Read Jharapata - 11 by Srabanti Ghosh in Bengali Love Stories | মাতরুবার্তি

Featured Books
  • ঝরাপাতা - 11

    #ঝরাপাতাপর্ব - ১১রনির প্রশ্নে পিউ আবার কেঁদে উঠে বলে, "কেন এ...

  • LOVE UNLOCKED - 4

    Love Unlocked : 4Pritha :আজকে সারাটাদিন আরিয়া ক্যাফেই কাটিয...

  • জঙ্গলের প্রহরী - 11

    জঙ্গলের প্রহরীপর্ব - ১১- "আচ্ছা, মিস গোস্বামীটা বাদ দিয়ে আম...

  • মহাভারতের কাহিনি – পর্ব 128

    মহাভারতের কাহিনি – পর্ব-১২৮ বেদব্যাস বর্ণিত সুবর্ণষ্ঠীবীর কা...

  • LOVE UNLOCKED - 3

    Love Unlocked: 3Pritha :একটা ক্যাফের সামনে দাড়িয়ে আছে আরিয...

বিভাগ
শেয়ারড

ঝরাপাতা - 11

#ঝরাপাতা

পর্ব - ১১

🌿🍂🌿🍂🌿🍂🌿

রনির প্রশ্নে পিউ আবার কেঁদে উঠে বলে, "কেন এরকম করলে তুমি? আমি কোনোদিন ভাবিনি তুমি শোধ নিতে কাউকে এভাবে.... "

পিউর হাত দুহাতে জড়িয়ে ধরে রনি, ওর হাতের উপর মাথা রেখে হু হু করে কেঁদে ফেলে এবার, "তুমি যা করতে বলবে, তাই করব। তুমি যদি চাও, আমি অন্যায় স্বীকার করে জেলে যাই, তাতেও রাজি আছি। শুধু এইটা বোলো না, আমি মিলির উপর শোধ নিতে চেয়েছি। বরং রোজ ভেবেছি, আমার উপর, আমাদের বাড়ির সবার উপর ওরা কিসের শোধ নিল? ভুল ভেবেছি, লিলি ছাড়া কারও কোনো দোষ নেই, সেটা এখন বুঝতে পারছি। তার জন্য যা শাস্তি সেটা হোক আমার, শুধু তুমি আমাকে অবিশ্বাস করে থেক না।"

বনি পিউর কাছে ঘেঁষে দাঁড়িয়ে একহাতে নিজের কাছে টেনে নেয় ওকে। আগেও চেষ্টা করেছে গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত করে বোঝানোর। পিউ সরে গেছে। এখন ওর দু হাতই রনির হাতে, সহজে সরে যেতে পারে না। হয়তো চেষ্টাও ছিল না, নিজের দুঃখ, মনখারাপগুলো ভাগ করার তো এই মানুষগুলোই। বনির কাঁধে মাথা রেখে অঝোরে কাঁদতে থাকে। দুই ভাই অনেকবার ক্ষমা চেয়ে, অনেক প্রতিজ্ঞা করে কিছুটা শান্ত করে। 

ওদের কথা শুনতে পাচ্ছিল মণিকা। টুকাইও বায়না করছিল, ওকে নিয়ে আসে পিউর কাছে। ছেলেকে ওর কোলে দিয়ে ক্ষমা চায় মণিকাও। এবার পিউ চোখ মোছে, বনি তখনও একহাতে আগলে আছে ওকে। পিউ হাত বাড়িয়ে মণিকার হাত ধরে, "তুমি বড় হয়ে ক্ষমা চেয়ো না। শুধু বলো, ঐটুকু বাচ্চা মেয়েটাকে দেখার পর আমি কি করব?"

রনি তখনও নিচেই বসে আছে। সেখান থেকেই বলে, "আমি বারবার বলছি, সব দোষ আমার। ঠিক আছে, মানছি আমার দোষের এত সহজে ক্ষমা হয় না। কিন্তু তুমি কোথাও চলে যাওয়ার কথা বলতে পারবে না। কথা দিচ্ছি আমরা কেউ মিলিকে বিরক্ত করব না। শুধু সমরকাকুদের কাছে ক্ষমা চাইতে দাও।" এবার পিউ চুপ করে আছে, হয়তো মন গলেছে। তাতেই আরেকটু সাহস করে রনি আবার বলে, "আর, আর বলছি যে, সব যখন আমিই করেছি, আমি কথা বলছি ওদের সঙ্গে। মিলির চিকিৎসার ব্যবস্থা আমি করছি। খরচ খরচা নিয়ে ভাবতে হবে না। সবটা আমি দেখছি।"

- "খবরদার না রনি !" আবার ফুঁসে ওঠে পিউ,"তুমি কেন মিলির চিকিৎসা করাবে? তুমি কে? যে মেয়েটাকে বিয়ে করে বিয়েটাই মানোনি, তার সঙ্গে তোমার কিসের সম্পর্ক যে তোমার টাকায় তার চিকিৎসা হবে? টাকার গরম অন্য জায়গায় দেখিও।"

- "বৌদি, আমি টাকার গরম দেখাইনি। মিলির চিকিৎসার যাতে কোনো অসুবিধা না হয়.... "

- "মিলির সুবিধা অসুবিধা নিয়ে তোমার অন্ততঃ ভাবতে হবে না আর। আমি যদি তোমাকে আর মিলির ব্যাপারে এসব কথা বলতে দেখি, কারও কথাতেই এ বাড়িতে থাকব না। তোমার টাকা চেয়েছে ওরা? কটা টাকা ছুঁড়ে দিলে তোমার পাপ কমে যাবে? আজ ওরা ভদ্রলোক বলে তুমি সঠিক শাস্তির হাত থেকে বেঁচে গেলে। তোমার দাদা আর মা তোমাকে আগলে রেখে বাঁচিয়ে দিল। মিলির একটা দাদা থাকলে না সেই রাতে তোমার কলার ধরে এনে প্রশ্ন করত। জেলের ঘানি টানতে এতদিন।"

🌿🍁🌿🍁🌿🍁🌿

পিউর সামনে একা রনি না, তিনজনেরই মুখ নেই। মণিকা এর মধ্যেই তাও ভেবে নিয়েছে, যা ঘটে গেছে, গেছে। এখন শেষ মুহূর্তে হলেও এর একটা সুষ্ঠু নিষ্পত্তি করতেই হবে। না হলে তার দুই ছেলেরই জীবন শেষ হয়ে যাবে। পিউ যদি সত্যিই বাড়ির বাইরে পা রাখে, বনি আর পিউ, সঙ্গে টুকাইয়ের জীবন শেষ হয়ে যাবে। আবার রনির সঙ্গে যেমন কিছু খারাপ হয়েছে, তেমনি অজান্তে হলেও রনি আর তার নিজের হাতেও অনেক বড় একটা অন্যায় ঘটে গেছে। সে অন্যায়ের প্রতিকার না করলে, রনিও কোনোদিন মাথা তুলে বাঁচতে পারবে না, নিজের কাছেই নিজের অপরাধের ভারে চাপা পড়ে থাকবে। 

মণিকা এবার পিউর কাঁধে হাত রেখে বলল, "আমার দোষটা কোথায় হয়েছে, আমি বুঝতে পেরেছি। সারাজীবন আমি যা কিছু পাইনি, আমার ছেলেরা যা কিছু পায়নি, তার জন্য লড়াই করেছি। কখনও জিতেছি, কখনও বাইরের লোকের কাছে হেরে গেলেও নিজেদের মতো করে খুশি থেকেছি। আমি ছাড়াও যে আরও মানুষ আছে, নিজের পাশাপাশি তাদের জন্যও আমারই লড়াই করা উচিত, এটা ভুলে গেছিলাম। সবসময় যারা আমার বিরুদ্ধে, আমার ছেলেদের বিরুদ্ধে দাঁতনখ বের করেছে, তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছি। হয়ত অনেকেই অকারণ আজ রনি বা আমাদের নামে অনেক রসালো গল্প করছে। তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো উচিত ছিল প্রথম দিনই।"

- "এইটা ঠিক কথা বলেছ মামনি। আমরা কথা শুনতে চাইনি সেদিন। কিন্তু যে কথাগুলো ভুল, মূল্যহীন, সে কথাকে ভয় পাওয়া উচিত হয়নি। ভয় না পেয়ে, পরিস্থিতি খারাপ হলেও তার সঙ্গে আসল মানসম্মানের কোনো সম্পর্কই নেই, এই সহজ কথাটা যদি বুঝতাম ! লোকের কথার উত্তর দিতাম ! তাহলে মিলির সঙ্গে রনির এভাবে বিয়েই দিতে হত না। আর বিয়েটা যখন অন্য দিক থেকে মিসম্যাচ নয়, এমন পরিস্থিতিতে হয়েছে বলে সেটাকে মর্যাদা না দেওয়াটা সবচেয়ে বড় ভুল হয়েছে।" পিউ যথেষ্ট শান্তভাবেই বলে। বাড়ির সবাই সত্যিই অনুতপ্ত, সত্যিই মিলির ক্ষতি চায়নি, এটা জানতে পেরে পিউ যে অনেকখানি মানসিক স্বস্তি বোধ করছে এখন, ওর এই কথাগুলোয় বোঝে সবাই। 

মণিকা একটু ইতস্ততঃ করে বলেই ফেলে, "একটা কথা বলবি আমাকে? গোপা কি গয়নাগাঁটি ফেরত চেয়েছে?"

আবার তীব্র চোখে তাকায় পিউ, কি ভেবে মাথা ঠান্ডাও করে। ধীরে ধীরে বলে, "না ওসব কোনো কথাই হয়নি। ওদের দেখনি, তাই এসব প্রশ্ন করছ। ওরা এতদিন এসবের দিকে ফিরে তাকায় নি। আর আজ মাথায় বাজ পড়েছে, তখন গয়নার হিসেব নেবে, এতটাও খারাপ না গো।"

মণিকা আশ্বস্ত হয়, সব শেষ হয়ে যায়নি। পিউ, সঙ্গে সঙ্গে দুই ছেলেকেও বোঝানোর মতো বলে, "ও বাড়ির কাউকে খারাপ ভাবিনি রে কোনোদিন। তাই তো লিলির কাজটা বড্ড বুকে বেজেছে। আর গয়না বা বিয়ের জিনিসপত্রের অন্য মানে হয়। তোরা ছোট, সবটা বুঝিস না। ওরা এসব ফেরত চায়নি, কারণ ওরা অপেক্ষা করছিল আমরা মিলিকে ফিরিয়ে আনব, সব মিটমাট হবে। এখন মিলির জিনিস ফেরত দেওয়ার মানে, ওকে আমরা আর...। তাই ওরা না চাওয়া পর্যন্ত ওগুলো ফেরত দিস না পিউ। আমার এই কথাটা রাখ। চাইলেও তুই ঝপ করে ফেরত দিস না। আগে আমি কথা বলি ওদের সঙ্গে।"

- "তুমি মানে তোমরা সবাই কি চাও? আমার কথা বলছি না। মিলির ব্যাপারে কি চাও?" পিউ স্পষ্ট চোখে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয় প্রত্যেকের দিকে। 

মণিকা একবার বলতে যায়, মিলিকে ফিরিয়ে আনতে চায়। মুখের গোড়ায় এসে যাওয়া কথাগুলো সামলে নেয় ও। না, হঠাৎ একটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার আর ওদের নেই। তাছাড়া তাড়াহুড়ো করাও বোধহয় ঠিক হবে না। পিউকে ভোলাতে যাহোক বলে দেওয়া উচিত না। দায়িত্ব নিতে হবে প্রতিটি কথার। 

আর রনি মাথা নিচু করে বসে আছে, যা কিছুই বলবে, সেটা ফাঁকা কথা, নিজে বুঝতে পারছে। ওকে এখন অনেক পরীক্ষা দিতে হবে। 

বনি বলে, "পিউ, তুমি বাড়ি থেকে কোথাও যাচ্ছ না। তুমিই ঠিক করবে, মিলির জন্য আমরা কি করলে ভাল হবে। মিলির যাতে ভালো হবে, আমি অন্ততঃ তাই করব।"

🌿🍁🌿🍁🌿🍁🌿

মিলি মামার বাড়ি থেকে ফিরে আসার পর কেটে গেছে তিন তিনটি মাস। আজ ওর বাবা মায়ের সঙ্গে মণিকারা চারজনই এসেছে ওর থেরাপিস্টের চেম্বারে, এই প্রথমবার। 

প্রথম থেকেই যে সাইকায়াট্রিটকে কনসাল্ট করা হয়েছিল, পিউ তার চেম্বারেও গিয়েছিল। সেদিন মিলির বাবা মায়ের সঙ্গে মামা মামীও গেছিল। তাকে বেছে নেওয়া হয়েছিল অবশ্য রনির কথায়। 

পিউর কাছে সব জানার পর, ওর সঙ্গে করেই মণিকারা গিয়েছিল ও বাড়িতে। মিলিকে নিয়ে দোতলায় ওর ঘরে ছিল রমলা। বাকিদের কাছে মণিকা রীতিমতো হাত জোড় করে ক্ষমা চেয়েছিল, ওর দুই ছেলে তো বটেই। 

এদের তরফে না আবাহন না বিসর্জন। সমর শান্তভাবেই বলেছিল, "আমরা কাউকে দোষারোপ করতে চাই না। সে সময়ও নেই। আমার মিলিকে ঈশ্বর সুস্থ করে দিন। তখন মিলি যা চাইবে, তাই হবে।"

ওরাও ভালো একজন মনোবিদের খোঁজ করছে, দুদিন পর রনি পিউকে জানায় ডঃ মাইতির কথা। ইউনিভার্সিটিতে খুব ঘনিষ্ঠদের কাছে দূর সম্পর্কের আত্মীয়ের চিকিৎসা প্রয়োজন বলে ও কারও পরিচিত মনোবিদ আছেন কিনা খোঁজ করেছিল। ডিপার্টমেন্টাল হেড ডঃ সুধন্য মুখার্জী জানালেন এনার খবর। রনি এসে বাড়িতে জানালো। পিউর ভালো লাগে ওর কনসার্ন। ভাবে, গোপারা এই বুদ্ধি নিলে নেবে, না নিলে না নেবে। বলে দেখতে দোষ কোথায়? 

গোপারা তখনও তেমন কারও খোঁজ পায়নি। অঙ্কুরও নেটে রিভিউ দেখে বলে, বেশ নামী ডাক্তার। একে একবার দেখানো হোক। ইনি কি বলেন দেখে নিজেরা সিদ্ধান্ত নেবে। বড়রাও একমত, তাহলে মণিকাদের গুরুত্ব দেওয়া হল, সেটাও বোঝানো হবে। 

মিলিকে বাড়ি থেকে বের করে ডঃ মাইতির কাছে নিয়ে যেতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়। মিলির হাবভাব দেখে আলাদা করে পিছনের গল্পটা শোনেন উনি মন দিয়ে। 

তারপর জানান, অল্প সময়ের মধ্যে একের পর এক খারাপ ঘটনা ঘটেছে এবেলা ওবেলা। বেশিরভাগ সময় সেগুলো একাই ফেস করতে হয়েছে ওকে। তাতে মিলির মনের মধ্যে ভয়, আতঙ্ক, দুঃখ, রাগ, সমস্ত নেগেটিভ অনুভূতিগুলো বাসা বেঁধেছে।

সিভিয়ার ডিপ্রেশনের প্রায় শেষ ধাপে রয়েছে ও। তার সঙ্গে সঙ্গে সাজেস্ট করলেন ওঁর ছাত্রী, এখন দেশ বিদেশ জোড়া নাম, মনোবিদ এবং মিউজিক থেরাপিস্ট ডঃ মহানন্দা গিরিকে কনসাল্ট করতে। 


চলবে