Read Mission Indiana - 5 by Bishwadeep Mukherjee in Bengali Science-Fiction | মাতরুবার্তি

Featured Books
বিভাগ
শেয়ারড

Mission Indiana - 5



পর্ব - 5
********
Secret Of Titan
****************
ত্রিশ বছর আগে....
::::::::::::::::::::::::::::::::

একটা বড় হল ঘরে বেশ বড় গোল টেবিল ঘিরে বসে আছেন ইসরোর বেশ কিছু উচ্চপদস্থ অফিসার। ক্যাপ্টেন দেবব্রত চৌধুরী ছাড়া দেবরাজ বর্মন এবং অনুরাগ বর্মনও সেখানে ছিলেন। ইসরোর চিফ কুণাল গোস্বামী এবং প্রজেক্ট ম্যানেজার অরিন্দম সাহাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। আলোচনার বিষয় ছিল মিশন ইন্ডিয়ানা। ব্যাঙ্গালুরু থেকে আসা মিস্টার এম কৃষ্ণামূর্তি ইসরোর ইস্ট্রান উইংএর চিফ কুণাল গোস্বামীকে বললেন - 'দিস ইস রেডিক্যুলাস মিস্টার গোস্বামী। আপনি জানেন এটা কত বড় প্রজেক্ট ছিল? আমাদের নর্দান উইংও এপ্লিকেশন দিয়েছিল টাইটানে মিশন করার জন্য। কিন্তু আমরা আপনাদের পারমিশন দিলাম। কারণ আমার আপনার উপর এবং আপনার টিমের উপর বিশ্বাস ছিল।'
'টাইটানে কোনো ভাবে মিশন করা পসিবল না মিস্টার কৃষ্ণামূর্তি।' কথাটা দেবব্রত বললেন।
'জাস্ট শাট আপ ক্যাপ্টেন চৌধুরী। যেহেতু আপনি মিশনে ফেলিওর হয়েছেন বলে সবাই ফেলিওর হবে সেটার কোনো মানে নেই। চলুন, এটা মেনে নিলাম যে মিশন ফেল করলো। করতেই পারে। এক অজানা জায়গায় যাওয়া এতো সহজ না। কিন্তু এই মিশনে যাদের প্রাণ গেছে তাদের বিষয়ে আপনি কী বলবেন? তাদের প্রাণের রক্ষা করার দায়িত্ব তো আপনার ছিল। আপনি এটা জানেন হয়তো মিস্টার দেবব্রত চৌধুরী, কোনো রকমের বিপদ আসার পর ক্যাপ্টেন সব থেকে শেষে নিজের শিপ ছাড়ে। তার দায়িত্ব আগে নিজের ক্রিউ মেম্বারদের সুরক্ষিত করা। আপনি কি সেটা করলেন? আপনি আগে নিজেরটা দেখলেন। নিজে বাঁচলেন। নিজের তিনটে ক্রিউ মেম্বারদের প্রাণ বিসর্জন দিয়ে আপনি নিজের প্রাণের রক্ষা করেছেন।' মিস্টার কৃষ্ণামুর্থির গলার স্বর উচ্চ হচ্ছিল। 
দেবব্রত চৌধুরীর মাথাও যে গরম হচ্ছিল না সেটা বলা ভুল হবে। কিন্তু এই মুহূর্তে নিজেকে সংযম রাখাই বেশি দরকার।
'স্যার, এমন না যে ক্যাপ্টেন চৌধুরী চেষ্টা করেননি। তিনি নিজের দিক থেকে শেষ মুহূর্তে পর্যন্ত চেষ্টা করে গেছেন বাকিদের প্রাণের রক্ষা করার। আপনার যদি আমার কথায় বা ক্যাপ্টেন চৌধুরীর কথায় বিশ্বাস না হয় তাহলে আপনি অনুরাগ বর্মনকে জিজ্ঞাসা করতে পারেন। অনুরাগ বর্মন নিজে ইন্ডিয়ানাতে ছিলেন পাইলট হিসেবে।' চিফ কুণাল গোস্বামী বললেন। 
খানিক চুপ থাকার পর এম কৃষ্ণামুর্থি চিফকে বললেন - 'যা কিছু ঘটেছে, সেটা পুরোপুরি কোনফিডেন্সিয়াল থাকা দরকার। এর ডিটেল্স যেন কোনো দিন প্রকাশ্যে না আসে। ক্যাপ্টেন চৌধুরী আগেও অনেক ম্যান মিশন করেছেন। কিন্তু যা কিছু ঘটেছে, তার কারণে হয়তো নিজের মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন তিনি। তাই এমন কথা বলতে পারছেন যে টাইটানে আর কোনো দিন মিশন করা সম্ভব না। তাই ক্যাপ্টেন চৌধুরীকে কিছু দিনের বিশ্রাম দেওয়া দরকার। আগে তিনি মানসিক ভাবে সুস্থ্য হয়ে যান, তারপর ফেরত আসবেন। এখনই নয়, ভবিষ্যতে ইসরোর আবার টাইটানে মিশন করবে। কোন উইং করবে, সেটা পরের কথা। দিস মিটিং ইস ওভার।'
কথা শেষ করে মিস্টার কৃষ্ণামুর্থি হল থেকে বেরিয়ে গেলেন। দেবব্রত একবার করুণ দৃষ্টিতে তাকালেন চিফ কুণাল গোস্বামীর দিকে।
'আমাদের ভবিষ্যৎ খুব ভালো হবে না যদি আবার কোনো দিন টাইটানে যাওয়া হয়। আজ আপনাদের মনে হচ্ছে আমি স্বার্থপর, আমার মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে গেছে। কিন্তু পরবর্তীকালে যদি টাইটানে যাওয়া হলো, সেটার পরিণাম সুখকর হবে না। টাইটানের বিষয় যে আমরা প্লান করে রেখেছি, সেটা কোনো দিন সম্ভব না। আমরা আজ পর্যন্ত অনেক যুদ্ধ দেখেছি। কিন্তু টাইটানে আবার পা রাখলে যে যুদ্ধের সম্মুখীন আমাদের হতে হবে, সেটার কল্পনা করাও আমাদের ক্ষমতার ঊর্ধ্বে। তাই, টাইটান চ্যাপ্টারকে এখানেই বন্ধ করে দেওয়া এই পৃথিবীর পক্ষে ভালো। মিস্টার গোস্বামী, আমি নিজের রেজিগনেশন আজকেই আপনাকে দিয়ে দেবো।' 
কথাটা বলে দেবব্রত নিজের বাঁ হাতে ক্রাচ নিয়ে খোঁড়াতে-খোঁড়াতে বেরিয়ে গেল সেই হল থেকে। 

******************************************

বর্তমান সময়
:::::::::::::::::::::::::

'অনেক কষ্টে, অনেক কষ্টে টাইটানের এই প্রজেক্টের পারমিশানটা পেয়েছিলাম। ওয়েস্টার্ন উইংও নিজের প্রজেক্ট ফাইল জমা করেছিল হেড কোয়ার্টার্সে। কিন্তু সেটার বদলে আমাদের প্রজেক্টকে এপ্রুভ করা হলো। ভাগ্য ভালো যে এইবার কোনো ক্যাজুয়ালটি হয়নি। তাহলেই জবাবদিহি করতে হতো। হেড কোয়ার্টারে ডিটেল্স পাঠানো হয়েছে কিছু। কিন্তু সেটা সাফিসিয়েন্ট না। এবারও যদি হেড কোয়ার্টার এটা শোনে যে, ইস্ট্রান উইং আবার ফেলিওর, তাহলে কিন্তু ইস্ট্রান উইংএর ভবিষ্যতের উপর প্রশ্নচিহ্ন লেগে যেতে পারে।' মৃত্যুঞ্জয় ভৌমিকের গলায় বিষাদের আভাসটা স্পষ্ট পাওয়া যাচ্ছিল। তাকেও হয়তো চিফের পদ থেকে ত্যাগপত্র দিতে হবে খুব তাড়াতাড়ি।
মৃত্যুঞ্জয়ের খালি হয়ে যাওয়া গ্লাসে এক পেগ ঢেলে দেবব্রত চৌধুরী বললেন - 'ভয় পেয়ে কাজ করলে হয় না মিস্টার ভৌমিক। আপনি এখন ইস্ট্রান উইংএর মাথা। তাই আপনাকে মাথা ঠান্ডা করে কাজ করতে হবে। আপনি বরং ব্যাঙ্গালুরু যান। আপনার কাছে যে মোর্স কর্ডের ডি-কর্ডিংটা আছে, সেটা নিয়ে যান। ক্যাপ্টেন নীহারিকা এবং তার টিমের সঙ্গে যা কিছু ঘটেছে, সেটা পরিষ্কার করে বলুন। মিস্টার এম কৃষ্ণামুর্থি এখন আর চাকরিতে নেই। কিন্তু ক্লাসিফাইড ফাইল হিসেবে মিশন ইন্ডিয়ানা এখনো হেড অফিসে আছে। এবার সময় চলে এসেছে, বর্তমানে যারা ইসরো হেড অফিসে কাজ করেন, তাদের এটা জানার যে, আজ থেকে তিরিশ বছর আগে টাইটানে কী ঘটেছিল।'
'সেটা আমিও জানতে চাই মিস্টার চৌধুরী। আজ থেকে তিরিশ বছর আগে এমন কী ঘটেছিল যার প্রভাব এখনো কমেনি?'
একটা বড় পেগ বানিয়ে সেটা এক নিঃশ্বাসে শেষ করে একটা সিগারেট ধরালেন দেবব্রত চৌধুরী। সিগারেটে একটা লম্বা টান দিয়ে বললেন - 'আমরা টাইটানে জনবসতির পরিকল্পনা করছি মিস্টার ভৌমিক। যেমন গতিতে পৃথিবীর জনসংখ্যা বাড়ছে, তাতে আর পৃথিবী বাসযোগ্য থাকবে না কিছু বছর পর। আগে আমরা চাঁদে চেষ্টা করলাম, বিফল হলাম। তারপর গেলাম মঙ্গলে। শুধু ইসরো নয়, নাসাও যে মঙ্গলে কতবার ম্যান মিশন করেছে, তার ঠিক নেই। মঙ্গলকে আরেকটা পৃথিবী বানানোর পরিকল্পনা আসতে আসতে ফিকে হয়ে যাচ্ছে। আ্যটমোসফিয়ার ছেড়া মার্সে তেমন কিছুই পাইনি আমরা এখনো। তারপর আমাদের প্ল্যান হলো টাইটান। শনির এক উপগ্রহ। আ্যটমোসফিয়ার সেখানেও আছে, সাথে আছে জল। বেশ কিছু খনিজও পাওয়া গেছে সেখান থেকে। পৃথিবীর তুলনায় ঠান্ডা অনেক বেশি এবং সূর্যের আলোও খুবই কম। কিন্তু, যদি বিজ্ঞানীরা ঠিক মত কাজ করে তাহলে টাইটানে অনেক কিছু আছে যার ফলে দূর ভবিষ্যতে সেখানে আরেক পৃথিবী বানানোর পরিকল্পনাকে সফল করা যেতে পারে। উদ্দেশ্য আমাদের পরিষ্কার ছিল। টাইটান থেকে বেশি থেকে বেশি মাটি উঠিয়ে নিয়ে আসা, সেখানকার জল নিয়ে আসা এবং টাইটানের টেরাফিরমিংএর বিষয় আরো বিশদ তথ্য জোগাড় করা। এখানকার সময় অনুসারে আমরা প্রায় দু ঘন্টা ছিলাম টাইটানে।'
নিজের কথা থামিয়ে আবার খোলা জানালা দিয়ে বাইরের দিকে দেখতে থাকলেন দেবব্রত চৌধুরী। খানিক পর আবার বললেন - 'মোর্স কোর্ড আপনার ক্যাপ্টেন পেয়েছিল। আমিও পেয়েছিলাম মোর্স কোর্ড। যে কোর্ডটা আমাদের মনিটারে বারবার দেখা যাচ্ছিল। ঠিক মনে হচ্ছিল কেউ যেন আমাদের কন্ট্রোল সিস্টেমকে হ্যাক করে নিয়েছে। আমাদের কো পাইলট সুধাকর দত্ত ডি-কর্ডিং খুব ভালো করতে পারতো। সে ডি-কোর্ড করলো।'

******************************************

ত্রিশ বছর আগে....
:::::::::::::::::::::::::::::::::

স্পেসশিপ ইন্ডিয়ানা'র ক্যাপসুলে বসে কো পাইলট সুধাকর দত্ত ক্যাপ্টেন দেবব্রত চৌধুরীকে বললেন - 'ক্যাপ্টেন, এখানে থাকা আমাদের পক্ষে নিরাপদ নয়।'
'ডি-কোর্ড করে কী পেলে সেটা বলো আগে।' ক্যাপ্টেন দেবব্রত বললেন সুধাকর দত্তকে।
'এখানে লেখা আছে, "এই জায়গা তোমাদের নয়। তোমরা এখান থেকে চলে যাও।" এবার বলো ক্যাপ্টেন, কী করবো?'
কিছু সেকেন্ড চিন্তা করে ক্যাপ্টেন দেবব্রত চৌধুরী বললেন - 'রিপ্লাই পাঠাও।'
'কী রিপ্লাই ক্যাপ্টেন?'
'লেখো, "তোমরা কে? কোথায় থেকে এসেছো? কী চাও এখানে?" কী উত্তর এলো, আমায় জানাবে।'
ক্যাপ্টেন চৌধুরীর কথা মত সুধাকর দত্ত কাজ করলেন। মোর্স কোর্ড খানিক পরেই উত্তর এলো। 
"আমরা বহু দূরের গ্রহ থেকে এসেছি এবং বহু দিন ধরে এখানে আছি। কোনো কারণে আমাদের গ্রহ নিজের শেষের পথে এগিয়ে গেছে। এটাই আমাদের দ্বিতীয় বাসস্থান। এখানে অন্য কোনো গ্রহের প্রাণীর প্রবেশ আমরা সহ্য করবো না। আমরা জানি তোমরা কোন গ্রহ থেকে এসেছো। আমরা এটাও জানি তোমাদের গ্রহ ধীরে-ধীরে বিনাশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। নিজেদের থাকার জন্য তোমরা অন্য গ্রহ খুঁজে বেড়াচ্ছো। যেখানে খুশি যাও, কিন্তু এখানে প্রবেশ নিষেধ।"
স্পেসশিপ ইন্ডিয়ানা'র ক্রিউ মেম্বাররা একে অপরের দিকে তাকালো। 
'সুধাকর, আমি এদের সঙ্গে সামনা-সামনি কথা বলতে চাই? এটা কি সম্ভব হবে?' সুধাকরকে দেবব্রত জিজ্ঞাসা করলো। 
'আপাতত তো সম্ভব না বলেই মনে হয়। এরা মোর্স কর্ডে কথা বলছে, আমরাও তাতেই উত্তর দিচ্ছি। এরা কোন গ্রহ থেকে এসেছে, সেটা জানি না আমরা। এদের ভাষা কী, সেটাও আমাদের জানা নেই। এদের কথা শুনে মনে হচ্ছে না যে এরা শান্তিপ্রিয় কোনো প্রজাতি হবে।  ক্যাপসুল থেকে বাইরে বেরোনো ঠিক হবে না ক্যাপ্টেন।' নিজের কথা শেষ করলেন সুধাকর।
'আমি সুধাকরের কথায় একমত ক্যাপ্টেন।' নিজের মত জানালেন পাইলট অনুরাগ বর্মন। 
দেবব্রত সবার দিকে একবার করে তাকালেন। 
'এত দূর এসে খালি হাতে ফিরে যাওয়াটা ঠিক হবে না। আমাদের এখানে অনেক কাজ করতে হবে। ক্যাপসুলের ভিতরে বসে অন্য গ্রহের প্রাণীর সঙ্গে মোর্স কোর্ড কথা বলে গেলে আমাদের কাজ হবে না। আমাদের কাজ করার জন্য ক্যাপসুল থেকে বাইরে বেরোতেই হবে।'
কথাটা শেষ করে দেবব্রত আ্যসট্রনটদের সুটের হেলমেটটা পরলেন।
'ক্যাপ্টেন কিন্তু....'
অনুরাগ বর্মনের কথা মাঝ পথে থামিয়ে দেবব্রত বললেন - 'ফিরে গিয়ে প্রজেক্ট ম্যানেজার মিস্টার সাহা এবং চিফ মিস্টার গোস্বামীকে কী জবাব দেবে অনুরাগ? এটাই কি আমরা কিছু অজানা এলিয়ানের ভয় পালিয়ে এসেছি। তাদর হুমকিতে ভয় পেয়ে গেছি আমরা। এটাই হবে মিশন ইন্ডিয়ানা'র টিমের উত্তর? আমি এই উত্তর দিতে পারবো না। অনুরাগ, মেন গেট ওপেন করো। বাইরে বেরোবো আমি।'
'ক্যাপ্টেন, আমিও যাবো তোমার সঙ্গে। আমি পোর্টেবল মনিটার সঙ্গে নিয়ে নিচ্ছি। আমরা এই ক্যাপসুল থেকে বাইরে বেরিয়েও তাদের সঙ্গে কোর্ড ল্যাঙ্গুয়েজে কথা বলতে পারবো।' কথাটা বলে সুধাকর একটা পোর্টেবল মনিটার সঙ্গে নিয়ে, হেলমেট পরে এগিয়ে গেল মুখ্য দরজার দিকে। 
'যে কোনো ডেঞ্জারের জন্য তোমরা রেডি থেকো। বাইরে যদি কোনো বিপদের আভাস পাই তাহলে আমরা ফিরে আসবো। শিপ স্টার্ট করে রেখো।' বললো দেবব্রত। 
মনের ভিতর অজানা ভয় নিয়ে পাইলট অনুরাগ বর্মন মুখ্য দরজাটা খুললো। আসতে-আসতে দরজাটা উপর দিকে উঠে গেল। যে মুহূর্তে তারা ক্যাপসুলের বাইরে বেরোতে যাবে ঠিক সেই মুহূর্তেই সুধাকরের হাতে থাকা পোর্টেবল মনিটারে বিপের আওয়াজ শোনা গেল। মোর্স কোর্ডের ইঙ্গিত। 
"ক্যাপ্টেন দেবব্রত চৌধুরী, আপনি যেন এটা ভাববার ভুল না করেন যে, আমরা আপনার সঙ্গে ইয়ার্কি করছি। এতক্ষণে আপনি জেনে গেছেন হবে যে, আমরা অন্তত আপনাদের থেকে উচ্চ মানের প্রাণী। আপনি আমাদের বিষয় কিছুই জানেন না। কিন্তু আমি যে আপনাদের বিষয় জানি, সেটা হয়তো এতক্ষণে জেনে গেছেন আপনি। ক্যাপ্টেন, আমরা কোনো অশান্তি চাই না। অনেক খোঁজার পর আমরা এই গ্রহকে থাকার মত উপযুক্ত পেয়েছি। আমরা এই গ্রহকে নিজেদের মত করে তৈরি করবো। এখানে আপনাদের কোনো স্থান নেই ক্যাপ্টেন চৌধুরী।"
দেবব্রত চৌধুরী এবং সুধাকর একে অপরকে দিকে তাকালেন।
"আমরা আপনাদের সঙ্গে কথা বলতে চাই, একটা আলোচনায় বসতে চাই। তাই আমি ক্যাপ্টেন দেবব্রত চৌধুরী নিজের কো পাইলট সুধাকর দত্তকে সঙ্গে নিয়ে বাইরে আসছি।"
মোর্স কোর্ড ম্যাসেজ পাঠালেন সুধাকর দত্ত ক্যাপ্টেনের নির্দেশে। মোর্স কোর্ড পাঠাবার সঙ্গে-সঙ্গে ক্যাপ্টেন দেবব্রত চৌধুরী ক্যাপসুলের বাইরে বেরিয়ে টাইটানের মাটিতে পা রাখার চেষ্টা করলেন। নিমেষে তার দু পায়ে প্রচন্ড যন্ত্রণার অনুভূতি হলো। "আহঃ!" আর্তনাদ করে নিজের দু হাত দিয়ে দু পা কে চেপে ধরলেন তিনি। 
'কী হলো ক্যাপ্টেন?' ক্যাপসুলের দরজা থেকে সুধাকরের আওয়াজ এলো। সুধাকরও বাইরে বেরোতে চাইলেন কিন্তু দেবব্রত হাত দেখিয়ে তাকে বারণ করে দিলেন।
'বাইরে এসো না সুধাকর। ভিতরেই থাকো।' বললেন দেবব্রত চৌধুরী। 
হঠাৎ দেবব্রত চৌধুরী অনুভব করলেন কোনো অজানা শক্তি তাকে টেনে ক্যাপসুল থেকে দূরে নিয়ে যাচ্ছে। টাইটানের জমিতে নিজেদের ক্যাপসুল থেকে বেশ কিছুটা দূরে আছড়ে পড়লেন দেবব্রত চৌধুরী। এমন এক ভয়ানক দৃশ্য দেখে সুধাকর দত্ত নিজেকে সামলে রাখতে পারলেন না। তিনিও বেরিয়ে পড়লেন। টাইটানের মধ্যাকর্ষণ চাঁদের থেকে একটু কম। তাই তাদের পিঠে বেশ ভারী ওজন ছিল। সেই ওজন নিয়ে টাইটানের মাটিতে দ্রুত গতিতে হাঁটা সম্ভব না। ক্যাপ্টেন চৌধুরীর দিকে এগোতে গিয়ে সুধাকর দত্ত খেয়াল করলেন তিনি যেন শূন্যে ভাসা শুরু করে দিয়েছেন। দেবব্রত চৌধুরী দেখলেন সেই অজানা অদৃশ্য শক্তি সুধাকর দত্তকে বেশ কিছুটা শূন্যে উঠিয়ে দূরে এক পাহাড়ের গায়ে আছড়ে মারলো। সুধাকর দত্তর গলা দিয়ে এক বিকট শব্দ বেরোলো। তিনি আর জীবিত নন। স্পেসশিপ ইন্ডিয়ানা'র ক্যাপসুলে ভিতরে থাকা পাইলট, টেকনিশিয়ান এবং এসিস্টেন্ট টেকনিশিয়ান এসব ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখছিলেন।
'আমাদের ক্যাপ্টেনকে বাঁচাতে হবে। আমি বাইরে যাচ্ছি। অনুরাগ, তুমি ক্যাপসুল স্টার্ট করে রেখো।' টেকনিশিয়ান অগ্নিজিৎ রায় বললেন।
কথাটা বলেই তিনি এগিয়ে গেলেন দরজার দিকে।

******************************************

বর্তমান সময়
:::::::::::::::::::::::::

আবারো এক নিঃশ্বাসে একটা পেগ শেষ করে খালি গ্লাসটা সামনের টেবিলে রাখলেন দেবব্রত চৌধুরী। মৃত্যুঞ্জয় ভৌমিক এক দৃষ্টে তাকিয়ে ছিলেন তার দিকে। খানিক বিরতি নিয়ে দেবব্রত চৌধুরী আবার বললেন - 'অগ্নিজিৎ আমায় সেখান থেকে তুলে নিয়ে এলো। আমার দুটো পা যেন অবস হয়ে গিয়েছিল। ইন্ডিয়ানা'তে টেকনিক্যাল ফল্ট এলো। অনেক কষ্টে স্টার্ট করা হলো ইন্ডিয়ানা। আমাদের মাদার শিপ পাশের একটা স্পেস স্টেশনের কাছে ছিল। সেখান পর্যন্ত পৌঁছনো খুবই দরকার ছিল আমাদের জন্য। আমাকে সুরক্ষিত ক্যাপসুল পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার সময় সেই অদৃশ্য শক্তি বারংবার অগ্নিজিতের উপর আক্রমণ করলো। অগ্নিজিৎ আমায় তো ক্যাপসুলে উঠিয়ে দিলো, কিন্তু নিজে উঠতে পারলো না।'
একটু থামলেন দেবব্রত চৌধুরী। মৃত্যুঞ্জয় লক্ষ্য করলেন পুরোনো স্মৃতি মনে করতে গিয়ে দেবব্রত চোধুরীর দু চোখ ছলছল করছে। একটা সিগারেট ধরিয়ে দেবব্রত চৌধুরী বলতে শুরু করলেন - 'টাইটানের ওই গাঢ় আ্যটমোসফিয়ার পেরিয়ে বাইরে বেরোবার সময় আমাদের ক্যাপসুল কিছুটা ড্যামেজ হলো। ক্যাপসুলের ভিতরকার প্রচন্ড হিট সহ্য করতে পারলো না অভিনন্দন। অভিনন্দন সান্যাল আমাদের টিমের এসিস্টেন্ট টেকনিশিয়ান ছিল। টাইটানে ওই ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখেই তার নার্ভ ফেল করে গিয়েছিল। আমার চেষ্টা ছিল তাকে কোনো রকমে স্পেস স্টেশন পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া। সেখানে মেডিক্যাল সাপোর্ট পেতে পারতো সে। কিন্তু সেটা আর হলো না। আমাদের ক্রিউ মেম্বারদের মধ্যে অভিনন্দনই একমাত্র যার ডেড বডি আমরা পৃথিবীতে আনতে পেরেছিলাম।'
চারিদিকে থমথমে পরিবেশ। মৃত্যুঞ্জয় ভৌমিক নিজের কপালে অল্প-অল্প ঘাম অনুভব করলেন। এমন বীভৎস ঘটনা নীহারিকার টিমের সাথেও ঘটতে পারতো। কিন্তু এমন বীভৎস কিছু ঘটেনি। তারা প্রত্যেকেই জীবিত ফেরত এসেছে।
'তাদের আপনি দেখতে পেয়েছেন?' চাপা এবং ভয়ার্ত কণ্ঠে মৃত্যুঞ্জয় জিজ্ঞাসা করলেন দেবব্রতকে। 
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে দেবব্রত বললেন - 'না। তারা আমাদের সামনে আসেনি। আমাদের সামনে না এসেই নিজেদের ক্ষমতায় আমাদের পরাজিত করেছে তারা। জানি না তাদের টেকনোলজি কতটা উন্নত। তবে আমাদের থেকে যে ওদের টেকনোলজি শতগুণ বেশি উন্নত তাতে কোনো সন্দেহ নেই। মিস্টার ভৌমিক, আমি তাদের ক্ষমতা দেখেছি। আমার পা ঠিক হতে প্রায় দশ বছর সময় লেগেছে। এখনো আমার বাঁ পা পুরোপুরি ঠিক হয়নি। ক্রাচ নিয়ে চলতে হয় না এটাই অনেক। আপনার টিম ফিরে এসেছে সেটা আপনার কপাল। আমি চাই না তাদের সাথে আমরা কোনো ভাবে সংঘর্ষ করতে যাই। আমাদের নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে তারা।'
'সেই জন্যই তো আপনার কাছে এতো দূর ছুটে আসা মিস্টার চৌধুরী। একবার বারণ করার পরেও পৃথিবী থেকে মানুষে সেখানে গেছে। ওদের টেকনলজি সত্যি উন্নতমানের। এবার নীহারিকার টিমকে দেখে তারা বুঝে গিয়েছিল যে, এরা পৃথিবী থেকেই শুধু আসেনি, বরণ পৃথিবীর ওই প্রান্ত থেকে এসেছে, যেখান থেকে আগে লোকেরা এসেছিল। তাদের বারণ করার পরেও তাদের কথা শোনা হয়নি। তাই তারা এবার তার সাথেই কথা বলতে চায়, যার সাথে আজ থেকে তিরিশ বছর আগে কথা বলেছিল। 
নীহারিকার টিম যে মোর্স কোর্ডটা ডি-কোর্ড করেছে, সেটার ডিটেল্স আপনাকে আগেই বলেছি মিস্টার চৌধুরী। এর আগে সেই অজানা প্রাণীরা পৃথিবীর কোনো ক্ষতি করুক, আপনাকে তাদের সাথে কথা বলতে হবে।' নিজের কথা শেষ করে দেবব্রত চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে রইলেন মৃত্যুঞ্জয় ভৌমিক।

******************************************

'আমরা কিছুক্ষণ এখানে অপেক্ষা করতে পারি।' নিজের হাত ঘড়িতে সময় দেখে সপ্তর্ষি বললো নীহারিকাকে। 
দুজনে গলির সামনে একটা দেওয়ালের পিছনে লুকিয়ে ছিল। 
'যদি ওই অজানা লোকটার বিষয় কোনো ইনফরমেশন না পেলাম, তাহলে এতদূর আসাটা বিফল হবে।' নীহারিকা বললো এবং দেওয়ালের আড়াল থেকে গলিটার দিকে দেখতে থাকলো। 
প্রায় দশ মিনিট তারা একই ভাবে দাঁড়িয়ে রইল। হঠাৎ দরজা খোলার আওয়াজ পেল তারা। দেখলো, সেই বন্ধ দরজা খুলে একটি মহিলা আট-নয় বছরের এক ছেলের সাথে বাইরে বেরোলেন। দরজাটা খোলা রেখে তিনি বড় রাস্তার দিকে এগিয়ে গেলেন। 
'এটাই সময় নীহারিকা, আমাদের ভিতরে ঢুকতে হবে।' কথাটা বলে সপ্তর্ষি সেই খোলা দরজার দিকে এগিয়ে গেল। তার পিছু নিলো নীহারিকা। ভিতরটা বেশ অন্ধকারাচ্ছন্ন। ভিতরে ঢুকেই ডান দিকে চলে গেছে একটা সিঁড়ি। সপ্তর্ষি ও নীহারিকা সন্তর্পণে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে শুরু করলো। প্রত্যেক তলায় তিনটে করে ফ্ল্যাট। প্রতিটি ফ্ল্যাটের দরজা বন্ধ। কোনটা ভিতর দিয়ে তো কোনোটা বাইরে দিয়ে। তিন তলায় ওঠার পর নিজেদের বাঁ দিকের ফ্ল্যাট থেকে এক চেনা কণ্ঠস্বর শুনতে পেলো তারা। 
'যেটা আমি বলছি সেটা শোন। নিজের বুদ্ধিতে কাজ করিস না। দেবব্রত চৌধুরীর কোনো বিশ্বাস নেই। ও একটা পাগল। সে হয়তো আবার টাইটানে যেতে রাজি হয়ে যাবে। সে হয়তো তোকেও খুঁজবে। কিন্তু তুই মূর্খের মত কাজ করবি না। তুই ওর সাথে কোত্থাও যাবি না আর। কলকাতায় থাকা তোর জন্য এখন আর নিরাপদ নয়। এখানে থাকলে তারা দরকার পড়লে তোকে খুঁজে নিতে পারে। আমি ব্যবস্থা করে দিয়েছি। কাল সকালেই তুই এখান থেকে রওনা হয়ে যাবি।'
নীহারিকা ও সপ্তর্ষির এটা বুঝতে সময় লাগলো না যে গলার আওয়াজটা দেবরাজ বর্মনের। ফ্ল্যাটের দরজার দিকে এগিয়ে গেল তারা। দেখলো, দরজায় অল্প একটু ফাঁক। মানে দরজাটা খোলা। খুবই সন্তর্পণে দরজাটা ঠেলে ভিতরে ঢুকলো নীহারিকা ও সপ্তর্ষি। 

ক্রমশঃ....