Read Jharapata 38 by Srabanti Ghosh in Bengali Love Stories | মাতরুবার্তি

Featured Books
বিভাগ
শেয়ারড

ঝরাপাতা - 38

ঝরাপাতা

পর্ব - ৩৮

💜💕💜💕💜💕💜

বনি সমরকে বোঝাতে এগোনোর আগেই রনি মুখ তোলে, পরিষ্কার গলাতেই বলে, "কাকু, আপনাদের সকলের হয়ত খারাপ লেগেছে, তার জন্য আমি ক্ষমা চাইছি। সত্যিই মন থেকে ক্ষমা চাইছি। কিন্তু আপনারাও একবার ভেবে দেখবেন, আমার জায়গায় দাঁড়িয়ে ভেবে দেখবেন, আমার পরিস্থিতি কি হয়েছিল? ছেলেটি কাল অস্বীকার করলে, এই ফোনটাও সে সাজানো বলতে পারে। রেকর্ডিংটা জেনুইন প্রমাণ করা যাবে হয়ত, কিন্তু সেটা খুব সহজ নয়, যথেষ্ট ঝঞ্ঝাটের কাজ। আমরা সবাই নাহয় জানলাম, কাজটা এই ছেলেটির, সেটাও কি খুব অস্বাভাবিক নয়? এতদূর কেউ যায়? প্রায় পাঁচ লাখ টাকা নাকি ওরা খরচ করতে তৈরি এই পরীক্ষার জন্য ! আবার তাও মিলিকে সারপ্রাইজ দেবে বলে। এমন ঘটনা আমি কি করে আগাম জানব?"

সমর চুপ, গোপার কিন্তু একটু ভয় ভয় করছে। সত্যিই অদ্ভুত ঘটনা। বড়লোকের ছেলের খেয়াল, এতখানি বড় খেয়াল? এত বন্ধুত্ব মিলির সঙ্গে? সেই একই কথা রনির মাথাতেও ঘুরছে। তবে সেটা বলার মতো অবস্থা আর এখন নেই। যদি ও প্রথমেই চীৎকার চেঁচামেচি না করে ফেলত, তাহলে এখন বলতে পারত, ছেলেটির সঙ্গে বন্ধুত্ব করা উচিত নয় মিলির। এখন মিলির ব্যাপারে কিছু বলার কোনো অধিকারই ওর নেই, বুঝে গেছে। এই ক মাসে যেটুকু জায়গা বানিয়েছিল সবার মনে, সেটাও শেষ।

তবুও সমর চুপ দেখেই আবার মুখ খোলে, "আগামীকাল আমি কলেজে যাব। মিলি যাতে পরীক্ষা দিতে পারে তার জন্য যদি আমাকে দিয়ে কোনো কাজ হয়, সেটা আমি নিশ্চয়ই করব। এখন একবার মিলির সঙ্গে কথা বলতে পারি? আর কিছু না, ওর যে কোনো দোষ নেই, আমি অকারণ দোষারোপ করেছি, সেটাই বলতাম।"

- "না রনি, আমি এখন মিলিকে কারও সঙ্গে কথা বলতে দেব না। কালও তোমাকে কলেজে এ্যালাও করতাম না। তবে তোমাকে বোধহয় কলেজের তরফ থেকেই ডাকা হবে। সেটা তাদের ব্যাপার। আমি শুধু তোমাকে তোমার টাকা ফেরত দিয়ে দেব।" সমর মুখ খুলতেই বোঝা যায়, রনির কোনো কথাই শুনতে তৈরি না। 

রনি উঠে দাঁড়িয়ে বলে, "আমি আবার ক্ষমা চাইছি কাকু। আজ না হলেও কোনোদিন যদি পারেন, আমাকে ক্ষমা করবেন। আর আপনি ফিক্সড ভাঙাতে যাবেন না, টাকাটা আমি কিছুতেই ফেরত নেব না। এখন যা পরিস্থিতি হল, তাতে তো আরও নেব না। কারণ মিলির সঙ্গে আমার আর কোনো সম্পর্কই হয়ত থাকবে না। এরকমই একটা দিন আসতে পারে ভেবেই তো আমি ওর চিকিৎসার খরচ দিতে চেয়েছিলাম। সেক্ষেত্রে মিলির পড়াশোনায় যেন কোনো বাধা না আসে এটাই এখনও আমার একমাত্র উইশ। আসছি কাকিমা।" মাথা নিচু করে বেরিয়ে যায়, কারও দিকে তাকায় না। 

বনি লাফিয়ে উঠে এবার সমরকে চেপে ধরে, "কাকু, ওর কথাগুলো একবার ভাবুন। কাল থেকে সারাদিন জ্বর ছিল, কিচ্ছু খায়নি ছেলেটা। ঐ অসুস্থ শরীরে হঠাৎ এরকম একটা খবর। ওর মাথা কাজ করেনি। মিলির জন্য কেউ কিছু করেছ মানেই সেটা মিলির ইচ্ছেয়, এটা ধরে নিয়েছিল। আপনার সামনে চেঁচামেচি করেছে, মিসবিহেভ করেছে, কিন্তু মিলির খারাপ চায় না ও।"

- "এই কথাটা আমারও মনে হয়েছে। হঠাৎ এমন অদ্ভুত কাণ্ড দেখে মিলিকে জিজ্ঞাসাবাদটা খুব ধমক ধামক দিয়ে করেছে। কিন্তু সেও তো মিলি যাতে ভালো পাশ করে তার চেষ্টা করে যাচ্ছে ও। আমরা কেউ খবরই রাখি না। মিলির কবে কি পড়া, আনা নেওয়া, ডাক্তার কি বলল, সব খোঁজখবর রাখে। তাই মিলি অন্যায় করেছে ভেবে ধমকেছে। সে যতই বলো, বুদ্ধিটাও তো দিয়েছে !" গোপাও বনির সুরে সুর মেলায়। 

- "গোপা, তুমি বুঝতে পারছ না। রনি কয়েকটা ভালো কাজ করে ফেলে আবেগের বশে। আসলে ওর না ভদ্রতা বোধ আছে, না এ্যানালাইজিং পাওয়ার। কাকে কান নিয়ে গেছে শুনলেই ও কাকের পিছনে দৌড়য়। সেবার ওর বন্ধু বলল, মিলি অন্য ছেলের সঙ্গে প্রেম করে, ও বাড়ি থেকে চলে গেল। এবার বন্ধুর দিদি বলল, মিলি অন্যায়ভাবে পরীক্ষার ব্যবস্থা করছে, ও কি যাচ্ছেতাই চোটপাট করল। আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি, আমার সামনে ও আমার মেয়েকে ধমকাচ্ছে ! ওর টাকাটা নিতে এজন্যই আমার আপত্তি ছিল। কয়েকটা টাকা দিয়ে নিজেকে কি ভাবছে ও? আমরা ওর সামনে হাতজোড় করে বসে থাকব?"

- "এমা, না কাকু। রনি ওরকম নয়। এ আপনিও জানেন। মানছি, ওর আরও মাথা ঠান্ডা রাখা দরকার ছিল। কিন্তু ভাবুন তো, এই ছেলেটি কোন সাহসে মিলির ব্যাপারে এতদূর এগিয়ে গেল? আপনি এখন রাগ করে আছেন, ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখবেন, আপনার সামনে রনি মিলিকে ধমকেছে, এটা যেমন ঠিক না, ঐ ছেলেটা সবার আড়ালে এমন করল কি করে?" পিউও খটকাগুলো তুলে ধরে। 

- "একমিনিট পিউ, তুমি কি মিলিকে নিয়েই কথা বলতে চাইছ? ওর দোষ আছে বলতে চাইছ?"

- "না কাকু, মিলির দোষ নেই, সবাই বুঝেছি। আমি বলছি, মিলির ইচ্ছে ছিল দুটো পরীক্ষা দেওয়ার, এইটুকুতেই ছেলেটা যা করেছে, তার দায় আবার ভাইয়ের উপরেই এসেছে। তখন ওর রাগটা খুব অস্বাভাবিক নয়। যেমন মিলির উপর দায় আসায় আপনার রাগ হচ্ছে। আমরা বলছিনা, ভাইকে একেবারে ছাড় দিতে, কিন্তু আপনিও একটু সময় নিন। কালকের দিনটা যাক। এভাবে সম্পর্কটা একদম ভেঙে দেবেন না।"

- "পিউয়ের কথা ঠিক। ভালোমন্দ কিছুই আজ ডিসিশন নেওয়ার দরকার নেই। এখন মাথা ঠান্ডা করো, কাল কলেজে কি করবে ভাবো। এই বিয়ে নিয়ে ভাবার অনেক সময় আছে।" গোপাও ভাবছে, কাল কি হবে। 

পিউ আর বনি চলে যেতে গোপা সমরকে বলে, "রনিকে নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া আর সম্ভব? তোমার মেয়ে তো ওর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। আজ যা রাগারাগি হয়েছে, মিলি কষ্ট পেয়েছে ঠিক, তেমনি সেটা খানিকটা ওদের নিজেদের মান অভিমানের ব্যাপার। পলাশকে দিয়ে বলিয়েছে ভেবে রনি খেপে গেছে কিনা দেখো গিয়ে। আর যাই বলো বাপু, এই নিয়ে আমারও একটু সন্দেহ হচ্ছে। পলাশ ছেলেটার সম্বন্ধে বুঝতে হবে। অঙ্কুরের থেকে কি জানা যায় দেখি। এখন যত কম কথা খরচ হয়। একেই একটা বিশ্রী কাণ্ড হয়ে আছে বিয়ে নিয়ে। তার উপর আমরা কিছু চাপিয়ে না দেওয়াই ভালো। রনির ব্যাপারে মিলি মাথা ঠান্ডা হলে যা করার করবে।"

সমরও বুঝতে পারছিল, রনির খারাপ ব্যবহারের জন্য ওকে শাসন করা যায়, নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে ওর সঙ্গে মিলির বিয়ে ভেঙে দেওয়া যায় না। দুদিন পর হয়ত মিলিই রনির জন্য কষ্ট পাবে। এই তো গতকাল সারাদিন সিনেমা দেখে ঘুরেফিরে এল মেয়ে। যখন রনি বাইক নিয়ে এসে দাঁড়ায়, কলেজেই যায়, অঙ্কুরের থেকে জানতে পারে, তবে রনির সঙ্গে যায় বলে মেয়ের মুখে যে হাজার ওয়াটের খুশির আলো জ্বলে ওঠে, সেটা কি এক ঝগড়ায় মিথ্যে হয়ে যাবে? 

💟💕💟💕💟💕💟

মিলি ফিরে এ ঘরে আসছিল, বাবা মাকে বলবে, আর রনিদার সঙ্গে কলেজে যাবে না, পড়তে যাবে না। এদিকে বলে ভালোবাসে, ওদিকে না ওকে কোনো কথা বলে, না ওর কোনো কথা ধৈর্য্য ধরে শোনে ! নিজের রাগের কথাগুলো বলতে এসে শোনে মায়ের কথাগুলো। চোখ ভিজে যায় আবার। সত্যিই এখন ওর কষ্ট হয় রনিদার সঙ্গে রাগারাগি হলে। দু বারই মিলির মনের ভিতরটা দুমড়ে মুচড়ে গেছে, আজকের কথা বাদই দিল নাহয়। 

ঘরে এসে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ে মিলি। রনিদা একটুও বোঝে না, মিলির কষ্ট হয় ও এরকম করলে? সঙ্গে সঙ্গে মনে পড়ে, রনিদাও দু বারই যতই ধমক দিক, প্রথম ঝামেলা শুরু করুক, শেষে ওকে বলেছে, ও রাগ করায় খুব কষ্ট পেয়েছে। কাল সারারাত তো ঘুমোয়নি। আজ ওকে আনতে গেলে ও খুব বকবে ভেবেছিল। বেলায় ওকে টেক্সট করল, জ্বর এসেছে, বাড়ি থেকে বেরোবে না। আর বোটানিক্যাল গার্ডেনে রনিদা কিভাবে ভেঙে পড়েছিল, ও কখনো ভুলতে পারবে না। ওরকম খোলা একটা জায়গায় জোর করে ওর হাত ধরে রেখেছিল। 

আস্তে আস্তে মিলির রাগ, দুঃখগুলো কমে আসছে এসব মনে পড়ে গিয়ে। ও ভাবে, "রনিদার হয়ত নিজেরই খারাপ লাগবে এরপর। এই তো বিয়ের সময়, দিদি ঐভাবে পালিয়ে গেল, সেই দিদির সঙ্গেও রনিদা ভাব করে নিয়েছে। মাথা ঠান্ডা হওয়ার পর নিশ্চয়ই যোগাযোগ হয়েছে, আর রনিদা দিদির উপর রাগ ভুলে গেছে। মানুষটাই এরকম। 

কে ওকে কাল দেখলে বলত, এই রনিদা দিদির উপর রাগ করে ওরকম গোমড়া মুখ করে বিয়ে করল, বিয়ের পর দুদিন একবার আমার সঙ্গে একটা কথা বলল না। পিউবৌদি ডেকে আনত, এটা ওটা নিয়ম কানুন, রনিদা কোনোমতে সেটুকু সময় ওখানে বসত, পিউবৌদি বা মামাতো বোনের সঙ্গে না পারতে কথা বলত আমার সামনে। তারপরই উঠে কোথায় চলে যেত। কত কথা বলার ছিল, ঐভাবে হঠাৎ বিয়ে হল, ভেবেছিলাম রনিদাকে আমার সব কথা বলব, আর কোনোদিন বলা হল না। বৌভাতের রাতে নিমন্ত্রণ বাড়ি থেকে রনিদা আর ফিরল না। ভাবলই না আমার কি অবস্থা হল, আমি মরলাম না বাঁচলাম !" তীব্র অভিমানে গলার মধ্যে কষ্টের ডেলাটা যেন আটকে গেছে। চোখের জলও তাকে ঠেলে বেরোতে পারছে না। 

মিলি ছটফট করছে, "রনিদার যদি আপত্তিই ছিল, বিয়ে করত না। আমি তো বলতে পারিনি। ও তো একবার না বললেই বিয়ে হত না। বিয়ে করে আমাকে এত অপমান কেন করল?" গরম চোখের জল গড়াতে শুরু করেছিল সবে, মিলি ধড়মড় করে উঠে বসল, "রনিদার সঙ্গে আমার বিয়ে হয়েছিল !"

চলবে