Read Jharapata 53 by Srabanti Ghosh in Bengali Love Stories | মাতরুবার্তি

Featured Books
বিভাগ
শেয়ারড

ঝরাপাতা - 53

ঝরাপাতা

পর্ব - ৫৩

🌹💕🌹💕🌹💕🌹

মিলি চুপ করে আছে। রনিকে ও ভালোবাসে তো বটেই, বিয়ে হতেই ওকে স্বামী বলে মেনেছিল, যদিও এখন বোঝে, বিয়ে সম্পর্কে সেদিন সম্পূর্ণ ধারণাও ছিল না ওর। আর এই নতুন করে সম্পর্কটা তৈরি হওয়ার পর তো রনির মুখেই দুজনের এই সম্পর্কের একটা পরিণতির স্বপ্নের কথা শুনে এসেছে। অথচ বিয়ের সময়ের কথা মনে পড়ার পর থেকে মনে মনে প্রতিদিন তৈরি হয়েছে, রনিকে ও হারিয়ে ফেলবে বলে। তেমনি এখনও রনির মনের কথা জানার পরও বুঝতে পারছে না, রনির বাড়িতে ফিরে যাওয়ার রাস্তা আর ওর আছে কিনা।

রনি বুঝতে পারে। মিলি ওর কাঁধে মাথা রেখেই বসেছিল, ফোনটা নামিয়ে একহাতে মিলিকে আগলে বলে, "ভয় পাচ্ছ? এবার আর আগের মতো হবে না। এবার আমি তোমাকে যত্ন করে রাখব।"

মিলি ধীরে ধীরে বলে, "কাকিমা কি বলবে?"

- "ও, মা বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছিল বলে ভয় পাচ্ছ? তখন যা পরিস্থিতি ছিল, তাতে আমি বিয়েটা মানব না ভেবেছিল মা। তারপর যখন তোমার অসুখের কথা শুনল, খুব দুঃখ পেয়েছে। আর বৌদি তো..... বৌদি কতদিন আমার কথা বাদ দাও, মায়ের সঙ্গে কথা বলেনি জানো? বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে বলে দিয়েছিল। আমার উপরে এখনও রাগ আছে দাদা বৌদির। জ্বর হয়েছিল বলে বেঁচে গেছি বলতে পারো। নাহলে সেদিন তোমাকে বকেছি বলে আমাকে বাড়ি নিয়ে গিয়ে কি করেছে জানো? এখন সবাই অপেক্ষা করছে, তুমি কবে ঠিক হবে।"

মিলি চুপ করে সব শোনে, তার পরও চুপ করেই থাকে। রনি ওর কাঁধে ঠেলা দিয়ে বলে, "কি হল, কিছু বলো ! বলছি তো, সবাই তোমাকে এক্সপেক্ট করছে বাড়িতে। মা যে তোমাকে ভালোবাসে বুঝতে পারো না? বাড়ির সামনে থেকে তোমাকে নিয়ে বেরোই, ফিরে আসি। সব তো সবাই জানে। কারও আপত্তি থাকলে কি আমাদের এভাবে একসঙ্গে ঘোরাফেরা করতে দিত? আচ্ছা তাও যদি তোমার বিশ্বাস না হয়, সবাই তোমার সঙ্গে কথা বলবে। ওদের নিজের মুখে শুনো। তখন আসবে তো?"

- "আমার বাবা মা কিছু বলেছে তোমাকে?" বুদ্ধিমতী মিলি বুঝতে পেরেছে, ওর আড়ালে নিশ্চয়ই দুই বাড়িতে ভালো মন্দ, কিছু না কিছু কথা হয়েছে। 

রনি একটু চুপ করে থাকে। মনে মনে গুছিয়ে নেয় সবটা। মিলিকে ছেড়ে উঠে পায়চারি করতে করতে বলে, "তোমার বাবা মায়ের মতো মানুষ বলে আমাকে একবার নয়, দু দুবার ক্ষমা করেছেন। তুমি মামার বাড়িতে ছিলে বোধহয়। অসুস্থ হয়ে পড়তে এ বাড়িতে আনার পর....... মানে যখন আমরা সব জানতে পারি, আমি গেছিলাম, কাকু কাকিমা তখনও আমাকে ক্ষমা করেছিলেন। তোমার ডাক্তার থেরাপিস্ট বলেছিলেন, তুমি যা চাইবে, বিয়ে নিয়ে তাই সিদ্ধান্ত হবে। তাও আমাকে তোমার সঙ্গে থাকতে দিয়েছিলেন। আমি তো চিরকালের গাধা। তারপরও সেদিন......। মিলি প্লিজ," মিলির পায়ের কাছে মেঝেতে বসে পড়ে রনি, "প্লিজ আজ এখন জেদ কোরো না। ফিরে চলো।"

মিলি ভাবতেই পারেনি রনি এভাবে পায়ের কাছে বসে পড়বে। ও হকচকিয়ে গিয়ে তাকিয়ে ছিল প্রথমে। তারপরই উঠে দাঁড়িয়ে রনির হাত ধরে টানে, "কি করছ তখন থেকে। যত্তসব, উঠে এসো, উঠে এসো বলছি।"

- "আমার কাছে ফিরে আসবে বলো, নাহলে উঠব না।" রনি সত্যিই ক্ষমা চাইবার শেষ ধাপ হিসেবে নিচে বসে পড়েছিল, মিলি রাজি না হলে হয়ত পায়েই ধরতে রাজি ছিল। এখন মিলিকে অস্বস্তিতে পড়তে দেখে ওর দুষ্টুবুদ্ধি মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। 

- "উঠে এসো না রনিদা। কেন এরকম করছ?"

- "কেন আবার ! তুমি বিশ্বাস করছ না তাই। এতভাবে বললাম..... শুনছই না। এবার তাহলে পায়ে ধরতে হবে বলো।"

- "তুমি থামবে? খালি আজেবাজে কথা ! আমি কি বলেছি? আমি বলেছি যে, মানে তোমরা কে কি ভাবছ সেটা তো আমি জানি না। তুমিও সব কথা লুকিয়েছ আমাকে।"

- "লুকিয়েছি, বেশ করেছি। না খেয়ে দেয়ে, কেঁদে কেটে, সবার কাছে নিজের মনের কথা লুকিয়ে নিজের কি দশা করেছিল ! আমি থেরাপিস্টের চেম্বারে ঐ চেহারা দেখে কত ভয় পেয়েছিলাম জানো?" রনি নিজে ওঠার বদলে মিলিকে টেনে নিজের কোলের উপর নিয়ে এসেছে। মিলি ওকে ঠেলে ওঠার চেষ্টা করতেই চেপে ধরে রেখে বলে, "একদম উঠবে না। আগে আমাকে বলো, আমার উপর আর রাগ নেই, আমার কাছে ফিরে আসবে, তবে ছাড়ব।"

- "এরকম করলে বলবই না।" মিলি মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে। কিন্তু ঐ এক মুহূর্তের মধ্যে রনি ওর ঠোঁটের কোণায় একটুকরো হাসির আভাস দেখতে পেয়েছে। 

- "ঠিক আছে, তোমাকে বলতে হবে না। কাউকেই কিছু বলতে হবে না। সবার সঙ্গে আমি কথা বলব।" মিলি মুখ ফিরিয়ে ওর দিকে তাকায়। এত কাছাকাছি, দুজন দুজনের নিঃশ্বাসের উত্তাপ টের পাচ্ছে। মিলি আরও গুটিয়ে যাচ্ছে লজ্জায়। রনিও টের পাচ্ছে, কিছু একটা হচ্ছে, শরীরে, মনে। যখন কথা বলে, নিজেই বোঝে আর মজা করার ক্ষমতাই ওর নেই। মন থেকে বলে, "আমারই তো কথা বলা উচিত। আমি সবাইকে বলব, তোমার সব মনে পড়েছে, এবার আমি তোমাকে নিয়ে যাব। তখন শুধু আমার হাত ধরে এসো মিলি।" মিলির হাত ছেড়ে ওর কানের পিছনে হাত দিয়ে নিজের আরও কাছে নিয়ে এসেছে ওকে, মিলির বাধা দেওয়ার ক্ষমতা লোপ পেয়েছে, বরং চোখ বন্ধ করে অপেক্ষা করছে রনি যা কিছুই করুক, তার জন্য। রনি ওর কপালে চুমু খায়, মিলির মনে হচ্ছে ও একটু একটু করে গলে মিশে যাচ্ছে রনির শরীরের সঙ্গে। আপনা থেকেই ওর মাথা আশ্রয় খুঁজে নিয়েছে রনির বুকে, দুহাতে আঁকড়ে ধরেছে রনিকে। রনি ওর চুলের সিঁথির মাঝখানে চুমু খেতে মুখ নামিয়ে থেমে যায়। মাথার তালুর পিছনে একটা ছোট্ট লাল দাগ ! চোখ বন্ধ করে ফেলে রনি, সিঁদুর ! সব মনে পড়ার পর যেটা স্বাভাবিক ছিল, ওর চলে যাওয়ার ভুল অর্থ বুঝেছিল মিলি। তার উপর রাগারাগি করে, শরীর খারাপ হয়ে, পলাশের সঙ্গে মিলির সম্পর্ক নিয়ে চিন্তায় ও নিজেও কথা পর্যন্ত বলত না। তবুও মিলি সিঁদুর পরা শুরু করেছে ! 

মিলির মুখ তুলে ধরে ও, "এ্যাই তুমি সিঁদুর পরো? এই সব মনে পড়ার পর থেকে?"

একরাশ লজ্জা নিয়ে মাথা নিচু করে মিলি। হঠাৎ দুজনকে চমকে দিয়ে রনির ফোন বেজে ওঠে। মিলি চোখ খুলে রনির দিকে তাকায়, রনিও তাকিয়ে আছে ওর দিকেই। মিলি ওর কাঁধের কাছে ঠেলে, "ফোন, ধরো, আমাকে ছাড়ো।"

রনিরও মাথা পরিষ্কার হচ্ছে ততক্ষণে, ফোনটা ধরতে হবে। মিলির কোমর থেকে হাত আলগা করতেই মিলি উঠে পড়ে। রনি উঠে খাটে রাখা ফোনের দিকে হাত বাড়াতেই ফোন কেটে যায়। তুলে দেখে, পিউ ফোন করেছিল। রনি তাড়াতাড়ি ওকে ঘুরিয়ে ফোন করে। 

- "বলছি, কর্তাগিন্নি সেজেগুজে ঘুরতে বেরিয়েছ, ঠিক আছে। ফেরার ব্যাপার নেই? কটা বাজে খেয়াল আছে? ঠাট্টা নয়, মিলিকে নিয়ে সকালে বেরিয়েছ, আমাদের কাউকে তো কিছু বলেই যাওনি। দাদা দোতলা থেকে দেখেছে মিলি শাড়ি ফারি পরে দারুণ স্টাইলে গেছে। পরে কাকিমা এসে বলল, তুমি কোথায় নিয়ে যাবে বলেছ। আর কত পরে ফিরবে? পাড়ার লোককে তো জানো। এমনিতেই দুজন একসঙ্গে যাও আসো, কত কথা। এ্যাই ভাই, কাকে কি বলছি? কোনো সাড়া নেই। কোথায় আছ তোমরা?" পিউ একটানা বলেই যাচ্ছে। রনি নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করছিল। নিজের মনে জানে, বৌদি যা, ঠিক ধরে ফেলবে। 

এবার বলে, "আসছি, আর ধরো আধঘণ্টা। এখন আর রাগ কোরো না। গিয়ে খুব ভালো একটা খবর দেব।"

সারাদিন এরা কোথায় কোথায় ঘুরছে, কতটা ভাব এগোল ভেবে ছটফট করেছে পিউ। বনি বাড়ি ফিরে এই দুই মক্কেলের কাহিনী শুনেই উৎসাহ দিয়েছে ফোন করতে। নিজেদের ঘর থেকে লাউডস্পিকার অন করে ফোন করছিল দুজন। রনির কথা শুনেই বনি চিমটি কাটে, "তোকে না বলেছিলাম, মিলির পরীক্ষার আগে অন্ততঃ আর ঘুরে বেড়াস না? সেই জায়গায় তুই ওকে নিয়ে কোথায় কোথায় যাচ্ছিস বলত, যে একদম ভালো খবর দিয়ে দিবি?" 

রনি প্রথমে দাদার কথার অর্থ বোঝেনি, বৌদির খিলখিল হাসি আর তার সঙ্গে দাদাকে বলা, "যাহ, কি সব বলছ" শুনেই ওর কান লাল হয়ে গেছে। আড়চোখে একবার মিলির দিকে তাকায়। মিলিও ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। বৌদি ফোন না করলে কি হতে যাচ্ছিল ভেবেও রনি লজ্জায় পড়ে যায়। সেটা ঢাকতে দাদাকে খিঁচিয়ে ওঠে, "এত বাজে কথা বলিস না। কে আছে, কার সম্পর্কে কথা বলছিস, কিছুই মনে নেই। ফোন রাখ তুই, আমি আসছি।"

রনি ফোন কাটার আগেই পিউ চেঁচিয়ে ওঠে, "ছেড়ো না, ছেড়ো না, কি হয়েছে সেটা বলো। আমি অতক্ষণ অপেক্ষা করতে পারব না। হার্ট এ্যাটাক হয়ে যাবে আমার।"

- "মুন্ডু হবে তোমার ! হার্ট এ্যাটাক ! তাও যদি আমি না জানতাম, কি রেটের ড্রামাবাজ তুমি।" রনি হেসে ফেলে। তবে মিলির সব মনে পড়েছে, ওদের বিয়েটা টিঁকে থাকছে, ওর ইচ্ছে করছে মনুমেন্টের মাথায় উঠে মাইক লাগিয়ে সবাইকে বলে। তাই বলেও দেয়, "তোমাকে বলেই বলছি। মিলির সব কথা মনে পড়েছে।"

বনি এবার আর মুখ বাড়িয়ে কথা বলে থামে না, পিউর হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নেয়, "কি বলছিস তুই? সত্যি বলছিস তো?"

রনি শুনতে পায়, পিউ চেঁচাচ্ছে, "আরে ধ্যাত, ফোনটা দাও না। ভাই তোমরা কোথায়, মিলি ঠিক আছে?"

রনি হাসিমুখে বলে,"মিলি ঠিক আছে, আমার সঙ্গেই আছে। আসছি আমরা, এসে সব বলছি।"

ফোন কেটে মিলির কাছে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে, "মিলি, আমার ইচ্ছে করছে, তোমাকে আজ এক্ষুণি বাড়ি নিয়ে যাই। আজ বাড়ি গিয়েই আমি মায়ের সঙ্গে কথা বলব। কেমন? চলো এবার যাই।" মিলিকে ছেড়ে পিছিয়ে আসে ও। একফোঁটাও ইচ্ছে করছে না এখান থেকে যেতে। বাড়ি যাওয়া মানেই তো মিলিকে আর দেখতে পাবে না। 

- "এখন যাব কি? আগে যুগলদাকে ফোন করো। ওরা কোথায়? ওরা এলে না আমরা বেরোতে পারব।"

চলবে