Featured Books
বিভাগ
শেয়ারড

মার্কস বাই সিন - 2

মার্কস বাই সিন-২

ওস্তাদ আর রবীনের কথা শেষ হ‌ওয়ার আগেই আকাশের বুক চিরে নামে তীব্র বৃষ্টি। সময়ের সাথে সাথে ঝোড়ো হাওয়ায় বেগ আরো বাড়তে থাকে। সবাই মুহুর্তে ভিজে সপসপ হয়ে যায়। কিন্তু তাতেও কারোর বিশেষ পরোয়া নেই। ওরা দ্রুত বক্সগুলো ট্রাকে তুলে শেষ কাজটুকু সেরে ফেলে। এরপর একে একে বেশ কয়েকজন গাড়ির পিছনে উঠে যায়। ওস্তাদ রাজু আর রবীন চালকের আসনে গিয়ে বসে। গাড়ি চলতে শুরু করে।


এখন রাত প্রায় তিনটে। বাইরে ঝমঝম করে বৃষ্টি পড়ছে আর তার সাথে হাওয়ার বেগ‌ও তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠছে। এখন রাস্তাঘাট পুরো ফাঁকা। রবীন হাইওয়ে ধরে ফুল স্পিডে গাড়ি চালাচ্ছে, আর মাঝে মাঝে উত্তেজক তরল গলায় ঢালছে। ট্রাকের ভেতরে গান চলছে বেশ জোরে।

রাজুর পাশের সিটে বসে মাঝেমাঝে বকবক করছে আর একটার পর একটা বোতল শেষ করে নামিয়ে রাখছে পাশে। এমন সময়ে ওর পকেটে থাকা ফোনটা হঠাৎ ভাইব্রেট করে উঠতে, সে বিরক্ত মুখে পকেট থেকে ফোন বের করে। তারপর চোখ কচলে ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকাতেই হালকা নড়েচড়ে বসে সে। রবীনের হাতে মৃদু ঠেলা দিয়ে গানের ভলিউম কমার জন্য ইশারা করে।

রবীন ওস্তাদের দিকে একবার তাকিয়ে গানের ভলিউম আস্তে করে দেয়। রাজু, চোখের সামনে ফোনটা নিয়ে এসে, একটা শুকনো ঢোক গিলে ফোন রিসিভ করে। ফোনের অপরপ্রান্তে থাকা ব্যক্তির সাথে কিছুক্ষণ চাপা স্বরে  কথা বলে সে। প্রায় মিনিট সাতেকের মতো কথা বলে ফোন কাটে সে। ফোনটা আবার যথাস্থানে রেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে। রবীনের গাড়ি চালাতে চালাতে সেইদিকে তাকিয়ে হাসে। তারপর আবার গানের ভলিউম বাড়িয়ে দেয়।

বাইরে থেকে ভেসে আসা বৃষ্টির ঝমঝম শব্দ, ফাঁকা রাস্তা, গাড়ির স্পিড, গায়ে চড়া নেশা—সবার চোখে ঘুম এসে গেছিলো। হঠাৎই রবীন গাড়ির গতি আরও বাড়িয়ে দেয়। ঘুম থেকে ধড়মড় করে উঠে বসে রাজু।

চোখ কুঁচকে ঘুম জড়ানো গলায় সে বলে, "এই রবীন, হঠাৎ এতো জোরে গাড়ি চালাচ্ছিস কেন? বাইরে বৃষ্টি পড়ছে, রাস্তা ঠিকমতো দেখা যায় না—মরার প্ল্যান নাকি তোর? মরবি তো একা গিয়ে মর, আমাদের নিয়ে যেতে হবে না!"

রবীন একবার লুকিং গ্লাসে দেখে তারপর গাড়ির স্পিড আরোও বাড়িয়ে বলে "আহা, ওস্তাদ! শুনতে পাচ্ছো না? লুকিং গ্লাস দিয়ে দেখো। আমাদের পিছনে পুলিশ।"
"পু...পু...পুলিশ!" রাজু চমকে উঠে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখার চেষ্টা করে।

একটা নয়, দুটো নয়—চার....... চারটে পুলিশের গাড়ি ট্রাকের পেছনে ধাওয়া করছে। সে থতমত খেয়ে কি করবে বুঝতে পারে না। তারপর তীব্র রাগে রাজুর গলার কাছটা চেপে ধরে গালাগালি দিয়ে বলে,
"এই হারামজাদা! তুই না বলেছিলি রাস্তা ক্লিয়ার? কেউ থাকবে না? তাহলে পুলিশ এল কোথা থেকে?"

রবীন হাত দিয়ে রাজুকে ঠেলা দিতে দিতে বলে "আরে করছো কি ওস্তাদ গাড়ি চালাতে দাও আমায়।"
কিছুক্ষণ থেমে একবার লুকিং গ্লাসের দিকে তাকিয়ে আবার বলে ওঠে "আমিওতো সেটাই জানতাম। তবে... বুঝতে পারছি না কিচ্ছু। কী থেকে কী হয়ে গেল!"
ওস্তাদ দাঁত কিড়মিড় করে ওঠে "এরা খবর পেল কোথা থেকে?"
"সেটাতো আমার‌ও ভাবনা......."

রবীন, পুলিশের হাত বাঁচার জন্য মরিয়া হয়ে ট্রাকের স্টিয়ারিং ঘোরাচ্ছে। পিছনে চারটে পুলিশের গাড়ি গতি আরো বাড়িয়েছে। চারপাশ কাঁপছে সাইরেনের আওয়াজে। হঠাৎ—থ্যাঁক! থ্যাঁক! থ্যাঁক!
টানা তিনবার গুলির শব্দ। এরপরই রাস্তায় ঘর্ষণের একটা তীব্র শব্দ!

"ওস্তাদ! ওস্তাদ...... আমি আর সামলাতে পারছি না! মনে..... মনে হচ্ছে...... চাকাগুলো... পাংচার করে দিয়েছে!" চিৎকার করে ওঠে রবীন।
"পা.....পা....... পাংচার। কি হবে এখন?"
রাজুর গলায় তীব্র ভয়। সে গাড়ির দরজা খুলে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে কিন্তু মনে হচ্ছে দরজাটা কোনোভাবে আটকে গেছে, কোনমতেই সে গাড়ির দরজা খুলতে পারে না। ট্রাকের ভেতর বাকিরা সবাই একসঙ্গে মৃত্যু এবং পুলিশের ভয়ে সিঁটিয়ে বসে থাকে।

ট্রাকটা কিছুক্ষণ ঝাঁকি খেয়ে বামে-ডানে দুলতে শুরু করে। রাজু ভয়ে চিৎকার করে ওঠে, "হে খোদা! বাঁচা আমাদের........."
তবে শেষ রক্ষা হয় না। তার আগেই একটা শব্দ শোনা যায়।

ট্রাকটা সজোরে একটা ল্যাম্পপোস্টে গিয়ে ধাক্কা মারে। গাড়ির সামনের কাঁচ ভেঙে রাজু আর রবীনের গায়ে গিয়ে ঢুকে পড়ে। তাদের শরীরের বিভিন্ন অংশ রক্তে ভেসে যায়—এক সেকেন্ডের ভেতরেই স্পট ডেড। ভেতর থেকে আরেকটা হালকা বিস্ফোরণের শব্দ হয়—ট্রাকের সামনের অংশে ধোঁয়া উঠতে শুরু করে।

পেছনের আসনে থাকা বাকি চারজন ছিটকে পড়ে ট্রাকের মেঝেতে। মাথায়, কাঁধে, হাঁটুতে গভীর কাটা, চোট—তবুও তারা প্রাণে বেঁচে যায়। মুহূর্তের মধ্যে চারদিক পুলিশে ঘিরে ফেলে।

"হ্যান্ডস আপ! কেউ নড়বে না!"
টর্চলাইটের আলো চোখে পড়তেই সবাই থমকে যায়। একে একে সবাইকে গাড়ি থেকে নামানো হয়। হাতকড়া পরানো হয়। চিৎকার, রক্ত, সাইরেন, বৃষ্টির ফোঁটা আর ট্রাকের জ্বলন্ত অংশ—সব মিলে এক বিভীষিকাময় রাত।

পুলিশ ইনস্পেক্টর আহান সেনগুপ্ত বৃষ্টির মধ্যে গাড়ি থেকে নামতেই এক মুহুর্ত কাকভেজা হয়ে যায় সে। মাথার চুল থেকে জল গড়িয়ে পড়ছে, তবুও ঠোঁটে হালকা এক তৃপ্তির হাসি। চোখে দৃঢ়তা, মুখে কঠিনতা।

একজন অফিসারকে পাশে ডেকে গম্ভীর স্বরে বলেন,
“অ্যাম্বুলেন্সে কল করো। সামনে দুটো স্পট ডেড।”
তারপর গাড়ির সামনে এসে দাঁড়িয়ে নিচু স্বরে ফিসফিস করে ওঠে "এইবার শুরু হবে আসল খেলা...।"

ট্রাকটা ভালো করে পর্যবেক্ষণ করতে করতে একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকা অফিসারকে ডাকে সে “ঘোষবাবু, ব্যাটাগুলোকে ভ্যানে তোলার ব্যবস্থা করুন। ওদের জামাই আদর খাওয়ার সময় হয়ে গেছে।"
অফিসার ঘোষ স্যালুট ঠুকে মাথা নেড়ে সাড়া দেয়,
"নিশ্চয়, স্যার।"

কিছুক্ষণ পর অফিসার ঘোষ এসে জানায় “স্যার, আপনার ইনফরমেশন একদম ঠিক ছিল। ওরা হেরোইন আর কোকেন পাচার করছিল।”
আহান মাথা নেড়ে বলে "আমার ইনফরমেশন কখনো ভুল হয় না ঘোষবাবু। আমি যখন কাউকে টার্গেট করি, সব দেখে শুনে তবেই জালটা পাতি। দুজন এখানেই শেষ, বাকি চারজন জালে উঠেছে। এবার কার্লকে বুঝিয়ে দেব, ওর দৌড় কতদূর।”
একটু থেমে, ঠান্ডা চোখে বৃষ্টির ফোঁটার মতো ভারী স্বরে বলে "এই শহরে বেআইনি রক্ত-ব্যবসার শেষ শুরু হয়েছে। এবার থেকে একে একে সবকিছুর সাফাই হবে।"

অফিসার ঘোষ পেছনে সরে দাঁড়ায়। আহান নিজের মনে গম্ভীর গলায় বলে ওঠে— “আমার নাম আহান সেনগুপ্ত। এই কার্ল—ওর ‘রাজত্ব’ আমি গুঁড়িয়ে দেবই। এটা প্রমিজ নয়, চ্যালেঞ্জ। দেখি কার্ল এবার কি করতে পারে আমার।” আহানের চোখ দপ করে জ্বলে ওঠে।




চলবে................................
(আজ দ্বিতীয় পর্ব প্রকাশিত হল। কেমন লাগছে আপনাদের এই গল্পটি জানতে ভুলবেন না। এই গল্পটি কিন্তু গে লাভ স্টোরি, তাই কেউ যদি পড়তে না চান প্লিজ স্কিপ করে যেতে পারেন, তবে অযথা নেগেটিভ কিছু কমেন্ট করবেন না, ধন্যবাদ)