মার্কস বাই সিন- ৩
শহরের অভিজাত এক পানশালা—আলো-আঁধারির জঞ্জালে জমে ওঠা রাতের দুনিয়া। সেলিব্রেটি, রাজনীতিবিদ, ড্রাগ ডিলার, এমনকি কিছু কাস্টম ইন্সপেক্টদেরও আনাগোনা থাকে এই পানশালায়। পানশালার ঘিঞ্জি ভিড়ে কেউ কারোর দিকে তাকায় না, কিংবা বলা ভালো, কেউ কারোর দিকে তাকাতে চায় না। তারা এখানে আসে ব্যস্ত জীবন থেকে একটু মুক্তির আশায়, অত্যন্ত কিছুক্ষণের জন্য।
এখন সময় ভোর সাড়ে চারটে, এখনো এখানে লোকের সংখ্যা একটুও কমেনি বরং আরও বেড়েছে। সবাই, যে যার মতো উত্তেজক তরল গলায় ঢেলে মিউজিকের সুরে কোমড় দোলাতে ব্যস্ত।
এই পানশালারই এক কোণে সিলভার কালার চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে আছে একটা ছেলে, হাতে হুইস্কির গ্লাস, চোখে অদ্ভুত আত্মবিশ্বাস। তাকে ঘিরে আছে তিনজন নারী। প্রত্যেকের পরণে ওয়ান পিস, ঠোঁটে লাল টকটকে লিপস্টিক, চোখে ঘন কাজল, মুখে মাত্রা অতিরিক্ত মেকআপ—তাদের চাহনিতে স্পষ্ট কামনার ছায়া।
ধীরে ধীরে ছেলেটির শরীরে বেয়ে নামছে সেই তিনটি নারীর অবাধ্য স্পর্শ, নেশা ছড়াচ্ছে ঠোঁট থেকে ঠোঁটে। কিন্তু ছেলেটা অবিচল—ও জানে, ওর দুনিয়ায় নারীর শরীর নেশা নয়, কন্ট্রোল। সে চোখ বন্ধ করে মুখে তির্যক হাসি নিয়ে বসে আছে।
ওদের মধ্যে একজন নারী ছেলেটার গেঞ্জির মধ্যে হাত ঢুকিয়ে আস্তে আস্তে স্লাইড করতে থাকে। ছেলেটির মুখের হাসি আরোও চওড়া হয়। সে চোখ বন্ধ করে এই নিষিদ্ধ ছোঁয়া উপভোগ করতে থাকে।এই দেখে মেয়েটির মুখে হালকা হাসি খেলা করে যায়। ছেলেটির কাছে থেকে অনুমতি পেয়ে এবার সেই মেয়েটির হাত আস্তে আস্তে নিচে নামতে থাকে।
ছেলেটির জিন্সের ওপর মেয়েটির হাত পৌঁছাতেই ছেলেটি খপ করে হাত ধরে নেয়। মেয়েটি হালকা চমকে ওঠে। তারপর সে ভয়ার্ত চোখে ছেলেটির দিকে তাকায়।
ছেলেটি চোখ খুলে, হালকা ঘাড় কাত করে নেশাতুর দৃষ্টিতে মেয়েটির চোখের দিকে কয়েক মুহূর্ত তাকায়। মেয়েটি বেশিক্ষণ ছেলেটির চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারে না, সে ছেলেটির হাতের শক্ত বাঁধন থেকে নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে মাথা নিচু করে নেয়।
এই দেখে শব্দ করে হেসে উঠে ছেলেটি। তারপর মেয়েটির হাত ছেড়ে দিয়ে অন্তত ঠান্ডা গলায় বলে ওঠে "আজ নয় বেবি গার্ল অন্য কোনোদিন।"
মেয়েটি হতাশ মুখে বলে, "কিন্তু আমাদের তো এই কারণেই ডাকা হয়েছে।"
ছেলেটা হাসে। তবে ওর ওই হাসি দেখে তিনজনের গলা শুকিয়ে যায়। কারোর হাসি যে অপর ব্যক্তির মনে এতটো ভয় জোগাতে পারে এটা সাধারণত ওদের জানা ছিল না। ওরা ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ায়।
ছেলেটা সামনে রাখা ফাঁকা গ্লাসটা তুলে বলে,
"তোমাদের কাজ আমার মনোরঞ্জন করা। আমি বললে শুরু, আমি বললে শেষ। এখন শুধু পেগ ফিল করো। বাকিটা পরের কোনো সময়ে হবে। আর তাছাড়া এখন আমার এইসবে কোনো মুড নেই।"
তার ঠান্ডা অথচ কর্তৃত্ব পূর্ণ কণ্ঠে কারো কিছু বলার সাহস হয় না।
পানশালার ভিতরে মিউজিক চলতেই থাকে আগের মতো। মেয়েগুলো একটা শুকনো ঢোক গিলে একে অপরের দিকে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছেলেটির নির্দেশ মতো ড্রিঙ্কস বানাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ছেলেটা ওদের ভয় পাওয়া মুখের দিকে তাকিয়ে হালকা হাসে। সাধারণ, কমজোড় মানুষের এই ভয় পাওয়া মুখগুলো ওকে এক রকম শান্তি এনে দেয়। চোখ বন্ধ করে আবার চেয়ারে গা এলিয়ে দেয় সে।
তবে তার এই শান্তি বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। টেবিলের ওপরে থাকা ফোনটা ভাইব্রেট করে ওঠে হঠাৎ। বিরক্ত মুখে সে ফোনটা হাতে তুলে নেয়। স্ক্রিনে নিদির্ষ্ট নাম দেখে ভ্রু কুঁচকে ওঠে তার। কলটা রিসিভ করে কানে দিতেই, অপরপ্রান্ত থেকে ভেসে আসা কিছু কথা শুনে মুহুর্তের মধ্যে ছেলেটার মুখভঙ্গি পাল্টে যায়। ওর চোখ বড়ো বড়ো হয়ে যায়। চট করে মাথা গরম হলেও মুহুর্তের মধ্যে সামলে নেয় নিজেকে। ফোনে কথা বলতে বলতে চেয়ার ছেড়ে উঠে যায় টিভি স্ক্রীনের দিকে। পানশালার একজন স্টাফকে নিউজ চালানোর জন্য ইশারা করে চাপা স্বরে কথা বলতে থাকে সে।
চলবে.......................
(গল্পটি কেমন লাগছে জানাতে ভুলবেন না। আপনাদের মূল্যবান কমেন্টের জন্য অপেক্ষা করবো। আশা করছি, আপনারা জানাবেন এই পর্বটি কেমন লাগলো আপনাদের।)