Read Fallen leaves - 1 by Srabanti Ghosh in Bengali Love Stories | মাতরুবার্তি

Featured Books
  • জঙ্গলের প্রহরী - 4

    জঙ্গলের প্রহরীপর্ব - ৪অস্বস্তিকর পরিস্থিতি কাটাতে ঋষি তাড়াত...

  • ঝরাপাতা - 1

    ///ঝরাপাতাপর্ব - ১সন্ধ্যা নামার ঠিক আগের এই সময়টা খুব প্রিয়...

  • Ms Dhoni

    রাঁচির ছোট্ট শহর। স্টেশন রোডের পাশে এক সরকারি কোয়ার্টারে থা...

  • মহাভারতের কাহিনি – পর্ব 118

    মহাভারতের কাহিনি – পর্ব-১১৮ যুদ্ধের নবম দিনে ভীষ্মের পরাক্রম...

  • তিন নামের চিঠি..

    স্নেহা, অর্জুন আর অভিরূপ — ওরা তিনজন।কলেজের এক ক্লাসে প্রথম...

বিভাগ
শেয়ারড

ঝরাপাতা - 1

///ঝরাপাতা

পর্ব - ১

💙🌿💙🌿💙🌿💙

সন্ধ্যা নামার ঠিক আগের এই সময়টা খুব প্রিয় মণিকার। যখন স্কুল কলেজে পড়ত, এই সময়ে এককাপ চা নিয়ে মায়ের সঙ্গে বসত গোল বারান্দায়। মা বসতে চাইত না, সন্ধে দিতে হবে, জলখাবার করতে হবে, হাজারটা কাজ। ঠাকুমা বেঁচে থাকতে ট্যারা ট্যারা কথাও শোনাতেন। তবে মণিকা স্কুলের উঁচু ক্লাসে ওঠার আগেই ঠাকুমা চলে গেলেন। কাকারা ভাগ হয়ে গেলেন। মায়ের একটু বসার সুযোগ হল। 

বিয়ে হয়ে একমাত্র মেয়ে মণিকা চলে এল। বারান্দা ছিল না তখন এ বাড়িতে। শাশুড়ির শাসন ছিল। বড় দুই ননদের বিয়ে হয়ে গেলেও মণিকার বেচালের দিকেই তাদের আসল নজর পড়ে থাকত। বনি রনি হয়ে গেল বিয়ের সাত বছরের মধ্যেই। পাঁচ বছরের ছোট বড় দুভাই। চার বছরের রনি একদিন তাকে অবাক চোখে দেখে প্রশ্ন করেছিল, "তুমি এরকম বিচ্ছিরি একটা ন্যাকড়া পরেছ কেন? বাপি তো পুজোয় শাড়ি কিনে দিল তোমাকেও।" 

ভাইকে জাপটে ধরে মায়ের সামনে থেকে সরিয়ে নিয়ে গেছিল বনি। তবুও পাকা ছেলের তকমা জুটেছিল রনির। বিশেষ করে বাস এ্যাক্সিডেন্টে ছেলে হারানো শাশুড়ি মায়ের দুচক্ষের বিষ হয়ে গেল নাতিরা। অথচ তার আগে ওঁকে টপকে ওঁর ছেলের এবং নিজের ছেলেদের কাছে যাওয়ার উপায় ছিল না মণিকার। 

এই পরিস্থিতিতে ওকে বাড়ি থেকে সটান তাড়িয়ে দেওয়ার কথাই ছিল মা আর দুই মেয়ের। সেখানে তারা শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করে গেছেন মণিকার বাপের বাড়ি বেড়াতে যাওয়াও যদি আটকানো যায়। কারণ স্বামীর ব্যাঙ্কের চাকরিটা যে গ্র্যাজুয়েট মণিকার হাতে এল। 

তবে চাকরিটা মণিকার ছেলেদের দিনের বেলায় মায়ের কাছে রাখা, বছরখানেকের মধ্যেই বাড়িতে একজন সবসময়ের কাজের সাহায্যকারিনী রাখা, মণিকার আড়াই বছর পরে বড় ননদ বৈধব্য যন্ত্রণা পেলে শাশুড়ি মায়ের দাঁড়িয়ে থেকে নিয়মভঙ্গের দিন মেয়েকে মাছ খাওয়ানো দেখে নিজের পাতেও মাছ দিতে বলা, মার্জিত কিন্তু সামাজিক অনুষ্ঠানে পরার উপযুক্ত শাড়ি আর আনুষঙ্গিক, নিজের পছন্দ হলেই লোকলজ্জার ভয় ছাড়া কেনার সাহস যুগিয়েছিল। কেড়ে নিয়েছিল এই গোধূলির আয়েশ। অফিস থেকে বাড়ি ফিরতে সাড়ে সাতটা বেজে যেত। 

আজ দুমাস হল রিটায়ার করে এই আরামটি আবার শুরু করেছে। বনি, বড়ছেলে শ্রাবণ, বিয়ে করেছে ছয় বছর হল প্রায়। সাড়ে তিন বছরের একটি ছেলে টুকাই। আর বৌমা পিয়ালী বনির সহপাঠিনী। ফলে প্রায় পনেরো বছর ধরে তার সঙ্গে সম্পর্ক। প্রথম দিকে মণিকাও ভাবেনি এই বন্ধুত্ব আরও এগোবে। বুঝল কলেজের পর। তখন তো নিজেই খুশি। এমন মিষ্টি একটা মেয়ে এলে আর ঘর তো ভাঙবেই না, নিজের আর কোন একাকীত্ব থাকবে না। তাই হল পাশের পাড়ার পিউ বৌ হয়ে এসে। ওর মা বাবা সুদ্ধও আড্ডা জমে এ বাড়িতে বিয়ের আগে থেকেই। 

বনি পিউ দুজনেই ভূগোলের শিক্ষক, বনি কলেজে, আর পিউ প্রাইভেট স্কুলে ছিল। ছেলে হওয়ার আগে ছেড়ে দিয়েছে। এখন আবার খোঁজ খবর করছে। অন্ততঃ পার্ট টাইমার হয়েও কাজে যোগ দেওয়ার। তাকে মণিকার বলা আছে, পিউর মা শোভনাও একমত, ছেলেকে দেখতে আটকে যাস না, আমরা সুস্থ থাকতে থাকতে কিছু করে নে। ওদিকে তোর ছেলেও ঠিক বড় হয়ে যাবে। 

তবে এই সময়টা মণিকার আয়েশের জন্য ছাড়তেই হবে সংসারের চিন্তার বাইরে। একা ছাড়তে হবেনা। তাতে ও নিজে যোগ দিতে পারে, শোভনাও হামেশাই থাকে। এই সময়টাই ওদের তিনজনের যেন বাঁচার রসদ যোগাড়ের সময়। এখন শুধু রনি, ছোটছেলে শ্রেয়ানের এমন একটা বউ আনতে পারলে মণিকার আরও হাজার বছর বাঁচতে ইচ্ছে করবে। 

তবে আজ সাংসারিক কথাই শুরু হল। পিউর একটু জ্বরভাব। একটা পাতলা বাটিকের চাদর জড়িয়ে বসে আছে ও। মণিকা আদা চা আর পছন্দের বেকারীর বিস্কুট এনে বসল, "নে, খা। চা টা খেলে ভালো লাগবে।" 

চায়ের কাপ তুলতে তুলতে পিউ বলল, "মামনি, তোমার সঙ্গে একটা কথা আছে। সবটা শুনবে। ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখ কি করবে। যদি ব্যাপারটা পছন্দ না হয়, চুপ করে যাব আমরা। তবে সেটা খুব ভাবনাচিন্তা করে। এজন্যই আমি মাকে আজ আসতে বারণ করেছি।"

মণিকার বুক কেঁপে যায়। এই যে ভাবতাম, জীবন এখন রঙিন ছাতার ছায়ায়, তা কি নয়? হয়ত এতদিনের বন্ধু বলে মুখের উপর যে ছায়া পড়ল সেটা পিউর চোখ এড়ায়নি। 

- "ওহ মামনি, ঘাবড়ে যাওয়ার মতো কিছু না। তবে সব কথা তো হাটের মাঝখানে করা যায় না। একটু নিজেদের কথা থাকে তো। নাও চা টা খাও তো।"

- "হুঁ, খাচ্ছি। তুই বল।" মণিকা এখনও কোনও ইশারা পায়নি, তাই টেনশনটা কমছে না। 

- "শোনো না, পরশুদিন গোপা কাকিমা বললেন না, লিলির জন্য ছেলে খুঁজছেন। আমার তো জানো ওকে খুব ভালো লাগে। খালি খালি মনে হত ভাইয়ের সঙ্গে যদি ওর বিয়ে হত, কেমন মজা করে থাকতাম সবাই একসঙ্গে। তা আমি পরশু রাতে ভাইকে শুধু বলেছিলাম ওর বিয়ের ঠিক হচ্ছে। ভাবতে ছেড়ে দিয়েছিলাম। কাল আবার ধরলাম। আমার মনের ইচ্ছেটা বলতেই দেখি বাবু রাজি। বলল, মায়ের যা ইচ্ছে সেটাই হবে। ও মামনি, তুমিও তো লিলিকে এত ভালবাসো। সামনাসামনি এত বছর আছি। ও বউ হয়ে এলে তুমি রাজি? আর যদি রাজি না হও এটা নিয়ে যে আমাদের মধ্যে কথা হয়েছে, কেউ জানবে না। সেজন্যই মাকেও বারণ করেছি আজ তোমার কাজ আছে বলে। এক্ষুণি উত্তর না দাও, একবার ভেবে দেখো না মামনি।"

মুখোমুখি বাড়িতে থাকে গোপারা। সমরেন্দ্র করগুপ্ত আর তার স্ত্রী গোপা, দুই মেয়ে লিলি আর মিলি। ন বছর আগে জমি কিনে বাড়ি করেছিলেন। রেলের চাকুরে সমরেন্দ্র বেশ বলিয়ে কইয়ে লোক। মাসছয়েকের মধ্যে চায়ের দোকানের আড্ডা থেকে শীতলা পুজোর চাঁদা পর্যন্ত সবেতেই ঢুকে গেলেন। এই ফাঁকে পাড়ার গিন্নীদের সঙ্গে ভাবসাব করে নিলেন গোপা। আড্ডা গল্প, সিনেমা দেখা, সব মিলিয়ে গোপারও দলবল হয়ে গেল। মণিকার সঙ্গেই দেখা সাক্ষাৎ একটু কম হত, ওর অফিসের জন্য। তবে সেটুকু পুষিয়ে গেল মুখোমুখি বাড়ির কল্যানে। মণিকার জীবনেও গোপার এই আমুদে স্বভাবের ছাপ পড়ল। নিজের মেয়ে নেই, ভাইঝিদের সঙ্গে কয়েকমাস পরপর দেখা হয়। সেই জায়গাটা নিয়ে নিল বছর পনেরোর লিলি আর বছর বারোর মিলি। আর পিউর সঙ্গে তো আলাদাই কেমিস্ট্রি তাদের। 

তবে কখনোই বনি রনির সঙ্গে বিশেষ ভাবসাব ছিল না মেয়েদের। তাই একেবারে বিয়ের প্রস্তাব, যদি ওরা অসন্তুষ্ট হয়? এদিকে পিউর কথা একদম ঠিক। হলে এর চেয়ে ভালো হয় না। 

- "কি ভাবছ মামনি? তোমার কি ইচ্ছে নেই? তাহলেও আমাকে বলো।" এবার উদ্বেগ পিউর গলায়। 

- "না রে। তোর কথাই ঠিক। আমি ভাবছি ওরা যদি কিছু মনে করে। বনি কি বলছে?"

- "ওর তো কবে থেকে ইচ্ছে। আমি তো প্রথম মাথায় আসতেই বলেছি। সেই থেকে আমাদের ইচ্ছে। ভাইকে বিয়ের কথা যতবার তুলেছি, ও আরও কিছুদিন পর বলে পিছিয়ে যায়। আমরা তো টেনশন করতাম এই ফাঁকে লিলি না কিছু ঠিক করে ফেলে।" ফিক করে হেসে ফেলে পিউ, মনিকাও হাসে। 

- "যত তাড়াতাড়ি হয় গোপার সঙ্গে কথা বলব চল। আজ তোর জ্বর, কাল দেখা করব।"

- "মামনি, কাল বলে কিছু হয় না। তুমি আজকেই যাও। বরং আমি না যাওয়াই ভাল। আমি ছোট। গোপা কাকিমা তোমার সঙ্গে সমানে সমানে কথা বলতে পারবে।"

মণিকার চোখে জল আসে, পিউ যতটা বুঝদার, নিজের পেটের মেয়ে থাকলেও কি এতটা হত? 

চলবে