জঙ্গলের প্রহরী
পর্ব - ১১
❤💞❤💞❤💞❤
- "আচ্ছা, মিস গোস্বামীটা বাদ দিয়ে আমার নামটা ইউজ করলে ভাল হয় না?" শুক্লার গলায় পরিচয়ের অন্তরঙ্গতা।
- "সেটাই ভাল মিঃ রায়। আর চলুন না আমাদের সঙ্গে। আপনার বাংলোর সামনে দিয়েই তো যাব। আপনাকে নামিয়ে দেব আমরা। আসুন, আসুন, না বলবেন না।" শাক্যও যথেষ্ট আন্তরিকতা দেখায়।
- "আমি ঐ একটা সিগারেট খেয়ে...... " সিদ্ধার্থ বলতে যায়।
- "তাহলে আর ছাড়ব ছাড়ব বললেন কেন? ছাড়বেন না, অথচ বললে শুধু কথার কথা ! ছাড়লে ছেড়েই দিন না।" শুক্লা পায়ের ব্যথায় গাড়ি থেকে নামছে না, তবে জানালা দিয়ে প্রায় মুন্ডু বের করে ফেলে ধমকি দেয়।
- "ছেড়ে দেব দেখবেন।" আরও লজ্জা পেয়ে সিদ্ধার্থ গাড়ির পিছনের দরজা খুলে উঠে পড়ে।
শাক্য গাড়ি স্টার্ট দিতেই শুক্লার প্রশ্ন, "বইটা পড়ছেন?"
- "এখন ফিরে গিয়ে পড়ব। তখন আমার এ্যাসিস্টেন্ট ছিল, ওর সঙ্গে কথাবার্তা ছিল। বইটা চেয়ে নিলাম কারণ এই অঞ্চলের ইতিহাসটা জানা বোধহয় দরকার।"
- "আপনি অনেক ইনফরমেশন পাবেন ওটাতে।" শাক্য রাস্তায় চোখ রেখে বলে।
একটা হেয়ারপিন বেন্ড, তারপর বাঁদিকে আরেকটু উপরে সিদ্ধার্থর জন্য এ্যালট করা বাংলো এসে যায়।
- "থ্যাংকস মিঃ গোস্বামী, থ্যাংকস মিস গোস্বামী, ও না শুক্লা। সাবধানে থাকবেন আর খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবেন।" সিদ্ধার্থ নেমে পড়েছে ওর বাংলোর সামনে।
পাহাড়ের আড়ালে হারিয়ে যাচ্ছে সূর্য। গাড়ির জানালা থেকে হাসিমুখে হাত নেড়ে চলে যাচ্ছে শুক্লা। সিদ্ধার্থ বুঝতে পারছে না, তাতেই যেন আলোটা আরও কমে যাচ্ছে ওর চোখে।
শুক্লা চলে যেতেই শীত করে ওর। গায়ে শুধু একটা মোটা কাপড়ের শার্ট। দুপকেটে হাত ঢুকিয়ে লম্বা লম্বা পায়ে গেট খুলে বাংলোর সামনে এসে গাড়ির দরজা খোলে। বইটা নিয়ে লম্বা পায়ে প্রায় দৌড়ে বাংলোয় ঢুকে পড়ে।
❤💞❤💞❤💞❤
ঋষি ঘরে বসে গান গাইছে -
কত যে সাগর নদী
পেরিয়ে এলাম আমি
কত পথ হলাম যে পার
তোমার মতন এত অপরূপ সুন্দর
কাউকে তো দেখিনি গো আর।
প্রিয়তমা মনে রেখো
অনুপমা মনে রেখো।
ঋষি খুব ভাল গান গায়, যেখানেই যাক, গীটার সঙ্গে যাবেই। ওর নিজের ইউ টিউব চ্যানেলও আছে। লাখ লাখ লাইক কমেন্ট পায় ওর ভিডিও। এখনও হয়ত রেকর্ডিং করছে নিজের চ্যানেলের জন্য। সিদ্ধার্থ তাই চুপ করে দাঁড়িয়ে ওর গান শোনে।
ঋষি আপনমনে গাইছিল, রেকর্ডিং করছিল না। সিদ্ধার্থ এসে দাঁড়িয়েছে টের পেতেই চোখের ইশারায় ডেকে নিল। গান শেষ করে বলল, "কোথায় গেছিলে দাদা?"
- "এমনিই হাঁটছিলাম রাস্তায়। চল, গানটা দারুণ হচ্ছিল। থামিস না। শুনি একটু।" ঋষির বিছানায় টানটান হয়ে শুয়ে পড়ে সিদ্ধার্থ।
- "তুমিও তো এককালে ভাল গাইতে, ছেড়ে দিলে কেন?"
- "কোথায় গাইব, কখন গাইব? আর একবার বন্ধ করার পর এখন ওসব দূরের ব্যাপার মনে হয়। তুই গান করিস, তাই শোনা হয়।"
- "আমি গাইতে পারি, তুমি পারো না?" ঋষি উঠে জল খায়।
- "তুই তো গানটাকে ভীষণ ভালবাসিস।" অর্ধেক শরীর তুলে সিদ্ধার্থ ওর দিকে ঘোরে, "তাও আমি ভাবি, এই যে তুই এত সময় দিস গানকে, এতজন তোর গান শুনছে, তারপর? শুধু ইউ টিউব চ্যানেলেই থেকে যাবি? স্টেজ পারফরম্যান্স, লাইভ কনসার্ট?"
- "ওসব হবে না দাদা। অত সময় দিতে পারব না। যখন স্টেজে ওঠার কথা, তখন হয়ত ডাক পড়ল, দৌড়তে হবে অপরাধী ধরতে। তবে কিছু তো হোক। এই লকডাউনের সময় কত পুলিশ, ডাক্তার, নার্স মানুষের মনোবল বাড়াতে নাচগান করে সেসব ভিডিও ভাইরাল করেছেন। দেখো দাদা, আইনস্টাইন আর সত্যেন বোসও বেহালা বাজাতেন।"
- "হুম, আর্থার কোনান ডয়েল ছিলেন ডাক্তার।" সিদ্ধার্থ উঠে বসেছিল, ঋষির মুচকি হাসিটা দেখে নিজেও হেসে ফেলে, "আচ্ছা, আচ্ছা, আমি নাহয় শাইলক, তুই তো কিশোর কুমার। একটা গান শোনা।"
হো হো করে হেসে উঠল ঋষি। তারপর খাটের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে সিদ্ধার্থর পাশে শুয়ে পড়ে বলল, "এবার তুমি গাও। আমি আবার পরে গাইব।"
কি ভেবে সিদ্ধার্থ উঠে বসল, দেখাদেখি ঋষিও। সিদ্ধার্থ হুঁ হুঁ করে গান ধরল -
আমাকে আমার মতো থাকতে দাও
আমি নিজেকে নিজের মতো গুছিয়ে নিয়েছি
যেটা ছিলো না ছিলো না
সেটা না পাওয়াই থাক
সব পেলে নষ্ট জীবন।
গীটার তুলে নিয়ে গলা মেলালো ঋষি। দুজনেরই খুব ভাল লাগছে সবকিছু ভুলে এভাবে গান গাইতে। তবে অনভ্যাসে সিদ্ধার্থ মাঝে মাঝে ভুলে যাচ্ছে, ঋষি ম্যানেজ করছে।
গান শেষ করে ঋষি প্রায় ধমকে উঠল, "গলাটা কি করেছ ! কথা ভুলে গেছ, সে নাহয় ছেড়েই দিলাম। চলো, আরেকটা ধরো। কি গাইবে?"
সিদ্ধার্থ উঠে দাঁড়িয়ে পকেট হাতড়ে সিগারেট বের করছিল, ঋষির কথায় প্যাকেটটা টেবিলের উপর রেখে একটা গাছের গুঁড়ি কেটে বানানো টুলে বসল।
ঋষি একটু শুকনো মুখে বলল, "রাগ করলে নাকি?"
[ ❤ সিদ্ধার্থ কি সত্যিই কাজকর্ম বন্ধ করে ভেসে যাচ্ছে? কেন, কি হতে চলেছে?
❤ জানা যাবে পরের পর্বে। অনেক ধন্যবাদ এই পর্বটি পড়ার জন্য। আপনার মতামতের অপেক্ষা করছি। দয়া করে মন্তব্য করে জানাবেন। ]
চলবে