Featured Books
বিভাগ
শেয়ারড

জঙ্গলের প্রহরী - 10

জঙ্গলের প্রহরী

পর্ব - ১০

❤💞❤💞❤💞❤

শাক্য যখন বোনকে পাশে বসিয়ে গাড়ি চালিয়ে ফিরছে, দূর থেকেই দেখল, অন্যমনস্কভাবে একটু হেলেদুলে হেঁটে আসছে সিদ্ধার্থ। একলা, গাড়ি তো নেই ই, সঙ্গেও কেউ নেই। শাক্যর মনে হয়েছে ছেলেটা জেদী আর একরোখা। কেস সলভের জন্য যেভাবে একমুখী হয়ে চলছে, কেসে জেতা হারাটাকে বোধহয় খুব পারসোনালি নেয়। সেই লোককে এমন এলোমেলো ভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে দেখতে পাবে ভাবেনি। 

যদিও নিজের প্রতি সিদ্ধার্থর ব্যবহারে উপরে সুগার কোটিং এর তলায় একটা কাঁটা ভালই বোঝে শাক্য। তাও শুক্লার জুতোজোড়া পর্যন্ত পাঠিয়ে দিয়েছে, গাড়ি নিয়ে ওর পাশ কাটিয়েই যেতে হবে, কথা না বললে হবে না । 

- "আরে মিঃ রায়, কোনদিকে যাচ্ছেন?" সিদ্ধার্থ ভীষণ চমকে ওঠে আচমকা পাশে একটা গাড়ি এসে থামায়। নিজের ভাবনার মধ্যে ডুবে ছিল। মুখ তুলেই গাড়ির জানালায় শুক্লার হাসিমুখ চোখে পড়ে। শাক্যও নেমে এসেছে ড্রাইভিং সিট ছেড়ে। 

- "কেমন আছেন আপনি? বিশ্রী একটা কান্ড হয়ে গেল।" সিদ্ধার্থ তাড়াতাড়ি শুক্লার খবর নেয়। 

- "হ্যাঁ পড়ে গিয়ে তো লেগেছে, তার উপরে ইনজেকশনের ভয়।" শাক্য হাসতে হাসতে বলে। আসলে বোনের কান্ডে এমনিতেই হাসি পাচ্ছিল, কথা বলতে গিয়ে ভুলে যায় সিদ্ধার্থর সঙ্গে সম্পর্কটা ভাল না। ওর চোখ শুধু বাইরের লোকের সামনে ঠাট্টায় গাল ফোলানো বোনের দিকে। 

তবে উদ্ধার করে সিদ্ধার্থই। কাচুমাচু মুখে বলে, "হাসির কথা নয়, ম্যাডামের খুব লেগেছে। আমার খুবই খারাপ লাগছে আমার সঙ্গে কথা বলতে গিয়েই এটা হয়েছে। কোথায় আপনি অত আপ্যায়ন করলেন, বইটা দিলেন, আপনাকে ধন্যবাদ দেব, তা না আপনার চোট লেগে বসে আছে। তবে ডাক্তার দেখানো হয়েছে শুনে নিশ্চিন্ত লাগছে। দুচারটে দিন সাবধানে থাকুন, দেখবেন সেরে যাবে।" 

শুক্লা হাসিমুখে বলতে থাকে, "না না আপনার কি দোষ? আপনি বরং কত হেল্প করলেন, জুতোটা পর্যন্ত পাঠিয়ে দিলেন। মোবাইল খুঁজে দিলেন।"

- "ও কিছু নয়, আপনি সাবধানে থাকবেন।" সিদ্ধার্থ আলগা হাসে। 

- "সাবধানে থাকাটা কি করে হবে? বন্ধুবান্ধবরা এসেছে তো। প্ল্যান ছিল আশেপাশে ঘোরাঘুরির। এখন মনখারাপ। দেখা যাক কি করা যায়।" শাক্য আবার হাসে। 

সিদ্ধার্থ সরাসরি শাক্যর চোখের দিকে তাকায়, "জঙ্গলের দিকে যাওয়া কি নিরাপদ হবে ম্যাডাম আর ওর বন্ধুদের জন্য?"

শাক্য একটু অস্বস্তিতে, "জঙ্গলের দিকে গেলেও আমি থাকব, গার্ড থাকবে। আর খুব ভেতরে মোটেই যেতে দেব না। আচ্ছা আপনি কোনদিকে যাচ্ছেন বললেন না তো। গাড়ি ছাড়া, সঙ্গে কেউ নেই, তাই বলছিলাম।"

- "আমি এমনিই হাঁটছিলাম, চারিদিক ঘুরে দেখছি। বাংলো থেকে একটু বেশিই এগিয়ে এসেছি খেয়াল করিনি। এবার ফিরব।" সিগারেটের প্যাকেটটা বের করে সিদ্ধার্থ, শাক্যর দিকে বাড়িয়ে ধরে, "নিন না।"

মাথা নাড়ে শাক্য, "আমি এতে নেই। সবরকম নেশার বিপক্ষে আমি। আর জঙ্গলে ঘুরতে গেলে যেকোনো রকম কড়া গন্ধ অসুবিধা করে, পশুপাখিরা প্রথমেই টের পেয়ে যায়।"

- "আমিও ছেড়ে দেব ভাবছি। আসলে এত স্ট্রেস থাকে আমার।" ফিকে হাসে সিদ্ধার্থ।

- "সেটা ঠিক,আপনাদের উপর খুবই প্রেশার রয়েছে বোধহয় কেসটা নিয়ে।" শান্ত কথাবার্তায় সিদ্ধার্থকে ভাল লাগছে শাক্যর। 

- "প্রেশার তো আছেই। তাছাড়া এটাও ঠিক, আমাদের দেশের ক্ষতিও হয়ে চলেছে। এটা রোখা দরকার।" সিদ্ধার্থ বুঝতে চেষ্টা করছে শাক্যর মনোভাব। 

- "আপনি ঠিক রুখতে পারবেন। সবার কাছে আপনার যা যা গল্প শুনেছি এসে থেকে। এই অপরাধীরাও ধরা পড়ে যাবে।" শুক্লা খুব কনফিডেন্ট। 

সেই একই কথা, সঞ্জয়ের মতো। আবার অবাক হয় সিদ্ধার্থ, "আপনি আবার কার কাছে শুনলেন?"

- "বা রে সবাই জানে আপনি নাকি অপরাধীদের যম, সব অদ্ভুত কেস সলভ করেছেন। আমিই একা জানতে পারব না ভাবলেন কি করে?" শুক্লার কথায় মুগ্ধতা ঝরে পড়ে। 

- "আপনার একার কথা বলিনি মিস গোস্বামী। আমি খুব অবাক, সবাই আমার সম্পর্কে জানছে কোথা থেকে।" সিদ্ধার্থ কিছু ভাবছে বোঝা যায়। 

- "না জানার কি আছে? ডিআইজি স্যার আপনার ডিপার্টমেন্টের লোক। উনি আপনার সম্পর্কে সব খবর জেনেছেন আপনার এখানে ইনভেস্টিগেশনে আসার কথা হতেই। প্রথম থেকেই উনি ভীষণ ভক্ত হয়ে গেছেন আপনার। সবাইকে বলেছেন, এমন একজন অফিসার এবার আসছে, যার হাত থেকে কারও নিস্তার নেই। আমাকেও বলেছেন।" শাক্যই বলে বোনের আগে আগে। 

- "আর আপনারা সেটা প্রচারও করছেন?" সিদ্ধার্থ হাসিমুখেই বলে, তবে শাক্য হালকা মেজাজে না থাকলে হয়ত ধরতে পারত, হাসিটা মেকি। 

- "প্রচার আবার কি? আপনি কি বলতে চান? আপনার যে কেসগুলোর গল্প আমরা শুনেছি, ঐ যে মৃত মানুষকে গুলি করা হয়েছিল, এগুলো বানানো?" শুক্লা বরং সত্যিই হাসছে। প্রশংসায় সিদ্ধার্থ লজ্জা পাচ্ছে দেখে ওর মজা লাগছে। 

- "ঐ কেসের গল্পটা মিথ্যে কথা নয়। এনিওয়ে এইসব কথায় এত বিলিভ করবেন না মিস গোস্বামী। দশদিন হচ্ছে আপনাদের এলাকায়। এখনও আমি কিছুই করতে পারিনি।" সত্যিই একটা লজ্জা আছে সিদ্ধার্থর, ওর উপস্থিতিতে এই আশীষ বলে ছেলেটি এখানে এসেছিল, ও কোনো খবর পায়নি। অথচ ওর খবর মাঠেঘাটে উড়ে বেড়াচ্ছে তখন। 

[ ❤ ইনটেলিজেন্স অফিসার আর সাসপেক্টের কি ভাব হয়ে গেল? নাকি দুজনেই অভিনয় করছে? 

❤ জানা যাবে পরের পর্বে। অনেক ধন্যবাদ এই পর্বটি পড়ার জন্য। আপনার মতামতের অপেক্ষা করছি। দয়া করে মন্তব্য করে জানাবেন। ]

চলবে