Read Mission Indiana - 3 by Bishwadeep Mukherjee in Bengali Science-Fiction | মাতরুবার্তি

Featured Books
  • LOVE UNLOCKED - 9

    Love Unlocked :9Pritha :পরিবর্তন! শব্দটা পাঁচ অক্ষরের হলেও জ...

  • ঝরাপাতা - 16

    ঝরাপাতাপর্ব - ১৬দোকানে অনেকক্ষণ শাড়ি নিয়ে নাড়াচাড়া করে শ...

  • তুমি পারবে - 3

    অধ্যায় - ৩                          ব্যর্থতা মানেই শেষ নয়শ...

  • অচেনা আলো - 1

    পর্ব – ১ : প্রথম দেখাকলেজে নতুন সেমিস্টারের প্রথম দিন। চারপা...

  • Mission Indiana - 4

    পর্ব - 4********Invitation***********গাড়ির ভগ্নস্তূপটা পড়ে আ...

বিভাগ
শেয়ারড

Mission Indiana - 3

মিশন ইন্ডিয়ানা
**************
পর্ব - 3
************
Flashback
************

রাত প্রায় আটটা বাজে। আসানসোল- কলকাতা জি টি রোডে বেশ জ্যাম লেগে আছে। বিশেষ করে দুর্গাপুর পেরিয়ে বর্ধমানের কাছাকাছি। এমন জ্যাম তো নিত্য লাগে, কিন্তু সেটা রাত এগোরটার পর। কিন্তু এগোরটা বাজতে এখনো বেশ দেরি। এখন থেকেই বেশ ভালো জ্যাম লেগে গেছে এই রাস্তায়। অর্ণবের গাড়িটাও ফেঁসে আছে এই জ্যামে। কিছু দিন আগেই অর্ণব টাইটান থেকে ফিরে এসেছে। "মিশন টাইটান"এর কো-পাইলট ছিল সে। বয়স বেশি না, আটাশ-ঊনত্রিশের কাছাকাছি। প্রায় দু বছর ধরে অদিতি নামের নিজের এক কলেজের বান্ধবীর সাথে সম্পর্কে আছে। তারা বিয়ে করতে চায় একে অপরকে। তাদের দুজনের বাড়ির লোকেদেরও কোনো আপত্তি নেই তাতে। অর্ণবের ইসরোতে চাকরি পাওয়ারও প্রায় চার-পাঁচ বছর হয়ে গেছে। এই চার-পাঁচ বছরে কো-পাইলট হিসেবে সে দুটো ম্যান মিশন করে নিয়েছে। একবার চাঁদে গেছে, একবার গেছে টাইটানে। এবার বিয়ের জন্য দুই বাড়ির পক্ষ থেকেই তাদের চাপ দেওয়া শুরু হলো। টাইটানে যাওয়ার আগে অর্ণবের মা তাকে বলে দিয়েছিল - 'এবার কিন্তু ফিরে আসার পর একেবারে ওদের বাড়ি গিয়ে পাকা কথা বলে আসবো। আর দেরি না। এমন ভাবে ফেলে রাখার তো কোনো মানে হয় না।' 
অর্ণব কোনো জবাব দেয়নি। আপত্তিও করেনি। 
আজ অর্ণব অফিস যায়নি। পার্টির পরের দিন ছুটি নিলো সে। তাকে নিজের পরিবার নিয়ে যেতে হবে আসানসোল। কারণ অদিতির বাড়ি সেখানেই। আসানসোল থেকে ফিরতে দেরি হয়ে গেল। অর্ণব আর অদিতির বিয়ে তারিখ ঠিক হয়ে গেছে। আসানসোল থেকে তারা ঠিক বিকেলের আগেই রওনা দিলো। কিন্তু বর্ধমানের কাছে এসেই তারা বিশাল জ্যামের সম্মুখীন হলো। গাড়ির চালকের আসনে অর্ণব নিজে বসেছিল। তার পাশে বসেছিল তার ছোট বোন শিপ্রা। পিছনের সিটে অর্ণবের মা ও বাবা। প্রায় ত্রিশ মিনিট এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকার পর তাদের গাড়ি এখন ধীর গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। স্পিডোমিটারের দিকে একবার তাকালো শিপ্রা। দেখলো তাদের গাড়ি এখন দশ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টার গতিতে এগোচ্ছে। মুখে একরাশ বিরক্তি নিয়ে সে বললো - 'এমন ভাবে চললে কাল সকালে বাড়ি পৌঁছাবো। সারা রাত গাড়িতেই থাকতে হবে।'
অর্ণব ইয়ার্কি করে বললো - 'কী করবো বল? বিজ্ঞান এখনো এতটা উন্নতি করেনি যে গাড়ি আকাশে উড়তে পারে। যেদিন বিজ্ঞান এত উন্নতি করবে, তোকে কথা দিচ্ছি আকাশে ওড়া গাড়ি আমি তোকে গিফ্ট করবো।'
'দাদা ইয়ার্কি মারিস না।'
পিছন থেকে অর্ণবের মা বলে উঠলেন - 'তবে যাই বল, অদিতির ফ্যামিলি কিন্ত খুব ভালো। মেয়েটাও যে এত ভালো একটা চাকরি করে, সেটা দেখে বোঝা যায় না। কতো সিম্পল।'
শিপ্রা বললো - 'বিয়ের পর বৌদির কপালে কষ্ট আছে।'
চমকে গেলেন অর্ণবের মা - 'এমন কেন বলছিস? যত সব অলুক্ষণে কথা।'
'ঠিকই বলছি মা। দাদা তো সব সময় হয়তো অফিসে না তো আকাশে।'
এবার অর্ণব বললো - 'শিপ্রা, ওটাকে আকাশ বলে না, মহাকাশ বলে। আর আমি মহাকাশে থাকলেও বা কী হয়েছে? তোরা তো আছিস বাড়িতে।'
'না বাবা! আমার কাছে বৌদিকে দেওয়ার মত অতো সময় নেই। নিজের কলেজ, 
পড়াশোনা নিয়েই ফুরসৎ পাই না।'
জ্যাম এবার অনেকটাই ছেঁটে গেছে। অর্ণব নিজের গাড়ির গতিও বাড়িয়ে দিয়েছে। 
'এবার মনে হয় সকালের আগেই বাড়ি পৌঁছে যাবো। কী বল শিপ্রা।'কথাটা বলে অর্ণব মুচকি হেসে একবার শিপ্রার দিকে তাকালো।
হঠাৎ অর্ণবের মোবাইল বেজে উঠলো। নিজের প্যান্টের পকেটে থেকে মোবাইলে বের করে অর্ণব দেখলো সপ্তর্ষি ফোন করেছে তাকে। 
'হ্যাঁ বল সপ্তর্ষি।'
'কলকাতা পৌঁছে গেছিস?' অপ্রান্ত থেকে সপ্তর্ষি জিজ্ঞাসা করলো।
'না রে। রাস্তায় জ্যাম ছিল খুব। এখন সবে বর্ধমান।'
'শোন যেটা বলছিলাম। আজ নীহারিকা চিফ আর মিস্টার বিশ্বাসকে সব বলে দিয়েছে। ইচ এন্ড এভারিথিং।' সপ্তর্ষি বললো। 
'ও! কী বললো চিফ সব শুনে?' জিজ্ঞাসা করলো অর্ণব। 
'চিন্তা, গভীর চিন্তা। নীহারিকা ওই মোর্স কোডটাও নিয়ে গিয়েছিল যেটা আমরা ডি কোর্ড করেছিলাম।'
'খুব ভালো করেছে নীহারিকা এটা। এতে অন্তত এটা তো ক্লিয়ার হলো যে, আমরা ভুল না। এবার আশা করা যায় যে চিফ কিছু একটা সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে।' অর্ণব বললো।
'হ্যাঁ, আশা তো করাই যায়। ঠিক আছে, এখন রাখছি। কাল অফিস আয় তখন কথা হবে।' কথা শেষ করে সপ্তর্ষি ফোন রেখে দিলো।
'কী হয়েছে রে বেটা?' অর্ণবের মোবাইলটা পকেটে রাখার পরমুহূর্তেই তার মা জিজ্ঞাসা করলেন। 
'কিছু নয় মা। আমাদের মিশনের বিষয় কথা বলছিল সপ্তর্ষি।'
রাস্তা বেশ অনেকটাই খালি। অর্ণব নিজের গাড়ির গতিও বাড়িয়ে দিয়েছে। হঠাৎ অর্ণবের চোখের সামনেটা কেমন ধোঁয়াশা হয়ে গেলো। সে কিছুই স্পষ্ট দেখতে পারছে না। হঠাৎ তার মনে হলো, সে যেন একটা স্পেসশিপের মধ্যে বসে আছে। তার পাশে বসে থাকা সপ্তর্ষি "নীহারিকা-নীহারিকা" বলে চিৎকার করছে। অর্ণব দেখলো নীহারিকা স্পেসশিপে নেই, সে বাইরে। সপ্তর্ষি অর্ণবকে "শিপ স্টার্ট করে রাখ" বলে মুখ্য দরজার দিকে ছুটে গেল। অর্ণব কিছুক্ষণ দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে বসে রইল। তার কানে ক্রমাগত সপ্তর্ষির গলার আওয়াজ আসছ। সপ্তর্ষি এখনো "নীহারিকা, নীহারিকা" বলে চিৎকার করে যাচ্ছে। অর্ণব হঠাৎ করে নিজের সম্বিৎ ফিরে পেল। স্পেসশিপ স্টার্ট করলো সে। অর্ণব দেখলো সামনে থেকে নীহারিকা ছুটে আসছে তাদের স্পেসশিপের দিকে। কিন্তু নীহারিকার পিছনে ওটা কী? কিছুই বুঝতে পারছে না অর্ণব। হঠাৎ নীহারিকা একটা পাথরের হোঁচট খেয়ে মুখ থুবড়ে মাটিতে পরলো। পরক্ষণেই অর্ণব দেখলো প্রায় ফাঁকা জি টি রোডে তাদের গাড়িটা এলোমেলো ভাবে ছুটে চলেছে। নিজের বাবা, মা, বোনের চিৎকার তার কানে এলো। অর্ণব লক্ষ্য করলো তাদের গাড়ির সামনে একটা বড় ট্রাক। ট্রাকের ঠিক পিছনে তাদের গাড়ি। এর আগে অর্ণব কিছু বুঝে উঠতে পারুক, তাদের গাড়িটা সজোরে গিয়ে ধাক্কা মারলো ট্রাকের পিছনে। একটা বিকট আওয়াজ ছড়িয়ে পড়লো চারিদিকে। 

********************************

কুড়ি তলায় খোলা আকাশের নিচে রেস্টুরেন্টেটা। আশেপাশে বেশ ভালোই ভিড়। মাঝে একটা গোল টেবিল, টেবিলের দু পাশে দুটো চেয়ারে বসে আছেন ইসরো চিফ মৃত্যুঞ্জয় ভৌমিক এবং দেবরাজ বর্মন। তাদের সামনে প্লেটে কিছু খাবার এবং একটি করে কাঁচের গ্লাসে হুইস্কি। হুইস্কিতে একটা চুমুক দিয়ে মৃত্যুঞ্জয় ভৌমিক বললেন - 'নীহারিকা যে মোর্স কোর্ডটা দেখালো, সেটা দেখে তো আমার এটাই মনে হলো মিস্টার বর্মন।'
মুচকি হেসে দেবরাজ বর্মন বললেন - 'আপনার অনেক কিছুই মনে হতে পারে মিস্টার ভৌমিক। তাবলে সে গুলোকে সত্যি মেনে নেওয়ার কোনো মানে হয় না। যেটা ত্রিশ বছর আগের কথা, সেটা নিয়ে এখন চর্চা করার তো কোনো মানে খুঁজে পাচ্ছি না আমি। মিস্টার ভৌমিক, আপনি এটা ভালো করেই জানেন যে, ওই ফাইলটাকে ইসরোর হেড অফিস থেকে ক্লোজ করে দেওয়া হয়েছিল।'
'জানি মিস্টার বর্মন। খুব ভালো করেই জানি। তাই তো অফিসিয়ালি কিছু করতে পারছি না আমি। আপনাকে আলাদা করে এখানে এসে জিজ্ঞাসা করার মানেটা হয়তো বুঝতে পারছেন আপনি। মিশন ইন্ডিয়ানা'র সময় যারা-যারা ইসরোর ইস্ট্রান উইংএ কাজ করতো, তারা এখন কেউ নেই, শুধু আপনাকে ছাড়া। আপনি সে সময়ে কন্ট্রোল রুমে টেকনিশিয়ান পদে নিযুক্ত ছিলেন। ইন্ডিয়ানা পৃথিবীতে ফিরে আসার পর সেই মিশনের সাথে যুক্ত সবাই কিছুই দিনের মধ্যেই কাজ ছেড়ে দেয়। তাদের আর খুঁজে পাওয়া যায় না। এমন কি স্পেসশিপ ইন্ডিয়ানা'র ক্যাপ্টেন দেবব্রত চৌধুরী এবং সে সময়ের ইসরো চিফ কুণাল গোস্বামীও কিছু দিনের মধ্যেই পদত্যাগ করেন। খবর পাওয়া গেছে বছর দুয়েক আগে কুণাল গোস্বামী দেহ ত্যাগ করেছেন। কিন্তু ক্যাপটেন দেবব্রত চৌধুরীর বিষয় কোনো খবর পাওয়া যায়নি। মিশন ইন্ডিয়ানা শেষ হওয়ার কিছু দিন পর আপনি ব্যাঙ্গালুরু যান, ইসরো হেড অফিসে। একবার নয়, বেশ কিছুবার আপনি সেখানে গেছেন। অতঃপর ব্যাঙ্গালুরু থেকে একজন বড় অফিসার এখানে আসেন এবং আপনাকে ইস্ট্রান উইংএর আর্কাইভ হেড বানিয়ে দেয়। এতে একটা কথা পরিস্কার বোঝা যাচ্ছে যে আপনি আর্কাইভ হেড হওয়ার জন্যই ব্যাঙ্গালুরু যাতায়াত করেছিলেন।'
মিস্টার দেবরাজ বর্মনের গ্লাস ততক্ষণে শেষ হয়ে গেছে। তিনি মন দিয়ে মৃত্যুঞ্জয়ের কথা গুলো শুনছেন। 
মৃত্যুঞ্জয় বলছেন - 'কিন্তু প্রশ্ন হলো, কেন? কেন আপনি টেকনিশিয়ান থেকে হঠাৎ আর্কাইভ হেড হওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠলেন? তাহলে কি সেই আর্কাইভে এমন কিছু আছে যেটা আপনি আগলে রাখতে চান?' 
দেবরাজ বর্মন খানিক খাবারে মনোযোগ দেওয়ার পর বললেন - 'মিস্টার ভৌমিক, যেটা হয়ে গেছে সেটা নিয়ে আলোচনা না করাই ভালো। পুরোনো কাসন্দী ঘেঁটে লাভ নেই।'
'লাভ আছে মিস্টার বর্মন, লাভ আছে। লাভ যদি না থাকতো তাহলে আমি এখন নিজের পরিবারের সাথে থাকতাম, আপনার সঙ্গে এখানে বসে মদ্যপান করতাম না। আপনাকে আগেও বলেছি, এটা শুধু আমার আর আপনার ব্যাপার না। এটা সম্ভবত পুরো পৃথিবীর ব্যাপার। আপনার ইনফরমেশনে যদি গোটা পৃথিবী অজানা বিপদ থেকে মুক্তি পায়, তাহলে ক্ষতি কোথায়? আপনি যদি এটা ভয় পাচ্ছেন যে, আপনার থেকে ইনফরমেশন পাওয়ার পর আমি হেড কোয়ার্টারে ইনফরমেশন লিক করাতে আপনার নাম উল্লেখ করবো, তাহলে আপনি ভুল ভাবছেন।'
দেবরাজ বর্মনের মেজাজটা একটু হলেও গরম হলো। নিজেকে যথা সম্ভব সংযত রেখে তিনি বললেন - 'কী ভুল, কী ঠিক সেটা আসল কথা নয় মিস্টার ভৌমিক। আসল কথা হলো সেই বীভৎস দিন গুলো মনে করা এবং যন্ত্রণা ভোগ করা। আমি ভোগ করেছি সেই যন্ত্রণা। যন্ত্রণা ভোগ করেছে তারা, যারা স্পেসশিপ ইন্ডিয়ানা তে ছিল। শুধু ক্যাপ্টেন দেবব্রত চৌধুরী নয় মিস্টার ভৌমিক, আরো অনেকেই ছিল ওই স্পেসশিপে। তারই মধ্যে একজন ছিল, অনুরাগ বর্মন। আমার নিজের ছোট ভাই। পাইলট ছিল ইন্ডিয়ানা'র। মিশন থেকে ফিরে আসার পর তার অবস্থা আমি দেখেছি। সহ্য করা যেত না। মিশন ইন্ডিয়ানা পুরোপুরি ভাবে ফেল করে গিয়েছিল মিস্টার ভৌমিক। পাঁচ জনের মধ্যে দুজন বেঁচে ফিরেছিল। দেবব্রত আর আমার ভাই অনুরাগ।'
কথাটা বলে একটু থামলেন দেবরাজ বর্মন। ততক্ষণে খালি পাত্র পুনরায় ভরে গেছে। সেটাকে এক নিশ্বাসে শেষ করে দেবরাজ আবার বলতে শুরু করলেন - 'ওটা একটা মর্মান্তিক মিশন ছিল। এমন মিশন ইসরো এর আগে কোনো দিন করেনি। এখনো আমরা এটা মনে করি, বাকি তিন জনের লাশ হয়তো এখনো টাইটানেই পড়ে আছে। হাড়-কঙ্কাল বেরিয়ে গেছে হয়তো। কিম্বা হয়তো সেটাও নেই। নীহারিকা মোর্স কোড থেকে যে ইনফরমেশনটা পেয়েছে, সেটা হয়তো ভুল না। কিন্তু ওই ইনফরমেশনের উপর ভিত্তি করে এগিয়ে যাওয়াতে অনেক বিপদ আছে। এর আগে যেটা হয়েছিল, সেটার দায়িত্ব পরোক্ষ ভাবে দেবব্রতর উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এবার যেটা ঘটবে, সেটার দায়িত্ব কে নেবে? আপনি নাকি ইসরো?'
মৃত্যুঞ্জয় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন - 'এবার এমন কিছুই ঘটবে না মিস্টার বর্মন। আমি কথা দিলাম আপনাকে। আমরা ব্যবস্থা  নেবো সেই রকম যাতে কারোর কোনো ক্ষতি না হোক। এর জন্য আমায় যদি প্রধানমন্ত্রীর সাথেও দেখা করতে হয়, আমি করবো।'
খানিক নিরবতার পর দেবরাজ একটা ওয়েটারকে ডেকে একফালি কাগজের টুকরো এবং একটা পেন আনতে বললেন। কিছুক্ষণ পরেই ওয়েটার সেটা নিয়ে হাজির হলো। কাগজের উপর একটা নাম এবং ঠিকানা লিখে দেবরাজ বর্মন মৃত্যুঞ্জয়ের দিকে এগিয়ে বললেন - 'দেবব্রতর ফোন নম্বর আমার কাছে নেই। এই ঠিকানাটা বেশ কিছু বছর আগের। গিয়ে দেখুন, যদি পেয়ে যান, তাহলে ভালো। তাকে যদি কনভিন্স করাতে পারেন, তাহলে আপনার কাজ হবে।'

********************************

রাতে ইন্দ্রজিৎ মজুমদারের বাড়ি ফেরার সঙ্গে সঙ্গেই তনুশ্রী তাকে সারা দিনের ঘটনা বলতে শুরু করলো। 
'আজ আমাদের ক্লাস হয়নি বাবা। আমার ট্রেনার মিস্টার দেবরাজ বর্মন আজ আমাদের সকলকে ইসরো মিউজিয়াম নিয়ে গিয়েছিল।'
ইন্দ্রজিৎ মজুমদার হাত মুখ ধুয়ে চা নিয়ে মেয়ের পাশে বসে তার গল্প শুনছিলেন। 
'জানো বাবা, কত কীই আছে ওই মিউজিয়ামে। পুরোনো পুরোনো কত স্পেসশিপ আছে। প্রথমবার কোনো স্পেসশিপ এত কাছ থেকে দেখলাম। ইসরো চাঁদে যে প্রথম ম্যান মিশন করেছিল, সেই স্পেসশিপটাও দেখলাম আজ। যেন মনে হচ্ছিল আমি কোনো স্বপ্ন দেখছি।'
'এগুলো স্বপ্ন নয় তনু, এগুলো বাস্তব। এই বাস্তবটা তুই অর্জন করেছিস। নিজের পরিশ্রমে।' নিজের মেয়ের মাথায় স্নেহের হাত রেখে ইন্দ্রজিৎ বললেন। 
'বাবা, তবে একটা জিনিস ঠিক বুঝতে পারলাম না।'
'কী?'
তনুশ্রী বললো - 'যেখানে স্পেসশিপ গুলো রাখা ছিল, সেই জায়গাটা তো সত্যিই খুবই বড়। সেখানেই এক কোণায় দেখলাম লম্বাটে ধরণের বেশ বড় রকমের একটা ঘর বানানো আছে। বড় মানে, বেশ ভালো বড়। সেই ঘরের সামনে বিশাল এক লোহার দরজা। মনে হয় নাম্বার লক করা ছিল সেটা। সামনে একটা বোর্ডে বড় বড় করে লেখা আছে, রেস্ট্রিকটেড এরিয়া। ট্রেনারকে জিজ্ঞাসা করলাম যে, কী আছে ওখানে। কিন্তু ট্রেনারের জবাবে অবাক হলাম আমরা সবাই।'
'কী বললো তোদের ট্রেনার?' জিজ্ঞাসা করলেন ইন্দ্রজিৎ মজুমদার।
'তিনি বললেন যে, আমরা নাকি কোনো দিন ওদিকে না যাই। এই তিন বছরে একবারও না। ভুল করেও যেন ওই দিকে পা না দিই আমরা। যদি কেউ ওদিকে যাওয়ার চেষ্টাও করে, তাকে ইনস্টিটিউট থেকে বের করে দেওয়া হবে। ওখানে কী হতে পারে বাবা? তোমার কোনো আইডিয়া আছে?'
খানিক চুপ থেকে ইন্দ্রজিৎ বললেন - 'আইডিয়া নেই, কারণ আমি ওখানে কাজ করি না। তবে একটা আন্দাজ লাগাতে পারি।'
'কী বাবা?'
'হয়তো ওখানে একটা স্পেসশিপ আছে। একটা এমন স্পেসশিপ যেটা ইসরো সবার সামনে আনতে চায় না।'
'এমন আবার কোনো স্পেসশিপ আছে নাকি যেটা ইসরো সবার সামনে আনতে চায় না?' তনুশ্রীর কৌতূহল বাড়লো। 
একটা লম্বা নিশ্বাস ফেলে ইন্দ্রজিৎ বললেন - 'আছে তনু, আছে। সেটা হলো, ইন্ডিয়ানা।'

********************************

'তোর কি মনে হয় চিফ কোনো একশান নেবে এই ব্যাপারে?' সপ্তর্ষি প্রশ্ন করলো নীহারিকাকে। 
দুজনে গাড়িতে। সপ্তর্ষি ড্রাইভ করছে, নীহারিকার তার পাশে বসে। তাদের এখন নিজের-নিজের বাড়ি ফেরার সময়। 
'জানি না রে। সে চিফ, সে চাইলেই একশান নিতে পারে। তার পক্ষে মিশন ইন্ডিয়ানা'র বিষয় গোপন তথ্য বের করা খুব কঠিন হবে না।' বললো নীহারিকা। 
'তোর কি মনে হয় আমাদের চিফের আশায় বসে থাকা উচিত?' 
খানিক চুপ থেকে নীহারিকা বললো - 'জানিস সপ্তর্ষি, আজ ভোর বেলায় আমি এক ভয়ানক স্বপ্ন দেখলাম। সেই সব ঘটনা গুলো মনে পড়ে গেল যেটা আমাদের সাথে ঘটেছিল।'
'এমনটি হয়। কোনো খারাপ ঘটনা ঘটলে তার রেশ বেশ কিছু দিন থেকে যায়।'
'তুই বেশ কিছু দিন বলছিস সপ্তর্ষি? এখানে বেশ কিছু মাস কেটে গেছে। দু মাস তো বটেই। তাও স্বপ্নটা এখনো মাঝে-মাঝে আসে।'
'তোর একার আসে না নীহারিকা। আমারো তো আসে। অর্ণব বলেছিল তারও আসে। নীহারিকা, যারা আমাদের সাথে মিশনে ছিল তাদের সকলের এমন এক ভয়াবহ স্বপ্ন আসে।'
দুজনেই কিছুক্ষণ চুপ রইল। নীরবতা ভেঙে নীহারিকা বললো - 'তোর কথাটা ঠিক সপ্তর্ষি। আমাদের চিফের উপর বিশ্বাস করে থাকলে চলবে না। আমাদের নিজেদেরকেও কিছু করতে হবে। কিন্তু বুঝতে পারছি না কোথা  থেকে শুরু করবো। কী করে পাবো মিশন ইন্ডিয়ানা'র বিষয় ইনফরমেশন?'
'আমাদের কাছে মিশন ইন্ডিয়ানা'র বিষয় কী-কী ইনফরমেশন আছে?' জিজ্ঞাসা করলো সপ্তর্ষি।
'আজ থেকে প্রায় ত্রিশ বছর আগে ইসরোর ইস্ট্রান উইং চিফ কুণাল গোস্বামীর নেতৃত্বে টাইটানে একটা ম্যান মিশন করে। সে সময়ে প্রজেক্ট ম্যানেজার ছিল অরিন্দম সাহা। ইন্ডিয়ানা নামের স্পেসশিপকে পাঠানো হয় টাইটান নামের শনির উপগ্রহে। শিপের ক্যাপ্টেন ছিল দেবব্রত চৌধুরী। প্রায় তিন মাস পর তারা ফেরত আসে। কিন্তু ফেরত আসার পর যা কিছু হয়, সেটাই রহস্যময়। কোনো প্রেস কনফারেন্স হয়নি। মিডিয়ার সাথে কোনো আ্যসট্রনটদের দেখা করানো হয়নি। আ্যসট্রনটরা তারপর কোথায় গায়েব হয়ে গেল, সেটা কেউ জানে না। কুণাল গোস্বামী অবসর নিয়ে নেন। ব্যাস, এর থেকে বেশি ইনফরমেশন আমার কাছে নেই।' 
'আমাদের এখন প্রথম টার্গেট কী? আমাদের সেই দিকে ফোকাস করতে হবে।' বললো সপ্তর্ষি।
একটু গম্ভীর হয়ে নীহারিকা বললো - 'আমাদের এখন মেন টার্গেট দেবব্রত চৌধুরী।'
নীহারিকার বাড়ি চলে এলো। মুখ্য ফটকের বাইরে তাদের গাড়ি এসে দাঁড়ালো। নীহারিকা গাড়ি থেকে নেমে গেল। যাওয়ার আগে সপ্তর্ষিকে বললো - 'কী করে এগোতে হবে সেটা আমিও ভাবছি আর তুইও ভাব। আমাদের বাঁচতে হবে সপ্তর্ষি। অন্যদের বাঁচাতেও হবে।'
সপ্তর্ষির বাড়ি বেহালার কাছে। নীহারিকাকে তার বাড়ি ছেড়ে দিয়ে সে নিজের বাড়ির দিকে এগিয়ে  গেল। একটা বহুতল এপার্টমেন্টের বিয়াল্লিশ তলায় তার ফ্ল্যাট। একাই থাকে। তার মা-বাবা থাকেন নিজেরদের পৈতৃক বাড়ি নামখানাতে। ফ্ল্যাটের দরজা খুলে ভিতর ঢুকলো সপ্তর্ষি। ঘড়িতে সময় দেখলো, রাত প্রায় দশটা বাজে। ডিনার নীহারিকার সাথেই সেরে নিয়েছে সে। ভাবলো স্নান করে বিশ্রাম নেবে। হঠাৎ তার মোবাইলে রিং হলো। অজানা নাম্বার থেকে কেউ কল করেছে তাকে। সপ্তর্ষির "হ্যালো" বলতেই ওপার থেকে আওয়াজ এলো - 'আপনি কি মিস্টার সপ্তর্ষি বলছেন?'
'হ্যাঁ, বলছি।'
'আমি বর্ধমান থানা থেকে বলছি। এখানে একটা গাড়ি খুব বিশ্রী ভাবে একসিডেন্ট করেছে। খারাপ লাগছে বলতে, কেউ জীবিত নেই। যিনি গাড়ি চালাচ্ছিলেন তার মোবাইলটা পাওয়া গেল। মোবাইলটা এক্সপার্টকে দিয়ে আনলক করবার পর কল লিস্টে আপনার নাম্বার পেলাম। আপনি যদি একবার বর্ধমান আসেন, তাহলে খুব ভলো হয়।'
কথাটা শুনে সপ্তর্ষির চারিদিক যেন ঘুরতে শুরু করে দিলো। ইন্সপেক্টর হয়তো আরো কিছু বলে গেল, কিন্তু সেটা সপ্তর্ষির কর্ণপাত হলো না।

ক্রমশঃ....