Featured Books
বিভাগ
শেয়ারড

গ্রিক প্রেমের গল্প 3 - Echo Narcissus

Echo & Narcissus

ইকো ও নার্সিসাস

Matrubharti




© COPYRIGHTS

This book is copyrighted content of the concerned author as well as Matrubharti.

Matrubharti has exclusive digital publishing rights of this book.

Any illegal copies in physical or digital format are strictly prohibited.

Matrubharti can challenge such illegal distribution / copies / usage in court.


Echo & Narcissus

অলিম্পিয়ান দেবতাদের রাজা জিউস़ বারবার প্রেমে পরা এবং বারবার তাকে পরিত্যাগ করার স্বভাবের জন্য বিখ্যাত ছিল। গড়বড় করার একটাও সুযোগ সে ছাড়ত না़ বিশেষ করে তাঁর স্ত্রী অলিম্পিয়ানের রানী হেরা যখন অন্য কাজে ব্যস্ত থাকত।

সেখানে ইকো নামে এক তারুণ্যেভরা খুব সুন্দরী পর্বত জলপরী বাস করতো। ইকো খুব হাসিখুশি স্বভাবের যুবতী़ কিন্তু খুব বেশি কথা বলার জন্য সে বিখ্যাত ছিল। সারাক্ষন শুধু কথা আর কথা। নিজের গলার আওয়াজ শোনা ছাড়া ইকো আর কোন কিছুতেই এত খুশি হত না।

একদিন़ ইকো যখন মজাদার এবং অনর্গল কথা বলে হেরা কে মাতিয়ে রেখেছিল़ ঠিক সেই সুযোগে জিউস़ অন্যান্য পর্বত জলপরীদের সঙ্গে রঙ্গ রসিকতা করছিল। এদের মধ্যে কয়েকজন জলপরীকে মুগ্ধ করতে সফলও হয়েছিল। ততক্ষণ পর্যন্ত জিউস এই রসিকতা চালিয়ে যাচ্ছিল যতক্ষন না হীরা তাঁর এই বিশ্বাসঘাতকতা সম্পর্কে জানতে পারছিল।

হেরা এত রেগে ছিল যে কিছু বলার মত অবস্থায় ছিল না़ কারন সে জানত যে বজ্রের মত রাগী অলিম্পাসের শাসক এবং অধিষ্ঠাতা স্বামীকে চ্যালেঞ্জ করার পরিণাম কি হতে পারে। তাই জিউসের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেবার বদলে রানীর সমস্ত রাগ গিয়ে পড়লো বেচারা ইকোর ওপরে।

হেরা ধরেই নিয়েছে যেহেতু তাঁর স্বামীর প্রার্থীব রঙ্গ রসিকতার সময় ইকো তাকে ব্যস্ত রেখেছিল তাই সে নিশ্চয়ই জিউসের সঙ্গে ঐ চক্রান্তে সামিল ছিল। তাই হেরা ঠিক করলো ঐ কাজের জন্য ইকোকে শাস্তি পেতে হবে।

সত্য কিছুতেই চাপা থাকে না। তরুণী ইকো খুব বাচাল হতে পারে কিন্তু সে তাঁর বাচালতা দিয়ে যখন হেরা কে ব্যস্ত রেখেছিল যার ফলে হেরা़ জিউসের অনুপস্থিতিতি খেয়ালই করেনি़ এই কাজটা করে সে কখনওই জিউসকে আড়ালে রাখার চেষ্টা করার জন্য করেনি। তবুও হেরা এ কথাটাই বিশ্বাস করে বসে আছে।

হেরা़ ঐ অসহায় মেয়েটার কাছ থেকে তাঁর আসল সম্পদ़ তাঁর ভালবাসার সম্পদ তাঁর বাকশক্তি কেড়ে নিল। হেরা़ ইকোর কাছ থেকে তাঁর জিভের সব ক্ষমতা কেড়ে নিলেন़ শুধু বোকার মত কেউ কোন কথা তাকে বললে সে শুধু সেই কথার প্রতিধ্বনি ফিরিয়ে দিতে পারবে এই অনুমতি দিল। শেষ কথাটি সবসময়ি ইকো বলবে কিন্তু বুক ফাটলেও মুখ ফুটবে না প্রথমে।

থেস্পিয়ায় নার্সিসাস নামে একটি দাম্ভিক ছেলে ছিল। সে হল নীল পরী লেইরোপের ছেলে। নদী দেবতা সেফিসাস এই নীল পরীকে মোহিত করে ছিল। সে লেইরোপকে নিজের তরঙ্গ লহরীতে ঘিরে ফেলে তাকে ফাঁদে ফেলে দিয়েছিল।

এই সেফিসাস ও লেইরোপের সন্তান হল নার্সিসাস।

এই নীল পরী লেইরোপ তাঁর সন্তানের মঙ্গলের জন্য উদ্বিগ্ন ছিল। তাই সে তাঁর ছেলের ভবিষ্যৎ জানার জন্য টেইরেসিয়াস নামে এক বিখ্যাত দৈব জ্ঞানীর সঙ্গে দেখা করেন।

সেই জ্ঞানী পরীকে জানায় যে़ নার্সিসাস “ যতদিন পর্যন্ত ও নিজেকে চিনতে না পারবে ততদিন পর্যন্ত বেচে থাকবে”। আমরা অচিরেই দেখবো যে़ দুর্বোধ্য একটি ভবিষ্যৎ বাণী উপযুক্তভাবে জুতসই।

শৈশবে নার্সিসাস অসম্ভব সুন্দর দেখতে ছিল এবং বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সে আরও রূপবান পুরুষ হয়ে উঠল। নারী ও পুরুষ নির্বিশেষে তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ল কিন্তু ঐ অহংকারি তরুণ সবাইকে প্রত্যাখান করল।

১৬ বছর বয়সে সকলকে প্রত্যাখ্যান করে সে স্ট্রেউন ছাড়ল। কারুর প্রেমে পরার কোন ইচ্ছেই নার্সিসাসের ছিল না। কেউ তাঁর সঙ্গে রোমান্স করতে চাইলে সে অক্লান্তভাবে তাকে বাঁধা দেবার চেষ্টা করত।

ইকোর এই রূপবান অথচ দাম্ভিক তরুণের সঙ্গে দেখা হল এবং একনজরেই তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হল। ইকো নিজের প্রেম নিবেদন করার জন্য সুযোগের অপেক্ষায় ছিল। একদিন যখন নার্সিসাস হরিণ শিকারে গেল তখন ইকো সেই সুযোগ পেয়ে গেল।

বনের মধ্যে নার্সিসাস যখন একা হেটে চলছিল তখন ইকো জঙ্গলে চুপিসারে তাকে ছায়ার মত অনুসরণ করতে থাকলো़ উত্তেজনায় ইকোর হৃদস্পন্দন বেড়ে গেল ़ নার্সিসাসকে সাদর অভ্যর্থনা জানিয়ে তাকে কিছু বলতে চাইছিল কিন্তু একটি কথাও তাঁর মুখ দিয়ে সরে না। শেষ পর্যন্ত নার্সিসাস তাঁর পেছনে ধীর গতিতে আসা পায়ের শব্দ শুনতে পেয়ে দাড়িয়ে পড়ল।

নাহ़ কিচ্ছুনা। এই ভেবে সে আবার হাঁটতে শুরু করল। সে আবার ঐ একই ধরনের শব্দ শুনে সচকিত হয়ে শব্দটা লক্ষ্য করে প্রশ্ন করল এবার কিছুটা জোরে। “কে ওখানে”ऋ ইকোর কাছ থেকে জবাব এল़ “ওখানে”ऋ

আর এভাবেই ইকো़ নার্সিসাসের কখনও পেছনে কখনও বা আশেপাশে ঘুরে বেড়াতে লাগল। শেষ পর্যন্ত ইকো আর থাকতে না পেরে একটি গাছের আড়াল থেকে বাইরে বেরিয়ে এল। সে চমকে উঠা নার্সিসাসের কাছে গিয়ে আবেগের বশবর্তী হয়ে তাকে জড়িয়ে ধরল।

নার্সিসাস বিরক্ত হয়ে ভাবল़ কে এই দুরন্ত মেয়েऋ আর কেনই বা ও তাকে চুমু খেলऋ এক ধাক্কায় ইকোকে সরিয়ে দিয়ে খুব রুক্ষভাবে ইকোকে চলে যেতে বলল।

আবার ভগ্ন হৃদয় নিয়ে ক্লান্ত বিদ্ধস্ত ইকো নিরালা উপত্যকায় বাকি জীবনটা কাটাতে শুরু করল। যে ভালবাসার সন্ধান সে কোনদিনও পেল না। শেষ পর্যন্ত একটা জিনিসি বেঁচে থাকল़ তা হল তাঁর কণ্ঠ।

নার্সিসাস কিন্তু ফুরিয়ে গেল না। দাম্ভিক পুরুষদের মধ্যে অ্যামিনিয়াস নামে এক সুপুরুষ তাঁর একান্ত ভক্ত ছিল এবং তাঁর মনোযোগ আকৃষ্ট করতে নিরলসভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল। এবার নার্সিসাস কি করবেऋ নার্সিসাস করলো কি़ ঐ দাম্ভিক পুরুষ অ্যামিনিয়াসকে একটি তলোয়ার উপহার দিয়ে নিজের ভালবাসার প্রমান দিতে বলল।

নিজের অনুরাগ ঠিক কিভাবে প্রকাশ করবে ভেবে না পেয়ে অ্যামেনিয়াস ঐ তলোয়ারটি নিজের বুকের মধ্যে বিঁধিয়ে দিয়ে़ নিজের প্রাণ দিয়ে তাঁর ভালবাসা প্রমান দিল। অ্যামেনিয়াস তাঁর প্রাণ বেরিয়ে যাবার আগে ভগবানের কাছে আকুল প্রার্থনা করল তিনি যেন নির্দয়ী নার্সিসাসকে কঠোর শাস্তি দেন।

মৃগ দেবী আর্টেমিস़ মরনাপন্নের আকুতি শুনতে পেয়ে সঠিক প্রতিশোধ নেবার সিদ্ধান্ত নিল। মৃগদেবী স্থির করলেন নার্সিসাসের জীবনে প্রেম আসবে কিন্তু এমন একটা ভালবাসার স্বাদ সে পাবে যা কোনদিন পূর্ণতা পাবে না।

একদিন নার্সিসাস़ নিজের তৃষ্ণা দূর করতে থেস্পিয়ার ডোনাকনে একটি ঝর্নার সামনে এসে দাঁড়াল। সে জল খাবার জন্য নতজানু হয়ে বসল। এই প্রথম জলের মধ্যে সে তাঁর প্রতিচ্ছ্ববি দেখতে পেল। জলের মধ্যে ভেসে উঠল এক অনিন্দ্যসুন্দর মুখচ্ছবি। নার্সিসাস জলের মধ্যে ভেসে উঠা ঐ সুপুরুষ তরুণকে হাত দিয়ে স্পর্শ করতে চাইলো কিন্তু বারবার ব্যর্থ হল।

নার্সিসাস পরমানন্দে ঐ প্রতিবিম্বের দিকে তাকিয়ে থাকল কিন্তু কিছুতেই তাকে স্পর্শ করে নিজের ইচ্ছে পূরণ করতে পারল না। আর্টেমিসের জাদুমুন্ত্র বলে নার্সিসাস পুরোপুরি মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে পড়ল আর ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে ঝর্নার জলে ঐ প্রতিবিম্বকে ছোঁয়ার আপ্রান চেষ্টা করতে থাকল। শেষ পর্যন্ত সে নিজেকে চিনতে পারল।

দূরॐ

নিজে মোহাচ্ছন্ন হওয়া পুরুষকে সে কখনই পেতে পারবে না হটাত এই বোধটা তাকে ক্ষতবিক্ষত করে তুলল। নার্সিসাস হতাশ হয়ে পড়ল।ঐ একই ভাবে সত্যিকারে তাঁর প্রেমে পরা হতভাগ্য প্রেমিকদের যন্ত্রণা़ হতাশার কথা নার্সিসাস এই প্রথম উপলব্ধি করল। ব্যর্থ প্রেমের তীব্র যন্ত্রণা এই প্রথম বুঝতে পারল।

এই নিদারুণ মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে নার্সিসাস ছুরিকাবিদ্ধ হয়ে নিজের প্রাণ নিল। যেতে যেতে সে তাঁর প্রতিবিম্বকে বিদায় জানাল।

তাঁর নিঃস্পন্দ দেহ থেকে একটি সুন্দর নার্সিসাস ফুলের জন্ম হল। এই ফুলের বিশিষ্ট হল এটি সবসময় জলের ধারেই জন্মায় এবং ফুলটি সবসময় জলের দিকে ঝুঁকে থাকে।

সুন্দরী পরী ইকো জঙ্গল এবং পাহাড় পছন্দ করত। সেখানে ও জঙ্গলের খেলায় নিজেকে ব্যস্ত রাখত। সে ছিল ডায়নার পছন্দের এবং সবসময় তাকে অনুসরণ করে ছুটত। কিন্তু ইকোর একটা দুর্বলতা ছিল़ সে অনর্গল কথা বলতে ভালবাসতো তা সে গল্প করাই হোক বা তর্ক বিতর্ক করাই হোক।

একদিন জুনো তাঁর স্বামীকে খুঁজছিল़ যাকে সে ভয় পেত। সে পরীদের সঙ্গে রঙ্গ রসিকতা করত। ইকো নিজের কথার ছলে দেবীকে আটকে রাখল যতক্ষন না বাকি পরীরা পালিয়ে গেল। যখন জুনো তা বুঝতে পারল़ সে ইকোকে বলर्ল “ তুমি যে কথার ছলে আমাকে ধোঁকা দিলে़ একদিন যা তোমার সবচেয়ে প্রিয়़ তোমার বাকচাতুর্য তা তুমি হারাবে। তুমি কথা বলতে চাইবে কিন্তু তোমার মুখে ভাষা থাকবে না। প্রথমে কথা বলার ক্ষমতা তোমার থাকবে না”।

এই পরী ছিল নার্সিসাস़ এক সুপুরুষ তরুণ़ সে পাহাড়ের চূড়ায় চূড়ায় ঘুরে বেড়াত। ইকো তাকে ভালবাসত আর তাঁর পেছনে পেছনে ঘুরে বেড়াত। ওহ़ মধুর স্বরে ইকো তাঁর সঙ্গে কথা বলে তাঁর মন জয় করতে চাইছে কিন্তু এই ক্ষমতা ইকোর কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। ইকো অস্থির হয়ে অপেক্ষা করছিল যে़ নার্সিসাস প্রথমে কথা বলুক আর তারপর ইকো জবাব দেবার জন্য প্রস্তুত ছিল।

একদিন़ সঙ্গীর কাছ থেকে বিছিন্ন হয়ে নার্সিসাস সজোরে চিৎকার করर्ল “কে ওখানে”ऋ ইকোর জবাব এर्ল “ওখানে”। নার্সিসাস চারদিকে তাকাল़ কিন্তু কাউকে দেখতে না পেয়ে আবার বলर्ল “ বেরিয়ে এসো”। ইকো জবাব দিर्ল “ বেরিয়ে এসো”। কেউ এল না দেখে নার্সিসাস আবার বলर्ল “কেন তুমি আমাকে এড়িয়ে যাচ্ছ”ऋ ইকো ঐ একই কথার পুনরাবৃত্তি করল। নার্সিসাস বলर्ল “ চল़ আমরা একে অপরের সামনে আসি”। তরুণী তাঁর সমস্ত হৃদয় দিয়ে ঐ একই কথার পুনরাবৃত্তি করল এবং তারাতারি সেখানে এসে দুহাত দিয়ে তাঁর গলা জড়িয়ে ধরতে চাইল।

নার্সিসাস দু’পা পিছিয়ে চিৎকার করে উঠर्ল “হাত তোলॐ তোমার কাছে নিজেকে সমর্পণ করার চাইতে মৃত্যু শ্রেয় আমার কাছে”।

“আমাকে নাও” তরুণী বলল़ কিন্তু কোন লাভ হল না। সে তাকে ছেড়ে চলে গেল। তরুণী লজ্জায় জঙ্গলের নিভৃত কোনে আশ্রয় নিল। তারপর থেকে ইকো পাহাড়ের খাঁজে গুহায় আশ্রয় নিল। দিনে দিনে হতাশায়़ শোকে़ তিল তিল করে শেষ হয়ে গেল ইকো। শুধু তাঁর হাড়গোড়গুলি ছড়িয়ে রইল বনের ধারে এখানে ওখানে পাথর হয়ে। আর তাঁর কন্ঠ ছাড়া আর কোন কিছুই অবশিষ্ট রইল না। আজও নিজের পুরনো অভ্যেস শেষ শব্দের পুনরাবৃত্তি করা এবং এখনও সে ডাকের জবাব দিয়ে যায়।

নার্সিসাসের নিষ্ঠুরতার এটাই একমাত্র উদাহরণ নয়। বেচারা ইকোর প্রতি সে যা করেছে তার জন্য বাকি পরীদেরও সে এড়িয়ে চলত। একদিন এক কুমারী তাকে আকৃষ্ট করতে ব্যর্থ হয়ে প্রার্থনা করল যে़ ব্যর্থ প্রেমের জ্বালা যে কি़ অহংকারি নার্সিসাস যেন তা বোঝে।

প্রতিকর্ম দেবী তাঁর প্রার্থনা শুনে তাকে বর দিল। রুপোর মত স্বচ্ছ জলের এক ঝর্না ছিল़ যেখানে মেষ পালকরা কখনও তাদের গরু মোষকে চান করাবার জন্য আনত না़ পাহাড়ি ছাগলরা সেখানে আসত না এমনকি জঙ্গলের কোন জন্তু জানোয়ারও সেখানে প্রবেশ করত না। গাছের ভাঙ্গা ডালপালা এবং শুকনো পাতাও এর মধ্যে পরত না। এর চার পাশে সবুজ সচেজ ঘাস ছিল। পাহাড় প্রখর সূর্যরশ্মি থেকে রেহাই পেতে এর আশ্রয় নিত।

একদিন শিকার করে ক্লান্ত বিদ্ধস্ত তৃষ্ণার্ত তরুণ সেখানে উপস্থিত হল। সে ঐ ঝর্নার জলে নিচু হয়ে যেই জলপান করতে গেল़ সে ঐ জলে নিজের প্রতিচ্ছবি দেখতে পেল। সে ভাবল़ এটা নিশ্চয়ই ঝর্নার জলে বাস করা কোন জলপরী। তাঁর সেই উজ্জ্বল চোখের দিকে মুগ্ধভাবে তাকিয়ে রইল़ গ্রিক দেবতা অথবা সূর্যদেবের মত কুঞ্চিত কেশদাম़ গোল গোল গাল़ গজদন্তের মত শুভ্র গলা़ রসাল ঠোঁট़ সুঠাম দেহ ও স্বাস্থ্যের দ্যুতি চারদিকে ছড়িয়ে পরেছে।

সে তাঁর প্রেমে পরে গেল। চুম্বনের জন্য সে তাঁর ঠোঁট দুটো তাঁর কছে নিয়ে এল़ সে আবেশে তাকে জড়িয়ে ধরতে চাইল। যেই না ছুঁতে গেল অমনি প্রতিফলনটা ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল। আবার কিছুক্ষন পরে ফিরে এল আর এমনি করেই নার্সিসাস মোহাবিষ্ট হয়ে রইল। সে তাকে ছেড়ে কোথাও নড়তে চাইছিল না এমনকি ক্ষুধা তৃষ্ণা বোধও হারিয়ে ফেলল। ঝর্নায় নিজের প্রতিচ্ছবির সামনেই তাকিয়ে বসে রইল।

সে জলপরী মনে করে তাঁর সঙ্গে কথা বলছিল़ “ হে সুন্দরী़ তুমি কেন আমাকে এড়িয়ে যাচ্ছऋ নিশ্চয়ই আমার চেহারা তোমাকে তা করার জন্য বাধ্য করছে না। সমস্ত পরীরা আমাকে পাবার জন্য পাগল़ আর তুমিও এর ব্যাতিক্রম নও। আমি যখন আমার হাত বাড়াই़ তুমিও ঠিক তাই কর। তুমি আমার দিকে তাকিয়ে হাসো এবং আমি যা করি তুমিও ঠিক তাই কর”।

তাঁর চোখের জল ঝর্নার জলে পরে প্রতিবিম্ব মিলিয়ে গেল। ও যেই তাকে বিলীন হয়ে যেতে দেখল অমনি চিৎকার করে উঠল़ “দাড়াও़ আমি তোমার কাছে অনুনয় করছি़ আমি যদি তোমাকে ছুঁতে না পারি़ অন্তত আমি যেন তোমাকে দেখতে পারি़ এই অনুমতি দাও”। এইভাবে़ ঠিক এই একই ভাবে ইকো যার রূপে মুগ্ধ ছিল़ তাঁর সেই রঙ্গ রূপ़ তাঁর সৌন্দর্য़ তাঁর পুরুষত্ব সব হারিয়ে গেল।

ইকো তাঁর কাছেই রইল़ যখন এবং যেভাবেই সে চিৎকার করে़ “ হায়ॐ সে একইভাবে হায়ॐ বলে তার জবাব দিত। এভাবেই একদিন মূর্ছিত হয়ে জলের ওপর তারই ছায়াটাকে লক্ষ্য করে ধীরে ধীরে নীরব নির্জন মৃত্যু বরণ করল।

পরীরা তার জন্য দুঃখ প্রকাশ করল़ বিশেষ করে জলপরীরা তখন ইকোও তাই করল। তাঁরা শেষকৃত্য সম্পন্ন করার জন্য চিতা সাঁজাল এবং তার দেহ পুড়িয়ে দিল़ কিন্তু তা কোথাও দেখা গেল না তার জায়গায় সাদা পাপড়ি সহ একটি বেগুনি ফুলের সৃষ্টি হল যা আজও নার্সিসাসের স্মৃতি বহন করে চলেছে।

লেখर्ক থমাস বুলফিঞ্চ