Featured Books
বিভাগ
শেয়ারড

জঙ্গলের প্রহরী - 24

জঙ্গলের প্রহরী

পর্ব - ২৪

❤♣❤♣❤♣❤

- "আবার আপনি কেন? আমি যে দাদা বললাম।" শ্রীতমা কি ভেবেছে কে জানে, সিদ্ধার্থর সঙ্গে সত্যিই আপন সুরে কথা বলছে প্রথম থেকেই। 

ঋষি এক মিনিট আসছি বলে ভেতরের দরজাটা দিয়ে অদৃশ্য হয়ে যায় থামানোর আগেই। 

সিদ্ধার্থ হাসে, "ঠিক আছে। তুমি করেই বলব। তবে কতদিনই বা আর বলতে পারব।" 

- "তার মানে?" 

- "তোমরা তো ফিরে যাবে কয়েকদিন পরই। কদিন থাকার প্ল্যান তোমাদের?" 

- "আমরা সাতদিন থাকব বলে এসেছিলাম। এখন তো যা সব দেখছি আর শুনছি, সব না মেটা পর্যন্ত যদি থাকতে পারতাম, ওয়াও।" শ্রীতমা ঝলমল করছে। 

- "নট সো ওয়াও ম্যাডাম। এই সবকিছুর পিছনে একটা ভয়ঙ্কর মস্তিষ্ক আছে।"

- "আপনি, মানে আপনি জানেন? মানে আপনি জানতে পেরেছেন কে কি করছে?" শুক্লার চোখেমুখে আগ্রহের পিছনে আতঙ্কও রয়েছে স্পষ্ট পড়া যায়। 

সিদ্ধার্থ ঢোঁক গিলে বলে, "না সব জানতে পারিনি, তবে এটা তো জানা কথা। এরকম অপরাধের পিছনে বড় দল থাকে, অনেকসময় ইন্টারন্যাশনাল কানেকশনও থাকে। তার মধ্যে আপনারা না থাকাই ভাল।"

- "আমরা এসবের মধ্যে নেই, আমরা কেস সলভ হওয়া দেখতে চাই, তার গল্প শুনতে চাই। আর আবার আপনি বললে আমরা চলে যাব।" শ্রীতমার কথায় সিদ্ধার্থ আবার হেসে ফেলে। ও এতটাই সহজে খোলামেলাভাবে কথা বলছে তার পাশে শুক্লার অস্বস্তিভরা উপস্থিতি আরও বেশি করে বুঝিয়ে দিচ্ছে ওর মন স্থির নয়। 

- "কেউ কোত্থাও যাবে না। আমি এত কষ্ট করে কফি বানালাম, আগে খাওয়া, তারপর যাওয়া নিয়ে ভাবনা।" ঋষি ঢুকতে ঢুকতে বলে। 

- "এ রাম ছি ছি ! আপনি কেন কষ্ট করে এসব করতে গেলেন?" শুক্লা ছিটকে ওঠে। 

- "আরে দূর বোসো তো। ওটা আমিও মজা করলাম। এখন আমরাও কফি নিয়ে বসতাম। শুধু দুটো কাপ বেশি লেগেছে।ঋষি হাতে হাতে কফি আর বিস্কুটের প্লেট তুলে দেয়। মনে মনে বলে, "কাল যখন দাদা যা খুশি কিনছিল, তখন কি আর জানত ভাল বিস্কুট গুলো কত কাজে দেবে?"

কফির কাপটা হাতে নিয়ে শ্রীতমা উঠে দাঁড়ায়, "থ্যাংকস ঋষিদা। চলুন না বাইরের বারান্দায় গিয়ে পাহাড় দেখতে দেখতে খাই? আপনিও গেলে আর হাতি কি বাঘের ভয় থাকবে না।" 

ঋষি ঈঙ্গিতটা স্পষ্ট বোঝে, সিদ্ধার্থ আর শুক্লাকে একলা ছাড়তে চায় শ্রীতমা। ও টক করে নিজের কাপটা তুলে নিয়ে বলে, "খুব ভাল হয়, চলো। বারান্দা কেন, আমরা পিছনের জমিটাতেও হেঁটে আসতে পারি। শুক্লা প্লিজ তুমি দাদার এখানে থাকো। একা রেখে এসো না। কিছু দরকার হলে আমাকে ডাকতে পারবে।" 

শুক্লা কিছু বোঝার আগেই দুজন দরজার বাইরে। সিদ্ধার্থ বরং ঋষির নাম ধরে ডাকে। আসছি দাদা বলে ঋষি গায়েব। 

প্রবল অস্বস্তিকর একটা পরিস্থিতি, কেউ কারও দিকে তাকাচ্ছে না, কথা তো নয়ই। শুক্লা ভাবছে, সিদ্ধার্থ কি ওর দাদাকে সন্দেহ করে, এখনও? সিদ্ধার্থর মনে হচ্ছে, শুক্লা কি জানতে পেরেছে ওর সম্পর্কে আমার সন্দেহ ছিল? 

আবার চুপ করে থাকাটাও বেশ অস্বস্তিকর। সিদ্ধার্থ কোনোমতে বলে, "বোসো না, কফি খাও। ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।"

- "আমি কি কফি খেতে এসেছি?" শুক্লা তিনদিন ধরে একটানা মানসিক চাপে সমস্তদিক দিয়ে বিধ্বস্ত, ঝাঁঝিয়ে উঠতে গিয়ে ঝরঝর করে কেঁদে ফেলে। অপ্রস্তুত সিদ্ধার্থ হাতের কফির কাপ রাখবে, না ওকে থামাবে, ভেবে পায় না। দাপুটে অফিসার সিদ্ধার্থ রায় কোথায় পালিয়েছে খুঁজে পায় না। তার বদলে মিনমিন করে বলে, "কাঁদছ কেন? কফি তো ঋষি করেছে। ওকে বলতে পারতে খাবে না।"

সিদ্ধার্থর কথা শুনেই শুক্লা আবার খেপে যায়, লাফিয়ে উঠে মেঝেতে পা ঠুকে কি বলতে গিয়ে ব্যথা পা ঠুকে উফ করে উঠল। কি হল কি হল করে সিদ্ধার্থ পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। শুক্লা চোখের জল সামলে বলে, "আমার যাই হোক তোমার কি?"

- "নাহ, আমার আর কি। তোমার পায়ে ব্যথা, তাই বলছি। আর রেগেই বা যাচ্ছ কেন? কফি খাবে না, ঠিক আছে।"

- "কফি খাব না কখন বললাম?"

- "তাহলে?" সিদ্ধার্থ আকাশ থেকে পড়ে। 

- "তাহলে আবার কি? তুমি এরকম করছ কেন?" শুক্লা টুলে বসে পড়ে ফুঁপিয়ে ওঠে। 

সিদ্ধার্থ পড়েছে মহা সমস্যায়। ঋষি আর শ্রীতমা যেতেই শুক্লা এরকম কান্নাকাটি করছে কেন? বলছেও বা কি, কিছুই বুঝতে পারছে না। কফির কাপটা টেবিলে রেখে এগিয়ে এসে শুক্লার টুলের মুখোমুখি বিছানার উপর বসে। 

খুব আস্তে আস্তে বলে, "আমি কি কোনো অন্যায় করেছি শুক্লা? এখানে কারও কোনো অসুবিধা করেছি? আমি বুঝতে পারছি না ঠিক। আমাকে প্লিজ একটু খুলে বলো। আমি নিশ্চয়ই তোমাদের হেল্প করব। শুক্লা আমাকে একজন বন্ধু ভাবতে পারো। কি হয়েছে বলো।"

- "হেল্প তো করবেই ! হেল্প করতেই তো তুমি বসে আছ ! এসেছ পাচারকারী ধরতে, আর এখন.... " 

[ ❤ অপরাধীর অস্তিত্ব টের পেয়েছে সিদ্ধার্থ, এই আভাস পেয়ে কেন ফ্যাকাশে হয়ে গেছিল শুক্লা? কি বলতে গিয়ে থেমে গেল ও?

❤ জানা যাবে পরের পর্বে। অনেক ধন্যবাদ এই পর্বটি পড়ার জন্য। আপনার মতামতের অপেক্ষা করছি। দয়া করে মন্তব্য করে জানাবেন। ]

চলবে