Featured Books
বিভাগ
শেয়ারড

জঙ্গলের প্রহরী - 36

জঙ্গলের প্রহরী

পর্ব - ৩৬

♥♠♥♠♥♠♥

- "অফিশিয়ালি বিডিকে কটা গুলি এ্যালট করা হয়েছে, আর কটা ওর কাছে এখন আছে, সেটা তো হিসেব মেলাতে পারল না। মিসিং যেটা, সেটাই শাক্য পেয়েছে। গুলিটা পাওয়া গেছে বলে বিডির গান থেকে আরেকটা ফায়ার করে ফরেন্সিক এটা ওর ছোঁড়া প্রমাণ করতে পারবে।" সিদ্ধার্থ নিশ্চিত সুরে বলে। 

- "তাহলে বেশ প্যাঁচেই আছে তোমার বিডিস্যার?" তালুকদার স্যার খুশিমনে দু হাতের তালু ঘষছেন। 

- "আরেকজন সাক্ষীও আছেন। সৎ, দেশপ্রেমিক একজন মানুষ। যিনি সবটা দেখেছেন কেউ ভাবেইনি। তিনি ফাদার বারটন। চার্চের পিছনদিকেই পাকদন্ডী। পাঁচিল ভাঙা থাকায় দুষ্টু ছাত্রেরা কি করছে উনি নজরে নজরে রাখেন। ছাত্রদরদী এই মানুষটি লোকদুটোকে দেখেছিলেন, লুকিয়ে খানিকটা পিছুও নিয়েছিলেন। নেমে পালাতেও দেখেছিলেন।" সিদ্ধার্থর কথায় সবার দৃষ্টি ঘুরে যায় শান্ত মানুষটির দিকে, লজ্জিত হয়ে পড়েন উনি। 

- "ফাদারের সঙ্গে সঙ্গে আরেকজন সাক্ষী আছে। সে হল আমাদের সুপারহিরো পল্টন। ও দেখেছিল সব, তাই ভয় পেয়েছিল। দুদিন লেগেছে ওকে মুখ খোলাতে। আর সেই মুখটা তাপসের আড়ালে খুললেও তাপস যাতে আন্দাজ করে, তাই ওকে দেখিয়ে দেখিয়ে আমাদের বাংলোয় নিয়ে এসেছিলাম।" ঋষি পল্টনের কাঁধে হাত রেখে দাঁড়িয়ে, পল্টনের মুখে আজ অমলিন হাসি। 

- "এবার সবার অনুমতি চাইছি, একটা অন্য বিষয় বলার জন্য। তবুও সবার এই ব্যাপারেও জানা দরকার তাই বলছি, সবার সামনেই বলছি।" সিদ্ধার্থ থেমে একবার জল খায়, যেন এই প্রথমবার একটু দ্বিধাগ্রস্ত। একবার জেঠুমণি আর দাদাভাইয়ের দিকেও তাকায়।

- "বলো বলো। আমি তো এব্যাপারে ট্রেনে যেটুকু শুনেছি, ভীষণরকম এক্সাইটেড। আর এত রিপোর্টাররা এসেছেন, ওদের এক্সক্লুসিভ স্টোরি চাই তো।" তালুকদার স্যার মিটিমিটি হাসেন। 

- "জঙ্গলে ব্যাগটা পাওয়ার পর আমাকে যেই ডাকা হল, প্রথম গেলাম শাক্যর কাছে ওর ব্রিফিংটা শুনতে। ততক্ষণে চিতার খোঁজ খবর জানা না থাকায় চারিদিকে একটা রিউমার ছড়িয়ে গেছে, ঠাকুরাণীর চিতা আশীষকে শাস্তি দিয়েছে। আমি যখন শাক্যর সঙ্গে দেখা করতে ওর বাড়িতে গেলাম, তখন একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটে, যেটা ছাড়াও কেসের ঘটনাগুলো ঘটেছে, সলভও হয়েছে।"

থেমে গিয়ে শুক্লার মুখের দিকে তাকায় সিদ্ধার্থ। তারপর কিছুটা সামলে নিয়ে বলে চলে, "সব কথা ঋষিও জানে না, কারণ বলার সময় পাইনি। এই তল্লাটে গল্প চালু আছে দুশো আড়াইশো বছর আগে এক সন্ন্যাসী এসেছিলেন, যার কাছে ঠাকুরাণীর মূর্তি ছিল। যার পোষা চিতারা এই বংশের একজন দেশপ্রেমিক মানুষের প্রাণরক্ষা করেছিল। সব আমার শোনা গল্প।"

- "শোনা হলেও গল্পটা ঠিক বলেছ সিদ্ধার্থ।" কমিশনার বলেন। 

- "না স্যার, এখানে একটা চালাকি আছে।" সিদ্ধার্থ আবার কনফিডেন্ট। 

- "মানে? এখানে কিসের চালাকি?" সোজা হয়ে বসেছে সকলেই। 

সিদ্ধার্থ এবার আড়চোখে তাকায় শুক্লার দিকে, ওর দিকেই তাকিয়ে ছিল। চোখাচোখি হতেই মুখ নিচু করল। কিন্তু সিদ্ধার্থকে সব বলতেই হবে। মনে মনে বলে, "সরি শুক্লা। তুমি হয়তো কারও ক্ষতি চাওনি, কিন্তু আমাকে সব বলতেই হবে।"

সিদ্ধার্থ আবার শুরু করে, "আমি যখন শাক্যর বাড়িতে গেলাম, ওর বোন একটা বই পড়ছিল। সেটা উলটে রেখে শাক্যকে ডাকতে যায়। আমি বইটা নিয়ে দেখেছিলাম। ওটা উত্তরবঙ্গের রাজা জমিদারদের ইতিহাস। পরে জানলাম শাক্যর ঠাকুর্দার লেখা বই। ততক্ষণে যে পাতাটা দেখলাম, তার মার্জিনে পেনসিলে লেখা ছিল, এই রায়চৌধুরীদের যে পূর্বপুরুষ স্বদেশী ছিলেন, নলিনাক্ষ রায়চৌধুরী, তাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশদের চিতারা আক্রমণ করে। তখন তিনি পালিয়ে যান। কয়েক মাস পরে সন্ন্যাসীর ছদ্মবেশে দাদা কমলাক্ষ রায়চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করতে আসেন। সেই বুদ্ধিও কুলপুরোহিত স্মরণ গোস্বামীর দেওয়া। আবার এই সময়ে বিশ্বস্ত প্রজাদের দিয়ে ঐ স্মরণ গোস্বামীই রটিয়ে দিয়েছিলেন, দু আড়াইশো বছর আগেও সন্ন্যাসী এসেছিলেন। সেই তিনিই নাকি ফিরে এসেছেন। বেশ গল্পটা। যাতে গ্রামের লোক একটু বেশিই ভক্তি করে সন্ন্যাসীকে, তার খবর ইংরেজ পুলিশের কানে না যায়।"

- "কি বলছ ! এতো বিরাট খবর ! আর এই খবর চেপে রাখা হয়েছে?" কমিশনার আর এডিজি লাফিয়ে ওঠেন। অন্যরাও অবাক। 

- "হ্যাঁ স্যার। কমলাক্ষ রায়চৌধুরী ভাইকে যথেষ্ট টাকাপয়সা, পারিবারিক গয়না দিলেন। দূরে কোথাও চলে গিয়ে ইংরেজ পুলিশের চোখ এড়িয়ে জীবন শুরু করতে বললেন। তাই করলেন নলিনাক্ষ। এই খবর জানত শুধু রায়চৌধুরী আর গোস্বামী, এই দুই পরিবার। সঙ্কর্ষণবাবু, আপনারা সম্ভবত এখন আর জানেন না, এত বছরে কোথাও সুতোটা ছিঁড়ে গেছে। বংশানুক্রমিক এই কাহিনী, বাবা ছেলেকে বলে যেতে পারেননি বলে।" সিদ্ধার্থ প্রশ্ন করে। 

এত ঘটনার স্রোতে মাথা ঝিমঝিম করছিল সঙ্কর্ষণবাবুর। প্রথমে কিছুই বলতে পারছিলেন না। কথা বলতে গিয়ে আওয়াজই বেরোয় না। তারপর গলা খাঁকড়ে বলেন, "না, এমন কোনো ঘটনা আমরা এতদিন জানতাম না। আপনার জেঠুই ট্রেনে আমাদের বললেন। তবে বইতে লেখা, একজন জ্ঞানী মানুষ তাঁর নিজের পূর্বপুরুষদের কাহিনী লিখেছেন, আমাদের বংশের কাহিনীটাও সত্যিই হবে।"

- "আজ্ঞে না, উনি এটা বইতে লেখেননি।" সিদ্ধার্থর কথায় সবাই হাঁ হয়ে যায়। 

[ ❤ সেই প্রাচীন সন্ন্যাসী তাহলে ছদ্মবেশী স্বদেশী? কিন্তু ব‌ইতে না থাকলে সিদ্ধার্থ জানল কি করে? 

❤ জানা যাবে পরের পর্বে। অনেক ধন্যবাদ এই পর্বটি পড়ার জন্য। আপনার মতামতের অপেক্ষা করছি। দয়া করে মন্তব্য করে জানাবেন। ]

চলবে