Featured Books
বিভাগ
শেয়ারড

জঙ্গলের প্রহরী - 6

জঙ্গলের প্রহরী

পর্ব - ৬

❤♣❤♣❤♣❤

- "ওটা শাইলক না সঞ্জয়, শার্লক। শাইলক খুব খারাপ, লোভী লোক ছিল। শার্লক হোমস গোয়েন্দা বটে, তবে সে অন্যরকম, গল্পের বইয়ের গোয়েন্দা। আমাদের মতো পুলিশি তদন্ত ওকে করতে হত না।" সঞ্জয়কে বুঝিয়ে বললেও সিদ্ধার্থ নিজে ভাবে, অতীতকালের ব্যবহারটা কি ঠিক হল? শার্লক হোমস, এরকুল পোয়ারো, মিস মেরি মার্পল কি অতীত হয়েছেন? ফেলুদা বা ব্যোমকেশ? 

এদিকে সঞ্জয় লজ্জায় জড়োসড়ো নাম বিভ্রাট করে ফেলে, "ভুল হয়ে গেছে স্যার। আমি মুখ্যু মানুষ, শুনেছিলাম, ভুল করে ফেলেছি। মাপ করে দিন।"

- "আরে তুমি আগে দেখে চালাও। চলো থানার দিকটা ঘুরে যাই। গল্পের বইয়ের একটা নাম ভুল করেছ, তাতে কি? তবে পড়াশোনাও করতে হবে। কতদূর পড়েছ?"

- "হায়ার সেকেন্ডারি স্যার। ততদিনে আঠারো বছর হয়ে গেছে। চার্চের স্কুলে আর রাখেনা। তাও আমি ছোট বয়সে গেছিলাম বলে...... "

- "চার্চ? চার্চ কোথায় আছে?" সোজা হয়ে বসেছে সিদ্ধার্থ। 

- "চার্চ আছে নিচে। পাহাড় থেকে নেমে গিয়ে আগের স্টেশনের পিছনে, জঙ্গলের মুখে। সেই ইংরেজ আমলে যখন চার্চ হয়, জমিদার রায়চৌধুরীরা এখানে চার্চ করতে দেবে না বলেছিল। তাই আগের স্টেশনেই।"

- "আর রায়চৌধুরী বাড়ির ব্যাপারটা? চিতার গল্প?" ঋষি ভোলেনি। 

- "সে এক কাহিনী স্যার। দুশো না আড়াইশো বছর আগে এখানে একজন সন্ন্যাসী এসেছিলেন। সঙ্গে কোনো ঠাকুরের মূর্তি। তিনি সেই ঠাকুরের মূর্তিকে ডাকতেন ঠাকুরাণী। জঙ্গলের দিকে সাধনা করতেন। গাছের ফল খেতেন। লোকেরা ভক্তি করে ফলমূল দিত। কুঁড়ে ঘর বেঁধে দিল বাবাকে। সেই ঠাকুরাণীর কাছে এসে জঙ্গলের সব পশুপাখি বসে থাকত। চিতাও আসত। সন্ন্যাসী বলতেন, সবাই ঠাকুরাণীর পোষা। 

- "আ-চ-ছা, এইভাবে এসেছিল ঠাকুরাণী আর তার চিতারা। তারপর কি হয়েছিল সঞ্জয়?" সিদ্ধার্থ সিগারেট ধরিয়ে আয়েশ করে টানতে টানতে জিজ্ঞেস করে। 

- "তারপর একসময় সন্ন্যাসী মারা গেলেন। আর অনেকদিন পর স্বদেশীর সময় রায়চৌধুরীরা লুকিয়ে লুকিয়ে স্বদেশী বিপ্লবীদের সঙ্গে যোগ দিল। তবে এসব খবর তো চাপা থাকে না। কোনো গদ্দার খবর দিল ইংরেজদের। বাড়ি তল্লাশি করে বংশের ছোট ছেলেকে ধরল পুলিশ।"

দম নিতে সঞ্জয় একটু থামতেই সিদ্ধার্থ বলল, "ঠিক জানো, ছোট ছেলেকেই ধরেছিল?"

- "না স্যার, ঠিক করে জানিনা। ঐ মুখে মুখে যেমন গল্প শুনেছি আরকি। স্বদেশী খবরের কাগজ পাওয়া গেছিল বাড়িতে। বড়ভাই শহরে গেছিল। ছোট ভাই তখন বাড়িতে ছিল, তাই ওকেই ধরে। ছোটভাইকে নিয়ে যাওয়ার সময় চিতারা ইংরেজ পুলিশদের আক্রমণ করে, সে ছেলে পালায়। জঙ্গল তখন আরও এদিক পর্যন্ত ছড়ানো ছিল, রায়চৌধুরী বাড়ির একদম কাছে। তাই ছোট জমিদার সহজেই কোথাও গা ঢাকা দেয়।" 

- "সেই ছোটভাই পরে ধরা পড়েছিল? জানো কিছু?" সিদ্ধার্থর চোখ চকচক করে উঠেছে উত্তেজনায়। 

- "না স্যার, ছোটভাইকে আর ধরতে পারেনি ইংরেজরা। বড়ভাই যখন বাড়ি ফিরে আসে, যে কজন ইংরেজ পুলিশ এসেছিল, তারা কেউ বেঁচেই নেই। তল্লাশিতে কি পেয়েছে প্রমাণ নেই, সে ছেলেও ফেরার।"

- "থানা তো ছিল, আরও পুলিশ নিশ্চয়ই আনিয়েছিল ইংরেজরা। পরে আর কিছু করল না? এত বড় হার হজম করে নিলো?" ঋষি প্রশ্ন করে। 

- "ঠিক বলেছেন স্যার। এই হার ইংরেজরা হজম করেনি। ছোট ভাইয়ের খোঁজ পেতে বড়ভাইকে চোখে চোখে রাখত পুলিশ। সঙ্গে বড়ভাইও স্বদেশী কিনা সন্দেহও করত বোধহয়। যখন তখন বাড়ি তল্লাশি করত, জমিদারির কাজে, ব্যবসার কাজে যাওয়ার পথে জামাকাপড়ও তল্লাশি করত। কিছু পায়নি।"

- "এইভাবে রায়চৌধুরীরা বেঁচে গেল বলে তখন থেকে রটে গেল, ঠাকুরাণীর চিতা দোষীদের শাস্তি দেয়?" সিদ্ধার্থ প্রশ্ন করলেও একদম রিল্যাক্স, যেন উত্তরটা ওর জানা। 

- "ওরকমই আমি শুনেছি স্যার।"

- "সঞ্জয়, ঠাকুরাণীর মূর্তি, মন্দির কিছু আছে কোথাও? জঙ্গলের মধ্যে?" সিদ্ধার্থ প্রশ্ন করে। 

- "না স্যার, সেসব কিছু নেই। ঠাকুরাণীর মূর্তি কোথায়, কেউ জানে না। আর মন্দির তো ছিল না। জঙ্গলের ভিতরে একটা ছোট পাহাড়, ঢিবিমতো আছে শুনেছি। সেখানে চিতারা থাকত। আমি দেখিনি, শুনেছি ঐ ঢিবিটা গুহার মতো, ওর ভিতরে, আশেপাশে গাছের ডালে সব চিতাবাঘ বসে থাকত।"

- "তুমি তো কিছুই দেখোনি, খালি শুনেছ। এই নতুন ছেলেটাকে দেখেছিলে?" সিদ্ধার্থ স্পষ্টতই বিরক্ত। 

- "দেখেছি স্যার। বাজারে দেখেছি, পল্টন সঙ্গে থাকত। পল্টনই বলেছে, বেড়াতে এসেছে। এদিকে সবার বাড়িতেই লোকজন আসে শহর থেকে, এখন শীতের আগে আগে আরও জঙ্গল দেখতে আসে। তাই কিছু মনে হয়নি। এখন তো আমারই মনে হচ্ছে, এই ছেলেটাই চোরাচালানকারী।"

- "সেটা যদি হয় সঞ্জয়, তাহলে ওর কাছে জিনিস এসেছিল কোথা থেকে আর জিনিস যেত কোথায়, এগুলো জানতে হবে।" ঋষি মূল কথায় আসে। 

- "সঞ্জয়, ঠিক জানো, ঐ ছেলেটা আগে কখনো এখানে আসেনি?" সিদ্ধার্থ সিগারেট টানা বন্ধ করে সোজা হয়ে বসেছে।

[ ❤ আগেও কি আশীষ এসেছিল এই ছোট পাহাড়ি এলাকায়? নাকি সিদ্ধার্থ ভুল পথে ভাবছে? 

❤ জানা যাবে পরের পর্বে। অনেক ধন্যবাদ এই পর্বটি পড়ার জন্য। আপনার মতামতের অপেক্ষা করছি। দয়া করে মন্তব্য করে জানাবেন। ]

চলবে