Featured Books
বিভাগ
শেয়ারড

গ্রিক প্রেমের গল্প 5- Baucis Philemon

Baucis & Philemon

বৌসিস ও ফিলেমন

Matrubharti




© COPYRIGHTS

This book is copyrighted content of the concerned author as well as Matrubharti.

Matrubharti has exclusive digital publishing rights of this book.

Any illegal copies in physical or digital format are strictly prohibited.

Matrubharti can challenge such illegal distribution / copies / usage in court.


বৌসিস ও ফিলেমন

ফ্রিজিয়ার পার্বত্য অঞ্চলে দুটো গাছ বেড়ে উঠছিল़ যারাই এই গাছগুলিকে দেখে তারাই খুব মজা পায়। এর মধ্যে একটা ছিল ওক গাছ আর অপরটি ছিল বাতাবিলেবুর গাছ। আর আশ্চর্যের বিষয় এই যে গাছ দুটি একই কান্ড থেকে বেড়ে উঠেছে। এই অলৌকিক ব্যাপারটি কি ভাবে ঘটল এবং এই গল্পটি থেকে আমরা কি শিক্ষা পাইऋ

কখনও কখনও অলিম্পিয়ানের দেবতা জিউস অলিম্পিয়াস পর্বতে মজা এবং আমোদ আহ্লাদ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়তেন এবং তিনি তাঁর চমৎকার মহল ছেড়ে পৃথিবীতে নেমে আসতেন। ছদ্মবেশ ধারণ করে জিউস আমোদ আহ্লাদ করতে আসতেন। প্রায়শই এই ভ্রমণে তিনি তাঁর ঘনিষ্ঠ ও বিশ্বাসী সঙ্গী হার্মেসকে সঙ্গে নিয়ে যেতেন।

জিউস এই ভ্রমণে এসে ফ্রিজিয়ার মানুষ কতটা অতিথি পরায়ণ তা পরখ করে দেখতেন। তাই জিউস ও হার্মেস দরিদ্র পর্যটকের বেশ ধারণ করে মর্তলোকে আসতেন। গরিব বা বড়লোক যেই হোক না কেন যে কোন লোকের বাড়ির দরজায় নক করে ঢুকে পড়তেন।

বিনা আমন্ত্রণেই যেকোন জায়গায় হাজির হয়ে যেতেন। কেউই তাদের নোংরা़ শতছিন্ন পোশাক এবং ক্ষুধার্থ চেহারা দেখে তাদের আপ্যায়ন করা তো দূর কেউ কথাই বলতে চাইত না। “বিদেয় হও़ আপদ কোথাকারেরर्” যেখানে যেতেন সেখানে এই কথাই তাদের শুনতে হত। তাদের মুখের অপরেই সবাই সশব্দে দরজা বন্ধ করে দিত। ফ্রিজিয়াবাসিরা স্পষ্টতই খুব একটা ভদ্র স্বভাবের ছিল না এবং এই হতদরিদ্র আগুন্তুকদের জন্য তাদের কোন সময় ছিল না।

বুঝতেই পারছ যে़ জিউস ছিলেন পর্যটকদের তত্বাবধায়ক এবং যারা অচেনা কোন জায়গায় আশ্রয় নিতে চাইত़ জিউস তাঁদের বিশেষ খেয়াল রাখতেন। তাঁর জন্য আথিতেয়তা ছিল প্রধানতম বিষয় এবং জিউস এপর্যন্ত ফ্রিজিয়ার যে রুক্ষ ব্যবহার তিনি দেখেছেন তা মোটেই তাঁর ভাল লাগে নি।

হার্মেস ও জিউস এইভাবে শতাধিক বাড়ি বাড়ি ঘুরে সেখানকার বাসিন্দাদের অভদ্র ব্যাবহারে বিরক্ত হয়ে পড়েন। অলিম্পিয়াসের রাজা তাদের ব্যাবহারে ক্রুদ্ধ হয়ে পড়েন এবং ফ্রিজিয়াবাসিদের এই অভদ্র ব্যাবহারের জন্য তাদের শাস্তি দেবার সিদ্ধান্ত নিলেন।

এই সফর এবার এখানেই শেষ করতে ভেবে তাঁরা একটি ছোট কুঁড়ে ঘরের সামনে এসে দাঁড়ালেন। এটি আগে যত বাড়ি ঘুরেছেন তার থেকে অনেক ছোট। ভাঙ্গাচোরা একটি ঘর़ খড়কুটো দিয়ে বানান ছাদ। সেখানে এসে তাঁরা দরজায় ধাক্কা দিলেন। তাঁরা অবাক হয়ে দেখলেন़ দরজাটি খুলে গেল এবং আনন্দের সঙ্গে একটি কন্ঠ তাদের ভেতরে আমন্ত্রণ জানাল। ছোট দরজা দিয়ে মাথা নিচু করে ছদ্মবেশি জিউস আর হার্মেস ঢুকে অবাক হয়ে দেখল़ ছোট একটি ঘর কিন্তু পরিষ্কার পরিছন্ন সুন্দর করে সাজান। এই বাড়ির মালিক নিজের সামান্য যা সামর্থ আছে তাই দিয়ে ঘরটি ছিমছাম़ পরিছন্ন করে সাজিয়েছে।

অল্প আলোয় তাঁরা দেখল़ দয়ালু চেহারার এক বৃদ্ধ ও এক বৃদ্ধা। তাঁরা দুজনেই তাদের দেখে খুশি হয়ে আদর যত্ন সহকারে তাদের বসার ব্যাবস্থা করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। বৃদ্ধা মহিলা একটি নরম কাপড় বার করে সেটি পেতে দিল এবং তাদের বিশ্রাম নিতে অনুরোধ জানাল। বৃদ্ধটি আগুনের আঁচ বাড়িয়ে দিল যাতে ঠাণ্ডায় তাদের অতিথিদের কষ্ট না হয়।

বৃদ্ধা মহিলাতী নাম বৌসিস আর তাঁর স্বামী ফিলেমন। তাঁরা জিউসকে বললেন़ এই ছোট্ট কুঁড়ে ঘরটি তাদের সুখী গৃহকোন আর তাঁরা বিয়ের পর থেকেই এখানে সুখে শান্তিতে বাস করছে। যদিও তাঁরা খুবই গরিব़ তবুও তাদের কোন অভাব নেই। তাদের একে অপরের জন্য ভালবাসাই তাদের জীবনে পরিপূর্ণতা এনে দিয়েছে যা রাজারও ঈর্ষার কারন হয়ে উঠতে পারে।

“আপনাদের দেবার জন্য আমাদের কাছে বিশেষ কিছুই নেই কিন্তু ভালবাসায় যখন জীবন পরিপূর্ণ হয়ে উঠে তখন দারিদ্রতা বেশি আঘাত হানতে পারে না” মুখে হাসি ফুটিয়ে़ একে অপরের দিকে তাকিয়ে তাঁরা এই কথাগুলি বলল। তাঁর তাদের হটাত আসা অতিথিদের কাছে ক্ষমা চাইলেন কারন অতিথিদের আপ্যায়নের জন্য যৎসামান্য জলখাবারের ব্যাবস্থাই তাঁরা করতে পেয়েছেন।

জিউস আর হার্মেস চাওয়াচাওয়ি করতে লাগনেনऌমর্তভূমে এই প্রথম এমন মানুষ দেখলেন।মনে মনে ভাবলেন সব ফ্রিজিয়াবাসীই অভদ্র নয়।

ফিলেমন তাঁর সামর্থ অনুসারে অতিথিদের কিছু ফল़ ডিম আর মুলো দিলেন খাবার জন্য আর বৌসিস এক হাড়ি জল গরম করে এক ছুটে তাদের ছোট্ট বাগানে গিয়ে একটি বাঁধাকপি তুলে আনলেন। হাড়িতে বাঁধাকপি দিয়ে তাদের কাছে রাখা শেষ সম্বল এক টুকরো শুয়োরের মাংস দিয়ে রান্না করল। ততক্ষনে বৌসিস তাদের জন্য টেবিল রেডি করল। টেবিলটির একটি পায়া অপরটি থেকে ছোট তাই বৌসিস ভাঙ্গা প্লেটের এক টুকরো এনে টেবিলটিকে ঠিক মত বসাল।

রান্না হয়ে গেলে ফিলেমন পুরনো দুটো চেয়ার টেনে বের করে আনল এবং অতিথিদের আসন গ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানাল। তাঁর কাছে অল্প একটু ওয়াইন ह्य्যা এতই বাজে যে অনেকটা ভিনিগারের মতथ् ছিল যা তিনি বিশেষ অনুষ্ঠানের জন্য বাঁচিয়ে রেখেছিল। তাড়াতাড়ি তা নিয়ে এলেন। ফিলেমন জল মিশিয়ে এর মাত্রা বাড়াল।

বৃদ্ধ দম্পতি অবাক হয়ে দেখল তাদের রাতের অতিথি পরম তৃপ্তি সহকারে ভোজন করছেন। ফিলেমন তাদের কাপের দিকে দিকে নজর রাখছিলেন़ যখনই তা ফুরিয়ে যাচ্ছিল তখনই আবার তা ভড়ে দিচ্ছিলেন। কিছুক্ষণ তাঁরা একটি অবাক কান্ড লক্ষ্য করেন। যতবার কাপ খালি হয়ে যাচ্ছিল ফিলেমন ততবারই কাপ ভর্তি করে দিচ্ছিলেন আর ওয়াইন এর পাত্র ততবারই পূর্ণ হয়ে যাচ্ছিল। বহুক্ষণ ধরে ওয়াইন পান করার পরেও পাত্র খালি হচ্ছিলনা।

অবাক বৌসিস আর ফিলেমন অলিম্পিয়ান দেবতাকে মনে মনে ধন্যবাদ জানালেন। হটাত তাদের মনে সন্দেহের সৃষ্টি হল যে এই দুজন হতদরিদ্র আগুন্তুক নিশ্চয়ই ভিখারি নন। তাঁরা কম্পিত কন্ঠে অতিথিদের কাছে ক্ষমা চেয়ে বললেন যে़ তাদের আপ্যায়নের জন্য তাদের কাছে আর বিশেষ কিছুই নেই। ফিলেমন তাদের জানালেন যে তাদের কাছে একটি হাঁস আছে ह्य्যা তাদের কাছে পোষা পাখির থেকে আরও অনেক বেশিथ् যা তাঁরা অতিথিদের জন্য রান্না করে দিতে পারে।

কথাটা বলেই তাঁরা তাদের ছোট্ট কুঁড়ে ঘরের ভিতরে প্রবেশ করল। দুই বৃদ্ধ হাঁসটি ধরার আপ্রাণ চেষ্টা চলাচ্ছিল। হাঁসটি টেবিলের চারপাশে ঘুরছে আর দুই বৃদ্ধা তাদের পেছন পেছন ছুটে বেড়াচ্ছিল আর জিউস ও হার্মেস তা দেখে খুব মজা পাচ্ছিল। ভয় পেয়ে পাখিটি জিউসের কোলে এসে উঠল। বৌসিস আর ফিলেমন ক্লান্ত শ্রান্ত হয়ে বসে পড়ল।

এবার সঠিক সময় এল। জিউস আর হার্মিস তাদের ছত্মবেশ খুলে স্বরূপে আত্মপ্রকাশ করলেন এবং তাদের জানালেন যে তাঁরা অলিম্পিয়ান দেবতাদের পরম যত্ন সহকারে অতিথি আপ্যায়ন করেছে। তাঁরা বৌসিস ও ফিলেমনের আতিথেয়তার প্রশংসা করেন এবং তাদের জানান যে़ সেই দেশের বাকি লোকেদের থেকে তাঁরা একদম আলাদা।

“আমরা এই পাপী দেশ ও তার অসভ্য বাসিন্দাদের চরম শাস্তি দেব”। তারা দুই কম্পিত বৃদ্ধাকে একথা জানালেন। “ এই মর্তবাসিরা ভুলেই গেছে দরিদ্র অতিথিদের আপ্যায়ন করাই সুকর্মের অঙ্গ এবং তাদের এই অভদ্র ব্যবহারের জন্য তাদের মূল্য দিতে হবে”।

জিউস বৌসিস ও ফিলেমনকে আশ্বস্ত করেন যে তাদের এই শাস্তির হাত থেকে রেহাই দেবেন কারন তাঁরা দয়ালু স্বভাবের। তিনি তাদের বললেন़ তাদের কুঁড়ে ঘরের বাইরে বেরিয়ে চারপাশে তাকাতে। তাঁরা বাইরে বেরিয়ে অবাক হয়ে দেখল যেখানে উর্বর চাষের জমি আর বড় বড় বিল্ডিং ছিল সেখানে চারপাশে শুধুই জল আর কিচ্ছু নেই। মনে হচ্ছে বিরাট একটি লেক পুরো দেশ ও সেদেশের মানুষজনকে গিলে ফেলেছে আর শুধুমাত্র তাদের ছোট্ট কুঁড়ে ঘরের গায়ে কোন আঁচড় লাগে নি।

যদিও তাদের হিংসুটে পড়শিরা তাদের সঙ্গে খুবই অভদ্র ব্যবহার করত़ তবুও ঐ দয়ালু দম্পতি তাদের পড়শিদের জন্য চোখের জলে বুক ভাসাল। একটু পরেই আবার একটি আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটল যা তাদের চোখের জল মুছিয়ে দিল। যেখানে তাদের কুঁড়ে ঘরটি ছিল সেখানে দাড়িয়ে আছে একটি রাজকীয় মহিমান্বিত মন্দির। সাদা মার্বেলের স্তম্ভ দিয়ে তৈরি যার ছাদটি ছিল সোনার। বিস্ময়কর অলৌকিকॐ

“ এটাই তোমাদের নতুন বাড়ি” জিউস বললেন। “এখন নিজের ইচ্ছেমত এর যে কোন নাম দিতে পারো। তোমাদের ইচ্ছে পূরন করে আমি খুশি হব”। বৌসিস ও ফিলেমন তাদের সামনেই আলোচনা করতে লাগলেন। তারপর অলিম্পিয়ানের রাজার সামনে মাথা নত করে़ ক্ষীণ স্বরে বললেন যে़ তাদের ইচ্ছে হল জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তার পূজারী হয়ে থেকে তার মন্দিরের দেখাশোনা করা। একটামাত্র জিনিস তাঁরা চাইলেন জিউসের কাছে সেটি হল़ তাঁরা যেন কখনও একা না হয়ে পড়েন़ তাঁরা যেন একসঙ্গে মৃত্যু বরন করতে পারেন।

তাদের ভালবাসা ছিল সুদৃঢ়। তাই জিউস তাদের ইচ্ছে পূরন করল। বহু বছর ধরে তাঁরা মন্দিরে কাটাল़ জিউসের সেবা করে़ জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করছিল। একদিন़ যখন তাদের অনেক বয়স़ তাঁরা তাদের রাজকীয় মহলের সামনে দাড়িয়ে़ তাদের বিগত দিনের কথা স্মরণ করছিলেন़ যখন তাঁরা কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে চলছিল। তাঁরা বুঝতে পারল যা আজকের এই বৈভব এই প্রাচুর্যের মধ্যে তাঁরা যতটা সুখী़ বিগত বছরগুলিতেও তাদের দুঃখের দিনেও তাঁরা ঠিক ততটাই সুখী ছিলেন।

আজও তাঁরা একে অপরের ভালবাসায় আবদ্ধ।

সব স্মৃতি তাদের মনের পর্দায় উঠে এল এবং তাঁরা জীবনের সবকিছু পরিপূর্ণতা পেল। ফিলেমন হটাত দেখলেন বৌসিস সামনের দিকে ঝুঁকে পড়লেন এবং সেইসঙ্গে ফিলেমনেরও ঐ একই অবস্থা হল। তাদের কাছে শুধু একে অপরকে শেষ চুম্বন করার সময়টুকুই ছিল। তাঁরা আনন্দের সঙ্গে “বিদায় সঙ্গী” বলার সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা গাছে পরিণত হলেন।

তবুও তাঁরা চিরদিনের মত একসঙ্গে ছিলেন। বাতাবীলেবু ও ওক গাছ একই কান্ড থেকে বেড়ে উঠেছে। জিউস তাদের ইচ্ছে পূরণ করেছিলেন এবং দূর দূর থেকে মানুষ এই অদ্ভুত গাছ দেখতে এবং এই গাছের শাখা প্রশাখায় ফুটে থাকা সুন্দর সুন্দর পুস্পগুচ্ছ দেখতে আসত।

সব সময় মনে রাখতে হবে দরিদ্র আগুন্তুকের প্রতি দয়ালু ব্যাবহার করাই প্রধান ধর্ম।