জঙ্গলের প্রহরী
পর্ব - ১৬
❤♣❤♣❤♣❤
তাপস কি ভেবে নিচ্ছে দেখে সঞ্জয় বলে, "গাড়ির পথ এ দুটোই। তবে পাকদন্ডী বেয়ে নামা ওঠা যায়। চার্চের পিছনদিকের ভাঙা পাঁচিল দিয়ে জঙ্গল পেরিয়ে ঢোকাও যায়। আমরাও ছোটবেলায় তাই করতাম।"
- "চার্চের পিছনে পাঁচিল ভাঙা, তোমরা দুজনেই জানো?"
- "সবাই জানি স্যার। ঐ পাঁচিল প্রথমদিকে তৈরি হয়েছিল। আমাদের ঠাকুর্দার আমল থেকেই বোধহয় ভাঙা।" এবারও সঞ্জয়ই বলে।
- "হুম। সঞ্জয়, তুমি তো চার্চে থেকেছ অনেক বছর। ছেলেরা ওখান থেকে রাতে বেরোয় না? দুষ্টুমি করে, এমনি স্কুল পালানোর মতো?"
- "হ্যাঁ স্যার," লজ্জায় মাথা নিচু করে সঞ্জয় বলে, "আমিও করেছি। স্টেশনে চলে আসতাম, নতুন সিনেমা হলে সিনেমা দেখতে গেছি।"
- "রাতে কখনো উপরে উঠে এসেছ চার্চ থেকে?" দুহাতের পাতায় থুতনি রেখে ঝুঁকে বসেছে সিদ্ধার্থ, জ্বলজ্বল করছে ওর চোখ। তাপসেরও মনে হচ্ছে, এই প্রশ্নের পিছনে কিছু আছে। ওর মাথায় পাগলাঘন্টি বেজে উঠেছে, ও চাপাগলায় বলে ফেলে, "স্যার, তার মানে...." ওর নাকের সামনে মাছি তাড়ানোর মতো হাত নাড়ল সিদ্ধার্থ। তার মধ্যে একটি ছেলে কি অদ্ভুত কায়দায় দুহাতে চারটে থালায় খাবার নিয়ে এসে টকটক করে ওদের সামনে বসিয়ে দিল। মোমো আর থুপকা।
সবাই সোজা হয়ে বসেছিল। ছেলেটি সরে যেতে ঘরের চারিদিকে চোখ বোলায় ওরা। এই মাঝদুপুরে বেশ ভিড়। একটু আগে কলকাতা থেকে একটা ট্রেন এসেছে। তার যাত্রীরা এখানেই এরকম সব হোটেলে খেয়ে দেয়ে গাড়িতে পাশের পাহাড় টপকে ছোট কিন্তু নামী একটা শহর আর তার লাগোয়া জঙ্গলের দিকে বেশি বেড়াতে যায়। রায়চৌধুরীদের জমিদারির দিকটা বরং ট্যুরিস্ট স্পট হিসেবে বেশি খ্যাতি পায়নি।
সবাই মোটামুটি খেতে ব্যস্ত দেখে নিয়ে সিদ্ধার্থ আবার প্রশ্ন করে, "রাতে পাকদন্ডী বেয়ে উঠেছ?"
- "হ্যাঁ স্যার। ইজি রাস্তা। পাকদন্ডী মানে, বিরাট খাড়াই না। এদিকের রাস্তাটা যেমন বাঁধানো, পাহাড় কেটে সমান ঢাল করা, খাদের দিকে রেলিং দেওয়া, সেরকম নয়। তবে পায়ে হাঁটতে কোনো অসুবিধা নেই।"
- "জঙ্গলের পথে আলো পেতে কি করে? আর কোনো বন্যজন্তু এলে, মুখোমুখি হয়ে যাবে তো?"
- "আকাশের, চাঁদের আলো স্যার। আর হাতিরা ঐ পথে নামে না। ওটা এলিফ্যান্ট করিডর না।"
- "চাঁদের আলোয় পাকদন্ডী বেয়ে নামা ওঠা করতে। তার মানে পূর্ণিমা রাতে ঠাকুরাণীর চিতার ভয় স্কুলে পড়তে তোমার ছিল না।" এতক্ষণে সিদ্ধার্থ হাসল।
সঞ্জয়ও হাসিমুখে বলল, "অন্যায় কিছু না হলে তো ঠাকুরাণীর চিতার আসার কথা ছিল না। এত বছর আসেওনি। আর পূর্ণিমা রাতে কেউ বেরোত না। আদিবাসী ছেলেরা তো বেরোবেই না, আমরাও না। পূর্ণিমার একসপ্তাহ আগে পরে ভাল জ্যোৎস্না থাকে। সব দেখা যায়।"
- ''থ্যাঙ্ক ইউ সঞ্জয়। যদি এই কেস আমি সলভ করতে পারি, সেটা হবে তোমার এক সময়ের দুষ্টুমির জন্য। চলো খেয়ে নিই।" জামার হাতা গুটিয়ে খাওয়া শুরু করল সিদ্ধার্থ প্রথমে।
সঞ্জয় বলে, "কি যে বলেন স্যার।"
খেয়েদেয়ে শেষবেলায় স্টেশনের দোকানগুলোতে ঘুরল কিছুক্ষণ সিদ্ধার্থ। একখানা ডিও, সেফটি রেজারের হাফডজন ব্লেড, সাবান, শ্যাম্পু, এ সপ্তাহের ইংরেজি ম্যাগাজিন, একগাদা চকলেট বক্স, বিস্কুট, মোটকথা আনতাবড়ি নানান জিনিস কিনল। সব দোকানদারের সঙ্গে গল্প করল। মাঝে একবার বোনের ফোন আসতে ওর সঙ্গে কথা বলে নিল।
ঋষি এসব মুড চেনে। সঞ্জয় আর তাপসের পা ধরে যাচ্ছিল। শেষে সঞ্জয় ঋষিকে ডেকে বলেই ফেলল, "স্যারকে বলুন সিগারেট কিনে নিতে। যা সবার সঙ্গে গল্প করছেন, ভুলে গেছেন।"
ঋষি বুক ফুলিয়ে বলল, "আমরা দুজন সিগারেট ছেড়ে দিয়েছি।"
ঠিক তখনই সিদ্ধার্থ ডেকে বলল, "নিচে যখন আসাই হল, এক কার্টুন সিগারেট নিয়ে নিই। কি বলিস?"
সঞ্জয়ের গোল গোল চোখগুলো দেখে নিয়ে ঢোঁক গিলল ঋষি, মুখে কথা সরে না। ভাবতেই পারেনি সিদ্ধার্থ এমন পাল্টি খাবে আবার !
❤💞❤💞❤💞❤
সেইসময়ে জঙ্গলের মুখ পর্যন্ত গিয়ে শুক্লার বন্ধুরা ফেরত এসেছে। চিতাবাঘের ভয়ও আছে, আবার শুক্লা ছাড়া বেড়িয়ে কি বা মজা। মেয়েরা সবাই মিলে শুক্লার ঘরে দুখানা খাটে এ মাথা ও মাথা গড়িয়ে দিয়ার পিছনে লাগছে। তবে শমীক এসবে মিটিমিটি হাসে। বড্ড চালাক, জানে যারা রাগাতে এসেছে, রাগ না করলে তারা আর কি করবে? বন্ধুরা তাই শমীককে ছেড়ে দিয়েছে ইদানীং। আর একলা এদের হাতে পড়ে দিয়া আজ ফোঁস করে ওঠে, "আমাকেই খালি দেখতে পাস তাই না? মণীষার কেসটায় সব অন্ধ হয়ে থাকিস?"
শমীক একটা চেয়ারে বসে ছিল, প্রথমেই উঠে পড়ে বলল, "বাপরে, আমি নেই। মণীষার পছন্দ, সত্যি বাবা !"
মণীষা একটু ম্লান মুখে বলে, "তোদের পছন্দ না, তাই না?"
শুক্লা ওকে জড়িয়ে ধরে বলল, "আরে বোকা মেয়ে আর কারও পছন্দ হলে তো মুশকিল।" সবাই আবার হা হা হি হি।
[ ❤ এই পাকদণ্ডী পথের সঙ্গে অপরাধের কি সম্পর্ক খুঁজে পেল সিদ্ধার্থ? আর মণীষাই বা কাকে ভালোবাসে?
❤ জানা যাবে পরের পর্বে। অনেক ধন্যবাদ এই পর্বটি পড়ার জন্য। আপনার মতামতের অপেক্ষা করছি। দয়া করে মন্তব্য করে জানাবেন। ]
চলবে