Featured Books
বিভাগ
শেয়ারড

জঙ্গলের প্রহরী - 31

জঙ্গলের প্রহরী

পর্ব - ৩১

♥♣♥♣♥♣♥

সিদ্ধার্থকে এক দুবার স্যার বলে ডেকে তাপস কাকে যেন ফোন করে, ঘরের দরজা খুলতে খুলতে বলে, "একবার আসুন স্যার। দুজনেই অসুস্থ হয়ে পড়েছে।"

বারান্দার আড়াল ছেড়ে বেরিয়ে এল একজন, "দুজনকেই চেক করেছ? কমপ্লিটলি সেন্সলেস তো? পালানোর চেষ্টা করবে না?''

- "একটা ছোট প্রবলেম হয়েছে। ওরা কেউ মাথা তুলে বসতেও পারছে না, এটা চেক করেছি। কিন্তু ওদের গ্লাসদুটো পড়ে গেছে।"

- "ঠিক আছে, খানিকটা পেটে যেতেই কাজ শুরু হয়েছে। বাচ্চাটা কোথায়?"

- "পল্টন নিখোঁজ। লেজুড়টাতো বাচ্চাটাকেই খুঁজতে গেছিল। তবে স্যার, ওদের পেটে রামটা একটুও যায়নি। এটার হাত কাঁপছিল রাস্তায় পাইথন দেখে, গ্লাস পড়ে গেল। আর ওস্তাদটা তাই দেখে কি হল কি হল করতে গিয়ে ফেলে দিল। তাছাড়া ওতে যা মেশানো ছিল, তাতে তো খিঁচুনি হওয়ার কথা, এরকম স্থির হওয়ার তো কথা নয়?"

- "যা হয়েছে হোক, এখন চলো, বাচ্চাটাকে চাই। সিদ্ধার্থ রায় যখন ওকে নিয়ে এসেছিল, তখন ওর গল্প আছে। এদের আপাততঃ দরজা বন্ধ করে দিয়ে চলো, ভোররাতে ফিরে খুলে দেব।" লোকটা পিছন ফেরে। ঘরের এল ই ডি বাল্বের আলোয় হাতে অস্ত্রটার নল চকচক করছে, চকচক করছে সেই হাতে ঘড়ির ডায়াল। আবার তাপসের দিকে ফিরে বলে, "গ্লাসদুটো সরিয়ে নাও। পাহাড়ি ঢালে কোথাও ফেলে দেবে।"

তাপস পিছন ফেরার আগেই ওদের পিছন থেকে জলদগম্ভীর গলা, "গ্লাসদুটো তো নেই। আমার বুটের তলায় গুঁড়িয়ে গেছে। সব টুকরো এখন তুলে নিয়ে যাওয়া অসম্ভব। একমাত্র ফরেন্সিক এসে তুলবে। বুটটা এজন্যই পরেছিলাম তাপস। থ্যাংকস তোমার হেল্পের জন্য। আর পল্টন? ও ধরাছোঁয়ার বাইরে।"

তাপসও লাফিয়ে উঠে পিছন ফিরেছে। পাশাপাশি দাঁড়িয়ে সিদ্ধার্থ আর ঋষি, দুজনেরই মুখে হাসি, হাতে নিজের নিজের বন্দুক।

সিদ্ধার্থ হাসিমুখে বলে, "ওয়েলকাম বিডি, প্রদীপের নিচেই অন্ধকার। দিল্লিতে সবাই সন্দেহ করছে, ওপরমহলের যোগ না থাকলে একবছর কি করে কারবারটা চলে। পল্টন দেখেছিল সব, তাই ভয় পেয়েছিল। সময় লেগেছে ওকে মুখ খোলাতে। আর ওর মুখে সব শোনার পর আমরাই ওকে সরিয়ে রেখেছি সেফ জায়গায়। আপনি যাতে ওর খবর পান, স্পট করতে আসেন, তাই খানিকটা আবার তাপসকে জানিয়ে রেখেছি। তুমি খুবই বোকামি করেছ তাপস। আশীষের মৃত্যুর পর ওর একটামাত্র ঘর সার্চ না করে বন্ধ করে রাখলে?"

- আশীষের ঘরের সব আমি লোপাট করে ফেলতাম। এখনও পারব। তোমরা এখান থেকে বেঁচে ফিরতে পারবে? ঐ টেঁটিয়া রেঞ্জার আর ওর চামচা ফরেস্ট গার্ড গুলো হঠাৎ মালপত্র গুলো পেয়ে যাওয়ায় তোমাকে ডাকা হল। এক পা পিছিয়ে গেছিলাম খালি। এখন আর তো পিছনে তাকাব না। এটা আমার এলাকা, আমার জন্মভূমি।" বিডি আস্ফালন করে। ওর হাতেও ওর সার্ভিস রিভলবার। হাত খালি কেবল তাপসের। 

- "এটা আপনার জন্মভূমি নয়, আপনার মতো বিশ্বাসঘাতকের আবার দেশ ! বিডি, এবার আর চালাকির চেষ্টা করবেন না। আমার হাতে কি আছে দেখতে পাচ্ছেন? এতে বাঘ মারা যায়। যদিও সেটা আমি সারাজীবনে করব না। তবে সিদ্ধার্থ আর ঋষিকে বাঁচাতে ছারপোকা মারতেই পারি।" 

দরজায় শাক্যকে রাইফেল হাতে দেখে বিডি নতুন কিছু ভাবার আগেই তাপস সিদ্ধার্থর দিকে লাফ দিয়েছে। ওর লক্ষ্য সিদ্ধার্থর বাঁ হাত। একবারে বাঁ হাত ধরে ফেলতে পারলে কাবু করতে সময় লাগবে না। তবে তাপস যখন একটু ঝুঁকে লাফানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে, সিদ্ধার্থও তাপসের বাঁ দিকে লাফ দিয়েছে। 

চোয়ালে সিদ্ধার্থর ডানহাতের ঘুঁষির সঙ্গে সঙ্গে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে পড়ে যাচ্ছিল তাপস। তার আগেই কেউটের ছোবলের মতো তাপসের পেটে আছড়ে পড়ে ঋষির পা। মাটিতে পড়ামাত্র ডানদিকের কানের পিছনে ঠান্ডা ইস্পাতের নল ছোঁয়ালো ঋষি। 

- "নড়বে না তাপস। পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক ফায়ার করতে পারব আমি। পাশের ঘর থেকে এই ঘরের সবকিছু লাইভ দেখছেন এডিজি স্যার। সঙ্গে রেকর্ডিং হচ্ছে। তোমাদের গেম শেষ।" ঋষির গলায় একফোঁটাও একটু আগের ভয়ডর নেই। 

- "আমাদের আগে যে এসেছিল, তাকে কিনতে পেরেছিলেন। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানলেন ঋষি আর সিদ্ধার্থকে কেনা সম্ভব নয়। আমাদের নামধাম সব কাহিনী রটিয়ে দিলেন আমরা আসার আগেই। আমার গোপন তদন্ত যেন বাধা পায়।" কথা বলতে বলতে সিদ্ধার্থ বসে পড়েছে। 

কারণ এডিজি স্যার চারজন পুলিশকে নিয়ে ঘরে ঢুকে এদের এ্যারেস্ট করেছেন। 

সিদ্ধার্থর সামনে এসে এডিজি স্যার বলেন, "গল্পটা অনেক বড় বুঝতে পারছি। ভীষণ কৌতূহল হচ্ছে তোমাদের দুজনের কাছে শোনার। তবে তোমাদের বিশ্রাম দরকার আগে। তাই আজ রাতে থাক। আজ আমার লোকেরা ক্যামেরাগুলো খুলে নিয়ে যাক। এরা লক আপে থাক। কাল তোমার গল্পটা শুনব।"

- "অতক্ষণ কৌতূহল চেপে আপনার সঙ্গে আমিও থাকব।" পুলিশ কমিশনার মোহিত বড়ুয়া পুরো টীম নিয়ে ঢোকেন, ওসি দিবাকর নাথও সঙ্গে আছেন।

- "আধঘণ্টা সময় দিন মিঃ রায়। সীজার লিস্ট আর ফরেন্সিক অন স্পট লিস্টটা কনফার্ম করলে শুধু দুটো সিগনেচার করবেন। বাই দ্য ওয়ে, থ্যাংকস মিঃ গোস্বামী। আপনি ডিউটির বাইরে যেভাবে সবকিছু হাতে তুলে নিয়েছিলেন, হ্যাটস অফ।" মোহিত বড়ুয়া স্মিত হাসেন। 

[ ❤ অপরাধীকে ধরা গেছে। কিন্তু ঠাকুরাণীর চিতার সঙ্গে তার যোগ কোথায়? সেকথা কি প্রমাণ করতে পারবে সিদ্ধার্থ আর ঋষি? 

❤ জানা যাবে পরের পর্বে। অনেক ধন্যবাদ এই পর্বটি পড়ার জন্য। আপনার মতামতের অপেক্ষা করছি। দয়া করে মন্তব্য করে জানাবেন। ]

চলবে