জঙ্গলের প্রহরী
পর্ব - ২৬
❤♣❤♣❤♣❤
- "যদি তোমার কিছু হয়ে যেত? যদি তাড়াহুড়োয় নামতে গিয়ে ওপারের খাদে.....মানে যদি সব ঠিক না থাকত?" শুক্লা এখনও বুঝিয়ে বলতে পারছে না, কেবল কথা হাতড়াচ্ছে।
- "কার কিছু হত? আমার? আমার কিচ্ছু হত না। আর হলেও কি হত? ভালই তো হত। রাজীবদার আর রাগ থাকত না।"
- "আবার ! আবার রাজীবদাকে নিয়ে পড়লে ! আচ্ছা, তোমার সমস্যাটা কি? রাজীবদার সঙ্গে কিসের এত দোস্তি?"
- "দোস্তি? কোনো দোস্তি নেই। আমি শুধু বলেছি, আমার কথার জন্যই তো রাজীবদার সঙ্গে তোমার ঝামেলা হচ্ছে। আমি না থাকলেই ঝামেলা মিটে যেত তোমাদের।"
- "নিজেকে এত ইমপর্টেন্ট ভাব কেন? তোমার জন্য আমার সঙ্গে রাজীবদার ঝামেলা হবে? হ্যাঁ, মণীষা একটু রাগ করেছে রাজীবদার উপর। তবে সেটা ঠিক মিটে যাবে। আর দাদা তো তোমাকে বলেছে, রাজীবদা আমাদের গেস্ট, তাকে আমরা কিছু বলতে পারি না। কিন্তু তোমার সঙ্গে রাজীবদার ব্যবহার আমরা কেউ সাপোর্ট করিনি।"
- "আমি সেগুলো নিয়ে ভাবছি না শুক্লা। আমি জানতে চাই এখন তুমি কি বলছ?"
- "আমি কি বলব? আমার কথা কে শোনে? আমি যদি বলি হাতির সামনে যাওয়া ঠিক হয়নি, একজন শুনবে?"
শুক্লা হতাশ হয়ে উঠে এসেছে জানালায়। জানালা দিয়ে দেখতে পাচ্ছে, দূরে বাংলোর পিছনের খোলা জমিতে একটা ছোটখাট পাথরের উপর উঠে বসে আছে শ্রীতমা, হাতে একথোকা সাদা রঙের কোনো ফুল সম্ভবত। পাশে দাঁড়িয়ে ঋষি। দুজন খুব মগ্ন হয়ে কথা বলছে বোঝা যাচ্ছে।
সিদ্ধার্থর সব গোলমাল হয়ে গেছিল শুক্লা বারবার ওর নিরাপত্তা নিয়ে কথা বলায়। যেটা মন থেকে সরিয়ে রাখতে লড়াই করছে নিজের সঙ্গে, সেটা নিয়েই কেন শুক্লা বারবার কথা বলছে? শুক্লার বয়স কম, মনটা নরম, ঐ বাচ্চাটাকে ও বাঁচিয়েছে বলে বাকি সকলের মতোই শুক্লারও কনসার্ন ওকে নিয়ে?
কিন্তু শুক্লার এই দুদিনের কনসার্ন নিয়ে ভেবে কি হবে? শুক্লার সঙ্গে এই অর্থহীন কথা বাড়িয়ে কি লাভ? বরং মানে না বুঝে শুক্লা যা বলে চলেছে, সেই কথাগুলো বন্ধ করা দরকার মনে হয় ওর।
- "তোমার কথা মেনে চলার লোক তো রয়েছে। রাজীবদা নিশ্চয়ই তোমার সব কথা মানে? আমি না মানলে কিছু ক্ষতি হবে না জগতের। আমার থাকা না থাকায় এই পৃথিবীতে কোথাও কোনো ফাঁকা জায়গা তৈরি হবে না।"
- "তুমি খুব বড়বড় কথা বলতে ভালবাসো, তাই না? তুমিই খালি মহান, আর কেউ তোমার সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চাইলে, তোমার জন্য ভাবলে, তাকে ছোট করে মজা দেখতে ভালবাসো। সেটা ঠিক?"
- "তুমি আমার সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চাও? আর তোমার বন্ধুত্ব নিয়ে আমি মজা করছি? এটা তোমার ভুল ধারণা। আমি বড়বড় কথা বলছি মনে করছ, কারণ তুমি কিছুই জানো না আমার কথা। আমার কিছু হলে সত্যিই কোনো ফারাক পড়বে না। কারও কিছু যাবে আসবে না। আমার কেউ নেই শুক্লা।"
সিদ্ধার্থ উঠে ঘরের অন্যদিকে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। এই মুহূর্তে তো অন্ততঃ ওর মনে হচ্ছে, কেউ ওর জন্যে চিন্তা করুক, শুক্লা ওর জন্যে চিন্তা করুক। সেজন্যই শুক্লার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
আর শুক্লা সম্পূর্ণ হতভম্ব, জানালা থেকে ফিরে তাকিয়ে বলে, "কেউ নেই মানে?"
- "নেই মানে নেই। আমি যখন ছ মাসের, জেঠিমার কাছে রেখে বাবা মা মন্দিরে পুজো দিতে গেছিল। যাওয়ার পথেই এ্যাক্সিডেন্ট হয়। জেঠিমা জেঠুমণি কখনও ওঁদের ছেলে মেয়ের থেকে আমাকে আলাদা করেননি। আর স্বার্থপরের মতো আমার জ্যাঠতুতো দাদা আর বোনের সবকিছুতে আমি ভাগ বসিয়ে আসছি চিরকাল।" সিদ্ধার্থ দেওয়ালের দিকে তাকিয়েই কথাগুলো বলে।
শুক্লা স্তব্ধ হয়ে গেছে। বাবা মাকে কখনো দেখেইনি একটা মানুষ ! সিদ্ধার্থ একবার ফিরে তাকায় ওর দিকে। পরক্ষণেই চোখ সরিয়ে নেয়।
শুক্লা কাছে এগিয়ে আসে, "নিজেই বলছ, জেঠু জেঠির কথা, ভাইবোনের কথা, তাহলে তোমার কিছু হলে তারা দুঃখ পাবে না?"
- "পাবে, কিছুদিন দুঃখ পাবে। তারপর ওদের গোটা পরিবার একসঙ্গে থাকবে। ওরা ঠিক ভাল থাকবে।"
- "আর তোমার বন্ধুরা, তোমার বউ? তাদের কথা ভাববে না?"
- "আমার বউ !" ক্লিষ্ট হাসি ছড়িয়ে পড়ে সিদ্ধার্থর শুকনো মুখে, শুক্লার চোখে চোখ রেখে বলে, "নাঃ ওরকম কেউ নেই।"
শুক্লার একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস পড়ে। নাহ, মণীষা সত্যিই বুদ্ধিমতী, ওদের তুলনায় অনেক ম্যাচিওর্ড। তাই তো রাজীবদাকে এত ভালভাবে বোঝে, সামলাতে পারে। তাহলে সিদ্ধার্থকে ভাল করে স্টাডি করে মণীষা যা বলেছে, বন্ধুদের যা বুঝিয়েছে সেটাই ঠিক? সিদ্ধার্থও ওকে......?"
- "বউ এখনও নেই, কেউ তো হবে। তুমি কেন ভাবছ তোমার জন্য কারও কিছু যায় আসে না?"
সিদ্ধার্থ খুব ভাল করে জানে জেঠুর বাড়ির প্রত্যেকের কাছে ওর কতটা দাম। এখন শুক্লাকে রাজীবের প্রেমিকা বলে জানে, অথচ নিজের মনের ভিতরে কোন অজ্ঞাত কারণে সে ক্রমশ ঢুকে পড়ছে, আটকাতে পারছে না, কালকের পর তার সঙ্গে আর দেখা হবে কিনাও জানে না বলেই তীব্র অভিমানে একথা বলেছিল। সেখান থেকে পিছিয়েও আসতে চায় না। আবার বলে "আমার জন্য কার মাথাব্যথা বলো?"
[ ❤ সিদ্ধার্থর পরিবারের সব গল্পই তো শুক্লা জানতে পারল। এবার কি দুজন কাছাকাছি আসবে?
❤ জানা যাবে পরের পর্বে। অনেক ধন্যবাদ এই পর্বটি পড়ার জন্য। আপনার মতামতের অপেক্ষা করছি। দয়া করে মন্তব্য করে জানাবেন। ]
চলবে