অপেক্ষার আগুন**🔥🔥
রুদ্র চলে যাওয়ার পর থেকে ইশার মধ্যে অদ্ভুত এক শূন্যতা। সে বুঝতে পারছে, তার মন ভেঙে গেছে অনেক আগেই, কিন্তু এখন সেই ভাঙা মনটা যেন নিজের মতো করে জোড়া লাগতে চাচ্ছে। প্রতিদিনের এই নিঃসঙ্গতা তাকে আর আগের মতো গুঁড়িয়ে দিচ্ছে না—বরং একটা অচেনা আলো তাকে টানছে।
রাত ন’টা বাজে। সে বিছানায় শুয়ে আছে, কিন্তু ঘুম আসছে না। বৃষ্টির শব্দে ঘরটা যেন আরও নিঃসঙ্গ হয়ে উঠেছে। বাইরে ধোঁয়া ধোঁয়া আলোয় ভিজে আছে পথঘাট, আর সে অপেক্ষা করছে—কিন্তু ঠিক কীসের জন্য, সে নিজেও জানে না। রুদ্রর একটা মেসেজ? একটা ফোন কল? নাকি আরেকটা স্পর্শ, যেটা তাকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল?
মোবাইল স্ক্রিন বারবার জ্বলে উঠছে, কিন্তু রুদ্র না।
তুমি জানো, ইশা? মানুষের ‘ছিলাম’ যত বড় শব্দ, ‘আছি’ তার চেয়েও বেশি শক্তিশালী…
রুদ্রর বলা কথাগুলো কানের মধ্যে গুমরে গুমরে বাজছে।
ইশা নিজের চুলে আঙুল চালাতে চালাতে ভাবল—এত সহজে সে কি কাউকে প্রবেশ করতে দেবে তার জীবনে? সায়নের চলে যাওয়া তার ভিতরটা এমনভাবে ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছিল, যেখানে আর কেউ প্রবেশ করতে পারবে না—সে ভেবেছিল তাই। কিন্তু রুদ্র? এই মানুষটা কি শুধু তার শরীর চেয়েছিল, নাকি সত্যিই তার ছায়াটুকুও ভালোবেসেছে?
পরদিন সকালে ইশা বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিল। সূর্য উঠেছে ঠিকই, কিন্তু চারদিকে এখনও কুয়াশা। রুদ্রর দেখা নেই।
হঠাৎ মোবাইলটা বেজে উঠল।
– রেডি থেকো, আমি আসছি…
ইশার বুকটা কেঁপে উঠল। সাড়ে দশটা নাগাদ রুদ্র এল। হাতে এক গুচ্ছ সাদা গোলাপ।
– “আজ তোমার জন্য শুধু সাদা ভালোবাসা।”
ইশা হেসে ফেলল। সাদা ফুলগুলো কেমন করে যেন তার ভিতরের কষ্টগুলোর সঙ্গে মিল খেয়ে যাচ্ছে।
রুদ্র তাকে নিয়ে গেল শহরের বাইরে, এক পুরনো ধ্বংসাবশেষের কাছে—একটা ছোট্ট পরিত্যক্ত বাংলো, যার জানালা ভাঙা, দরজার রং উধাও। কিন্তু তবুও ওখানে দাঁড়ালে মনে হয়, কিছু আবেগ এখানে আজও গেঁথে আছে।
রুদ্র বলল, “এই জায়গাটা আমি মাঝে মাঝে আসি। এখানে কেউ আসে না। একদম নিঃসঙ্গতা। তোমার সঙ্গে ভাগ করে নিতে ইচ্ছে হলো।”
ইশা একটু অবাক হলো, কিন্তু মনটা খুশি।
ওরা ঘুরে ঘুরে দেখছিল জায়গাটা। একসময় রুদ্র তার হাত ধরল। ইশার হাতটা ঠান্ডা, কিন্তু তার বুক গরম হয়ে উঠল।
– “ইশা, আমি চাই না তুমি শুধু আমার চোখে থাকো। আমি চাই, তুমি আমার জীবনের প্রতিটি নিঃশ্বাসে মিশে যাও।”
ইশা তাকিয়ে রইল রুদ্রর দিকে। রুদ্র এগিয়ে এল ধীরে ধীরে। চোখে কোনো জোর নেই, কেবল এক ধরনের ভয় মেশানো আবেগ।
এই মুহূর্তে ইশার মনের ভিতরে ঝড় উঠছে। একদিকে সায়নের স্মৃতি, তার বিশ্বাসভঙ্গ, অন্যদিকে রুদ্রর স্পর্শ—যেটা কাঁপিয়ে দেয় তার প্রতিটি স্নায়ু।
রুদ্র ধীরে ধীরে তার মুখের খুব কাছাকাছি এল। ইশা চোখ বন্ধ করে ফেলল, কিন্তু ঠোঁট কাঁপছে।
হঠাৎ রুদ্র থেমে গেল। বলল, “তোমার সম্মতি ছাড়া আমি কিছু করব না। ভালোবাসা যদি তোমার ভিতর জন্ম না নেয়, তাহলে এই স্পর্শের কোনো মানে নেই।
ইশার চোখ দিয়ে জল পড়ে গেল। এতটা সম্মান, এতটা সংবেদনশীলতা সে সায়নের কাছেও পায়নি।
সে রুদ্রর দিকে এগিয়ে গেল, নিজেই তার মুখে ঠোঁট রাখল। এক চুমু, নীরব কিন্তু গভীর।
রুদ্র বিস্ময়ে তাকিয়ে রইল, আর ইশা চোখে চোখ রেখে বলল,
– আমি তোমার হতে চাই, যদি তুমি আমার ছায়াকেও ভালোবাসো… আমার দুঃখকেও।
সেই দিনের বিকেলটা তাদের নতুন একটা শুরু। শরীর নয়, মনের একটা স্পর্শ।
কিন্তু
এই আগুনের শুরুতেই, কী অপেক্ষা করছে শেষপ্রান্তে?
পরবর্তী পর্বে:
রুদ্র আর ইশার সম্পর্ক কি এখন আরও গভীর হবে? নাকি পুরনো ছায়াগুলো আবারও ফিরে আসবে?
এই গল্পটা তাদের জন্য, যারা চুপচাপ ভালোবেসে যায়—তবু কিছু বলার সাহস পায়
📍 পর্ব ৫ আসছে শিগগিরই…
প্লিজ যদি গল্পটা ভালো লাগে তাহলে আমাকে কমেন্টে জানান আপনাদের কাছে আমার একটাই রিকো। আমিও গল্প লিখতে আরও উৎসাহী হব