Featured Books
বিভাগ
শেয়ারড

জঙ্গলের প্রহরী - 18

জঙ্গলের প্রহরী

পর্ব - ১৮

❤♣❤♣❤♣❤

শাক্যর জলপাই সবুজ হুডখোলা জিপসিতে ওরা বেরিয়েছে। নিচে নেমে আবার পাশের পাহাড়ের গায়ের রাস্তা ধরে উপরে উঠে জঙ্গলের দিকে ঘুরে আসবে। একটু চাপাচাপি করে বসতে হয়েছে, তবে পাহাড় জঙ্গলের সৌন্দর্যে কেউ সেসব গায়ে মাখছে না। 

পাহাড়ি পথে নামাওঠায় গান গেয়েছে সবাই গলা ছেড়ে -

লে যায়ে জানে কাঁহা
হাওয়ায়ে হাওয়ায়ে
লে যায়ে তুঝে কাঁহা
হাওয়ায়ে হাওয়ায়ে

বেগানি হ্যায় ইয়ে বাগি
হাওয়ায়ে হাওয়ায়ে
লে যায়ে মুঝে কাঁহা
হাওয়ায়ে হাওয়ায়ে। 

এখন জঙ্গলের সামনে এসে শাক্য বলে দেয়, আর অকারণ কথা নয়, মোবাইল সাইলেন্ট। আগে থেকেই বলা ছিল, একটু সবুজ, নীল, কালো ঘেঁষা জামাকাপড় এনেছিল সবাই জঙ্গল সাফারির জন্য। লাস্ট বাট নট দ্য লিস্ট, জিপসির হুড লাগিয়ে, কোনোভাবেই গাড়ি থেকে নামা হবে না ওয়ার্নিং দিয়ে শাক্য ওদের নিয়ে জঙ্গলে ঢোকে। 

এইসব দিকও শাক্যর টেরিটোরি। ও জানে এবং সতর্কভাবে চলেছে, হাতি, বুনো শূওর দেখাতে পারে কিনা। মনে আশা, রক পাইথনও দেখা যেতে পারে। ছেলেমেয়েদের স্বপ্ন স্লথ বেয়ার দেখা। 

দশটা বাজতে যাচ্ছে, চারটে বুনো শূওর আর গোটাকয় বিষাক্ত সাপ দেখিয়েছে ওদের শাক্য। এখন গাড়িটা কয়েকটি গাছের মাঝখানে রাখা হয়েছে। সঙ্গে আনা স্যান্ডউইচ, কফি খাওয়া হবে। আরও ঘন্টাখানেক ঘোরাঘুরি করে সাড়ে এগারোটার পর ও এখান থেকে ফিরবে। আর কোনো জন্তু জানোয়ার দেখা যায় না অত বেলায়। এখনও যথেষ্ট বেলা। কেবল শাক্যর নিজের সব জানা রয়েছে বলে আশা করছে হাতির পাল জল খেতে আসলে দেখতে পাবে। আর ও ঠিক সেই সময়টার অপেক্ষা করছে। 

গাড়ি যেখানে রাখা হয়েছে, অনেকটা যেন গাছের পাঁচিলের মধ্যে। চট করে কোনো বড় বন্য জন্তুর আক্রমণের সুবিধা হবে না। কিন্তু কোথাও একটা গোলমাল আছে, এটা শাক্য বুঝতে পারছে। পরশুদিন ওর দুজন গার্ড এই জঙ্গলে টহল দিয়ে গেছে। তারাও হাতি দেখেছে। অথচ আজ এখনও টাটকা ছাপ নজরে আসেনি ওর। 

শাক্য স্যান্ডউইচ নেয়নি, কফি খাচ্ছিল। জিপসির কাঁচ তোলা। বন্ধ গাড়িতে অস্বস্তি হলেও এই শীতকালের শুরুতে গাছ থেকে সাপ নেমে আসতে পারে, আর কফি বা স্যান্ডউইচের গন্ধ বাতাসে ভেসে যাবে অনেকদূর। বিশেষ করে ওদের দিকটা পূব - দক্ষিণ। এখনও বাতাস এদিক থেকে জঙ্গলের ভিতরের দিকে যাচ্ছে।

ওর গাড়িতে সেট করা ওয়াকিটকিতে বিপবিপ। অন করে সাড়া দেয় শাক্য আর তারপর স্রেফ বেকুব বনে যায়। ওদের বাড়ির উপরের দিকের পাহাড় থেকে হাতির পাল নেমে এসেছিল। না, আদিবাসীদের গ্রামের দিকে তারা ঘোরেনি। সোজা জঙ্গল থেকে বেরিয়ে চলে এসেছিল হাট পর্যন্ত। 

খুব অস্বাভাবিক কান্ড। এটা হাতিদের খোরাকে টান পড়ার সময় নয়। পড়েওনি, ও জানে। তবে এটুকু বুঝেছে, এজন্যই হাতিদের ও খুঁজে পাচ্ছে না। 

কিন্তু এখন যদিও ওকেই প্রথম স্পটে যেতে হবে। হাতি বা মানুষ, দুদলেরই কি অবস্থা ওকেই জানতে হবে, ও যাবে কি করে? হাতি যদি হাটের দিকে থাকে, তাদের টপকে তো ও গাড়ি নিয়ে যেতে পারবে না ! এদিকে সঙ্গে এতগুলো ছেলেমেয়ে, যাদের কোনো অভিজ্ঞতা নেই ! ছেলেমেয়েরাও ভয়ে কাঁটা হয়ে আছে। শিল্টন পেমা, ওর যে গার্ড খবর দিচ্ছিল, তাকে জিজ্ঞেস করে হাতি কতদূর নেমেছে?

শিল্টনের খবরে শাক্যর হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়ার যোগাড়। হাতি ফিরে গেছে। হাটের একজন আদিবাসী মেয়ে সামান্য আহত, তাকে বাঁচাতে গিয়ে আহত সিদ্ধার্থ রায়। মেয়েটিকে নিয়ে সিদ্ধার্থ খাদের দিকে ঝাঁপ দিয়েছিল। এবং এখানেই ঘটনাটা শেষ নয়, এরপর আরও সর্বনাশ করেছে সিদ্ধার্থ, ও একরাউন্ড ফায়ার করেছে। 

শাক্যর মনে হচ্ছে সিদ্ধার্থর টুঁটি ছিঁড়ে ফেলে। শিল্টন বলে যাচ্ছে, দুটো বাচ্চাসহ এগারোটি হাতি ছিল, সিদ্ধার্থ আর ওর লোকেরা কনফার্ম করেছে। তার মানে জঙ্গলের সবকটা হাতিই ছিল। সিদ্ধার্থ আর মেয়েটা সামনে দৌড়োনোতেই হাতির পাল লাইন ভেঙে ছড়িয়ে গেছিল। আর ফায়ারিং এর পর তারা আবার জঙ্গলে ফিরে গেছে। তবে বারবার ডাকছিল দাঁতাল হাতিটা, কয়েকটা মাদী হাতিও। কোনো হাতির গুলি লেগেছে কিনা ঠিক নেই। 

শুক্লা প্রায় কেঁদে ফেলে, "দাদা কি হবে?"

শাক্য হতাশভাবে বলে, "কি হবে? আর কি কিছু হতে বাকি আছে? আমার চাকরিটা গেল। এই লোকটা যে কাজে এখানে এসেছে সেটা তো করতেই পারল না, এসে থেকে শুধু আমার পিছনে পড়ে ছিল। এখন আমার সব শেষ করে থামল হতভাগা।" 

শাক্য গাড়ি ঘোরায়। শীতের নরম রোদ পিছলানো জঙ্গল পিছনে ফেলে ওরা ফেরার পথ ধরে। সবার মুখে অমাবস্যার গাঢ় অন্ধকার। 

হাটের দিকে উঠে আসার আগে শাক্য আবার শিল্টনের থেকে জেনে নেয় পথ পরিষ্কার আছে কিনা। শিল্টন কনফার্ম করে, হাতিরা আর ফেরেনি। দূর থেকেই দেখে হাটের চওড়া চাতালটায় লোকে ভর্তি। একপাশে সিদ্ধার্থর স্করপিও। গাড়ি থামিয়ে ও নেমে আসে, পিছনে সবাই। 

[ ❤ খোঁজ চলছিল ঠাকুরাণীর চিতার। হাতিরা কেন জঙ্গল ছেড়ে বেরোল? সিদ্ধার্থই কি আরও বড় বিপদ ঘটিয়েছে? 

❤ জানা যাবে পরের পর্বে। অনেক ধন্যবাদ এই পর্বটি পড়ার জন্য। আপনার মতামতের অপেক্ষা করছি। দয়া করে মন্তব্য করে জানাবেন। ]

চলবে