Read Jharapata - 24 by Srabanti Ghosh in Bengali Love Stories | মাতরুবার্তি

Featured Books
বিভাগ
শেয়ারড

ঝরাপাতা - 24

ঝরাপাতা

পর্ব - ২৪

🌹❤🌹❤🌹❤🌹

নিজের ঘরে ল্যাপটপটা খুলে কাত হয়ে শুয়ে রনি একটার পর একটা ছবি দেখছে। দাদার কথার উত্তর দেওয়ার ক্ষমতা রনির নেই, তেমনি দাদা যা বলছে সেভাবে মিলির থেকে সরে থাকার ক্ষমতাও আর ওর হাতে নেই। রনি যে খুব বোকার মতো আগে পরে না ভেবেই এগিয়ে চলেছে, তাও নয়। মিলিকে থেরাপিস্টের চেম্বারে দেখার পর ও অনেক ভেবেছে। ডঃ গিরি ঠিকই বলেছেন, মিলির কাছে কোনো এক্সপেক্টেশন না রাখাই ভালো, রনি রাখেওনি। কিন্তু মিলির কিছু প্রাপ্য আছে ওর কাছে। সেটা ও হাত উপুড় করে দেবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একদিনের হঠকারী সিদ্ধান্ত নয়। বহু ভাবনাচিন্তা করেই এটা ঠিক করেছে। 

পুজোর সময়, পুজোর আগে রনির এতটাও মনের জোর ছিল না। বরং মিলির সব দরকারে পাশে থাকবে ভাবার সঙ্গে সঙ্গে, মিলিও ওর সঙ্গে থাকতে পারত, একটা ভুলে সেটা কিভাবে শেষ হয়ে গেছে ভেবে ও ক্ষতবিক্ষত হচ্ছিল। মিলির উপহার কিনে যখন বৌদি বলেছিল, এটা ওরা দিচ্ছে, রনি কে এর মধ্যে থাকতে হবে না, রনি আর সহ্য করতে পারেনি। ভেঙে পড়েছিল। তবে একটা ভালো কাজও হয়েছিল। অন্ততঃ নিজের দাদা বৌদি আর মিলির বাবা মায়ের সঙ্গে ওর সম্পর্কটা ঠিক হয়েছে। 

তখনও রনির মনে হচ্ছিল, মিলির সঙ্গে এমন করে কথা বলতে পারলে সব ঠিক হয়ে যেত। কি আর করত মিলি? রাগারাগি করত, ওকে তাড়িয়ে দিত। কতদিনের জন্য? এমন করে ক্ষমা চাইলে কি ক্ষমা করত না? 

রনি যখন এই ভাবনায় নিজের কাছে নিজে বারবার হেরে যাচ্ছে, নিজের চিন্তাভাবনা ভুল সেটা বারবার বুঝতে পারছে, কিন্তু সমাধান খুঁজে পাচ্ছে না, তখন ওর দেখা হয়ে গেল লিলির সঙ্গে। লিলির সঙ্গে কথা বলেই রনি জানতে পারল, ওর সঙ্গে এদের পরিবারের কারও কোনো ব্যক্তিগত সমস্যা নেই উলটে মিলি সবসময় ওর প্রশংসাই করে এসেছে। এটা যেমন রনিকে সাহস ফিরিয়ে দিল, তেমনি ওকে ধৈর্য্য ধরতে শেখালো লিলি আর যুগল। ওরা পরস্পরকে ভালোবাসে, তাও আরও তিন বছর অপেক্ষা করবে ভেবেছিল। এমনকি এখনও বলছে, বাধ্য হয়ে এই সময়ে বিয়ে করেছে। তাতে একটু সমস্যা হচ্ছে, কিন্তু প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ভাবনা থেকে সরে আসেনি। 

ওদের সংকল্পের মধ্যে রনি নিজের পথ খুঁজে পেল। ও ঠিক করে নিল, মিলির জন্য অপেক্ষা করবে, প্রয়োজনে অনন্তকাল অপেক্ষা করবে। মিলির যতদিন কিছু মনে পড়বে না, ও বন্ধু হয়ে পাশে থাকবে। আর মনে পড়লে মিলি যাই ভাবুক, যা করুক, রনি চেষ্টা করবে মিলিকে ওর সত্যিটা জানাতে। 

এইসব কাজ ও নিজে নিজেই করে ফেলবে না, ডঃ গিরির সঙ্গে আলোচনা করেই নাহয় এগোবে। আর এগোনোর পথ বন্ধ হয়ে গেলেও ও মনের দিক থেকে মিলির পাশেই থাকবে চিরকাল। 

এটা ভেবে নিতেই রনির নিজের জীবনে শান্তি ফিরে এসেছে। একটা শক্ত সিদ্ধান্ত যেমন ওর মনের জোর বাড়িয়ে দিয়েছে, দিশেহারা ভাব উধাও হয়ে গেছে, তেমনি ও ভবিষ্যতের অপেক্ষা করতে শুরু করেছে। 

এই তো মিলি যখন মামার বাড়ি বেড়াতে চলে গেল, প্রথমদিন রনির মনে হচ্ছিল, কতদিন দেখতেও পাবে না মিলিকে, ওর সঙ্গে যে ধীরে ধীরে ভাব করবে ঠিক করেছে, সেটাও কত পিছিয়ে যাবে এখন। একবার ওদিকে কোথাও যাওয়ার ছুতো করে ঘুরে আসলে হয়। মুহূর্তের মধ্যেই নিজের কাছেই এই ভাবনার অন্তঃসারশূন্যতা ধরা পড়ে গেল। যত ছুতো করেই ও যাক, অন্যদের নিয়ে ও কনসার্ন না হলেও, মিলি অবাক হতেই পারে। 

তখনই রনির মনে পড়ল, বিয়ের ছবিগুলোই আনা হয়নি ফোটোগ্রাফারের কাছ থেকে। যেমন মনে পড়া, চুপচাপ রনি সেগুলো নিয়ে এসেছে। ওর ল্যাপটপেও আপলোড করে নিয়েছে। এখন একটা একটা করে সেগুলোই দেখছিল আবার, রোজই দেখে। 

মিলি কলেজে যায় অঙ্কুরের সঙ্গে। প্রথমে রনির ইউনিভার্সিটি, তার সামনে দিয়ে রাস্তা ঘুরে যায় স্টেডিয়ামে। স্টেডিয়ামের অন্য প্রান্তে মিলির কলেজ। বনি পড়ায় সম্পূর্ণ উল্টোদিকে অন্য কলেজে। প্রথমদিন থেকেই ও খেয়াল করেছে, ওর চেয়ে অন্ততঃ চল্লিশ পঁয়তাল্লিশ মিনিট আগে বেরোয় মিলি। ঐ সময় বেরোনো সম্ভব নয় ওর পক্ষে, বরং দ্বিতীয় দিন ছুটির পর হঠাৎ দেখা হয়ে যাওয়ার মতো মিলি আর অঙ্কুরকে রাস্তায় ধরেছিল। টুকটাক পড়াশোনার কথাবার্তা বলে দেখেছে, মিলি দিব্যি কথা বলছে। চৈতালী ম্যাডামের সঙ্গে কি কি কথা হল, সব বলল। অঙ্কুরের বাড়ির কাছাকাছি এসে অঙ্কুর বলে ফেলে, রনি যখন বাড়িই যাবে, মিলিকে নিয়ে গেলে ভালো হয়। রনিও তৎক্ষণাৎ ওদের ক্লাস কখন, ছুটি কখন সবটাই জেনে নিয়ে অঙ্কুরকে আশ্বস্ত করে যে কদিন মিলি চৈতালী ম্যাডামের বাড়ি যাবে, রনিই ছেড়ে দেবে। অন্যান্যদিনও মিলি ওর সঙ্গে বাড়ি যেতে পারে। ব্যস, গত সপ্তাহটা তাই হয়েছে। আসার পথে টুকটাক গল্প, আইসক্রিম, ফুচকা চাট খেতে খেতে। 

বেশ চলছিল। আজ বনি বারণ করার পর রনি তাই একটু ঝামেলায় পড়েছে। ঘটনাটা যখন মুখোমুখি হয়েই গেছে, এবার দাদার মতের বিরুদ্ধে যাওয়াটা ভালো দেখাবে না। অথচ দাদাকে সবটা বোঝানোও..... 

💜❤💜❤💜❤💜

পরদিন রনির সব সমস্যার সমাধান হয়ে গেল, এবং খুব সহজেই। অঙ্কুরের শরীরটা নাকি ভালো না, ও কলেজ যাবে না। সেটা রনি বা এ বাড়ির কেউ জানতো না। দুই ভাই ই বেরোনোর আগে একবার চা খাচ্ছে ব্যালকনিতে, মিলি আর গোপা এসে বারান্দার গাছে জল দিচ্ছে। চোখাচোখি হতেই হাসল, গোপাও রয়েছে, বনিই ভদ্রতা করে মিলিকে বলল, "কি কলেজ নেই?" তখনই জানা গেল, ওর শরীর ভালো না বলে একা ছাড়া হবে না বলেছে মা, তাই একটু মনখারাপও। 

রনি সঙ্গে সঙ্গে বলল, "এক কাজ করো, তুমি তৈরি হয়ে নাও। আমি নামিয়ে দেব। প্রথম ক্লাসটা করতে না পারলেও পরেরটা থেকে ক্লাস করতে পারবে। আর অঙ্কুরের এতটা উলটে আসার দরকার কি? আমার সঙ্গেই তো চলে যেতে পারো রোজ।"

গোপা এককথায় রাজি, "তুমি নিয়ে গেলে তো খুব ভালো হয়। তাহলে মিলি যা চটপট রেডি হয়ে নে।" 

ভাইকে ঘরে টেনে এনে বনি বলল, "এটা কি হল? তোকে না কালই আমি বারণ সরে থাকতে বললাম !"

পিউ আর মণিকা কিছু বলেছে না, মনে মনে রনির দিকেই। রনিও শান্তভাবে বলল, "আমার সঙ্গে যদি মিলির কখনো দেখাই না হয়, তাহলে ও সুস্থ হয়ে যাবে? বরং আমি সব ভুল ধারণা কাটিয়ে ওর পাশে থাকতে চেয়েছি, এটা জানতে পারলে কি ওর বেশি ভালো লাগবে না?"

- "কিন্তু যদি... "

- "আমি জানি, তুই আমাকে ভালোবাসিস, আমার জন্য চিন্তা করছিস। মিলি যদি সব মনে পড়লে রাগারাগি করে, আমরা কি সেখানেই চুপ করে যাব? তাই কি সব সম্পর্কে হয়? হ্যাঁ, এখানে ওর মানসিক সমস্যাটা কনসিডার করতে হবে। সেক্ষেত্রে ডঃ গিরির মাধ্যমেও তো কথা বলতে পারি ওর সঙ্গে।"

- "রনি ঠিকই বলেছে রে।" মণিকা বনিকে বোঝায়, মিলি যদি আমাদের দুটো কথাই শোনায়, তাতেই আমরা পিছিয়ে আসব? আমরাও যে ওকে ভালোবাসি, ওকে এ বাড়িতে আনতে চাই, সেটা বলব না?"

- "রনি, তুই মিলির সঙ্গে থাকবি তো? একবার এগিয়ে গিয়ে আর মেয়েটার হাত ছেড়ে দিবি না তো?" এতক্ষণে বনির আসল চিন্তা ফুটে ওঠে ওর মুখে। 

- "কি যে তুমি বলো না ! ভাই কখনো সেরকম? একটা গণ্ডগোল হয়ে গেছে, তাও আমি বারবার তোমাকে বলি সেটা ওর একার দোষ না। সেটা হওয়ারই ছিল।" পিউ এবার রনির পাশে দাঁড়ায়। 

- "আমি যা করব, দায়িত্ব নিয়েই করব, ভাবিস না। তোরাও ওর সঙ্গে খোলামনে মিশে দেখ। আমি যা চিন্তায় ফেলেছিলাম, সেটা থেকে বেরিয়ে আয়। দেখলি তো কাকিমাও আপত্তি করল না আমার সঙ্গে যেতে দিতে। কেউ তোদের কথা শোনাবে বা মিলির ক্ষতি হবে এরকম কিছু আমি করব না।"

দুজনকে একসঙ্গে কলেজের জন্য বেরোতে দেখে দু বাড়ির সবারই ভালো লাগে। রনি ওদিকে বাইকে পিছনে বসা মিলিকে বলে, "আমাকে ফোন করে নিও ছুটির পর। রোজ বলি, ফোন করো না কেন?"

মিলি আজ বলেই ফেলে, "তোমার থেকে এত সুবিধা নিতে লজ্জা করে রনিদা। দিদি.... "

- "মিলি, তোমার দিদির উপর আমার কোনো রাগ নেই। ও একটা ভুল করেছে। কিন্তু ও নিজেও তো ভয় পাচ্ছিল বলে সেটা করেছে। আমার উপর কোনো ব্যক্তিগত রাগ থেকে করেনি। তাই আমি রাগ করে থাকলে সেটা বোকামি।"

- "তুমি সত্যিই খুব ভালো রনিদা। দেখো, তোমার সঙ্গে সব ভালো হবে।"

রনি বলতে পারে না, ভালো করার ও চেষ্টা করছে কেবল। কথা ঘোরাতে বলে, "লিলির কথা মনে পড়ে তোমার?"

- "মনে পড়ে। বোঝোই তো, আমার দিদি, খুব ভালোবাসতাম ওকে। এখন রাগ হয়, আমাকেও কিছু বলল না। আমি ওকে বলেছিলাম, তুমি খুব ভালো। তখনই বলতে পারত, ওর অন্য কেউ আছে।"

- "তোমাকে কে বলল আমি খুব ভালো?" এত প্রশংসায় হা হা করে হেসে ফেলল রনি। 

- "কে আবার বলে দেবে? আমি কি তোমাকে চিনি না নাকি?" মিলির অনেকটাই হালকা লাগছে রনির সঙ্গে লিলির ব্যাপারে কথা হয়ে যেতে। 

- "আচ্ছা ঠিক আছে, সময় আসুক, দেখা যাবে, তুমি আমাকে কতটা চেনো।" রনি বোধহয় নিজেকেই বলে। ইতিমধ্যে ওর কলেজ এসে গেছে। মিলি বাইক থেকে নেমে হাসিমুখে হাঁটা দেয়। রনি নাম ধরে ডাকতেই ফিরে তাকায়, চোখে জিজ্ঞাসা। 

- "ছুটির পর ফোন করবে কিন্তু। আজ ফোন না করলে আমি কাকিমাকে বলে দেব।"

- "না না ফোন করব। তুমি নম্বর দিয়েছ তো প্রথমদিনই।"

ছুটির পর অদ্রিজার রনিকে ফোন করা, মিলি গেটের পাশে পৌঁছনোর আগে রনি বাইক নিয়ে হাজির আর বন্ধুদের হাত নেড়ে বাই বলে দুজনের চলে যাওয়াটা বন্ধুদের অনেকটাই ফিল্মি স্টাইলের লাগে। মেয়েরা বলাবলি করে, অদ্রিজার কি ভাগ্য ! বিয়ের কথা ভুলে গিয়ে জমিয়ে প্রেম করার সুযোগ পেয়ে গেল। নিজের বরের সঙ্গেই প্রেম, সুতরাং কেউ বাধাও দেবে না। 

ওদেরই এক বন্ধু পলাশ বলে, "প্রেম আবার কি ! অদ্রিজাকে ওর বর পছন্দই করে না, ওর দিদির শোধ নিতেই বিয়ে করেছিল। তাই তো ফেলে চলে গেছিল। এখন যে আবার যোগাযোগ রাখছে, কিছু প্ল্যান আছে। দেখে নিস তোরা।"

বন্ধুরা কেউই পলাশের কথা ফেলে দিতে পারে না। 


চলবে