জঙ্গলের প্রহরী
পর্ব - ১৫
❤♣❤♣❤♣❤
আশীষের ঘর সীল করে দিয়েছিল তাপস, প্রথমদিনই। এখন সীল ভেঙে নতুন করে সার্চ করে বোঝা যায়, তাপস আর সিদ্ধার্থর সন্দেহই ঠিক। ও বিশেষ একটি দলের সদস্য ছিল। বেশ কিছু লিফলেট, প্যামপ্লেট, ওর ডায়রি, তাতে কিছু ঠিকানা আর ফোন নম্বর।
দুঘন্টা পর রায়চৌধুরী বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে ওরা। দিল্লির হেড অফিসে কিছু খবর জানতে চায় বলতে হবে। কলকাতা থেকেও কিছু খবর দরকার। বিশেষ করে আশীষ আর বৈদুর্য্যর ব্যাপারে। আশীষের ঘরে ওর নামটা ছাড়া কিছু জানা গেল না, সারনেমটাও না। সেটা বৈদুর্য্য বলেছে পুলিশকে, আশীষ মিত্র। তাই সিদ্ধার্থর ধারণা, দিল্লি আর কলকাতা, এই দুই জায়গার খবরের মধ্যে অনেকখানি সমাধান পাওয়া যাবে।
সঞ্জয়কে বলে এখন নিচের স্টেশনে যাবে, কিছু কেনাকাটা করবে, চার্চে যাবে। ওদিকেই কোথাও খেয়ে নেবে চারজন। আজকের মতো সব কাজ সেরে তবেই একেবারে বাংলোয় ফিরবে।
উপরের বসতিতে ইন্টারনেট সমস্যা করে বেশির ভাগ সময়। সেজন্যও নিচে আসা। রাস্তাটা সোজা গিয়ে উঠেছে রেলস্টেশনে। তার আগে পরে কিছু সরু গলিরাস্তা ঢুকেছে এখানকার জনবসতিতে। এদিকের জমিও হালকা ঢেউখেলানো, তবে তুলনামূলক সমতল, বসতি বেশি। স্টেশনের কাছাকাছি দোকানপাটও ভাল। দুটি আবাসিক স্কুল, কিছু সরকারী বেসরকারী অফিস।
তবুও খোলা জমি, মাঠ, পূবদিকের পাহাড়ী ঢালের গায়ে গায়ে চা বাগান। সেরকম এক জায়গায় গাড়ি থামানো হয় একটা ছোট্ট ফুড জয়েন্টে। সামনের ঢালে স্টেশন দেখা যাচ্ছে। ফুড জয়েন্টটা খুব সুন্দর। সবুজরঙা কাঠের দেওয়াল, সিমেন্টের মেঝে। উপরে রোদ পিছলানো টুকটুকে লাল টিনের চাল। চারিদিকে সবুজ আর সবুজের মাঝখানে একথোকা লাল রডোডেনড্রন ফুটে আছে যেন।
ভিতরে ঢুকে বসে চা আর কেকের অর্ডার দেয় এরা। সিদ্ধার্থ নিজের ল্যাপটপ খুলে টপাটপ মেইল করছে। ওর আগে যে অফিসার এখানে এসেছিল, তার ডিটেলস রিপোর্ট চেয়ে হেড অফিসে, বৈদুর্য্য আর আশীষের খবর চেয়ে কলকাতায়। তার সঙ্গে ওর বস তরফদার স্যারকেও মেইল করে আশীষ যে নিষিদ্ধ সংগঠনে যুক্ত ছিল তার সম্পর্কে অফিশিয়াল আনঅফিশিয়াল সবরকম খবর চেয়ে। শেষে তরফদার স্যারকে ফোন করে সরাসরি কথাও বলে নেয়।
উঠে দলবল রওনা দেয় চার্চের দিকে। স্টেশন পার হয়ে আরও পিছনে পাহাড়ের দিকে চার্চ। গাড়িতে উঠে মুখ খোলে সিদ্ধার্থ, "তাপস, নোটিশ করলে, তুমি থানার লোক, তোমাকে চেনা স্বাভাবিক। কিন্তু লোকজন আমাকে আর ঋষিকেও বিলক্ষণ চেনে?"
- "আপনারা খুবই পপুলার। প্রথম থেকেই আপনাদের নিয়ে লোকের ইন্টারেস্ট, আর আপনাদের সম্পর্কে সব খবর সবাই জানেও। আপনার আগের অফিসার মিঃ রক্ষিতকে নিয়েও প্রথমে এরকম ছিল। তারপর মিইয়ে গেছিল।"
- "সেটাই তো আমার অস্বাভাবিক লাগছে। উপরের গ্রামে, তাও মানলাম। নিচের এই এলাকাতেও?"
- "নিচের সঙ্গে উপরের ভাল যোগাযোগ স্যার। উপরের এলাকাতেই একসময় ঘনবসতি ছিল। এই জঙ্গল যখন রিজার্ভ ফরেস্ট হয়ে গেল, আর এদিকে স্টেশন ঘিরে রোজগারের সুযোগ বেশি, লোকেরা এদিকে শিফট করতে থাকল।"
- "হুম, আমি একটা বইতে পড়ছিলাম এই ব্যাপারটা। আদিবাসীদের অনেকেই তো খ্রিস্টান হয়ে চার্চের ছায়ায় চলে গেছে।" সিদ্ধার্থ সিগারেট টানার মতোই দুটো আঙ্গুল ঠোঁটের উপর চেপে আছে।
- "কিছু বাঙালী ফ্যামিলিও স্যার, যেমন আমরা।" সঞ্জয় বলে।
- "হুম, তুমি বলেছ। চলো যাই। তোমার সঙ্গে নিশ্চয়ই চেনা আছে। আমি কিন্তু খুব ভাল করে কথা বলতে চাই।"
তাই হয়। এমনিতেই চার্চের এলাকাটা খুব সুন্দর। ছোটখাটো সূঁচালো তিনটি চূড়ার চার্চ, সামনে পিছনে অনেকখানি বাগান। একপাশে স্কুল, অন্যপাশে বাচ্চাদের থাকার ব্যবস্থা। ফাদার বারটন আসলে এ্যাংলো ইন্ডিয়ান। ইউরোপীয় ধাঁচের ফর্সা চামড়ার সঙ্গে কালো চুল আর চোখ। বেশ রোগা, শির ওঠা হাতের আঙ্গুলগুলো, ফ্যাকাশে মুখচোখ, দেখে ষাটের এদিকে মনে হলেও কোথাও যেন বুড়িয়ে যাচ্ছেন মনে হল সিদ্ধার্থর।
সঞ্জয়কে দেখেই চিনলেন, ওর কাছে পরিচয় পেয়ে এদের ডেকে নিলেন হোস্টেলের অফিসঘরে বসার জন্য। সিদ্ধার্থ বলে, ওর বাগানটা খুব ভাল লেগেছে। বাগানে হাঁটতে হাঁটতে কথা বলতে চায়। ঋষির জন্য এটুকু ইশারাই যথেষ্ট। সঞ্জয়কে কিছু জানতে দিতে চায় না সিদ্ধার্থ, হয়তো তাপসকেও, অন্ততঃ এখনই। ও টপ করে সঞ্জয়কে ধরল পিছনের ফলের বাগানটা ঘুরিয়ে দেখাতে।
প্রায় চল্লিশ মিনিট পরে সিদ্ধার্থ ডাকল সবাইকে। ফাদারের এবার কিন্তু বেশ খুশিমুখ। ভালোভাবে ওদের বিদায় দিলেন। ওরা তিনজন হাত জোড় করেই নমস্কার করল। উনি হাত তুলে আশীর্বাদ করলেন, "মা মেরি তোমাদের রক্ষা করুন। তোমরা সফল হও।"
চার্চ থেকে বেরিয়ে সিদ্ধার্থই বরং বেশ গম্ভীর। সকালের চনমনে ভাবটা আর নেই। সঞ্জয়কে শুধু বলল, এবার খাওয়ার পালা, স্টেশনের কাছেই একটা হোটেল দেখে নিয়ে যেতে।
সিদ্ধার্থ গালে হাত দিয়ে বসে কি না কি ভাবছিল, হঠাৎ বলে বসল, "তাপস, উপর থেকে চার্চে আসার এই একটাই পথ? আর নিচে থেকে ট্রেন বা ঐ গাড়ির রাস্তা?"
[ ❤ কি বললেন ফাদার বারটন? পাহাড়ের নিচ থেকে উপরে ওঠার আরও পথ কি আছে?
❤ জানা যাবে পরের পর্বে। অনেক ধন্যবাদ এই পর্বটি পড়ার জন্য। আপনার মতামতের অপেক্ষা করছি। দয়া করে মন্তব্য করে জানাবেন। ]
চলবে