Read Mission Indiana - 2 by Bishwadeep Mukherjee in Bengali Science-Fiction | মাতরুবার্তি

Featured Books
  • LOVE UNLOCKED - 7

    Love Unlocked :7Pritha :আবির গাড়িটা এনে দাঁড় করালো সিংহ রা...

  • হরিচাঁদের আশীর্বাদ

    নদীর পাড় ঘেঁষে ছোট্ট গ্রাম—ঠাকুরনগর। সকালের কাক ডাকছে, মাঠে...

  • Mission Indiana - 2

    মিশন ইন্ডিয়ানা**************পর্ব - 2************Truth About...

  • ঝরাপাতা - 14

    ঝরাপাতাপর্ব - ১৪- "ইয়েস, শ্রেয়ান সরকার। মিঃ শ্রেয়ান, যদি...

  • জঙ্গলের প্রহরী - 14

    জঙ্গলের প্রহরীপর্ব - ১৪সিদ্ধার্থ আর ঋষির কাছে এসে দাঁড়ায় শ...

বিভাগ
শেয়ারড

Mission Indiana - 2

মিশন ইন্ডিয়ানা
**************
পর্ব - 2
************
Truth About The Mission
***************************

ছোট-ছোট পাথরের টুকরো চারিদিকে। ভালো করে তাকালে বেশ কিছুটা দূরে বড়-বড় পাথরের চাঁই দেখা যাচ্ছে। সেই পাথরের চাঁই গুলো কোথাও-কোথাও গিয়ে এতই বড় হয়ে গেছে যে সেগুলোকে পাহাড় না বললে চলে না। পাথরের রং অনেকটা গাঢ় কফির মত। বেশ কিছুটা দূরে নদীর মত কী যেন একটা বয়ে চলেছে। সে দিকে এগোবার সিদ্ধান্ত নিলো নীহারিকা। দ্রুত পায়ে সেদিকে এগোতে যাবে, ঠিক সে সময়ে কে যেন তাকে বললো - 'নীহারিকা! আমাদের বেরোতে হবে। আর রিস্ক নেওয়া যাবে না। এর আগে আমরা বড় কোনো বিপদের সম্মুখীন হই, আমাদের এখান থেকে চলে যাওয়া উচিত।'
নীহারিকা ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনের দিকে তাকালো। ইতিমধ্যেই তাদের স্পেসশিপ স্ট্রাট হয়ে গেল। 
কেউ একজন বললো - 'নীহারিকা! তাড়াতাড়ি।আমরা বেরোবো।'
মন না চাইতেও নীহারিকাকে নিজের স্পেসশিপের দিকে এগোতে হলো। হঠাৎ নীহারিকার মনে হলো তার পিছন থেকে কেউ যেন দ্রুত গতিতে তার দিকে এগিয়ে  আসছে। নীহারিকার পিছন ফিরে তাকাবার সাহস হলো না। স্পেসশিপ থেকে বারবার আওয়াজ আসছে - 'নীহারিকা! আরো জোরে দৌড়োও। আরো জোরে।'
নীহারিকা দেখলো স্পেসশিপের মুখ্য দরজা থেকে সপ্তর্ষি হাত বাড়িয়ে আছে তার দিকে। চিৎকার করছে সপ্তর্ষি - 'নীহারিকা, নীহারিকা!'
হঠাৎ নীহারিকার মনে হলো কেউ যেন তার ঘাড়ের উপর লাফ দিলো। নীহারিকার মুখ থেকে এক বিকট আর্তনাদ বেড়িয়ে এলো। আর.... আর নিজের দু চোখ খুলে তাকালো নীহারিকা। মুখের মধ্যে বিকট এক ভয়ের ছাপ। বিছানায় উঠে বসলো নীহারিকা। সময় দেখলো, ভোর পাঁচটা বাজে। 

********************************

তনুশ্রী তৈরি হয়ে গেছে। ছাত্রী হিসেবে আজ তার প্ৰথম দিন। মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার আগে থেকেই নিজের জীবনের একটা লক্ষ্য বানিয়ে নিয়েছিল সে। তনুশ্রী আ্যসট্রনট হতে চায়। গতকাল রাতে নিজের বাবার সাথে হোটেল রিভার ভিউ তে গিয়েছিল তনুশ্রী। অনেক কাছ থেকে দেখতে পেয়েছিল নীহারিকাকে। তার সাথে কথা বলার অনেক ইচ্ছে ছিল, কিন্তু বলতে পারেনি। নিজের পাঠ্য বইয়ে কল্পনা চাওলার বিষয় পড়েছে তনুশ্রী। "কলাম্বিয়া ডিজাস্টার"এর বিষয় তনুশ্রীর পড়া আছে। শুধু কলাম্বিয়া ডিজাস্টার নয়, বেশ কিছু ডিজাস্টার ঘটেছে। কিন্তু সেই ঘটনা গুলোকে উপেক্ষা করে মহাকাশচারিদের মধ্যে নিজের নাম লেখাতে চায় তনুশ্রী। 
তনুশ্রীর বাবা মিস্টার ইন্দ্রজিৎ মজুমদার এক বড় শিল্পপতি। শুধু এই দেশেই নয়, বরং বিদেশেও ছড়িয়ে আছে তার ব্যবসা। গত রাতের পার্টিতে ইসরোর দিক থেকে নিমন্ত্রণ পেয়েছিলেন তিনি। এটা বলাই বাহুল্য যে তাকে এবং তার মত বেশ কিছু বড় শিল্পপতিকে নিমন্ত্রণ করার পিছনে ইসরোর নিজেরও স্বার্থ আছে। কিছু বছর আগে দেশের প্রধানমন্ত্রীর সাথে ইসরোর প্রতিটি উইংএর চিফের মিটিং হয়। সেখানেই দেশের প্রধানমন্ত্রী জানান যে ইসরো চাইলে দেশের বড়-বড় শিল্পপতিকে ফান্ডিংএর জন্য আমন্ত্রণ জানাতে পারে। একটা ম্যান মিশন করতে বহু অর্থের প্রয়োজন। ইসরো নিয়মিত এখন ম্যান মিশন করতে চায়। সেক্ষেত্রে সরকারের পক্ষে সব সময় ইসরোকে অর্থ দিয়ে সাহায্য করা সম্ভব না। যদি কোনো বড় বিজনেসম্যান এগিয়ে আসে, তাহলে ইসরো পক্ষে নিয়মিত ম্যান মিশন করা অনেক সহজ হয়ে যাবে। মিস্টার ইন্দ্রজিৎ মজুমদারের সাথে গত রাতে এ বিষয়ে প্রথম বার কথা হয়েছিল চিফ মিস্টার ভৌমিকের। কিন্তু একবার কথা হওয়া যথেষ্ট নয়। দুদিন পর আবার একটা মিটিং হওয়ার সম্ভাবনা আছে দুজনের মধ্যে।
তনুশ্রী তৈরি হয়ে গেছে। খুবই উৎসাহিত আজ সে। "স্পেস সাইন্স এন্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট" নামের ইসরোর একটা ট্রেনিং সেন্টার আছে দেশের অনেক জায়গাতেই। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার পর তনুশ্রী সেখানকার ফর্ম ভরেছিল। আগে তাকে লিখিত পরীক্ষা উত্তীর্ণ করতে হয়, তারপর সাক্ষাৎকারে জন্য তার ডাক আসে। প্রায় এক সপ্তাহ আগে তার কাছে এডমিশন লেটার আসে। মিস্টার মজুমদার নিজের মেয়েকে বলেছিলেন যে অফিস যাওয়ার সময় তাকে ইনস্টিটিউটে ছেড়ে দেবেন। নিজের উৎসাহকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলো না তনুশ্রী। আগেই সে গাড়িতে গিয়ে বসে পড়েছে। নিজের স্বপ্নপূরণের দিকে এক ধাপ এগিয়ে যাওয়ার সময় এসে গেছে।
'বাবা, তুমি কি সত্যি ইনভেস্টমেন্ট করবে?' গাড়ির পিছনের সিটে বসে নিজের বাবাকে প্রশ্ন করলো তনুশ্রী। তার বাবাও বসেছিলেন পিছনের সিটেই। 
'এখনো কিছু ঠিক করিনি। আগে মিস্টার ভৌমিকের সাথে ভালো করে মিটিং হোক।' বললেন মিস্টার মজুমদার। 
'আমার কী মনে হয় জানো বাবা? আমার মনে হয় আমাদের দেশের ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্টদের ইসরোর হেল্প করা উচিত। এমন তো বিদেশেও হয়। নাসা'কেও ফান্ডিং করার জন্য বহু ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট এগিয়ে এসেছে। নাসা তো এখন প্রায় প্রত্যেক মাসে একবার করে ম্যান মিশন করে। দশ দিন আগেই নাসা মার্সে একটা ম্যান মিশন করলো। তারা তো এখন মার্সে টেরাফরমিং করার বিষয়ও ভাবছে। জাস্ট ইমেজিং বাবা, আজকের দিনে সাইন্স কতদূর এগিয়ে গেছে। আজ আমরাও মুনে ম্যান মিশন করেছি, মার্সে মিশন করেছি। এমন কি আমরা টাইটানেও চলে গেলাম। বাবা, এখন যদি তোমাদের মত ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট এগিয়ে আসে, আহলে ভাবো আমাদের দেশ আরো কত দূর এগোতে পারে। আমি স্পেস সাইন্সে আমাদের দেশকে সব থেকে উপরে দেখতে চাই বাবা।'
মিস্টার মজুমদার কিছু বললেন না। নিজের মেয়ের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন। 

********************************

অফিসে ঢুকেই নীহারিকা সপ্তর্ষিকে সঙ্গে নিয়ে আর্কাইভের দিকে এগিয়ে গেল। 
'তোর কি মনে হয় নীহারিকা যে আমরা এখান থেকে আদৌ কিছু পাবো?' জিজ্ঞাসা করলো সপ্তর্ষি। 
'জানি না রে। তবে চেষ্টা করে দেখতে ক্ষতি কী? আমরা মিস্টার বর্মন থেকেও কিছু ইনফরমেশন পেতে পারি।' বললো নীহারিকা।
'মিস্টার বর্মন মানে, দেবরাজ বর্মন? কিন্তু এই সময় তিনি থাকবেন নাকি আর্কাইভে। নীহারিকা, আজ থেকে ট্রেনিং সেশন শুরু হবে। বিল্ডিং নাম্বার টু-এ  দেখলি না কত স্টুডেন্টদের ভিড়। তাদের ট্রেনিং দেবেন মিস্টার বর্মন। তুই এটা কেন ভুলে যাস নীহারিকা যে দেবরাজ বর্মন শুধু আর্কাইভ হেড না, তিনি একজন ট্রেনারও বটে। সেক্ষেত্রে ওই খিটখিটে বুড়িটা থাকবে আর্কাইভে, মিসেস শ্রীবাস্তব। উফ! বিরক্তিকর।'
নীহারিকা নিজের ইলেক্ট্রনিক আই কার্ড দরজার পাশে গেট এন্ট্রিতে অল্প করে স্পর্শ করালো। নিমেষের মধ্যে মোটা কাঁচের দরজাটা দু ফাঁক হয়ে খুলে গেল। বিশাল বড় একটা ঘর। ঘরের দেওয়াল ঘেঁষে বড় রকম একটা টেবিল পাতা আছে। টেবিলের উপর সারিবদ্ধ করে রাখা আছে বেশ কিছু কম্পিউটার। ঘরের মাঝামাঝি গোল করে একটা সোফা রাখা আছে। মাঝে-মাঝে বড়-বড় অফিসারদের মিটিং হয় এখানে। ঘরের এক কোণায় এক টেবিলের পিছনের চেয়ারে বসে আছেন মিসেস ঊষা শ্রীবাস্তব। মধ্যবয়স্ক মিসেস শ্রীবাস্তব এখানে দেবরাজ বর্মনের সহকারী হিসেবে কাজ করেন। কোনো অজ্ঞাত কারণে তার মেজাজ প্রায় সর্বক্ষণই একটু হলেও গরম হয়ে থাকে। মিস্টার বর্মন থাকলে সুবিধে হয়। বেশ মিশুকে তিনি। তাকে যদি মিশন ইন্ডিয়ানা'র বিষয় কিছু জিজ্ঞাসা করা হতো, তাহলে হয়তো তিনি ভালো ভাবেই উত্তর দিতে পারতেন। এর সব থেকে বড় কারণ হলো, যে সময় "ইন্ডিয়ানা" নামের স্পেসশিপের টাইটানের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু হয়, সে সময় মিস্টার বর্মন ইসরোতেই কাজ করতেন। কিন্তু নীহারিকা আর সপ্তর্ষির কপাল খারাপ। এখন বেশ কিছুদিন দেবরাজ বর্মনের দেখা পাওয়া খুব কঠিন। 
'কী চাই তোমাদের?' নিজের কর্কশ গলায় মিসেস শ্রীবাস্তব জিজ্ঞাসা করলেন নীহারিকা এবং সপ্তর্ষিকে। 
'আমাদের কিছু ইনফরমেশন চাই ম্যাডাম।' মিসেস শ্রীবাস্তবের দিকে এগিয়ে গেল নীহারিকা। 
'কী বিষয়ে?' মিসেস শ্রীবাস্তবের পরের প্রশ্ন। 
'আমাদের মিশন ইন্ডিয়ানা'র বিষয় কিছু ইনফরমেশন দরকার ছিল। কাইন্ডলি বলবেন এখানে কোন কম্পিউটারে পাবো ওই ইনফেকশন?' এবার সপ্তর্ষি বললো। 
মিশন ইন্ডিয়ানা'র নাম শুনতেই ভ্রু কুঁচকে গেল মিসেস শ্রীবাস্তবের। সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকালেন নীহারিকা এবং সপ্তর্ষির দিকে। 
'ক'দিন ধরে কাজ করছো তোমরা এখানে?' জিজ্ঞাসা করলেন মিসেস শ্রীবাস্তব। 
নীহারিকা এবং সপ্তর্ষি দৃষ্টি বিনিময় করলো একে অপরের দিকে। 
'চার বছর।' এক সাথে উত্তর দিলো তারা। 
নাকে ঝুলে থাকা চশমাটা চোখের উপর উঠিয়ে মিসেস শ্রীবাস্তব বললেন - 'বেশ তো অনেক দিনই হলো এখানে কাজ করছো। এখনো এটা জানো না যে ইসরোর কিছু কোনফিডেন্সিয়াল সাবজেক্ট আছে, যার বিষয় ইয়ারো কোনো দিন কারোর সাথে চর্চা করতে চায় না। ওই কোনফিডেন্সিয়াল সাবজেক্ট গুলোর মধ্যে একটা হলো মিশন ইন্ডিয়ানা।'
'সেটা আমি জানি মিসেস শ্রীবাস্তব। খুব ভালো করেই জানি। কিন্তু ওই মিশনের বিষয় জানা আমার পক্ষে খুব দরকার। আপনি হয়তো জানেন মিসেস শ্রীবাস্তব, ওই মিশনে অনেক রহস্য লুকিয়ে আছে। সেই রহস্যভেদ করা খুব দরকার।'
কথা গুলো নীহারিকা বলছিল। পাশে দাঁড়ানো সপ্তর্ষি তার পিঠে অল্প করে চিমটি কাটলো, ঠিক যেন নীহারিকাকে চুপ করতে বলছে সে। ইতিমধ্যেই নীহারিকার দিকে কটকটিয়ে তাকিয়ে আছেন মিসেস শ্রীবাস্তব। 
'আমি এসবের কোনো ইনফরমেশন দিতে পারবো না নীহারিকা। তোমার যদি জানার এতই ইচ্ছে তাহলে চিফের সাথে কথা বলতে পারো। এবার তোমরা যাও এখান থেকে।'

********************************

'আমি তো তোকে বলেছিলাম নীহারিকা, ওখানে গিয়ে লাভ নেই। মিশন ইন্ডিয়ানা'র বিষয় কোনো রকমের তথ্য পাওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব না। আমার মনে হয় না যে, দেবরাজ বর্মন কেও জিজ্ঞাসা করলে সেও কিছু বলতে পারতেন। তিনি হয়তো জানেন অনেক কিছুই, কিন্তু বলতেন না কিছুই। এই ম্যাটারটা কতটা কোনফিডেন্সিয়াল সেটা হয়তো এবার তুই বুঝতে পারছিস। তুই বরং যেই কাজটা আগে করা দরকার, সেটা কর। আমাদের সাথে যা কিছু ঘটেছে, সেগুলো চিফকে জানা।' কথা গুলো প্রায় এক নিঃশ্বাসে বলে গেল সপ্তর্ষি। 
সপ্তর্ষি আর নীহারিকা এখন অফিসের ক্যাফেটেরিয়াতে বসে আছে। দুজনের সামনেই একটা করে কাঁচের কাপে কফি ভরা। কফি খাওয়ার দিকে মনোযোগ কারোর নেই। নীহারিকা শূন্যের দিকে তাকিয়ে আছে। 
'তোর মনে আছে সপ্তর্ষি, আমরা কিছু মোর্স কোড পেয়েছিলাম?' বললো নীহারিকা। 
'হ্যাঁ মনে আছে। সেটাকে ডিকোর্ডও করা হয়েছিল।'
'সেই ডিকোর্ডটা কোথায়?' 
'আমার কাছেই আছে।'
নীহারিকা চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। 
'দে আমায়।'
'এখন?' জিজ্ঞাসা করলো সপ্তর্ষি। 
'হ্যাঁ সপ্তর্ষি, ওটা আমার এখনই দরকার। আমাকে ওটা নিয়ে চিফের কাছে যেতে হবে।'

********************************

দেবরাজ বর্মনের বয়স ষাট ঊর্ধ্বে। তিনি এখন ইসরোর ইস্ট্রান উইংএর আর্কাইভ ইনচার্জ এবং একই সাথে ট্রেনারও। যারা নতুন ট্রেনিং নিতে আসে, তাদের তিন বছরের কোর্সে বেশিরভাগ থিওরি মিস্টার বর্মন পড়ান। চেহারায় একটা আভিজাত্য আছে সেটা বলাই বাহুল্য। মুখ ভর্তি সাদা চাপচাপ দাড়ির সাথে চোখে সোনালী রঙের স্টিল ফ্রেমের চশমাটা বেশ মানিয়েছে। নিজের নতুন স্টুডেন্টদের দিকে তাকিয়ে তিনি বলছেন - 'তোমরা স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসো। শুধু দেখতেই না, বরং নিজের স্বপ্নকে সার্থক করতেও মরিয়া তোমরা। তাই আজকের দিনে তোমরা সবাই এক সাথে এখানে উপস্থিত হয়েছো। আমারও দেখে ভালো লাগে। প্রতি বছর এখানে এত স্টুডেন্ট আসে। তাদের আমরা ট্রেনিং দিই। তারপর তোমার সবাই কেউ টেকনিক্যাল দিকে চলে যাও, আবার কেউ আ্যসট্রনট হয়ে মহাকাশের যাত্রা করো। আমার মনে পড়ে সেই সময়ের কথা, যখন এই ইনস্টিটিউটটা প্রথম খুলেছিল। আমরা ছিলাম প্রথম ব্যাচ। শুনলে হয়তো হাসবে তোমরা, সে সময় আমাকে নিয়ে ক্লাসরুমে মোট বারো জন ছাত্র ছিল। সেটাই এখন বেড়ে প্রায় একশোর কাছাকাছি। ভালো লাগে, এই উন্নতি দেখতে ভালো লাগে। আশা করি ভবিষ্যতে এর সংখ্যা আরো বাড়বে। আজ তোমাদের এখানে প্রথম দিন। তোমাদের তিন বছরের কোর্স। এই তিন বছরে প্রায় রোজই পড়াশোনা আর প্র্যাকটিক্যাল লেগেই থাকবে। কিন্তু আজ না। আজ আমরা ঘুরবো। আজ আমি তোমাদের দেখাবো মিউজিয়াম। আমাদের ইসরোর মিউজিয়াম। আমরা অনেক কাছ থেকে দেখতে পাবো বেশ কিছু স্পেসশিপ।'
হঠাৎ ছাত্রদের মধ্যে থেকে তনুশ্রী বলে উঠলো - 'স্যার, রিসেন্টলি টাইটান মিশন কমপ্লিট করা স্পেসশিপ "ভ্যালিয়েন্ট" কে আমরা কি দেখতে পাবো ওই মিউজিয়ামে?'
একটু হাসলেন মিস্টার বর্মন। বললেন - 'না, ওটা আমরা এখন দেখতে পাবো না। মিউজিয়ামে সেই স্পেসশিপ গুলো আছে, যে গুলো এই মুহূর্তে এখন কোনো মিশনে নিয়ে যাওয়া হয় না। তার মানে এটা নয় যে তার মূল্য আমাদের কাছে কমে গেছে। ওই স্পেসশিপ গুলোও একসময় অনেক কাজে এসেছে। আমাদের চাঁদে প্রথম ম্যান মিশন যেই স্পেসশিপে হয়েছিল, সেটাও আছে মিউজিয়ামে। এবার যাওয়া যাক।'
নিজের বক্তব্য শেষ করে মিস্টার বর্মন হল থেকে বেরিয়ে গেলেন। 

********************************
চিফ মৃত্যুঞ্জয় ভৌমিকের সামনে বসে ছিলেন ইসরোর প্রজেক্ট ম্যানেজার মিস্টার স্বর্ণাভ বিশ্বাস। মৃত্যুঞ্জয় ভৌমিকের চেম্বারটা বেশ বড়। চেম্বারের একদিক পুরো কাঁচ দিয়ে ঘেরা। বেশ কিছু পুরোনো স্পেসশিপের ছোট-ছোট মডেল সেই চেম্বারের সৌন্দর্যের শ্রীবৃদ্ধি করছে। মিস্টার ভৌমিকের চেম্বারটা চল্লিশ তলায়। কাঁচের দেওয়াল থেকে দেখা যাচ্ছে একটা খোলা মাঠ। ওই খোলা মাঠ থেকেই উড়ে যায় স্পেসশিপ মহাকাশের উদ্দেশ্যে। 
হঠাৎ মিস্টার ভৌমিক বলে উঠলেন - 'ঠিক বুঝলাম না মিস্টার বিশ্বাস। হঠাৎ নীহারিকা আমায় ফোন করে বললো যে, অত্যন্ত দরকারি কথা আছে। আমি যেন আপনাকেও ডেকে নিই। সে নাকি আমাদের দুজনকেই কথাটা বলতে চায়।'
'মিশনের বিষয় কোনো ইনফরমেশন দিতে চায় কি?' জিজ্ঞাসা করলেন মিস্টার বিশ্বাস। 
'কী করে বলবো বলুন। আমায় তো এর থেকে বেশি কিছুই বললো না নীহারিকা।'
একটু চুপ থেকে মিস্টার বিশ্বাস বললেন - 'স্যার, একটা প্রব্লেমের কোনো সল্যুশন বেরোলো না।'
'কোন প্রবলেম?'
অল্প একটু গলা পরিষ্কার করে মিস্টার বিশ্বাস বললেন - 'এই মিশনের বেশ আগে থেকেই আমি বলেছিলাম এই ব্যাপারটা নিয়ে। টাইটানের আ্যটমোসফিয়ার খুবই গাঢ়। পৃথিবীর তুলনায় অনেক বেশি। যার ফলে টাইটানে স্পেসশিপ ল্যান্ড করার পর সেটার সাথে আমাদের যোগাযোগ পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে। আর সেটাই হলো। ভ্যালিয়েন্টের টাইটানে ল্যান্ড করার পর কন্ট্রোলরুমের সাথে যোগাযোগ পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। যতক্ষণ আমাদের আ্যসট্রনটরা টাইটানে ছিল, তারা কী করেছে, না করেছে আমাদের কাছে সেটার কোনো ইনফরমেশন নেই। টাইটানের সব থেকে কাছে যে স্পেস স্টেশনটা আছে, যতক্ষণ না তারা সেখানে পৌঁছলো, ততক্ষণ আমরা কিন্তু কোনো ইনফরমেশন পেলাম না। স্পেস স্টেশনে পৌঁছবার পর নীহারিকা আমাদের সাথে কন্ট্যাক্ট করে। নীহারিকা এবং তার টিম আমাদের যা ইনফরমেশন দিয়েছে, সেটাই আমাদের মেনে নিতে হয়েছে। তারা টাইটান থেকে মাটি, পাথরের টুকরো ইত্যাদি নিয়ে এসেছে। কিন্তু যতক্ষণ তারা টাইটানের ভিতরে ছিল, ততক্ষণের ডিটেলস আমাদের কাছে কিন্তু নেই।'
'আপনি ঠিক কী বলতে চাইছেন আমি বুঝলাম না মিস্টার বিশ্বাস। হ্যাঁ, আমি জানতাম যে টাইটানে পৌঁছবার পর তাদের সাথে আর যোগাযোগ করা সম্ভব হবে না। কিন্তু আমাদের কাছে আর উপায় কী ছিল? টেকনিক্যাল টিম পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছিল যে এই মুহূর্তে তারা এমন কিছু টেকনোলজি আবিষ্কার করতে পারবে না যার ফলে টাইটানের ভিতর থেকেও যোগাযোগ করা যেতে পারে। এদিকে মিনিস্ট্রি থেকে বারবার তাড়া মারছিল। মিস্টার বিশ্বাস! আপনি কী বলতে চাইছেন, একটু খোলসা করে বললে ভালো হয়।'
'খোলসা করে আমি বলছি স্যার যদি ভিতরে আসার অনুমতি দেন।' দরজার কাছে দাঁড়িয়ে নীহারিকা বললো। 

********************************

সন্ধ্যা হয়ে এসেছে প্রায়। দেবরাজ বর্মন নিজের ছাত্রদের মিউজিয়াম ঘুড়িয়ে দিয়েছেন। ছাত্ররা এখন যে যার নিজের গন্তব্যে। ক্লাসরুম বন্ধ করে মিস্টার দেবরাজ বর্মন এগিয়ে যাচ্ছিলেন আর্কাইভের দিকে। তাকে লিফ্ট করে যেতে হবে। ক্লাসরুম বিল্ডিংএর বারো তলাতে আর আর্কাইভ কুড়ি তলায়। এক লম্বা করিডোর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন তিনি। হঠাৎ পিছন থেকে একজনের গলার আওয়াজ শুনতে পেলেন দেবরাজ বর্মন।
'মিস্টার বর্মন ! একটু কথা আছে আপনার সঙ্গে।'
থমকে দাঁড়ালেন মিস্টার বর্মন। ঘুরে দেখলেন পিছন ফিরে। তার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন চিফ মৃত্যুঞ্জয় ভৌমিক। মৃত্যুঞ্জয় এগিয়ে এলেন মিস্টার বর্মনের দিকে। 
'হ্যাঁ বলুন স্যার, কী বলবেন।' শান্ত গলায় মিস্টার বর্মন বললেন।
'কিছু ইনফরমেশন আমার চাই মিস্টার বর্মন। আশা করি আপনি সঠিক তথ্য দিয়ে আমায় সাহায্য করবেন। ইনফরমেশনটা আমি নিজের জন্য চাইছি না। আমি চাইছি আমাদের ভবিষ্যতের জন্য। হয়তো এই পৃথিবীর ভবিষ্যতের জন্য।'
মৃত্যুঞ্জয়ের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকালেন দেবরাজ বর্মন। বললেন - 'এমন কী গোপন ইনফরমেশন আমার কাছে আছে যেটা পৃথিবীর কাজে আসবে?'
'আছে মিস্টার বর্মন, আছে। আমি আপনার থেকে মিশন ইন্ডিয়ানা'র বিষয় পুরো ইনফরমেশন চাই।'
অদ্ভুত এক দৃষ্টিতে দেবরাজ বর্মন তাকালেন মৃত্যুঞ্জয়ের দিকে। 

ক্রমশঃ....