জঙ্গলের প্রহরী
পর্ব - ২২
❤♣❤♣❤♣❤
সিদ্ধার্থ চলে যেতেই শাক্য বোন আর বোনের বন্ধুদের সোজা বাড়ি যেতে বলে। শাক্যকে নিয়ে এডিজি আর ডিআইজি গাড়িতেই একটা মিটিং করবেন।
রাজীবেরও বোলচাল ফুরিয়ে গেছিল এতবড় ঘটনার সামনে পড়ে। সুড়সুড় করে সব গাড়িতে ওঠে। রাজীবই ড্রাইভিং সিটে, তবে ওর ফ্যাকাশে মুখ দেখে ওরা বোঝে না, ওকে গাড়ি চালাতে এ্যালাও করে ভুল করেছে কিনা।
বাংলোয় ফিরে দুমদুম করে মণীষা ঘরে ঢুকে যায়। পিছনে মেয়েরা, শমীক টেরিয়ে টেরিয়ে রাজীবকে দেখতে দেখতে ওদের পিছনেই যায়। ঘরে ঢুকেই মণীষা ফেটে পড়ল, "দেখলি তোরা দেখলি? এরকম একটা লোককে ও খোঁচাচ্ছিল ! অসহ্য লাগে আমার। সবজায়গায় সবজান্তা ভাব। লেকচারার বলে সবজায়গায় লেকচার দেবে। একা ও সব জানে, বাকিরা গরু, গাধা, ছাগল।" একটানা বলে হাঁপাচ্ছে মণীষা।
শুক্লা ওকে জড়িয়ে ধরে, "চিল মণি জাস্ট চিল। সবাই জানে রাজীবদা মানুষটা ওরকম। এই তো কালই আমাদের এসব নিয়ে কথা হল। বাট হি লাভস ইউ আ লট এন্ড এ লট। এটা তো ঠিক?"
এবার হাউমাউ করে কেঁদে ফেলে মণীষা, "ছাই ভালবাসে। নাহলে এরকম করত? একটা মানুষের ব্যবহারটাই আসল কথা। গল্প শুনে ওর হাতপা কাঁপছে, এইটুকু ড্রাইভ করতে পারছে না, আর ও যায় সিদ্ধার্থদাকে যা তা বলতে।"
- "আরে এভাবে কাঁদছিস কেন তুই? রাজীবদা সিদ্ধার্থদাকে জিজ্ঞেস করেছে কোন ইয়ার, কি সাবজেক্ট এসব। তাতে কি হয়েছে?" দিয়া ওকে সান্ত্বনা দিতে বলে।
- "তুই চুপ কর। শমীক তো আর এত ফোঁপরদালালি করে না সবার ব্যাপারে। তুই কি জানবি ! আমার লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করে ওর সঙ্গে কোথাও গেলে। এখানে ও আসে আমার মোটে ইচ্ছে ছিল না। সে হবে না, সর্বক্ষণ আমার গার্ডিয়ান হয়ে ঘুরে বেড়াবে।"
- "সিদ্ধার্থ রায়কে দুটো কথা বলেছে রাজীবদা, মানছি, সিদ্ধার্থও হয়ত রাগ করেছে রাজীবদার উপর, তাতেই তোর এত গায়ে লাগছে? এদিকে রাজীবদার ইমেজ তৈরি করতে অলওয়েজ রেডি, আর বলছিস রাজীবদা আসে ইচ্ছে ছিল না ! তোরা দুজন না, জাস্ট পাগল।" শুক্লা বান্ধবীর গাল টিপে আদর করে দেয়।
- "হ্যাঁ, আমার গায়ে লাগছে।" নাক টানছে মণীষা, "আমি জানি সিদ্ধার্থদা ওকে কি ভেবেছে, লোকে ওর সম্পর্কে কি ভাবে।"
- "আরে সিদ্ধার্থ একটা বাইরের লোক। দুদিন পর এখান থেকে চলে যাবে। তার ভাবাভাবিতে কি আসে যায়?" শুক্লা বোঝায়।
- "বাইরের লোক? কাকে বোঝাচ্ছিস শুক্লা? আমরা সবাই বুঝেছি, সিদ্ধার্থদাকে তুই কতটা চিনেছিস, কি চোখে মানুষটাকে দেখিস তুই। তোর বাড়িতে বসে তাকে অপমান করা, তোর কোথায় লেগেছে। আমার মুখ চেয়ে সহ্য করেছিস।"
- "তোকে বলেছে !" লজ্জা পেয়ে ভেংচি কাটে শুক্লা।
- "শুক্লা, তোর কি হয়েছে সেটাও আমরা বুঝেছি। আর মণি তুইও রাজীবদাকে লোকে খারাপ ভাবছে ধরে সতীর দেহত্যাগ নাটক করে ফেললি।" ছদ্ম দীর্ঘশ্বাস ফেলে শমীক বলে। ওর অভিনয়ে কাজ হয়। অন্যদের হি হি হাসির সঙ্গে সরু একটুকরো হাসি মণীষার মুখেও ফুটে ওঠে।
- "আমি তো পুরো সময়টাই সিদ্ধার্থদাকে দেখছিলাম। সেও কিন্তু তোকে নিয়ে কনসার্ন। শুক্লা, প্লিজ এটা অস্বীকার করিস না। একটা ভাল মানুষকে ভাল লাগলে সেটা স্বীকার কর। হয়ত এই সুযোগ আর কখনো আসবে না।" মণীষা চোখ মুছে বলে।
- "হ্যাঁ শুক্লা, আমরা সবাই শিওর, ওদিকেও কিছু চলছে।" শ্রীতমাও বলে।
- "যাহ, তোরা না......" লজ্জায় লাল হয়ে গেছে শুক্লা।
- "কাউকে পছন্দ করা, ভালোবাসা কি অন্যায়? আর সিদ্ধার্থ রায়ের মতো মানুষকে তো আরওই না। আমরা প্রত্যেকে যে কাজটা করার কথা ভাবতেই পারি না, সেটা অবলীলায় করেছে মানুষটা। পাহাড়ি আদিবাসী একটা বাচ্চা মেয়ের প্রাণ বাঁচাতে নিজের প্রাণ দিতে গেছিল। চোট পাওয়ার পরেও বাকি লোকেদের নিরাপত্তার দিকটাই দেখল। আমরা কালই বলাবলি করছিলাম না যে, সিদ্ধার্থদা একদম তোর দাদার মতোই, রেসপনসিবল, সাহসী। ওরা দুজনে মিলে গেলে সব রহস্যভেদ করে ফেলবে?" শমীক শুক্লাকে বোঝায়।
- "ঠিক তাই। এমন একটা মানুষকে পছন্দ করেছিস যখন, সেটা তাকে জানা শুক্লা। এমন না হয়, রাতারাতি কেস সলভ করে একদিন সিদ্ধার্থদা চলে গেল। আর কোনোদিন তোর সঙ্গে দেখাই হল না।" শ্রীতমা শুক্লাকে চেয়ারে বসিয়ে বুঝিয়ে বলে।
শুক্লার মুখটা ছোট হয়ে গেছে সিদ্ধার্থর চলে যাওয়ার কথায়। কিন্তু দাদার সঙ্গে সিদ্ধার্থর ব্যবহার ভুলতে পারছে না, ওর নিজের সঙ্গে সিদ্ধার্থর কড়া ব্যবহার ভুলতে পারছে না।
অথচ সিদ্ধার্থকে দেখার পর থেকে ওর অবজ্ঞা সত্ত্বেও শুক্লা কি যে অমোঘ টান বোধ করছে এই অদ্ভুত মানুষটার প্রতি ! কেন সিদ্ধার্থর সঙ্গে এভাবে একটা লণ্ডভণ্ড সময়ে দেখা হল? কেন সিদ্ধার্থর সঙ্গে একটা সুন্দর বাগানে দেখা হল না? কেন সিদ্ধার্থ সূর্যোদয়ের ছবি তোলার সময় সূর্য আর সিদ্ধার্থর মাঝখানে ও এসে পড়ল না?
ও বলত, "সরি, আপনার ছবিটা খারাপ হয়ে গেল।"
সিদ্ধার্থ বলত, "বরং আপনার একটা খুব সুন্দর ছবি তুলতে পেরেছি।"
ও বলত, "কই কোথায়, দেখান।"
ছবি দেখতে দেখতে গল্প শুরু হত। লম্বা পথ ধরে শুকনো পাতা মাড়িয়ে ওরা হেঁটে যেত।
সেখানে দেখা হল খুন, ষড়যন্ত্র, দেশদ্রোহিতার মাঝখানে !!
[ ❤ ভুল সময়ে ভুল জায়গায় দেখা হওয়ার জন্য কি শুক্লার ভালোবাসা মর্যাদা পাবে না? সিদ্ধার্থর সঙ্গে কি আর দেখাই হবে না শুক্লার?
❤ জানা যাবে পরের পর্বে। অনেক ধন্যবাদ এই পর্বটি পড়ার জন্য। আপনার মতামতের অপেক্ষা করছি। দয়া করে মন্তব্য করে জানাবেন। ]
চলবে