ৷

পাতায় ছাওয়া ছোট্ট কুটির চারপাশে গাছপালা,

সেই তো সুখের ঠিক ঠিকানা,

তাতে মোদের আশ মেটেনা,

চাই গো মোরা প্রাসাদ সাতমহলা ৷

নাল্পেসুখমস্তি,এই মন্ত্র মোরা জানি,

তাই তো মোরা চাই যে পেতে,

আছে যা সব এই জগতে,

চাই গো হতে সকল ধনে ধনী ৷

ক্ষণস্থায়ী জীবনদীপ নিভবে সবাই জানি,

জেনেও তবু আমরা সবাই,

জগৎজুড়ে ছুটে বেড়াই,

আমরা যত অলীক সুখের সন্ধানী ৷

__________

 

                        নির্মমতা

                    অশোক ঘোষ

 

বড় খুশী আজ  ধবলী গাই মা হয়েছে সে,

ছোট্ট সোনা বাছুরটা শুয়ে আছে তার পাশে।

একটু পরেই ছোট্ট বাছুর টলোমলো চার পায়ে,

দাঁড়াইয়া উঠে দেখে চারিদিকে অপার বিস্ময়ে।

আদর করে জিভ দিয়ে মা বাছুরটাকে চাটে,

তিড়িং তিড়িং লাফায় বাছুর আনন্দের চোটে।  

এমন সময় একটা মানুষ ধবলীকে টেনে নিয়ে,

রাখলো বেঁধে খোঁটার সাথে শক্ত দড়ি দিয়ে,

বাছুরটাকেও রাখলো বেঁধে মায়ের থেকে দূরে।

ক্ষুধায় হলো কাতর বাছুর একটু সময় পরে,

ছটফটায় আর মাকে ডাকে করূণ কাতর স্বরে।

তাই না দেখে দুঃখে মায়ের দুচোখ জলে ভরে।

মায়ের বাঁটটি পূর্ণ দুধে শিশুর খাবার তরে,

অসহায় মা বাচ্চাকে দুধ খেতে দিতে নারে।

এমন সময় একটি মানুষ হাতে নিয়ে কেঁড়ে,

বাছুরটাকে মায়ের কাছে এনে দিল ছেড়ে।

বাঁটটা মুখে নিল বাছুর দুগ্ধ পানের তরে,

মাতৃস্তন্যের পীযূষ ধারা শিশুর মুখে ঝরে।

যেই না এলো দুধের ধারা বাছুরটাকে ধরে,

সরিয়ে দিল মানুষটা তাকে মায়ের থেকে দূরে।

সবটুকু দুধ নিংড়ে নিয়ে ভরিয়ে তার কেঁড়ে,

ক্ষুধায় কাতর বাছুরটাকে মানুষটা দেয় ছেড়ে ।

মুক্তি পেয়ে ছোট্ট শিশু মায়ের কাছে যায়,

মাতৃস্তন্য টানতে থাকে একটু দুধের আশায়।

একটি ফোঁটাও দুধ পেলো না ছোট্ট শিশুটি,

ভীষণ কষ্টে ভিজলো জলে মায়ের চোখ দুটি।

মনে মনে কয় শোনরে বাছা আমি বড় অসহায়,

মানুষের থেকে মুক্তি পাবার নাই কোনো উপায় ।

কখনো শুনিনি অ্ন্য প্রাণী মানুষের দুধ খায়,

তবুও মানুষ নানান প্রাণীর দুধটুকু দুয়ে নেয়?

মোদের শিশুরা না পেয়ে দুধ রইবে অনাহারে,

সে দুধ কাড়িয়া লইছে মানুষ আপন পুষ্টিতরে।

এই ধরাতলে যা কিছু আছে মানুষের সবই চাই,

এ জগৎবাসী বাকি প্রাণীদের কোনো অধিকার নাই।

কাঁদিসনা বাছা শেষের সেদিন আর বেশি নাই দূরে,

মানুষ নিত্য খুঁড়িছে কবর আপন বিনাশ তরে।

                  ___________

            মধুচোর

         অশোক ঘোষ

 

বাতাস কহিল গিয়া মধুপের কানে,

নানা ফুল ফুটিয়াছে কুসুম কাননে ।

ত্বরা করি যাও সবে কুসুম কানন,

কুসুম-কোরকে মধু করো আহরণ ।

বারতা পাইয়া সব মধুকরগণ,

গুঞ্জরিয়া পঁহুছিল কুসুম কানন ৷

কুসুমের বক্ষে বসি মধুকরগণ

করাইল কুসুমের পরাগ মিলন ৷

তারপর পুষ্প হতে মধু আহরিয়া,

মধুচক্রে অলিগণ আসিল ফিরিয়া ।

আহরিত মকরন্দ পরম যতনে,

রাখিল মধুপগণ মধুচক্র কোণে ৷

বিন্দু বিন্দু মকরন্দ বার বার আনি,

মধুময় করে তোলে মধুচক্রখানি ৷

মানুষে সে মধুচক্র যখনি দেখিল,

মধুর লালসা তার মনে উপজিল ।

বিনাশি শতেক অলি নির্দয় মানব,

মধুচক্র টুটি মধু হরি নিল সব ।

মানুষের মন পূর্ণ সীমাহীন লোভে,

অতি লোভে মানুষের বিনাশ ঘটিবে ।

হে মানব তব লোভে লাগাম পরাও,

সকল প্রাণীরে সুখে বাঁচিবারে দাও ।

          ~~~~~~~~

                ৷৷ বাদলের গান ৷৷

                 অশোক ঘোষ

 

তৃষায় আকুল ছিল তাপদগ্ধ ধরা,

করিল শীতল তারে শ্রাবণের ধারা।

নীলাকাশ ছেয়ে গেছে নবজলধরে,

ঝরিছে বাদলধারা অবিরাম ধারে।

ঘনমেঘ গরজিছে গুরুগুরু ধ্বনি,

মাঝে মাঝে চমকিছে রূপসী দামিনী।

পথ-ঘাট বরষার জলে ভরপুর,

ঊচ্চরবে গাহে গান পুলকে দাদুর।

হরষে পেখম মেলে নাচিতেছে কেকা,

জনহীন হাট-বাট পথ-ঘাট ফাঁকা।

মন মোর পুলকিত ধারা বরিষণে,

মগন আমি বাদলের রিমঝিম গানে।

হৈল সরস ধরা সজীব তরুলতা,

বরষায় অবগাহি ধরা পুলকিতা।

                ____

 

              নির্দয় ঈশ্বর

              অশোক ঘোষ

 

কত শত ইমারতে সেজেছে শহর,

সুরম্য প্রাসাদ কত অতি মনোহর ।

যুগ যুগ ধরি গড়ি ওঠে ক্রমে ক্রমে,

অর্দ্ধভূক্ত মজুরের কঠোর পরিশ্রমে ।

বিনিময়ে মজুর যে মূল্যটুকু পায়,

অনশনে অর্দ্ধাশনে দিন গুজরায় ।

সোনার ফসল  ক্ষেতে ফলায় যে চাষী,

চরম অভাব তাকেও রাখে উপবাসী ।

কঠিন পরিশ্রমে যারা ঝরাইছে ঘাম,

পায় নাকো কভু তারা সে শ্রমের দাম ।

যত ধন সম্পদ আছে এই ধরাতলে,

সিংহভাগ রয়েছে তার ধনীর কবলে ।

কতিপয় ধনী আছে ঐশ্বর্য্যের শিখরে,

অভাব আর অনটনে গরীব নিত্য মরে ।

সইতে হয় গরীবকে যত দুর্ভোগ,

বিত্তবান করিতেছে যত সুখ উপভোগ ।

কে বলে দীনে দয়া করে ভগবান?

তার কৃপায় ধন্য হয় যত বিত্তবান ।

এমনতরো ভগবানে নেই প্রয়োজন,

বন্ধ করি পূজা তারে দাও বিসর্জন ।

দীনের দুঃখ যে দুর নাহি করে,

প্রয়োজন নাই তার এ ভব সংসারে ।

    _____________

 

             বংশ-বন্দনা

            অশোক ঘোষ

 

প্রণমি হে বংশ তোমায়, তুমি সুমহান,

মানবের হিতে তব উৎসর্গিত প্রাণ।

নীলচে-সবুজ বর্ণ তব অতিব কৃশকায়,

দীর্ঘতম তৃণ তুমি জানে বিশ্বময়।

পোশাকি নাম বংশ তব ডাকনামটি বাঁশ,

জনহিত করে লভ বদনাম ভাগ্যের পরিহাস।

অঙ্গেতে তব প্রত্যঙ্গসম শীর্ণ ডালপালা,

শীর্ণ হোলেও করিও না কভু ইহাদের অবহেলা।

মনে রেখো ইহা বাঁশের চেয়ে কঠিনতর হয়,

জগতের মাঝে কঞ্চি নামেতে ইহাদের পরিচয়।

তব দেহ ছেদি বানিয়ে বাঁশরি বাজায় মধুর সুরে,

সে মধুসুরে কি যে জাদু আছে হদয় পাগল করে।

বাঁশীর সুরেতে হৃদয় প্রেমে হয়ে ওঠে আকুল,

যেমতি শ্যামের বাঁশীর সুরে রাধিকা হইত ব্যাকুল।

খঞ্জের তরে দেহখানি কাটি হইয়াছ তুমি লাঠি,

দরিদ্র কুটিরে তোমায় দেখি হয়ে আছো বেড়া খুঁটি।

কখনো তোমায় ঝাঁকা-ঝুড়ি করি কখনো করিগো ডালা,

ঝাড়িবার তরে নানান শস্য কখনো হওগো কুলা।

তোমা দ্বারা হয় কত আসবাব উপরে ওঠার মই,

কত রূপে তুমি বিরাজিছ ভবে তুলনা তাহার কৈ।

এত হিত তুমি করিতেছে তবু আমরা নিমকহারাম,

কৃতঘ্নের মতো আমরা নিয়ত করি তব বদনাম।

কেহ যদি চায় অন্য কাহারো অনিষ্ট করিবারে,

তোমাকেই নাকি করাবে প্রবেশ তাহার পশ্চাদ্বারে।

জানি তুমি কভু করো নাই কারো পশ্চাতে প্রবেশ,

বদনাম শুনে মনে মনে তুমি পেয়েছো বিষম ক্লেশ।

তবুও তুমি কৃতঘ্ন মানবের করিতছো উপকার,

ক্ষমাশীল তুমি মহান বংশ লহ মোর নমস্কার।

             ________

 

          পাঞ্চালীর কর্ণপ্রেম

             অশোক ঘোষ

পাঞ্চালীর বিবাহের স্বয়ংবর সভা,

উপস্থিত কর্ণ সেথা সূর্য্যসম প্রভা।

দরশনে কর্ণের কান্তি পাঞ্চালী মুগ্ধ,

হৃদয় হইল তার প্রেমানলে দগ্ধ।

অন্ত্যজ বলিয়া কর্ণ হৈলে প্রত্যাখ্যাত,

প্রেমপিয়াসী পাঞ্চালী হৈল ব্যাথাহত।

পক্ষীর অক্ষি বিদ্ধ করি সুতীক্ষ্ণ বাণে,

পাঞ্চালীরে সব্যসাচী লইলেক জিনে। 

বিধির বিধান কভু খণ্ডানো না যায়,

পঞ্চপাণ্ডবে পাঞ্চালী পতিরূপে পায়।

পঞ্চপতি লভিয়াও কৃষ্ণার অন্তর,

কর্ণ লাগি রহে সদা প্রেমেতে কাতর।

পাঞ্চালীর প্রেমের তৃষা কর্ণের প্রতি,

জানিতেন সর্বজ্ঞ কেশব মহামতি।

পাঞ্চালীর কর্ণপ্রেম প্রকাশের তরে,

সুচতুর বাসুদেব ষড়যন্ত্র করে।

বনবাসে ছিলেন যবে পাণ্ডবগণ,

কৃষ্ণমায়ায় আম্রতরু হইল সৃজন।

সুপক্ক রসাল এক ছিলো তরুশাখে,

আহ্লাদিত অর্জুন পক্ক আমটি দেখে।

পাঞ্চালী হইবে খুশী এরূপ ভাবিয়া,

শরাঘাতে পক্ক আম লইল পাড়িয়া।

অকস্মাৎ কৃষ্ণ সেথা আগমন করি,

পার্থহস্তে আম্র হেরি উঠিল শিহরি।

কহিলেন সখা পার্থ করহ শ্রবণ,

এই বনে থাকে এক মুনি মহাত্মন।

প্রত্যহ একটি আম এই বৃক্ষে ফলে,

বৃক্ষ তাহা করে দান মুনিকরতলে।

দিবাভাগে মুনিবর রহি অনশনে,

আম্রফলে ক্ষুন্নিবৃত্তি করেন সায়াহ্নে।

তরুশাখে আম্র যদি মুনি নাহি দেখে,

মুনিশাপে তুমি সখা পড়িবে বিপাকে।

কৃষ্ণের বচন পার্থ করিয়া শ্রবণ,

শুধায় কৃষ্ণরে কিবা উপায় এখন।

কেমনে মুনির ক্রোধ হবে প্রশমন,

ত্বরা করি কহ মোরে মদনমোহন।

কৃষ্ণ কহে সখা মোর করহ শ্রবণ,

প্রকাশ করিতে হবে বাসনা গোপন।

তুমি আর যতজন তব পরিবারে,

প্রকাশিবে বাসনা যত আছে অন্তরে।

গোপন বাসনা যত প্রকাশিলে তবে,

বৃন্তচ্যুত আম্র পুন শাখালগ্ন হবে।

নন্দলালের বাণী শুনি পাণ্ডবগণ,

করিল প্রকাশ যত বাসনা গোপন।

ধীরে ধীরে আম্র উঠি ধায় বৃন্তপানে,

থমকিলো বৃন্ত হতে স্বল্প ব্যবধানে।

সবশেষে কৃষ্ণাদেবী করি আগমন,

প্রকাশ করিল কিছু বাসনা গোপন।

কর্ণপ্রতি প্রেমতৃষ্ণা কৃষ্ণা নাহি বলে,

সেকারণে আম্র আসি পড়িল ভুতলে।

আম্র পতনে রুষ্ট পাণ্ডব ভ্রাতাগণ,

কহে কৃষ্ণা কহ তব বাসনা গোপন।

দ্বিধায় কম্পিত স্বরে পাঞ্চালী তখন,

কর্ণপ্রতি প্রেমাকর্ষণ করে বর্ণন।

পাষ্ণালীর কর্ণপ্রেম যেই প্রকাশিল,

অমনি রসাল উঠি বৃন্তলগ্ন হৈল।

প্রকাশিয়া পাঞ্চালীর বাসনা গোপন,

মনে মনে হাসিলেন মদনমোহন।

       ===**===

 

 

 

 

                  ছিদ্রান্বেষী

                অশোক ঘোষ

 

চালনি কহিল ডাকি শোনো সূঁচ ভাই,

তোমার পশ্চাতে ছিদ্র দেখিবারে পাই ৷

শুনিয়া কহিল সূঁচ চালনিরে ডাকি,

দর্পণে আপনারে কভু দেখ না কি?

দেখ যদি মুকুরেতে আপন চেহারা,

দেখিবে পশ্চাৎ তব শত ছিদ্রে ভরা ৷

তাই বলি খুঁজো নাকো অপরের ছিদ্র,

আপনারে করো তুমি সুজন সুভদ্র ৷

এ জগতে নিশ্ছিদ্র কেহ নয় ভাই,

অপরের ছিদ্র খোঁজা বৃথা কর্ম তাই ৷

বন্ধ করো অপরের ছিদ্র অন্বেষণ,

মানিয়া চলিও সদা এই প্রবচন ৷

           ---------

 

 

        কাটমানি কীর্ত্তন

          অশোক ঘোষ

 

অপার মহিমা তব ওগো কাটমানি,

বাংলায় মধু তুমি,ইংলিশে হানি,

                  ওগো প্রিয় কাটমানি ।

অসীম ক্ষমতা তব কি কহিব আর,

অনায়াসে কত বাধা কর তুমি পার,

তোমার গুণের কথা সকলেই জানি,

                  ওগো প্রিয় কাটমানি ।

যুগ-যুগান্ত ধরি তোমার কদর,

উৎকোচভোগী করে তোমার আদর

তোমার গুণের কথা না যায় বাখানি,

                 ওগো প্রিয় কাটমানি ।

নানা নামে এ জগতে তব পরিচয়,

কেহ বলে উৎকোচ, কেহ ভেট কয়,

নজরানা নামেও তুমি পরিচিত জানি,

                 ওগো প্রিয় কাটমানি ।

আরো কত নাম তব জানে নানা লোকে

কেউ কিকব্যাক বলে,কেউ ঘুষ নামে ডাকে,

আদর করে আবার কেউ বলে জলপানি,

                 ওগো প্রিয় কাটমানি ।

অনাদি কাল হতে মানব সভ্যতায়,

তোমার থাকার নানা প্রমাণ পাওয়া যায়,

ঈশ্বরের চেয়ে তুমি শক্তিমান জানি,

                 ওগো প্রিয় কাটমানি ।

সরকারি দপ্তরে তব লেনদেন বিনা,

বাস্তুঘুঘু বাবুরা কেউ কোনো কাজ করে না,

তোমায় পেলে কাজটা বাবু করে দেবে তখনি

                  ওগো প্রিয় কাটমানি ।

দেশ রক্ষার তরে কামান বিমান কিনে,

গান্ডেপিন্ডে খেয়েছে তোমায় বিশিষ্ট কয়েক জনে,

বলির পাঁঠা জনগণ মোরা হতবাক হয়ে শুনি,

                   ওগো প্রিয় কাটমানি ।

তব লেনদেন হয় নিরন্তর নিত্য লক্ষ কোটি,

তোমাকে দিতে কত গরীবের বিকায় ঘটি-বাটি,

কতজনে তুমি করেছো ফকির কতজনে মহা ধনী,

                    ওগো নিষ্ঠুর কাটমানি ।

এ মহান দেশে কত রাজনেতা জনতার দেয়া ক্ষমতায়,

তোমাতে ভরেছে সিন্দুক তারা, দেশের স্বার্থ গোল্লায়,

তোলা নাম দিয়ে তুলছে তোমায় সেকথা সবাই জানি।

                    ওগো প্রিয় কাটমানি ।

                         ______

 

                    আমিই কৃষ্ণ

                   অশোক ঘোষ

 

কেহ মোরে কৃষ্ণ ডাকে কেহ বা গোপাল,

আদর করিয়া কেহ ডাকে নন্দলাল।

যশোদাদুলাল বলে ডাকে কত জন,

কেহ বা ডাকিছে মোরে মদনমোহন।

রাধাকান্ত নামে মোরে ডাকে বহুজন,

গিরিধারী নামে মোরে পূজে ভক্তজন।

বংশীবদন আমি বাঁশরী বাজাই,

গোঠের রাখাল আমি ব্রজের কানাই।

নটবর নাম মোর আমিই জনার্দন,

আরো কত নাম মোর না যায় গণন।

মনে মোর এ বিশ্বাস কেন উপজিল,

নিম্নে কারণ তার বর্ণিত হইল।

                         ↓

মধ্যম পাণ্ডবে ডাকি কহিলা কেশব,

এ জগতে দেখো যাহা আমিময় সব।

আমি ছাড়া ত্রিভুবনে সবই মায়াময়,

সমগ্র মানবকুল জেনো কৃষ্ণময়।

লীলাছলে করিয়াছি জগৎ সৃজন,

সবাকার মাঝে আমি করি বিরাজন।

কৃষ্ণের বচন শুনি ভাবি ক্ষুদ্রজ্ঞানে,

আমিও কৃষ্ণ তবে কৃষ্ণেরই বচনে।

                 ___

 

                 পরমা

             অশোক ঘোষ

 

নারিব বর্ণিতে তব রূপ বরনারী,

কৃষ্ণ কেশরাশি শোভে তব শিরোপরি।

স্থানুর ললাটে শোভে যেমতি চন্দ্রমা,

তব ভালে রাঙা টিপ তেমতি পরমা।

পরম যতনে যেন কোন চিত্রকর,

আঁকিয়াছে বঙ্কিম ভ্রূ-যুগল তোমার।

নাসা তব হেরি যেন স্ফুটিত তিলফুল,

পুষ্পভ্রমে মধুলোভে আসিবে অলিকুল।

অনঞ্জিত দুটি আঁখি যেন দুটি পারাবার,

 নিস্তরঙ্গ সুগভীর রহস্য অপার।

রক্তিম অধর তব পক্কবিম্ব হেন,

মুগ্ধনেত্রে হেরে সবে তব বরানন।

যার লাগি বরষ মাস আছ অপেক্ষমান,

সন্দেহ নাই সেই জন মহা ভাগ্যবান।

               ---------

 

                 শুভ বিজয়া

                অশোক ঘোষ

 

এসেছিল সে একটি বছর পরে, দিন চারেকের তরে,

বিদায় নিলো বিজয়া দশমীতে বিষণ্ণ করি সবাকারে।

কতিপয় জনে করে আয়োজন অঢেল অর্থ ব্যয়ে,

দুর্গাপূজার নামে বিনোদন কত না চমক দিয়ে।

নতুন ভাবনা নব নব থিম, কোথাও সাবেকিয়ানা,

জমকে চমকে সবাকার মনে সঞ্চারিতে উন্মাদনা।

শ্রদ্ধাহীন ভক্তিশূন্য পূজার আয়োজন শহর কিংবা গ্রামে,

ফোয়ারা ফুর্তির ছুটিছে কত মাতৃপূজার নামে।

পথে পথে আমি ভ্রমেছি অনেক দেখেছি নানান দৃশ্য,

ধনের পাহাড়ে বসে আছে কেউ কেউ বা কাঙ্গাল নিঃস্ব।

কত ধনবানে চরম বিলাসে খেতে যায় রেস্তোরাঁয়,

আবার দেখেছি কত গরীবের অন্ন জোটে না হায়।

প্রশ্ন করি যে নিজেই নিজেকে উত্তর আমি পাইনি,

সত্যিই কি সে দেবী অন্নদা, জগতে সবার জননী?

তবে কেন ভবে মানুষে মানুষে বিভেদ আর ব্যবধান,

কাউকে কেনো করেছো কাঙ্গাল,  কাউকে বা ধনবান?

ওগো মা দুর্গা সকল মানুষ যদি তব সন্তান,

সবারে দাও গো সম অধিকার ঘুচাও গো  ব্যবধান।

শুভ বিজয়ায় প্রার্থনা আমি করি গো যুক্তকরে,

সকলে থাকুক পরম কুশলে সারাটা বছর ধরে।

                     🙏

 

            গোমাতার আতঙ্ক

              অশোক ঘোষ

 

সোনার খনি কুঁজের ভিতর জানতে পারার পরে,

পায় না ভেবে গোমাতাগণ কি যে এখন করে ৷

একটা সময় তাদের চোনা ঝরতো মাটির পরে,

এখন সেটা বেচছে মানুষ কাচের শিশি ভরে ৷

চোনায় নাকি হয় নিরাময় অসুখ বিসুখ নানান,

যোগরাম আর ত্রিপুরেশ্বর রোজই করেন পান ৷

চোনার জন্য গোমাতাগণ মোটেই নয় ত্রস্ত,

সোনার খবর জানার পরে হৈল আতঙ্কগ্রস্ত ৷

পড়লো মনে গল্পের সেই হাঁসের সোনার ডিম,

পরিণতি ভাবতে ভয়ে হাড় হয়ে যায় হিম ৷

কোন পাষণ্ড সোনার লোভে কুঁজটা কেটে নেবে,

এবার বুঝি বেঘোরেতেই প্রাণটা চলে যাবে ৷

                     ______

 

 

 

                 বিদ্যাসাগর

              অশোক ঘোষ

 

জন্ম নিয়ে বাংলা মাকে করেছিলে তুমি ধন্য,

সমাজ হতে কত কুপ্রথা অবসৃত তোমার জন্য।

কত বিধবার অশ্রূ তুমি মুছায়েছো মমতায়,

কত অসহায় মানুষের তুমি হয়েছ পরম সহায়।

দয়া-মায়া আর মমতাপূর্ণ ছিল গো তব হৃদয়,

তারই সাথে তব মনটি ছিল সাহসী দুর্জয়।

অনেক কষ্ট, বাধা ও বিঘ্ন সয়েছো সারা জীবনে,

তবুও কখনো হওনি বিরত সমাজের কল্যাণে।

সত্যই তুমি মানবরূপে এসেছিলে ঈশ্বর,

পাদপদ্মে তব পরম শ্রদ্ধায় জানাই নমস্কার।

               🙏🙏🙏

 

 

            মধুসূদন

         অশোক ঘোষ

 

বিস্মৃতির অন্ধকারে স্মৃতি হয় ক্ষীণ,

বর্তমান ভুলেছে মধু-র জন্মদিন।

রচিয়া সুললিত ছন্দ অমিত্রাক্ষর,

কাব্যের গগনেতে তিনি চির ভাস্বর।

হেলায় যাইগো ভুলে অমূল্য রতনে,

মনের মণিকোঠায় না রাখি যতনে।

আবেগমথিত হয়ে করিয়া স্মরণ,

কবিশ্রেষ্ঠে শ্রদ্ধাভরে করিনু নমন।

          🙏🙏🙏

 

 

 

       বিদ্রোহী কবি নজরুল

           অশোক ঘোষ

 

শুধু জন্মদিনে     পড় তুমি মনে

         সাম্যবাদের কবি,

বাকি দিনগুলি     রহি মোরা ভুলি

         তোমার মুখচ্ছবি।

তব অগ্নিবীণা     আর বাজিছে না

থেমেছে প্রলয় বিষাণ,

আরও একবার     এসো কবিবর

     গাও বিদ্রোহের গান।

তোমার লেখনী     ঝরাবে অগ্নি

       ভীরু হবে দুর্বার,

দাঁড়াইবে রুখে     শাসক সমুখে

    কেড়ে নেবে অধিকার।

দেশের শাসন     করে দুঃশাসন

     জ্ঞানী রহে নতশিরে,

ভুল করে যদি     হয় প্রতিবাদী

     স্থান হয় কারাগারে।

দুঃশাসন হতে     দুর্বলে রক্ষিতে

     কেহ নাই ভারতভূমে,

তোমাকে তাই     বারবার চাই

       অনলবর্ষী কলমে।

 

          🙏🙏🙏

 

              গাঁয়ের মেয়ে

              অশোক ঘোষ

বিজন বনে নগ্ন পায়ে একলা গাঁয়ের মেয়ে,

দাঁড়িয়ে আছে কিসের লাগি কাহার পথ চেয়ে?

সবুজ শাড়ি জড়িয়ে মেয়ের ঢলঢল অঙ্গে,

চারিদিকে তরুলতা, কেউ নেই তার সঙ্গে।

পলাশ রাঙা অধরে তার মধুমাখা হাসি,

মাথায় শোভে কৃষ্ণঘন এলো চুলের রাশি।

আকাশ জুড়ে ঘন কালো মেঘের আনাগোনা,

ঘরে ফিরে যাও গো মেয়ে দাঁড়িয়ে থেকো না।

যাহার লাগি দাঁড়িয়ে তুমি একলা বিজন বনে,

হয়তো সেজন ভুলেই গেছে,নেই কিছু তার মনে।

                  --------

 

                অষ্টপ্রহর

              অশোক ঘোষ

 

বিভাবরী অবসানে ঘুচিবে আঁধার,

ঊষাকালে জগতের অপূর্ব বাহার ।

পাখীদের কাকলিতে নিদ্রা যাবে টুটি,

নানা রঙে কত ফুল উঠিবে গো ফুটি।

উদিবে গগন রাঙি পূর্বে দিবাকর,

ভূবন জুড়িয়া তার বরষিবে কর।

ক্রমে ক্রমে রবিকর হইবে প্রখর,

তপন তাপেতে স্বেদে সিক্ত কলেবর ।

দিবাশেষে দিবাকর যাবে অস্তাচলে,

ঘনাবে আঁধার এই ধরণীর তলে ।

নিশাকালে নীলাকাশ সাজিবে তারায়,

তার মাঝে বিরাজিবে চন্দ্র মায়াময়।

শ্রমক্লান্ত প্রাণীকুল সুখে নিদ্রা যাবে,

নিশি অন্তে অষ্টপ্রহর সমাপ্ত হবে।

      ~~~~~~~~

 

      আরো একগুচ্ছ কবিতা

                ১

 কোথা তুমি চন্দ্রমা কোথা তারারাজি,

তোমাদের দেখা নাই গগনেতে আজি।

নীলাকাশ জুড়ে আজ ঘনঘোর ঘটা,

ক্ষণে ক্ষণে চমকিছে বিজলীর ছটা।

মহাবেগে বহিতেছে শীতল পবন,

অবিরল ঝরিতেছে ধারা বরিষণ।

এমন মধুর রাতে কাতর বিরহী,

করিছে যাপন নিশি প্রিয়াসঙ্গ চাহি।

বহুদূরে প্রিয়া তার বসি একাকিনী,

বিরহ অনলে পুড়ে কাটায় রজনী।

দোঁহে চাহে মিলিবারে দোঁহাকার সনে,

মধুর রজনী কেটে যায় জাগরণে।

           _______

 

                  ২

সাঁঝের প্রদীপ তুমি, আলো করো দান,

তোমাতেই আঁধারের হয় অবসান |

সতত বিরাজ করো কল্পলোকে তুমি,

তোমার প্রেরণাতে সদা মুগ্ধ হই আমি|

আমার গানেতে তুমি সুর-তাল-লয়,

আমার কবিতায় তুমি নিত্য ছন্দময়|

নৃত্যের তালে দেখি তোমার লহরী,

পূর্ণশশী মাঝে তব বরানন হেরি |

যেদিকে তাকাই শুধু তোমাকেই দেখি,

তব রূপ দরশনে মুগ্ধ মোর আঁখি|

           ---------

              ৩

 

প্রভাত রবির প্রথম কিরণ,

কখনো কি গায়ে মেখেছো?

পূর্ব গগনে রবির উদয়,

চোখ মেলে কভু দেখেছো?

প্রদোষকালে পাখির কূজন,

কান দুটি পেতে শুনেছো?      

শিশিরসিক্ত তৃণময় মাঠে,

নগ্ন চরণে কভু হেঁটেছো?

প্রকৃতির দান সকলের তরে,

করগো গ্রহণ দুটি হাত পেতে,

বঞ্চনা নাহি করো আপনারে,

প্রকৃতির দান হ'তে |

           --------

               ৪

প্রভাতকিরণ তুমি শীতের সময়,

গ্রীষ্মের দুপুরে তুমিই ছায়াময় |

বড় মায়াময় তুমি গোধূলি বেলায়,

শরতের মেঘমাঝে দেখি যে তোমায় |

ভোরের শিশির তুমি দ্যুতিময় হিরে,

তোমার রূপে চন্দ্রমা ঈর্ষায় জ্বলে মরে |

 

             --------

                 ৫

চন্দ্রালোকে প্লাবিত হয়েছে অবনি,

মায়াময় অপরূপ রূপে নিশীথিনি |

নীলাকাশে তারাগুলি মিটিমিটি জ্বলে,

মৃদুমন্দ কাঁপে শশী সরসীর জলে |

রাতজাগা কোনো পাখী গাহিতেছে গান,

সে গানেতে বিরহীর আকুল পরান |

            _________

                     ৬

নদীর মতো থাকো তুমি সদা বহমান,

সবাই হবে ধন্য শুনে তোমার কলতান ।

ময়ূরপঙ্খী চলবে  ভেসে তোমার তরঙ্গে,

ছলকে তুমি উঠবে নেচে  নানা বিভঙ্গে।

কি অপরূপ রূপে তোমায় দেখি ভোরের বেলা,

নবারূণের কিরণ তোমার বুকে করে খেলা।

থাকো তুমি নদীর মতো চির কল্লোলিনী,

প্রাণ জুড়াবে শুনে তোমার মধুর কলধ্বনি।

              -----------

                     ৭

বিছানাটা বলছে ডেকে আয়রে আমার বুকে,

সারাটা রাত বুকে নিয়ে ঘুম পাড়াবো তোকে ।

মায়ের কোলের মতো আরাম পাবি রে তুই ভাই,

আয়না আমার বুকে সোনা, তোকে ঘুম পাড়াই ।

রাত হয়েছে অনেক গভীর নয়ন বুঁজে আসে,

এবার তোকে ঘুম পাড়াব গভীর ভালোবেসে ।

------------

                  ৮

কোন সে ভোরে ডেকেছিল কাক,

তার সাথে মিলিয়ে গলা মোরগ দিল ডাক ।

বললো তারা সবাই জেগে ওঠো,

নরম সবুজ ঘাসের উপর একটুখানি হাঁটো ।

শরীরটাতে মাখিয়ে নাও ভোরের নরম আলো,

সুস্থদেহে ফুল্ল মনে দিনটা যাবে ভালো ।

              ----------

                        ৯

আকাশ জুড়ে আজ নিশীথে ভাসছে মেঘের ভেলা,

তারই মাঝে পূর্ণশশীর লুকোচুরি খেলা ।

তারার দ্যুতি দিচ্ছে ঝিলিক টুকরো মেঘের ফাঁকে,

বিভোর হয়ে দেখছি আমি রাতের আকাশটাকে ।

বৃষ্টিকণায় সিক্ত বাতাস বইছে মৃদুমন্দে,

হৃদমাঝারে নাচে ময়ূর অপূর্ব কোন্ ছন্দে।

                    ---------------

 

                          ১০

পাল তুলে আজ মেঘের ভেলা ভাসছে নীলাকাশে,

লক্ষ-কোটি তারার মাঝে পূর্ণচন্দ্র হাসে ।

পূর্ণশশীর আলোকধারায় ভাসছে চরাচর,

আলো-ছায়ার মায়ার খেলা লাগছে মনোহর ।

জোনাকীরা উড়ছে জ্বেলে মিটিমিটি আলো,

দীঘির কালো জল তরঙ্গে খেলছে চাঁদের আলো ।

                ---------------

 

                         ১১

 আজ নীশিথে আমার সাথে যাবে অচিন গাঁয়ে?

যেথা সবুজ বনে শিরশিরিয়ে বাতাস যায় গো বয়ে।

ছোট ছোট ঢেউ খেলে যায় দীঘির কালো জলে,

ঢেউয়ের সাথে চাঁদের কিরণ লুকোচুরি খেলে।

প্রদীপ জ্বেলে জোনাকীরা ওড়ে ঝাঁকে ঝাঁকে,

পথহারা কোন পাখী কেমন করূণ সুরে ডাকে।

ঝোপে-ঝাড়ে ঝিঁঝি পোকা একটানা গান গায়,

যাবে নাকি আমার সাথে সেই সে অচিন গাঁয়?

                      ---------

                           ১২

আজকে রাতে সবাই যখন যাবে ঘুমের দেশে

আমি তখন একলা যাবো ছাদে,

মনপবনে ভাসিয়ে দিয়ে ময়ূরপঙ্খী নাও

পৌঁছে যাবো মোহময়ী চাঁদে।

আমার সাথে যেতে তোমায় জানাই আমন্ত্রণ,

করবো মোরা দুই জনাতে চন্দ্রমা ভ্রমণ।

আসব ফিরে ভোরের আগে রাখছি তোমায় বলে,

চাঁদকে রেখে কল্পলোকে মাটির ধরাতলে।

                -----------

 

                        ১৩

সূর্য গেল অস্তাচলে ঘনাইল আঁধার,

সন্ধ্যা নামিল আসি ধরণী মাঝার।

সাঁঝের আকাশে আজি মেঘের ঘনঘটা,

ঘন ঘন চমকিছে বিজলীর ছটা।

রিমঝিম সুরে ঝরে বাদলের ধারা,

সুশীতল হইল তাপদগ্ধ ধরা।  

            ---------

               ১৪

উঠল জেগে জগৎবাসী নিশির অবসানে,

নবীন অরুণ উদয় হলো পূর্ব গগনে।

বাহিরিল বিহঙ্গ সব ছাড়ি আপন আলয়,

নীল গগনে উড়ছে তারা ভর করি ডানায়।

মৌমাছি আর ভ্রমরেরা এলো ফুলের বনে,

ব্যস্ত তারা কুসুম হতে মধু আহরণে।

আমরাও রত হবো নিত্যকার কর্মে,

বিচ্যুত না হবো মোরা মানবতার ধর্মে।

              ----------

                   ১৫

 

(মেঘ দেখে কেউ করিসনে রে ভয়, আড়ালে তার সূর্য হাসে)

 

ঘরখানি যার পাতায় ছাওয়া

     দামাল নদীর তীরে,

মেঘ দেখলে পরানটা তার

     দুরু দুরু করে।

মেঘের পিছে সূর্য হাসে

     সত্য কথা বটে,

জনম দুখীর সুখী হওয়া

     কদাচিৎ ঘটে।

তবু আশায় বাঁচে চাষা

     স্বপ্ন বুকে নিয়ে,

দুখের আঁধার যাবে মুছে

     সুখের আলোক দিয়ে।

        ----------

                 ১৬ 

দিনের আলো মুছে গিয়ে সন্ধ্যা নেমে এলো,

চাঁদের হাসির বাঁধ ভেঙেছে উছলে পড়ে আলো ।

আকাশ জুড়ে উঠল দেখো লক্ষ-কোটি তারা,

আলো-ছায়ার মায়ার খেলায় হৃদয় পাগল পারা ।

সাঁঝের বেলার রূপটি এমন মনটা হয় উদাসী,

হৃদয় মাঝে ওঠে বেজে রাখালিয়া বাঁশী ।

     

 

                  🙏🙏🙏