Read Jharapata 42 by Srabanti Ghosh in Bengali Love Stories | মাতরুবার্তি

Featured Books
বিভাগ
শেয়ারড

ঝরাপাতা - 42

ঝরাপাতা

পর্ব - ৪২


💖💕💖💕💖💕💖

মিলির প্রশ্নে লিলি সহজসুরেই বলে, "এ আবার কেমন কথা? রনিদাকে কতদিন চিনি মানে? বরাবরই চিনি। এই বাড়িতে এসে থেকেই ওদের বাড়ির সবাইকে সবাই চিনি।"

- "আরে দূর, সেই চেনা নয়, তোর বিয়ের পর মানে তুই চলে যাওয়ার পর কি হল? নাকি আমাদের বাড়ি থেকে তুই যাওয়ার আগেই....."

- "ওওওও আচ্ছা, বুঝেছি। আরে সে এক গল্প। তোকে তো আজকাল কিছু বলাই হয় না। কি হয়েছিল বলত, আমি যে বাড়ি গেলাম, তুই বোধহয় ওপরে ছিলি, মা তো ঢুকতেই দিল না। তা আমরা ফিরে আসছি, বাসস্ট্যান্ডে রনিদা এসে আমাদের ধরল। প্রথমে তো চোটপাট, কেন ওকে বিয়ে করলাম না, কেন পালিয়ে এলাম, ও কেস করবে, হ্যানাত্যানা।"

- "রনিদা তোকে নিজে বলেছে এগুলো? কবে বলেছিল মনে আছে? মানে ডেটটা?"

- "নিজে বলেছে মানে? নিজে বলবে না তো কি, সেক্রেটারিকে দিয়ে বলাবে? বলছি না বাসস্ট্যান্ডে এসে রাস্তায় ঝামেলা করছিল, ও আমার সঙ্গে কথা বলবে। যুগল তো খেপে খেপে উঠছিল। তারপর আমি থামালাম। বললাম বলো কি বলবে। রাস্তায় ওভাবে তো এসব কথা হয় না। ওকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে এলাম। বসিয়ে, মাথা ঠান্ডা করিয়ে, সব বললাম। তখন অবশ্য খুব শান্ত হয়ে গেল। তারপর তো এত ভালো করে কথা বলল, যুগলের সঙ্গে খুব ভাব হয়ে গেল।"

- "হুঁ, বুঝলাম। এটা কবেকার কথা দিদি?"

- "এই তো সেদিন........ এটা হচ্ছে দশমীর পরদিন, মানে দুর্গাপুজোর দশমীর পরদিন যে একাদশী। ঐদিনই আমরা বাড়ি গেছিলাম। তা মা কথাই শুনল না।"

- "তারপর থেকে তোর সঙ্গে নিয়মিত দেখা করে রনিদা? শুধু তোদের বাড়িতেই নাকি বাইরেও?"

- "রনিদার সঙ্গে আমাদের খুব ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গেছে রে। এত ভালো ও যে আমরা আর ওর উপর রাগ করে থাকতে পারিনি। তোকে একটা কথা বলব রে?"

- "শুনছি দিদি, তোর সব কথা আমি শুনছি। তুই আমাকে আগে একটা কথা বল, আমি যেদিন গেলাম, মানে তোদের মধ্যে কি নিয়ে সমস্যা হচ্ছিল? যুগলদা কি পছন্দ করে না রনিদাকে?"

- "ঐ যুগল শয়তানটার কথা আর বলিস না তো ! ওর জন্য আমি সবার সঙ্গে ঝামেলা করলাম, আর এখন ও.....। রনিদা একদম ঠিক বলেছে। রনিদা তো আমাকে বলেছে, তুমি কি ফ্যালনা নাকি? তুমি একদম যুগলকে পাত্তা দেবে না। ওর যা ইচ্ছে ও করুক। তুমি তোমার মতো থাকবে।"

- "রনিদা এটা বলেছে? বাহ খুব ভালো। যুগলদার তাহলে এইজন্য ওকে অপছন্দ।"

- "রাখ তো যুগলের অপছন্দ ! শোন তাহলে যুগলের কথা। কাকে বিয়ে করার জন্য আমি সেদিন রনিদাকে অত অপমান করেছি শোন। যুগলের এখন......"

- "মিলি, তোর সঙ্গে একটা কথা আছে। ফোন হয়ে গেলে শুনে যাস।" দরজায় দাঁড়িয়ে গোপা। 

দুই বোনই চমকে ওঠে মায়ের গলা শুনে। পরে কথা বলছি বলে মিলি ফোন ছেড়ে দেয়। 

- "কার সঙ্গে কথা বলছিলি?" মেয়ে ফোন ছেড়ে দেওয়ায় গোপা এঘরেই এসে বসে। 

- "ঐ চেনা, বন্ধু। বাদ দাও। তুমি কি বলছিলে বলো।"

- "এই কলেজের ব্যাপারটা নিয়ে আর কেউ কিছু বলছে না তো? সব ঠিক চলছে তোর?"

- "হ্যাঁ মা। কলেজের বাকিরা কেউ জানেই না। আমিই বলিনি। শুধু শুধু পলাশকে ছোট করে কি লাভ ! বরং ওর নামে কাউকে কিছু বলিনি দেখে পলাশ নিজে থেকে আমার কাছে ক্ষমা চেয়েছে।"

- "সে তো বলেছিস। আর এটাই ভালো। ছেলেটার সঙ্গে কোনো ঝামেলা করিস না। বড়লোকের ছেলে, নিজের মর্জিতে চলে, এদের সঙ্গে কি আমাদের চলে?"

- "না মা, পলাশ এমনিতে খুব ভালো। মা নেই, বোঝোই তো, কে ওকে সময় দেয়, ভালোমন্দ বোঝায়। আর এই কাজটা যে ঠিক হয়নি, সেটাও ও বুঝেছে।"

- "বুঝলেই ভালো। শোন, আমি যেটা বলতে এসেছি। তোর কি রনির সঙ্গে কোনো ঝগড়াঝাঁটি হয়েছে?"

টুকটাক পলাশের কথায় মিলি সহজ হচ্ছিল। রনির নাম আসতেই ও আবার মন শক্ত করে ফেলল। রনিদাকে নিয়ে অনেক কথা উঠবে, ওকেও অনেক কথা বলতে হবে জানে। রনিদা আর রনিদার বাড়ির সবার তরফেও হয়ত বেশ কিছু কথা শুনতে হবে। এমনকি দিদির ব্যাপারটাও ও কিছুই বুঝতে পারেনি। তবে মাকে তো একটা উত্তর আপাততঃ দিতেই হবে। 

মন খুব শান্ত করে মিলি বলে, "রনিদা কিছু বলেছে? কিন্তু আমার তো রনিদার সঙ্গে কোনো কথাই হয়নি, ঝগড়া দূরে থাক। আর শেষবার রনিদাই আমাকে যাচ্ছেতাই করল, তাও অকারণ। সেও সবার সামনে। তুমি নিজেও তো জানো মা।"

- ''আহা, সে তো সবাই জানি। তারপর কি তুই ওকে কিছু বলেছিস সেদিনের কথা নিয়ে? আর তোকে কলেজেও নিয়ে যায় না, তাই জিজ্ঞেস করছি।"

- "কলেজে নিয়ে যেতে বারণ করেছি মা। পরদিন সকালে বাবার সঙ্গে গেলাম। আর ফেরার সময় রনিদা আনতে গেছিল, ওর খুব জ্বর ছিল। আমার খারাপ লাগলো, আমি ফিরতে পারব না ভেবে জ্বর গায়েও বেচারাকে যেতে হয়েছে। তাই আমি বললাম, আমাকে আর আনা নেওয়া করতে হবে না। কিন্তু সে তো ভালো ভেবেই, ঝগড়ার কথা কোত্থেকে এল?"

গোপা কিছুটা নিশ্চিন্ত হয়, যাক বাবা, রাগারাগিটা মিটে গেছে। এবার সাহস করে বলে, "এটা তুই ভালোই করেছিস। রনির খুবই শরীর খারাপ করেছিল। জ্বর কমছিলই না। তার মধ্যে তোকে আনা নেওয়া করত কি করে? তা ওকে ফোন টোন করে খবর নিয়েছিলি, কেমন আছে?"

মিলি ভাবে, ঠিক যা ভেবেছিলাম, মা বাবা চায় আমি সম্পর্কটা বাঁচিয়ে রাখি, বিয়েটা টিঁকে থাক। কিন্তু রনিদা তো সেটা চায় না। 

- "না মা, খোঁজ নেওয়া হয়নি। আমারও পরীক্ষার চাপ। আমাকে ভালো ফল করতেই হবে।"

- "পড়াশোনা তো করতেই হবে। তবে ছেলেটার একটা খবর নিস। তোকে এত হেল্প করল। অসুখ করলে খবরটাও না নিলে হয়? আজ ওর মা আর বৌদি এসেছিল গল্প করতে। ওরাও বলছিল, খুব ভুগেছে, ছুটিতে ছিল। আজই বোধহয় ইউনিভার্সিটি গেছে। একবার খবর নিস।"

- "তোমরা খবর নিয়েছ? না, মানে, তুমি বা বাবা........"

- "সেটাই ভাবছি। ওরা এসে কথা বলল। এবার আমরা একবার গিয়ে ওর সঙ্গে দেখা করি। নাহলে ভাববে, সেদিন ও চেঁচামেচি করেছে বলে আমরা রাগ করে আছি।"

- "তোমরা ওর বাড়িতে যাবে?"

- "হ্যাঁ, আমরা ফোন করার থেকে গিয়ে কথা বললেই ভালো দেখায়। তোর বাবাও যাবে বলেছে। তুই যাবি আমাদের সঙ্গে?"

মিলি মুহূর্তে ভেবে নেয়, ফোনে একা কথা বলার চেয়ে সবার সামনে ভদ্রতা করাই ভালো। ও যাবে শুনেই গোপা ভীষণ খুশি হয়ে যায়, "চল চল, তৈরি হয়ে নে। এখন ওরা সবাই বাড়িতে, একবার ঘুরেই আসি।"


চলবে