জঙ্গলের প্রহরী
পর্ব - ১৭
❤💞❤💞❤💞❤
মেয়েরা সবাই মণীষাকে বোঝায়, হ্যাঁ ওর পছন্দের মানুষটা একটু রাগী, একগুঁয়ে, নিজেকে কেউকেটা ভাবে, এগুলো ঠিক। তেমনি তাকে যে মণীষার বন্ধুদের পছন্দ হয়নি, একথাটাও ঠিক নয়।
দিয়া এখন আবার হাসিখুশি। ও বলে, "দেখ মণি, যার যার একটা পেশাগত স্বভাবও তৈরি হয়ে যায়, বা স্বভাবে সহজাত নেতৃত্বদান বা পরিস্থিতি মুঠোয় নেওয়ার ক্ষমতা থাকে বলেই সে এই ধরণের পেশায় সফল হতে পারে। ভাল ছাত্র তো অনেকেই হয়, জীবনে সফল হওয়ার সঙ্গে অনেকসময়ই তার যোগ থাকে না।"
শমীককে কিছু বলতেই হবে দিয়াকে সাপোর্ট করে, "সে তুলনায় ঠিক মানুষকেই বেছেছিস তুই।"
লজ্জা ঝেড়ে ফেলে মণীষা গর্বিত রাজহংসিনীর মতো মরালগ্রীবা বাঁকিয়ে বলে, "কথাটা শুনতে ভাল। তা ঠিক মানুষ বাছাই করার জন্য প্রশংসাটা তুই কাকে বললি? আমাকে না তোর গিন্নীকে?"
শমীক সত্যিই উঠে পড়ে বলে, "সবাইকেই বললাম। তোরা গল্প কর। আমি সামনে থেকে আসি।"
শুক্লা উঠে বসে, "সামনে থেকে আবার কি? বিড়ি ফুঁকে আসি বল? কি যে পাস টাকা পয়সা ধোঁয়া করে উড়িয়ে দিয়ে?"
এবার শমীক খেঁকিয়ে ওঠে, "জ্ঞান দিস না তো ! বেড়াতে এসেও জ্ঞান ভাল লাগে না। তাছাড়া তুই আমাকে কেন ধরিস বলত সবেতে? সাহস থাকলে রাজীবদাকে বল।"
বন্ধুরা সবাই হেসে উঠল। সত্যিই তো, দিয়া আর মণীষার পর শুক্লার পালা। ব্যস, এরপর অবধারিত শুক্লার পিছনে লাগে সবাই। কি কথা হয়েছে শুক্লার সঙ্গে, শুক্লা কি বলেছে, শুক্লার ক্রাশই বা ওকে কি কি বলেছে, কবে শুক্লা অফিশিয়ালি প্রোপোজ করছে।
শুক্লা হাঁ হাঁ করে ওঠে, "প্লিজ তোরা এসব কথা বলিস না। এত সিরিয়াস কোনো ব্যাপার নয়। তোদের কাছে কারও একটু প্রশংসা করলেই তোরা ঠাট্টা শুরু করিস। সেটা ঠিক আছে, আমি বুঝলাম সিম্পল ঠাট্টা করছিস। কিন্তু এখন সবাই এক জায়গায় রয়েছি, কে কি শুনবে, কি কথা হবে, তখন বিশ্রী একটা পরিস্থিতি হবে।"
এত সহজেই যদি সবাই থেমে যেত, তাহলে আর বন্ধু বলেছে কেন? সবাই হৈচৈ করে ওঠে আরও বেশি করে যে, ওদের কথা কে শুনতে পাচ্ছে? আর শুক্লা সত্যি কথা স্বীকার করলেই মিটে যায়, ওরা তো শুধু একটু গল্প শুনতে চায়। কোনদিন শুক্লার পছন্দের রাজকুমার ওকে নিয়ে পিঠটান দেবে, তখন আর গল্পটা শোনা যাবে না।
শুক্লা আরও লাল হয়ে যায় লজ্জায়, গল্প নেই তো বলবে কি? আর শুক্লা যত লজ্জা পায়, ব্লাশ করে, কথা বলতে গিয়ে তো তো করে, তত ধরা পড়ে যায়। শমীক পর্যন্ত বাইরে যাওয়া ভুলে গুছিয়ে বসে, "দেখ শুক্লা, ন্যাকামি করিস না। তোকে দেখলেই আমরা সবাই বুঝতে পারছি, তোর মনে কি আছে।"
- "হ্যাহ, চুপ কর, মোটেই তেমন কিছু নেই।" শুক্লার আপ্রাণ চেষ্টা বাধা দেওয়ার।
- "তুই জানিস, ও যখন সামনে থাকে, তুই স্রেফ হাঁ করে তাকিয়ে থাকিস?" দিয়া শুক্লাকে একটা ঠেলা দেয়।
শুক্লা বাধা দিতে যেতেই মণীষা থামায়, "চুপ কর, আর মিথ্যে বলতে হবে না। আর এরকম করছিসই বা কেন? তুই কাউকে পছন্দ করলে নিশ্চয়ই তোর বাড়ির লোকেরা বাধা দেবে না? সবাইকেই তো আমরা দেখলাম, তেমন তো মনে হল না।"
- "আরে জ্বালা, কিছু থাকলে তো বাধা দেবে ! তাছাড়া এখন এসব ছাড়, এখন তোরা এলি বেড়াতে আর সব কেমন উলটো পালটা হয়ে যাচ্ছে। তোদের বেড়ানোটাই ভাল করে হচ্ছে না।"
- "ঠিক কথা, শাক্যদা আর সিদ্ধার্থদার যদি বেশ ভাব হয়ে যেত, তাহলে দুজনে মিলে ঠিক সব পর্দাফাঁস করে ফেলত। আর আমরা আরও দুদিন এখানে থাকার মেয়াদ বাড়িয়ে নিয়ে ঘুরে ফিরে সব দেখে নিতাম। আচ্ছা শুক্লা, শাক্যদার সঙ্গে সিদ্ধার্থদার সমস্যাটা কোথায়? দুজনেই দেখি এখানে বিপদ আছে বলে, একসঙ্গে সেটা মেটাতে এগোয় না?" শ্রীতমা বলে।
- "জানি না রে। আমি তো তোদের জাস্ট তিনদিন আগে এসেছি। আজকের আগে আর একবারই সিদ্ধার্থ রায়কে দেখেছি আমাদের বাড়িতে। আজ তো তাও গান টান গাইল, অনেক ভাল ছিল তোদের দেখে। কাল আমার সামনে কথা বলবে না, দাদাকে ট্যারা ট্যারা প্রশ্ন। মনে হয়, জঙ্গলে লোকটাকে পাওয়া গেছে বলে সব দায় দাদার।" শুক্লাকে হতাশ লাগে।
অবশ্য ওদের গল্প এরপর আবার স্থানীয় ঘটনার দিকে ঘুরে যায়। নিজেরা সম্ভব অসম্ভব নানা সমাধান বলাবলি করে। শুক্লার মাথায় ঘোরে, শ্রীতমার কথাটা, দুজনের যদি বন্ধুত্ব হত। দাদার সমবয়সী সিদ্ধার্থ রায়। সত্যিই কি ওরা দুজন মিলে গেলে রহস্য সমাধান হবে? মিলবে কিভাবে? আজ যে দুজন একটু ভাল করে কথা বলেছে আলাদা, এটা শুক্লা খেয়াল করেছে। ওরাও কি বন্ধুত্ব করতে চাইছে?
শুক্লার মাথায় আসে না, সে যেটা চাইছে, সেটা কিভাবে হবে। নিজের ভাবনায় নিজেই লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছিল শুক্লা।
তবে বেশিক্ষণ না। বন্ধুদের কথাগুলো কানে যেতে ভাবতে থাকে, "সিদ্ধার্থ রায় মানুষটা কেমন, তার চেয়ে বড় কথা, এই জঙ্গলের ভিতরের আসল কথাটা কি, দাদুভাইয়ের বইতেও সব লেখা নেই। সেই লোককথার সঙ্গে চোরাচালানের যোগ গড়ে উঠল কি করে? আর তার সমাধান কি দাদা বা সিদ্ধার্থর পক্ষে করা সম্ভব? যদি অপরাধী ধরা না পড়ে.....।"
সারারাত চিন্তা করে ভোররাতে সবে ঘুমিয়েছে, এ্যালার্ম বেজে ওঠে। আজ দাদা জঙ্গলের ভিতরে ঘুরতে নিয়ে যাবে।
[ ❤ মণীষার সঙ্গে সঙ্গে শুক্লারও মনে প্রথমবার কারও ছায়া পড়েছে। কি হবে দুজনের প্রথম ভালোবাসার পরিণতি? আর এই জঙ্গলের ঠাকুরাণীর চিতারাই বা কোথা থেকে আসে, কোথায় যায়?
❤ জানা যাবে পরের পর্বে। অনেক ধন্যবাদ এই পর্বটি পড়ার জন্য। আপনার মতামতের অপেক্ষা করছি। দয়া করে মন্তব্য করে জানাবেন। ]
চলবে