Featured Books
বিভাগ
শেয়ারড

জঙ্গলের প্রহরী - 9

জঙ্গলের প্রহরী

পর্ব - ৯

❤💞❤💞❤💞❤

বাড়ি আসতে আসতে শুক্লার হাতপায়ের ব্যথা মালুম পড়তে থাকে। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ভয়, মা বাবা সব তো চাপ দেবেই দেবে, টিটেনাস দিতেই হবে। বন্ধুরা যদিও আশ্বাস দেয় মলম লাগালেই ঠিক হয়ে যাবে। রাজীব অবশ্য এত হালকাভাবে নেয় না। বলে, দরকারে ডাক্তারও দেখাতে হবে। শুক্লার মুখখানা এতটুকু হয়ে যায়। 

বাড়িতে সবাই তো শুক্লাকে দেখে হাঁ, এই গেল আর এরকম কান্ড করে এল? বাবা বাড়ি নেই, মা আর দাদা প্রথমে একটু চেঁচামেচিও করে। তারপর মা এদের আপ্যায়ন করেন আর দাদা সিদ্ধার্থ ওখানেও ছিল কথাটা শুনেই গুম হয়ে যায়। 

বন্ধুদের ওর মা যত্ন করলেও, তারা ওর মাকে বলে, শুক্লাকে আগে দেখতে। মা গরম জল আর ডেটল নিয়ে বসেন। সঙ্গে থাকে ওর তিন বান্ধবীই। ডেটলের জ্বালা ভুলিয়ে দেয় ওদের হাসি মজা গল্প। শুক্লাকে মলম লাগানোর পর সবার খাওয়া দাওয়া। 

তার মধ্যে দুটি মেয়ে, যারা বাজারে শুক্লার দেখভাল করেছিল, তারা এসে হাজির। পুলিশবাবু ওর জুতো পাঠিয়েছে। ওরা জুতো দিয়েই চলে যাচ্ছিল, শুক্লার মা জোর করে মিষ্টি খাইয়ে তবে ছাড়েন। 

ওর ফেলে আসা জুতো কালেক্ট করে সিদ্ধার্থ পাঠিয়ে দিয়েছে? শুক্লা অবাক, শাক্য আরও অবাক এতে। সিদ্ধার্থর এত কনসার্ন? 

খাওয়া দাওয়ার পর অতিথিদের বিশ্রাম নিতে বলে বাড়ির সবাই। রাতে ট্রেনজার্নি করে এসেছে ওরা। শাক্য বুঝিয়ে বাঝিয়ে বোনকে নিয়ে যায় ইনজেকশন দিতে। রাজীবও জোর করে, ইনজেকশন নিতে হবে। 

এলাকার একমাত্র হেলথ সেন্টারে এসে শুক্লা তো খিমচে দাদার হাত ধরে রেখেছে, চোখ টিপে বন্ধ ভয়ে। কোনমতে ভুলিয়ে ভালিয়ে, অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে, ওর হাত চেপে রেখে শাক্য ইনজেকশন দেওয়ায়। ডাক্তার, নার্স সবাই মুখ টিপে টিপে হাসছে। শুক্লাকেও চেনে ওরা, শাক্য তো ভীষণ পরিচিত। আর ওদের সঙ্গে দাদাকেও হাসতে দেখেই শুক্লার ভ্যাঁ। শাক্য হৈচৈ করে ওঠে, এখনও ছেলেবেলার মতো এত ছিঁচকাঁদুনে হলে কি করে চলবে? নাক টিপে আদর করে দেয় বোনকে। দাদাকে জড়িয়ে ধরে আরও একটু আদর খেয়ে নেয় শুক্লা। 

হাতের ক্ষত দেখে ডাক্তার বলেন, আজকের ড্রেসিং ঠিক আছে। প্রতিদিন এভাবেই করতে হবে। পা মচকানোর জন্য একটা মলম লিখে দেন। চিয়ার আপ করেন, দুদিন রেস্ট নিলেই ঠিক হয়ে যাবে। শুক্লার চিকিৎসার ফাঁকে ফাঁকে চিতা, জঙ্গলে লাশ, ইনটেলিজেন্স অফিসারসহ এখন এই এলাকার ট্রেন্ডিং নিউজের আলোচনা তো হয়ই।

❤💞❤💞❤💞❤

গাড়ির চাবিটা নিলেও, গাড়ি না খুলে রাস্তা ধরে অনেকটা এগিয়ে গেল সিদ্ধার্থ। ওদের বাংলো থেকে একটা সরু পথ এসে মিশেছে গাড়ি চলাচলের চওড়া পথে। সে পথে আপনমনে হাঁটছিল ও। এদিকে পরপর সরকারি বাংলো, সিভিলিয়ানদের বাড়ি বা বাংলো। একটু গাছপালা, জঙ্গুলে ভাব আছে বড় শহরের তুলনায়, কিন্তু আসল জঙ্গল এখান থেকে বেশ খানিকটা দূর। কোনো হিংস্র প্রাণীর ভয় নেই। 

তবে একবার থেমে যায়, হোলস্টারটাও আনা হয়নি। যাকগে, ওটা ছাড়াই ঘুরবে এখন। সেই নতুন চাকরিতে যোগ দেওয়া, তাওয়ায় রুটি সেঁকার মতো ট্রেনিং, যাতে ব্যক্তিগত ভয়, ডর, রাগ, বিদ্বেষ, সাধ, আহ্লাদ সব নষ্ট করে একটা অপরাধমুক্ত সমাজ গড়ার জন্য ওর মনটাকে তৈরি করে দিয়েছিল, তারপর থেকে সিদ্ধার্থ তাই করে গেছে। 

সিদ্ধার্থ শুধু প্রকৃত অপরাধীকে ধরতে সবকিছু বাজি রাখেনি, একটি নির্দোষ মানুষও যেন শাস্তি না পায়, তার জন্য লড়াই করে গেছে। গত চার বছর এ ছাড়া কিচ্ছু ভাবেনি, কোনোদিকে তাকায়নি। কলকাতায় ওর বস মিঃ তালুকদার বলতেন, যত নির্দোষ মানুষকে বাঁচাবে, তত তোমার শত্রু তৈরি হবে। আর হঠকারিতা হবে নিজেকে বোকার মতো বিপন্ন করা। প্রশাসনের প্রতিটি কর্মী, প্রতিটি অফিসারকে যথেষ্ট মেহনত দিয়ে তৈরি করা হয়। তাদের একজনকেও অকারণে হারানো মানে রাষ্ট্রের ক্ষতি। 

সিদ্ধার্থ এতকাল তাই বিশ্বাস করেছে। ও যে একসময় ভাল গান গাইত, বন্ধুদের মাতিয়ে রাখত মজার মজার জোকস বলে, আড্ডা দিতে ভালবাসত, যখন তখন ঝোলা কাঁধে বেড়িয়ে পড়তে ভালবাসত, সব ভুলেই গেছিল। শুধু একটার পর একটা কেসের ঢেউ আছড়ে পড়বে ওর জীবনে, এইটুকুই মনে রেখেছিল। নিজেকে বাঁচিয়ে অপরাধ আটকানোর, অপরাধীকে চিহ্নিত করার চেষ্টা করে যাবে, এইটুকুই মনে রেখেছিল। 

আজ কেন কে জানে, মনের ভিতরে সব নড়ে গেছে। শুধু ডিউটি, কর্তব্য আর অপরাধ, এই জীবন যেন আর পছন্দ হচ্ছে না। ষড়যন্ত্রের জাল ছিঁড়ে ফেলার বদলে, এই নদী, আকাশ, জঙ্গল, পাহাড়, সবকিছু যেন ওকে ডাকছে। 

এত সুন্দর একটা জায়গা, যেখানে সবাই টাকাপয়সা খরচ করে বেড়াতে আসে, গত দশদিন ধরে সেখানে ও শুধু সবাইকে জেরা করেছে। ঘোরেনি, বেড়ায়নি, গল্প করেনি, আড্ডা মারেনি। কোনো গাছে পাখি ডাকলে সেটা শুনতে দশ মিনিটও দাঁড়ায়নি ও। আজ দাঁড়াবে, আজ শুনবে পাখির ডাক, আজ গোটা আকাশটায় আগুন লাগিয়ে ঐ পাহাড়ের পিছনে সূর্য ডুবে যাওয়া দেখবে ও। আজ ওর নিজের রুটিন ভেঙে বেরিয়ে আসতে ইচ্ছে করছে। আবার সম্পূর্ণ একজন মানুষ হয়ে বাঁচতে সাধ হচ্ছে। 

সেই ইচ্ছের স্রোতেই গা ভাসাবে। কাজ? সে তো থাকবেই। আজ এই একটা বিকেল নিজের একাকীত্বের সঙ্গে কাটাবে ও। 

[ ❤ শুক্লা তো অল্পদিনেই সেরে যাবে। কিন্তু সিদ্ধার্থ যে নতুন করে ভাবতে শুরু করল, তা কি বদলে দেবে ঘটনার গতি? 

❤ জানা যাবে পরের পর্বে। অনেক ধন্যবাদ এই পর্বটি পড়ার জন্য। আপনার মতামতের অপেক্ষা করছি। দয়া করে মন্তব্য করে জানাবেন। ]

চলবে