জঙ্গলের প্রহরী
পর্ব - ১৪
💟💕💟💕💟💕💟
সিদ্ধার্থ আর ঋষির কাছে এসে দাঁড়ায় শাক্য, গলা নামিয়ে বলে, "প্লিজ কিছু মনে করবেন না আপনারা। রাজীবের ব্যবহার আমাদের কারও পছন্দ নয়। কাল থেকেই আমরা দেখছি, বড্ড হামবড়াই। আর হ্যাঁ, মেনি মেনি থ্যাংকস শুক্লাকে দেখতে আসার জন্য। সময় পেলে চলে আসবেন আমাদের বাড়ি।"
- "আমরা কিছু মনে করিনি শাক্য। নানান ধরণের মানুষকে ডীল করার অভ্যেস আছে আমাদের। তবে আপনি যদি একটা হেল্প করতে পারেন খুব ভাল হয়।" সিদ্ধার্থ কাজের কথায় চলে আসে।
- "নিশ্চয়ই, বলুন না।"
- "আমরা আজ রায়চৌধুরী বাড়িতে যাচ্ছি ইনভেস্টিগেশনে। প্লিজ, এরা যেন ঐদিকে না যায়। আমাদের কিছু ফ্রি টাইম দরকার।"
- "নো প্রবলেম। নিশ্চিন্তে আপনারা কাজ করুন। আমি এদের জঙ্গলের দিকটা ঘুরিয়ে আনি। তাহলে ধরে নিচ্ছি, আপনি কোনো হার্ড ফিলিংস রাখেননি। ফ্রেন্ডস?" শাক্য হাত বাড়িয়েছে। একে একে দুজনেই ওর সঙ্গে হাত মেলায়।
গাড়িতে উঠে ঋষি মুখ কালো করে বলে, "দেখো গুরু, গান গেয়ে সবার মুন্ডু ঘুরিয়ে দিচ্ছ, আমিও তাই চাই। তবে আরেকটা ইউ টিউব চ্যানেল খুলে যেন আমাকেই বাঁশ দিও না।" হা হা করে হেসে ওঠে দুজনেই।
❤♣❤♣❤♣❤
অর্ডার হাতে পেয়ে ওদের সঙ্গে তদন্তে যোগ দেয় তাপস, স্থানীয় থানার সেকেন্ড অফিসার। থানা থেকেই ওকে পিকআপ করে এরা। গাড়িতেই তাপস রিপোর্ট দেয়, গতকাল কলকাতায় আশীষের বন্ধু রায়চৌধুরীদের সেই ছেলেকে জেরা করা হয়েছে।
সেই ছেলে নাকি বলেছে, ও স্কুল কলেজের পর বছর চারেক আশীষের খোঁজ জানেনা। অত বন্ধুত্বও ছিল না। কিছুদিন আগে রাস্তায় দেখা। ওদের এই পুরনো বাড়ির গল্প সব বন্ধুরাই জানে। আশীষ পুরনো বাড়ির কথা তুলে এখানে এসে কিছুদিন থাকতে চেয়েছিল, এদিকের সঙ্গে কাঠের ব্যবসা করবে। ব্যস, এইটুকুই। তবুও ছেলেটির পিছনে সাদা পোষাকের পুলিশ লাগানো হয়েছে।
- "ভেরি গুড।" সিদ্ধার্থ ভীষণ সিগারেটের অভাব বোধ করছে, তবে সেটা হলেই ও গানের শেষে রাজীবের মুখটা মনে করে নিজেকে শক্ত করছে।
রায়চৌধুরী বাড়িতে পৌঁছয় চারজন। গাড়ি থেকে নেমে সানগ্লাস খুলে সিদ্ধার্থ তাকিয়ে থাকে, পোড়ো ধরণের দু মহলা বাড়ি। সামনের মহলের দিকটা উচ্চতায় বেশ কম। দোতলা মহল, দোতলার উপরের ছাদ ধরে আছে সামনের পাঁচটি গোলাকার থাম। সেকালের বাড়ি এরকমই হত। কাল রাতে মনমোহন গোস্বামীর লেখায় পড়েছে, চাপা দরজাও ছিল, ডাকাতদের আটকাতে। এখন ভেঙেচুরে গেছে। পকেট থেকে স্মার্ট ফোনটা বের করে কয়েকটা ছবি তোলে। এ্যাপ খুলে পাঠায় বোন সোমাকে।
তারপর বোনকে ফোন করে, "হুঁ সোমু, শোন তোর ফোনে কয়েকটা ছবি পাঠালাম। জেঠুমণিকে দেখা। আর তুই একটা কাজ করত। .... হুঁ হুঁ যা চাস দেব রে বাবা, পাক্কা প্রমিস, তুই শুধু খবর লাগা, তোদের ইউনিভার্সিটির বোটানির লেকচারার রাজীব চট্টোপাধ্যায় সম্পর্কে কিছু জানতে পারিস কিনা......আ-চ-ছা তোর বন্ধু আছে বোটানিতে। কথা বল। আমার নাম যেন না আসে। কারণ লোকটা সাসপেক্ট না, আমি জাস্ট কিছু ইনফরমেশন চাই।"
ওপাশ থেকে সোমার কথা শোনে আর ক্ষণে ক্ষণে ওর মুখের চেহারা বদলাতে থাকে, "ইউনিভার্সিটিতে পপুলার, আ-চ-ছা, ছাত্রদের চেয়ে ছাত্রীরা বেশি ঘায়েল....... ন্যাচারাল। তুইও আছিস নাকি? আরে বাবা চ্যাঁচাতে হবে না। যা বলছিলি বল। বলবি না তো? যা ভাগ, কাঁচকলা পাবি তাহলে। হুঁ কি বলছিস.........ভাল হবে না কি রে? আমি এখন অন ডিউটি পুলিশ, তাকে হুমকি দিচ্ছিস। আচ্ছা আচ্ছা সরি। বল না ছাই।"
সিদ্ধার্থ তাকিয়ে দেখছে আউট হাউস থেকে বেরিয়ে এসেছে দুজন, নিশ্চয়ই প্রসাদ আর পল্টন, বাপ ছেলে। তাপস কি বলতে পল্টন বেরিয়ে গেল, নিশ্চয়ই রাখুকে ডাকতে গেছে। ঋষি তাপসের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। সোমা ওদিকে বলে যাচ্ছে, রাজীব বেশ স্টাইলিশ, ইউনিভার্সিটির নবীন বরণে গান গেয়েছিল, তাই অন্য ডিপার্টমেন্টেও পপুলার। তবে অনেকেই আশেপাশে ঘোরাঘুরি করলেও সম্ভবত একটি স্টেডি গার্লফ্রেন্ড আছে এবং সেটি ঐ ডিপার্টমেন্টের।
একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে সিদ্ধার্থ বলল, "থ্যাঙ্ক ইউ সোমু। আর কিছু জানা যায় কিনা দেখিস। পরে কথা হবে।"
প্রসাদ, পল্টন আর রাখুকে বারবার জেরা করে সিদ্ধার্থ। আলাদা আলাদা, দুজন দুজন, একসঙ্গে তিনজনকে বসিয়ে। প্রসাদের আশীষের হাবভাবে সন্দেহ হচ্ছিল বলেছে। পল্টন বেদম আতঙ্কিত, ভাল করে কথাই বলতে পারল না। আর রাখু দুঃখিত এত ভাল দাদা চলে যাওয়ায়।
জমিদারবাবুদের ব্যাপারেও ওরা তিনজন প্রায় কিছুই জানে না। প্রসাদ শুধু জানে, এখনকার জমিদারবাবুরা একভাই, তিনবোন। তিনবোন বড়, তাদের এখানে ওখানে বিয়ে হয়েছে বহু বছর হল, ওদের ছেলেমেয়েরাও বড় বড়। আর একমাত্র ভাই, সঙ্কর্ষণ রায়চৌধুরীর দুই ছেলে, শৌর্য্য আর বৈদুর্য্য। এই আশীষ ছিল ছোট ছেলে বৈদুর্য্যর বন্ধু।
এবার কাজ আশীষের ঘর সার্চ করা।
[ ❤ কি পাওয়া যাবে আশীষের ঘরে? পল্টন যে আশীষের মৃত্যুর সময় উপস্থিত ছিল, কোনোদিন জানতে পারা যাবে?
❤ জানা যাবে পরের পর্বে। অনেক ধন্যবাদ এই পর্বটি পড়ার জন্য। আপনার মতামতের অপেক্ষা করছি। দয়া করে মন্তব্য করে জানাবেন। ]
চলবে