Featured Books
বিভাগ
শেয়ারড

মার্কস বাই সিন - 4

মার্কস বাই সিন -৪

"গতকাল গভীর রাতে শহরের উপকণ্ঠে একটি পরিত্যক্ত বিল্ডিংয়ে পুলিশ অভিযান চালিয়ে একটি বড়ো মাদক পাচারচক্রের জাল ভেঙে ফেলে। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ঘটনাস্থল থেকে বিপুল পরিমাণ হেরোইন ও অন্যান্য নিষিদ্ধ ড্রাগ উদ্ধার হয়েছে।

চক্রটি যখন সেই সব মাদকদ্রব্য পাচারের চেষ্টা করছিল, ঠিক তখনই পুলিশ তাদের ধাওয়া করে। পালাতে গিয়ে ট্রাকের দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই দুই পাচারকারী নিহত হয়। তবে ট্রাকে উপস্থিত বাকি চারজনকে জীবিত অবস্থায় গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এখন ওদের পুলিশ কাস্টাডিতে রাখা হয়েছে।

এই অভিযান পরিচালনা করেন ইনস্পেক্টর আহান সেনগুপ্ত। তাঁর নেতৃত্বে বিগত তিন মাসে প্রায় কুড়িটিরও বেশি মাদক এবং অবৈধ অস্ত্র চক্রের পর্দাফাঁস হয়েছে। তবে সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য হচ্ছে, এই চক্রগুলোর পেছনে যার হাত আছে, যে নামটা বারবার উঠে আসছে, সেটা আর কেউ নয়—কার্ল'।

ব্ল্যাক ওয়ার্ল্ডের একছত্র সম্রাট, যার অস্তিত্ব আজও ধোঁয়ায় ঢাকা। পুলিশের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, এই অপারেশনের পরিপ্রেক্ষিতে তারা আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ ক্লু পেয়েছে, এবং শিগগিরই এর বড়সড় ফলাফল আসতে চলেছে। এই সংক্রান্ত আরো আপডেট পেতে এবং প্রতিনিয়ত আরোও বিভিন্ন ধরনের ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে জানতে নিউজ টেন চ্যালেনে চোখ রাখুন।"

রিপোর্টারের কন্ঠস্বর কানে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ছেলেটির হাতের মুঠো শক্ত হয়ে ওঠে। সে কল কেটে দিয়ে কয়েক মুহূর্ত একদৃষ্টিতে টিভির স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকে। পানাশালার ভেতরে অনবরত একঘেয়ে চলতে থাকা মিউজিক, গ্লাসে ঝকঝকে তরল, পিছনে ঘোর লাগা চোখে চুপ করে বসে থাকা তিন নারী—কোনো কিছুতেই এখন মন নেই তার।

চোয়াল শক্ত করে ফেলে, দাঁত কিড়মিড়িয়ে ওঠে।আবার একটা রেইড। আবার একটা লস। ফোনটা শক্ত করে হাতে ধরে টিভির স্ক্রিনে ভেসে ওঠা আহানের দিকে সরু চোখে কয়েক মুহূর্ত একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে রায়েল। ধীরে ধীরে ঠোঁটে বাঁকা হাসি খেলা করে যায় ওর।

পুলিশের এইসব রেইডে রায়েলের বিশেষ ভ্রুক্ষেপ নেই। এসব ঝটকা ওর কাছে নতুন কিছু নয়। যেটা ওর মাথায় বাজতে শুরু করেছে, সেটা হল, কার্ল- এর নাম। এই পুলিশটার জন্য এই প্রথম কার্লের নাম এতোবার সবার সামনে এসেছে। যদিও এতে কার্লের বা এই ছেলেটির বিশেষ কিছু যায় আসে না, কিছু তবুও এই বিষয়কে কার্লকে জানাতেই হবে। নয়তো পরে ব্যবসার বিরাট কোনো ক্ষতি হতে পারে। কারণ এই আহান সেনগুপ্ত যেভাবে খেপেছে ও সব করতে পারে। একে এক্ষুণি থামানো দরকার।

"ক্রে- র সাথে এখন‌ই কথা বলতে হবে। এই অফিসারের বাড়াবাড়ি শেষ করতে হবে খুব শীঘ্রই।"

নির্দিষ্ট একটা নাম্বার ডায়াল করে রায়েল হাঁটতে শুরু করে। কারো দিকে না তাকিয়ে পানশালা পেরিয়ে বেরিয়ে যায় বৃষ্টিভেজা রাস্তায়।

পরর্বতী সিনে যাওয়ার আগে এই ছেলেটির একটা ছোটোখাটো পরিচয় দেওয়া যাক। ছেলেটির নাম হল রায়েল সেন। বয়স ২৮, হাইট ৬ ফুটের একটু কম, পাতলা কিন্তু কাটা কাটা গড়ন।

মুখটা অদ্ভুতরকম সুন্দর—এক ধরনের ছেলেমানুষি মায়া আছে, চোখ দুটো গভীর, শান্ত, কিন্তু শীতল। যেন একরাশ অন্ধকার জমে আছে সেখানে, কেউ একবার তাকালে চট করে চোখ ফেরাতে পারে না।

কথা বলে কম, কিন্তু যা বলে সেটা শোনার পর লোকজন রাতের ঘুম হারিয়ে ফেলে। রায়েল কখনো গলা চড়ায় না, তার দরকার‌ও পড়ে না। ওর ধীর, মেপে কথা বলা, ঠান্ডা হেসে তাকানো—এইগুলোই যথেষ্ট কাউকে ভেতর থেকে গিলে ফেলতে।

কার্লের ডান হাত হওয়া মানে শুধুই কাজের লোক হওয়া নয়—কার্ল রায়েলকে ভরসা করে কারণ রায়েল ছাড়া ওর অন্ধকার সাম্রাজ্য অচল। কেউ কার্লের কাছে যাওয়ার আগে রায়েলের সামনে টিকে থাকতে হয়।

আর একবার যদি রায়েল মুখ ফিরিয়ে নেয়—সেটা মানে শেষ গণনা শুরু।

রায়েল বিশ্বাস করে— "শুধু ভয় দেখিয়ে নয়, নিঃশব্দে শেষ করাই সবথেকে বড় শাস্তি।"

ওর নাম শুনলেই যারা আগে গলা তুলত, এখন চোখ নামিয়ে রাখে। আর রায়েল? ও এইগুলোর বেশ মজা নেয়। তবে ও এখন ব্যস্ত, আহান সেনগুপ্ত নামক লোকটার মাথার দাম ঠিক করতে।





চলবে.....................................

(গল্পটি কেমন লাগছে আপনাদের জানাতে ভুলবেন না। ভালো লাগলে জানান আর খারাপ লাগলেতো অবশ্যই জানাবেন। ধন্যবাদ।)