Orpheus & Eurydice
অর্ফিয়াস ও ইউরিডাইস
Matrubharti
© COPYRIGHTS
This book is copyrighted content of the concerned author as well as Matrubharti.
Matrubharti has exclusive digital publishing rights of this book.
Any illegal copies in physical or digital format are strictly prohibited.
Matrubharti can challenge such illegal distribution / copies / usage in court.
Orpheus & Eurydice
প্রাচীনকালে সঙ্গীত শিল্পীরা ছিলেন ঈশ্বর আর তাদের দক্ষতা ছিল অসাধারণ। অ্যাপলো़ অ্যাথেনা ও হার্মেসের মত দেবতারা তাদের অসাধারণ মধুর সুর যখন বাজাতেন তখন অলিম্পাস পর্বতের অন্যান্য দেবদেবীরা সব কিছু ভুলে যেতেন এমনকি তাদের মধ্যেকার ঈর্ষা দন্দ্ব সব ভুলে তাদের গান শুনতেন। এই দেবতাদের পাশাপাশি মর্তের কিছু মানুষও এই সঙ্গীত বিদ্যায় এত পারদর্শী ছিলেন যে তারা দেবতাদের সমকক্ষ হয়ে উঠেছিলেন।
অর্ফিয়াস ছিলেন এই আশীর্বাদধন্য মানুষদের মধ্যে একজন। মিউজ ক্যালিওপ এবং থ্রেসের রাজা ওয়েগ্রাসের পুত্র ছিলেন এই অর্ফিয়াস। অর্ফিয়াস़ সঙ্গীতবিদ্যার অধিষ্ঠাত্রী দেবী তাঁর মা মিউজের কাছ থেকে সঙ্গীতের শিক্ষা পেয়েছিলেন এবং যেখানে তিনি বেড়ে উঠেছেন সেই থ্রেসের মাটিতে সেই বিদ্যায় তিনি আরও পারদর্শী হয়ে উঠেন। গ্রিসে থ্রেসিয়ানরা ছিলেন সঙ্গীতের প্রতি গভীর অনুরক্ত। মহান অ্যাপোলো তাকে একটি বীণা উপহার দিয়েছিলেন। মিউজ সেই বীণাটি কিভাবে বাজাতে হবে তা তাকে শিখিয়েছিলেন। তাই মর্তের মানুষের মধ্যে অর্ফিয়াস ছিলেন সঙ্গীতবিদ্যায় অতুলনীয়। কেবলমাত্র দেবতারাই ছিলেন তাঁর একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী।
তাঁর সঙ্গীত ছিল আকর্ষণীয় ও মনোরম़ কেউ বা কোন কিছুই তা প্রতিহত করতে পারত না। অজড় প্রাণী থেকে শুরু করে নিষ্প্রাণ বস্তুও তাঁর সঙ্গীতের প্রতি আকৃষ্ট হত। তাঁর সঙ্গীতের মূর্ছনায় বনের পশুরা তাদের হিংস্রতা ভুলে যেত़অর্ফিয়াসের গান শুনে অচল পাহাড় ও গাছপালাগুলোও সচল হয়ে উঠত।
বিয়ের আগে অর্ফিয়াসের সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা ছিল না। তাঁর ইজিপ্ট সফরকালে़ আর্গো নামে একটি জাহাজে গ্রীক বীর জেসন ছিলেন তাঁর সঙ্গী। ঐ জাহাজে করে সোনার পশম আনতে যাবার পথে সে খুব উপকারে এসেছিল কারন জাহাজ চালাতে চালাতে নাবিকরা যখন ক্লান্ত़ দুর্বল হয়ে পড়তো তখন তাঁর সুমধুর স্বর তাদের মনে উৎসাহের সঞ্চার করত আর তারা আবার নতুন উদ্দীপনা নিয়ে সমুদ্র যাত্রা চালিয়ে যেত। অর্ফিয়াস़ আর্গোন্যান্টদের কুহকিনীর হাত থেকেও রক্ষা করত। তাঁর মন্ত্রমুগ্ধ করা সঙ্গীত সব ভয় থেকে তাদের দূরে রাখত এবং দুশ্চিন্তা দূরে সরিয়ে রেখে বীর নাবিকেরা তাঁর মিষ্টি গানের সুরে ডুবে থাকতে চাইতেন। এইভাবে আর্গোন্যান্টরা মৃত্যুভয় দূরে সরিয়ে রেখে নিজেদের যাত্রা পথ সম্পূর্ণ করতে সমর্থ হত এবং সেজন্য তারা অর্ফিয়াসকে ধন্যবাদ জানাত।
অর্ফিয়াসের সঙ্গে তাঁর স্ত্রীর কবে ও কোথায় দেখা হয়েছিল তা নিয়ে বিশেষ কিছু জানা যায় নি। কিন্তু নিশ্চিতভাবে কোন তরুণীই অর্ফিয়াসের সঙ্গীতের জাদুতে মন্ত্রমুগ্ধ না হয়ে পারবে না। তখনকার প্রখ্যাত কবি ও সঙ্গীতকাররা ইউরিডাইস নামে এক সুন্দরী তরুণী কে অর্ফিয়াসের জন্য পছন্দ করেছিলেন। সে আগ্রিওপ নামেও পরিচিত ছিল। অবশেষে বিয়ের পর তারা থ্রেসের সিকোনসে বসবাস করার সিদ্ধান্ত নিল।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিয়ের ঠিক পরেই ইউরিডাইস তাঁর স্বামীর সঙ্গে তৃণভূমি দিয়ে হেঁটে যাবার সময় এক বিষধর সাপ তাকে ছোবল মারে ফলে তাঁর মৃত্যু হয়। কেউ কেউ বলে অ্যারিস্টেটাস নামে এক নরপশু জোর করে তাকে পেনেয়াস নদীর ধারে নিয়ে যায়। যাই হোক না কেন তাঁর নতুন বউয়ের মৃত্যু হয় এবং অর্ফিয়াস শোকে এতই কাতর হয়ে পড়ল যে সে স্থির করল़ সে তাঁর স্ত্রীর আত্মার সঙ্গে নরকে যাবে এবং তাঁর স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনবে। এই অসাধ্য সাধন করা খুবই কঠিন জেনেও সে এই সিদ্ধান্ত নিল।
অর্ফিয়াস মৃত্যুপুরের প্রবেশদ্বার দিয়ে সেখানে প্রবেশের চেষ্টা করল। কোন জীবিত মানুষ সেখানে প্রবেশ করতে পারে না। শারণ হচ্ছে এই নদী পারের মাঝি। নরকের নদীর মাঝি শারন কখনও কোন জীবিত মানুষকে নদী পার করে না কিন্তু অর্ফিয়াসের গান শুনে শারন এতই মুগ্ধ হল যে সব নিয়ম ভুলে তাকে নদী পার করে দিল। তাঁর গান শুনে তিন মাথাওয়ালা কুকুর সেরবিয়াস তার প্রহরা শিথিল করে দিল এবং মৃত্যুপুরির তিন বিচারক তার গান শুনে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে গেল। এমনকি তারা অসহ্য যন্ত্রনা দেবার কথাও ভুলে গেলেন। ইক্সিওন তার চাকা ঘোরাতে ভুলে গেলেন़ সিসিফাস তার পাথরের ওপর বসে পড়লেন़ টান্টালাস তার তৃষ্ণা ভুলে গেলেন। তার গান এমনই মধুর যে তা শুনে এই প্রথম তাদের কঠিন হৃদয় গলে গেল আর তাদের চোখে জল এল।
কেউ তাকে অবজ্ঞা করতে পারল না। মৃত্যুপুরির রাজা ও রানি পার্সিফোনে অর্ফিয়াসের মনবাঞ্ছা পূর্ণ করতে সম্মত হলেন এবং একটি শর্তে ইউরিডাইসকে ফিরিয়ে দিতে রাজি হলেন। শর্তটি হर्ল তোমার স্ত্রী ইউরিডাইস তোমার ছায়ার অনুগামিনী হবে এবং এই মৃত্যুপুরির সীমানা পার না হওয়া পর্যন্ত তুমি পিছন ফিরে তাকাতে পারবে না।
নিবিড় অন্ধকারের মাঝে মৃত্যুপুরির পথ পার হবার সময় অর্ফিয়াস জানত যে ইউরিডাইস তার পেছনেই আছে এবং তার সুর শুনে তাকে অনুসরণ করছে তবুও সে নিশ্চিত হতে চাইল। কিন্তু গভীর অন্ধকার থেকে আলোর দিশায় আসার ঠিক আগের মুহূর্তে সে নিশ্চিত হবার জন্য পিছনে ফিরে তাকাল কিন্তু দেখল শুধুই অন্ধকার़ সে ভুলে গিয়েছিল মৃত্যুপুরিতে ইউরিডাইস ছায়ার মত অনুসরণ করছে তাকে। আবছা আলোতে সে ইউরিডাইসকে দেখতে পেল़ সে দুহাত বাড়িয়ে তাকে ধরতে চেষ্টা করল কিন্তু পারল না। অর্ফেয়াস দেখল তার প্রিয়তম স্ত্রী অদৃশ্য হয়ে গেল़ যাবার আগে শুধু একটি কথাই বলে গেল “বিদায়”।
সে চিরদিনের মত বিদায় নিল।
আতঙ্কিত হয়ে সে ইউরিডাইসের পিছনে যাবার চেষ্টা করল কিন্তু তাকে জীবিত অবস্থায় দ্বিতীয়বারের জন্য মৃত্যুপুরিতে প্রবেশের অধিকার দেওয়া হল না। একা একা মর্তলোকে ফিরে আসতে বাধ্য হল সে। এই তীব্র শোকে পাগলের মত অবস্থায় সে কোন মানুষের সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দিল। তাঁর বীণার তার থেকে মধুর সুরের পরিবর্তে প্রলাপ বাজতে লাগল। শুধুমাত্র প্রকৃতির জীবজন্তু़ পাহাড়़ নদী আর গাছপালা তার করুন সুর শুনতে পেল।
সুরার দেবী ডায়োনিসাস থ্রেস আক্রমণ করল़ অর্ফেয়াস তাকে শ্রদ্ধা জানাতে পারল না এবং অন্যান্য দেবতাদের গোপন রহস্য প্রকাশ করে তাদের বিরক্তির কারন হল। শেষপর্যন্ত একদল মীনাস নামের অপদেবী যারা ডায়োনিসাসের হয়ে কাজ করত তারা অর্ফিসাসের কাছে এসে তার দেহটাকে টানাটানি করে টুকরো টুকরো করে ফেলল़ তার অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলি এখানে সেখানে ছড়িয়ে দিল। তার ছিন্ন মুন্ডটি ক্ষিপ্রগামী নদী হেব্রাসে ছুড়ে ফেলে দিল।
অবশেষে মিউজরা একদিন লেসবিয়ান সমুদ্রের তীরে অক্ষত অবস্থায় সেই মুন্ডটি উদ্ধার করলেন যা তখনও গান গাইছিল। কাঁদতে কাঁদতে তারা তার অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলি একত্রিত করলেন এবং অলিম্পাস পর্বতের পাদদেশে সমাহিত করলেন। সেই থেকে নাইটিঙ্গেল পাখিরা ওখানে এসে সুমধুর সুরে গান করত।
অর্ফিয়াস মত এমন একজন শ্রেষ্ঠ সঙ্গীতশিল্পীকে হারিয়ে অলিম্পিয়ান দেবতা ক্রোধে ক্ষিপ্ত হয়ে পড়েন। তার ক্রোধের হাত থেকে মিনাসদের রক্ষা করার জন্য ডায়োনিসাস তাদের ওক বৃক্ষ বানিয়ে দিলেন। মিনাসরা হেলিকম নদীতে অর্ফিয়াসের রক্তে নিজেদের পরিষ্কার করার চেষ্টা করেছিল কিন্তু নদী দেবতা এই হত্যাকারিদের সাহায্য না করার জন্য নিজেকে মাটির নিচে লুকিয়ে ফেলল এবং প্রায় চার মাইল দূর পর্যন্ত নদীর কোন চিহ্নই রইল না। শেষ পর্যন্ত এই নদীটি অন্য একটি স্থানে বাফিরা নামে আত্মপ্রকাশ করল।
অর্ফেয়াসের মুণ্ডটির কি পরিণতি হলऋ এক হিংসুটে লেমনিয়ান সর্প ঐ মুণ্ডটির ওপর আক্রমণ করল কিন্তু অ্যাপলো তৎক্ষনাত ঐ সাপটিকে পাথর বানিয়ে দিল। মুণ্ডটি আন্টিসা নামে একটি গুহায় শান্তিতে এত সুন্দরভাবে রাখা আছে যে অ্যাপোলোর ডেলফি़ গ্রিনেইয়াম़ ক্লরাসের মত পবিত্র স্থান ছেড়ে মানুষ দিনরাত সেখানে ভিড় করত। এভাবে চলতে পারে না।তাই অ্যাপোলো অর্ফিসাসের মুন্ডটিকে কথা বলা এবং গান না গাওয়ার আদেশ দিলেন ফলে মুন্ডটি নিস্তব্দ হয়ে গেল।মিউজরা অর্ফিয়াসের বীণাটি লেসবস দ্বীপে নিয়ে গিয়ে অ্যাপোলোর মন্দিরে স্থাপন করে। ঘটনাক্রমে বীণাটি স্বর্গে নক্ষত্র হয়ে বিরাজ করছে।
অপর এক মতে অর্ফিয়াসের মৃত্যু কারন হিসেবে বলা হয়ে থাকে যে़ গ্রীক দেবরাজ জিউস ভয়ঙ্কর বজ্রের আঘাতে তাকে হত্যা করেন কারন ট্রেসে অ্যাপোলোর़ এজিনাতে হেকেটের এবং স্পারটায় দিমেতার নিগূর সত্যের বিষয়ে যে পবিত্র গোপনতা ছিল অর্ফিয়াস তা প্রকাশ করে দিয়েছিল।