জঙ্গলের প্রহরী
পর্ব - ৮
💖❤💖❤💖❤💖
গাড়ি থেকে নেমে সবাই শুক্লাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে কলকল করায় বোঝা গেল, এরা সব শুক্লার বন্ধু, গেস্ট। কলকল করে সবাই একসঙ্গে বলছে, "উফ কি লেট করল ট্রেন", "তোদের লোকাল রুটের ট্রেন তো আরেককাঠি", " হ্যাঁ লোক না হলে চলবে না ধর্মতলা রুটের বাসের মতো "।
মেয়ে দুটি এবং একটি ছেলে বকবক করে যাচ্ছে, শুক্লার চোখমুখও বেশ ফ্রেশ হয়ে গেছে এদের দেখে। একহাত তুলে সবাইকে থামিয়ে বলে, "ব্যস ব্যস, খুব কষ্ট হয়েছে জানি এই পাহাড় জঙ্গলে আসতে। এবার একদম বাড়ি। খেয়েদেয়ে বিশ্রাম।"
পঞ্চম ব্যক্তি এতক্ষণে মুখ খোলে, "তোমার তো চোট লেগেছে ! কি করে হল?"
- "আর বোলোনা রাজীবদা, এই এক্ষুণি পড়ে গেলাম। ঠিক আছে, বেশিকিছু লাগেনি।"
- "লাগেনি বললে হবে, এসো।" রাজীবের গলায় অর্ডারের সুর।
শুক্লার কনুই ধরে খুব যত্ন করে ওকে নিয়ে যায় ওর দুই বান্ধবী। শুক্লা মিষ্টি হাসে অন্যদের দিকে তাকিয়ে, "আমি আসি হ্যাঁ? এই যে আমার স্যার," হাত তুলে রাজীবকে দেখায়, "বাকিরা আমার বন্ধু।"
শুক্লা রওনা দিয়েছে, সিদ্ধার্থ তাড়াতাড়ি আবার ফোনটা এগিয়ে দেয়, "আপনার ফোন রয়ে গেল।" রাজীব ফোনটা নিয়ে নেয়। সিদ্ধার্থ আবার বলে, "মিস গোস্বামী, টিটেনাসটা..... "
মাছি তাড়ানোর মতো হাত নাড়ে রাজীব, "টিটেনাস দিতে হবে কিনা আমি দেখে নেব। এখন আমি এসে গেছি, আমিই সব দেখে নেব। ফোনটা কুড়িয়ে পেয়ে ফেরত দিয়েছেন,থ্যাংকস। আপনি এবার আসুন।" শুক্লার হাত ধরে চলে গেল ওরা।
❤💖❤💖❤💖❤
সিদ্ধার্থ পকেট হাতড়ে সিগারেটের প্যাকেট বের করে, খালি। পরম আক্রোশে দুমড়ে মুচড়ে ছুঁড়ে ফেলে ঢালের দিকে। পরমুহুর্তেই চরম অনুশোচনা হয়, পাহাড় এভাবে নোংরা করতে নেই। হাত কুড়ি দূরে গিয়েই পড়ে গেছিল হালকা প্যাকেটটা, এগিয়ে গিয়ে তুলে আনে, পকেটে রাখে। বাড়ি ফিরে বা রাস্তায় ময়লা ফেলার জায়গায় ফেলবে।
শুক্লাকে স্থানীয় লোকেদের যত্ন করা ও দেখেছে, ওর বন্ধুরাও নিশ্চয়ই ভালোবাসে। রাজীব, এই স্যারও নিশ্চয়ই শুক্লাকে স্নেহ করে। সেটাই স্বাভাবিক। দল বেঁধে যখন শুক্লার বাড়ি বেড়াতে এসেছে এরা।
সিদ্ধার্থ ভাবে, "তা বলে আমাকে এভাবে নস্যাৎ করার কি আছে? শুক্লার বাড়ি, পড়াশোনার জায়গা, বন্ধুবান্ধব সবকিছু নিয়ে একটা সেটলড জগৎ আছে। সব মানুষেরই এরকম নিজস্ব বৃত্ত থাকে। কিন্তু তাদের সঙ্গে নতুন পরিচিত কেউ কি কথা বলতেও পারে না? তাদের ব্যথা বেদনায় চিকিৎসার কথাও বলতে পারে না?"
সিদ্ধার্থর মনে পড়ে শুক্লা ওকে দেখতেই হাত নেড়েছিল, কথা বলেছিল। কি যে হয়ে গেল বেচারি পড়ে গিয়ে ! আর বন্ধুরা এসে যেতে তো.......। তবুও যাওয়ার আগে বিদায় নিয়েছিল। রাজীবই মূলতঃ পাত্তা দিল না ওকে।
এসব ভাবতে ভাবতেই ফিরে তাকায় একটু আগেই শুক্লা যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল সেখানে। তখনই দেখে, শুক্লার জুতো পড়ে আছে।
জুতো পরতে পারবে না বলে সঙ্গে নিতে ভুলে গেছে শুক্লা, অন্যরাও হয়তো খেয়াল করেনি। সঞ্জয়কে ডেকে সিদ্ধার্থ বলে, "এখানের কেউ যদি জুতোটা পৌঁছে দিতে রাজি থাকে, তাকে দিয়ে আসতে বলো। আর শোনো," একশো টাকা ওর হাতে দিয়ে বলে, "যে যাবে তাকে দিয়ে দাও।"
পাঁচ মিনিট পর সঞ্জয় মহিলাদের সঙ্গে কথা বলে ফিরে আসে, "ওরা দিয়ে দেবে স্যার। আর টাকা নিতে কিছুতেই রাজি হলনা, ধরুন। এরা দিদিমনিকে খুব ভালবাসে। এখন জমিদার বাড়ি যাব?"
- "নাহ বাড়ি চলো, মাথাটা ধরেছে। সিগারেটও শেষ। তুমি বরং একপ্যাকেট সিগারেট নিয়ে নাও। ঋষি, এখন একটা সিগারেট দে তো।" ঋষি নিজের প্যাকেটটা দিয়ে চুপচাপ গাড়ির পিছনে উঠে পড়ে।
বাংলোয় ফিরে ওরা রান্নায় লাগে ঝটপট। সন্ধ্যায় বাইরে ঘোরা যাবে না চিতাবাঘের খবর না পাওয়া অবধি। খেয়ে নিশ্চয়ই সিদ্ধার্থ আবার বেরোবে, তাড়াতাড়ি বেরোতে হবে। তাই টিপকাকে হেল্প করতে বলে ঋষিই রান্না করে, মুরগির মাংস আর ভাত।
প্রথমে স্নান করে খেতে বসে সব। নদী থেকে পাম্প করে জল আসে সরকারী বাংলোগুলোয়। স্নান করে খেয়েও মাথা ধরা ছাড়েনি সিদ্ধার্থর। জানালায় দাঁড়িয়ে সিগারেট খেতে খেতে দূরের পাহাড় জঙ্গল দেখছিল। ঐ জঙ্গলের ভেতর এই মুহূর্তে কি হচ্ছে জানার উপায় নেই ওর। অথচ শাক্য সবটাই জানতে পারছে। উঃ এই লোকটা, শাক্য, একে কি করে সাইজ করা যায়?
সকালে মৃত লোকটির রিপোর্ট আসার পর ওকে ডিআইজির ডেকে পাঠানো থেকে সবটাই ভাবছিল পরপর, শাক্য, ওদের বাংলো, শুক্লা বই পড়ছিল। ওহ হো, মনে পড়ে বইটার কথা। গাড়িতেই রয়ে গেছে, নামার সময় মনে ছিল না।
সিগারেটটা ফেলে দিয়ে বেরিয়ে আসে ও, বাংলোর সামনে আড্ডা দিচ্ছে ঋষি আর সঞ্জয়। ওকে দেখে বলে, "বেরোবো স্যার?"
- "নাহ, তিনটে বাজে, বেলা পড়ে আসছে। আর বেরোবো না। সঞ্জয় বাড়ি চলে যাও। গাড়ির চাবিটা দাও তো। একটা বই আছে গাড়িতে।"
[ ❤ শুক্লার কাছে যারা এল, তারা কি তদন্তের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে? রাজীবের করা অপমান সিদ্ধার্থ কিভাবে নেবে? শুক্লার দেওয়া বইতেই বা কি পাবে সিদ্ধার্থ?
❤ জানা যাবে পরের পর্বে। অনেক ধন্যবাদ এই পর্বটি পড়ার জন্য। আপনার মতামতের অপেক্ষা করছি। দয়া করে মন্তব্য করে জানাবেন। ]
চলবে