জঙ্গলের প্রহরী
পর্ব - ৪০
❤🌹❤🌹❤🌹❤
সিদ্ধার্থ চুপ করে ভাবছে, "আবার কলকাতায় ফিরে যাওয়া? আবার তালুকদার স্যারের চেম্বার, নতুন নতুন কেস, অপরাধ, ফাইল, উপরমহলের চাপ, মিডিয়ার প্রশ্ন, প্রতিদিন প্রাণ হাতে নিয়ে ইনভেস্টিগেশন? এই পাহাড়, জঙ্গল, বসতি, নিজের মাটি, সব একবার মেঘের আড়াল থেকে মুখ দেখিয়ে আবার লুকিয়ে পড়বে? শুক্লা কালই জেনেছে, আমার আছে কেবল জেঠুমণির পরিবার। সঙ্কর্ষণবাবু ভালমানুষ, তাঁর সঙ্গেও হয়ত সুসম্পর্ক থাকবে।"
একবার মুখ ঘুরিয়ে ও শুক্লার দিকে তাকায়, সোমার সঙ্গে সবাই মিলে গল্প করছে শুক্লারা। শুক্লা যদি আজকের পর ওকে রিজেক্ট করে, আর কোনোদিন এখানে ফেরা হবে না ওর। এটাই বোধহয় ওর নিয়তি। বাড়ি, পরিবার, কিছুই ওর জন্য নয়। সেজন্যই বাবা মা......
জেঠিমণির ভালবাসায় কোনো খাদ নেই। তবে বহরমপুরের বাড়িও তো ওকে ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে। আর হয়ত কোনোদিনই পুলিশ মেস থেকে ফিরে একটানা থাকা হবে না ঐ বাড়িতেই, ঠিকানা বদলে গেছে চিরতরে, তো এখানে ! আবার পাহাড়ের দিকে ফেরে ও।
- "তুমি আর আসবে না?" চমকে পিছন ফেরে সিদ্ধার্থ। শুক্লা এসে দাঁড়িয়েছে, একবুক প্রশ্ন চোখে।
- "আমাকে আগামী দুদিন সত্যিই ভীষণ ব্যস্ত থাকতে হবে। আর কলকাতা ফেরাও কবে হবে, সেসব ডিপার্টমেন্ট থেকেই ঠিক করা হবে। তুমি মানে তোমার সঙ্গে একটু কথা বলতে পারি?"
- "এখন কি করে কথা বলব? সবাই তাকিয়ে আছে। পরে কখনো যদি সময় পাও।"
- "কলকাতায় ফিরে? শুক্লা, তুমি কি....... "
- "তুমি মনে রাখবে তো আমাকে?"
- "মনে রাখব? ভুলতে পারব নাকি তোমাকে কোনোদিন? তুমি বরং ভেবে নাও কি করবে। সবই তো জানলে। এখন তুমি যা ঠিক করবে তাই হবে।"
শুক্লা কিছুটা অবাক হয়েই ওর দিকে তাকায়।
- "আমি তোমাকে কখনো ভুলব না সিদ্ধার্থ। আমি, আমি..........."
শুক্লার দ্বিধাটা বুঝতে পারে সিদ্ধার্থ, কারণ ও কি বলতে চায় সেটাও বুঝেছে। নাঃ, শুক্লার কাছে আর সময় নিতে পারবে না সিদ্ধার্থ। তাকিয়ে থাক সবাই। কারও দিকে ফিরে চাইবে না ও, শুধু শুক্লাকে একবার বলতে হবে ওর নিজের মনের কথা। এখনই বলতে হবে।
- "আমি তোমাকে ভালোবাসি শুক্লা। সেই প্রথমদিন থেকেই ভালোবেসে ফেলেছি। আমি সারাজীবন তোমার জন্য অপেক্ষা করব।"
শুক্লার চোখে যেন সহস্র সূর্যের আলো ছড়িয়ে পড়ে, "আমিও।" বলে হাসিমুখে ছুটে চলে যায়।
হোটেলের ঘরে ফেরার পর অবশ্য প্রথমেই জেঠিমণি তার সোনাইয়ের কান টেনে লম্বা করে দেয়। সঙ্গে জেঠুমণি আর দাদাভাইয়ের বকুনি। একপাশে দাঁড়িয়ে ফ্যাঁচ ফ্যাঁচ করে বৌদিভাই আর সোমা চোখ মোছে।
সব কথা শুনে চলবে, নিজে নিজে বিপদ ডেকে আনবে না, অপরাধীকে ধরতে একলা রিস্ক নেবে না, অনেক কমিটমেন্ট করে তবে রেহাই পায় সিদ্ধার্থ।
❤🌹❤🌹❤🌹❤
পরদিন থেকে কমিশনারের অফিস আর ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট দৌড়োদৌড়ি করে দিনগুলো কাটবে, ওরা জানত। সুখের কথা, এত প্রমাণ পাওয়া গেছে, কোর্টে বিডি থেকে সুখলাল পর্যন্ত সকলের বিরুদ্ধে, পুলিশের দাবীতেই সীলমোহর পড়ে। চোদ্দ দিনের পুলিশ হেফাজতের দাবী খুশি খুশি মেনে নেয় কোর্ট। কারণ এই অপরাধের জাল অনেকদূর ছড়ানো। সম্পূর্ণ তথ্য উদ্ধার করতে হলে প্রত্যেককে যথেষ্ট সময় দিয়ে জেরা করার দরকার।
কোর্টরুমের বাইরে এসে ওসি বলেন, "একটা অদ্ভুত ব্যাপার দেখলাম। খুব বড় কোনো ল ইয়ার দাঁড় করায়নি বিডি। অথচ ওর এত চেনাজানা, এত দু নম্বর কারবার করে কি কিছুই পয়সা জমায়নি? এটা ওর নিজের জীবন মরণের ব্যাপার !"
- "এটাই হওয়ার ছিল। এত বেশি বেশি প্রমাণ মজুত, অকুস্থলের ভিডিও রেকর্ডিং সুদ্ধ, ও যাদের হয়ে কাজ করছিল, তারা এই কেসে কোনো সাহায্য করবে না। কারণ উকিল মোক্তার কে ঠিক করল, কান টেনে আসল মাথার কাছে সহজেই পৌঁছে যাওয়া যায়। আবার একই কারণে সাধ করে কোন উকিল হারতে যাবে বলুন?" সিদ্ধার্থ বুঝিয়ে বলে।
- "তার মানে এরা ছাড়া পাচ্ছে না?" ওসি খুশি হয়ে ওঠেন।
- "কোনো চান্স নেই স্যার, নিশ্চিন্ত থাকুন।"
❤🌹❤🌹❤🌹❤
হোটেলে ফিরে বাড়ির সকলের সঙ্গে সারাদিনের গল্প হয়। শোনে, সঙ্কর্ষণবাবুরা সহ এরা দলবেঁধে গিয়েছিল রায়চৌধুরী বাড়িতে। শাক্য ব্যস্ত, অফিসে ছিল। তবে ওর বাবা মা আর শুক্লার দল এদের সঙ্গ দিয়েছে।
মেয়েরা উচ্ছ্বসিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর শুক্লা, দিয়া, মণীষা, শ্রীতমার সঙ্গে আড্ডা দিয়ে। কম বয়সীদের এই দল পেয়ে আর এখানে একা একা লাগছে না, একেবারে যেন কলকাতার ফিলিংস পাচ্ছে।
সিদ্ধার্থ আর ঋষি ঘেঁষটে বসে সেই গল্প শোনে। বাড়ির সবাইকে, বিশেষ করে সোমাকে উৎসাহ দেয়, কলকাতায় ফিরেও এদের সঙ্গে ভাব রাখতে। সোমা বলে, ফোন নম্বর দেওয়া নেওয়া হয়ে গেছে। রাজীবদাও খুব আড্ডা দিয়েছে, গান শুনিয়েছে।
সিদ্ধার্থ ফোন বের করে বলে, "ভাল কথা, রাজীবদার ফোন নম্বরটা দে তো।" সোমা ফোন খোলে, এর নম্বরটা দে, ওর নম্বরটা দে করে করে সকলের নম্বর নেয় সিদ্ধার্থ।
সিদ্ধার্থ আর ঋষি দুজনেই তার পরই ফ্রেশ হতে যার যার ঘরে চলে যায়। তাই শুনতে পায় না, সবাই ওদের উদ্দেশ্য টের পেয়ে গেছে, হেসে গড়াগড়ি দিচ্ছে রাজশ্রী আর সোমা। জেঠিমণিও মুখ টিপে হাসছেন।
[ ❤ সবই ঠিকপথে চলছে। এবার তবে মধুরেণ সমাপয়েৎ হবে, নাকি সমস্যা থেকেই গেছে?
❤ জানা যাবে পরের পর্বে। অনেক ধন্যবাদ এই পর্বটি পড়ার জন্য। আপনার মতামতের অপেক্ষা করছি। দয়া করে মন্তব্য করে জানাবেন। ]
[ আগামী পর্বে সমাপ্য ]