Featured Books
বিভাগ
শেয়ারড

মার্কস বাই সিন - 5

মার্কস বাই সিন-৫

পানশালার দরজা ঠেলে বৃষ্টিভেজা অন্ধকার রাস্তায় পা রাখে রায়েল। ভিজে বাতাসে মদের ঘ্রাণ যেন আরও ঘন হয়ে উঠেছে। পকেট থেকে সিগারেট বের করে ঠোঁটে চেপে আগুন ধরায় সে। তারপর নিজের কালো গাড়ির গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়ায় কিছুক্ষণ, ধোঁয়ার কুণ্ডলী ছেড়ে যেন নিজের ভেতরের অস্থিরতাকে মেপে নিচ্ছে সে। ফোনটা হাতে ঘোরাতে ঘোরাতে কিছু ভাবে চুপচাপ। শেষে নিঃশ্বাস ফেলে হাতে ধরে থাকা জ্বলন্ত সিগারেটটা মাটিতে ছুঁড়ে ফেলে দেয় সে তারপর গাড়ির ভেতরে উঠে বসে রায়েল।

আজ ও নিজেই ড্রাইভ করবে। গন্তব্য, শহর থেকে আট কিলোমিটার দূরের এক পাঁচতারা হোটেল। রায়েল একটু আগে ড্রিঙ্ক করলেও ওর সহ্যক্ষমতা বিপজ্জনকভাবে বেশি। গাড়ি স্টার্ট করে একহাতে স্টিয়ারিং ধরে স্লো মিউজিক ছেড়ে দেয়। গাড়ির ভেতরে আলো-আঁধারি খেলছে, আর ওর মাথায় ভেসে উঠছে একের পর এক পুরোনো দিনের ছবি। ওর অজান্তেই বাঁকা হাসি খেলা করে যায় রায়েলের ঠোঁটের কোণে।

তখন ওর বয়স কতই বা হবে—সাত, কি আট। তখন রায়েলের না ছিল কোনো নাম, না কোনো জন্মপরিচয়। কে সে, কোথা থেকে এসেছে—তার নিজেরও জানা ছিল না। দিনের পর দিন রাস্তায় ঘুরে ঘুরে ভিক্ষে করত, কখনও কোনো দোকানের সামনে, কখনও স্টেশন চত্বরে। যা পেত তাই খেত, না পেলে খালি পেটে রাত কাটত ফুটপাথের ধারে। বৃষ্টির দিনে ভিজে শরীরে কাঁপুনি ধরত, তবু ঘুমিয়ে পড়ত ভাঙা ছাতার নিচে, কিংবা কোনো দোকানের নিচে। তখন ক্লান্তি আর অভ্যেস মিলেমিশে যেত একসাথে।

সেই একই বাচ্চা, তিন দিন অনাহারে কাটানোর পর, এক বিকেলে ফ্রি খাবারের লোভ সামলাতে না পেরে হাজির হয়েছিল সেখানে—ছেঁড়া জামা গায়ে, ধুলো-মাখা শরীরে, মুখে কেবল ক্ষুধার ছাপ।

ভিড়ের মাঝে সবার পেছনে দাঁড়িয়েছিল সে। তিনদিন অনাহারে থাকার পর‌ও ছেলেটার চোখদুটো ছিল অদ্ভুতরকম শান্ত, যেন ক্ষুধার থেকেও গভীর কিছু বলতে চাইছে সে। সেইদিনই প্রথম রায়েলের সঙ্গে দেখা হয় কার্লের। তখন অবশ্য ‘রায়েল’ নামটা তার ছিল না—কারণ সে নিজেও জানত না ওর নাম আদৌতে কি ছিল!

ছেলেটার মায়া মেশানো চোখ দুটোয় কিছু একটা ছিল, যা অজান্তেই নাড়িয়ে দিয়েছিল কার্লের ভেতরটা। সে ভ্রু কুঁচকে কিছু মুহুর্ত একদৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল সেই ছেলেটার দিকে। সেই এক মুহূর্তেই যেন কোনো অদৃশ্য টানে সে ছেলেটাকে নিজের পৃথিবীতে টেনে আনে—এক পৃথিবী, যেখানে রায়েল প্রথমবারের মতো জেনেছিল ‘আপন’ বলতে কাকে বোঝায়।

যদিও কার্ল তখনও এই সাম্রাজ্যের মালিক নয়, কিন্তু চোখে আগুন ছিল ওর। রায়েল এসেছিল পেটের দায়ে, একটু ফ্রি খাবারের আশায়। কিন্তু কার্ল শুধু খাবার নয়, এক আশ্রয় দিয়েছিল—তারপর শুরু হয় ট্রেনিং। আগাগোড়া নতুন করে গড়ে তোলে ওকে, সম্পূর্ণ নিজের মনের মতো। কার্ল ভেবে নিজের নামের সাথে মিল রেখে ছেলেটার নাম রেখেছিল 'রায়েল'। 

প্রথম দিকে রায়েল ওকে 'দাদা' বলে ডাকত। কিন্তু যেদিন কার্লের হাতে উঠে আসে কালো জগতের একচ্ছত্র ক্ষমতা, সেদিন থেকে রায়েল ওকে ডাকে শুধু এক নামে—“ক্রে”। তাতে আদেশ, ভক্তি, ভালোবাসা সব মেশানো।

কার্ল জানে রায়েলের ইচ্ছে আছে একদিন নিজের একটা আলাদা সাম্রাজ্য গড়ে তোলার। কিন্তু সে এটাও জানে—রায়েল ওকে ঠকাবে না কখনও। কারণ রায়েলের থেকে বিশ্বস্ত আর কেউ হয় না, হতেও পারে না। কার্ল নিজেই চায় রায়েল বড়ো হোক। একদিন রায়েল কার্লের থেকে বেশি ক্ষমতাবান হবে। কারণ সে জানে, রায়েল পারবে.... ঠিক পারবে।

ভোর ছয়টা। শহর তখনও পুরোপুরি জাগেনি—রাস্তায় হালকা কুয়াশা আর ভেজা হাওয়া মিশে আছে। সেই নিস্তব্ধতার মধ্যেই রায়েলের কালো গাড়ি এসে থামে এক নামী লাক্সারি হোটেলের সামনে।

ইঞ্জিন বন্ধ করে গাড়ি থেকে নামতেই এক মুহূর্তে ঠান্ডা বাতাস চুলে স্পর্শ করে যায় ওর। হাতের ঘড়িতে একবার সময় দেখে নেয় সে—ঠিক ছয়টা শূন্য চার।

ঠোঁটের কোণে হালকা তির্যক হাসি ফুটে ওঠে। পকেট থেকে ফোন বের করে দ্রুত আঙুল চালায়—একটি নির্দিষ্ট নাম্বারে ম্যাসেজ টাইপ করতে করতে লিফটের দিকে এগিয়ে যায় রায়েল।




চলবে................................

(গল্পটির নতুন পর্ব প্রকাশিত হল আজ। জানাতে ভুলবেন না এই গল্পটি কেমন লাগছে আপনাদের। আপনারা কিন্তু কিচ্ছু জানাচ্ছেন না। আমি বুঝতে পারছি না আপনাদের ভালো লাগছে কি না! দয়া করে কিচ্ছু বলুন।)