জঙ্গলের প্রহরী
পর্ব - ২৭
❤♣❤♣❤♣❤
শুক্লা পরে অনেকবার ভেবেছিল, সিদ্ধার্থ যদি অত অভিমানভরে কথাগুলো না বলত, ও নিজে কি করতো?
সিদ্ধার্থর সামনে এসে দাঁড়ায় ও, "আমি আছি, আমার মাথাব্যথা আছে তোমার জন্য।"
- "তুমি আমাকে বন্ধু বলেছ, আমার জন্য এতটা কনসার্ন দেখিয়েছ, এটা আমি কখনো ভুলব না শুক্লা। আমি সাবধানে থাকব। এবার তুমি বাড়ি যাও। আমি ঋষিকে ডাকছি, ও গাড়িতে পৌঁছে দিক। আমি ড্রাইভ করতে পারব না, সরি। তবে এবার চলে যাও, রাজীবদা কিছু...... "
সিদ্ধার্থর কথা শেষ হওয়ার আগে শুক্লা আবার রাজীবের নাম শুনেই ওর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। আচমকা ওর জামার কলার মুঠো করে ধরে ঝাঁকাতে শুরু করল, "তুমি কি করে এত নাম করলে, হ্যাঁ, কিসের জন্য লোকে তোমার বুদ্ধির প্রশংসা করে? এদিকে তো কিচ্ছু বোঝো না তুমি। আর কত বলব তোমাকে, রাজীবদা মণীষাকে ভালবাসে? আমি, আমি এসেছি তোমার কাছে। আমি তোমাকে দেখতে এসেছি।"
উন্মত্তের মতো শুক্লা ঝাঁপিয়ে পড়তে হকচকিয়ে গেছিল সিদ্ধার্থ। তারপরই উফফ বলে চেঁচিয়ে ওঠে হাতের ব্যথায়। সিদ্ধার্থর চীৎকারে হুঁশ ফেরে শুক্লার। ওকে ছেড়ে পিছিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।
ততক্ষণে ডানহাতে শুক্লার বাঁ হাত চেপে ধরেছে ও, "শুক্লা," ব্যথা ভুলে গাঢ়স্বরে বলে, "সত্যি বলছ, আমি বোকা, আমি ভুল বুঝেছিলাম, ঠিক বলছ তো?"
শুক্লা হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে, সিদ্ধার্থ উলটে ওর হাত ধরে নিজের দিকে টেনে আনে আরও, "কি হল? এক্ষুণি যা বললে আবার বলো।"
শুক্লা একবার ওর চোখের দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে বলে, "ব্যথা লেগেছে? আমি.... ''
- "ব্যথা ছিল, তিনদিন ধরে। এখন মনে হচ্ছে একজন পারে আমার বুকের ব্যথা কমিয়ে দিতে।" সিদ্ধার্থর মুখে দুষ্টু হাসি।
শুক্লা শুধু বলে, "ধ্যাত। হাত ছাড়ো।"
শুক্লা একবার আপত্তি করতেই লজ্জা পেয়ে সিদ্ধার্থ হাত ছেড়ে দেয়। লজ্জায় কেউ কারও দিকে তাকাতে পারছে না। সিদ্ধার্থ একবার শুকনো জিভে নিজের ঠোঁট চেটে শুক্লা বলে ডাকে, শুক্লাও সিদ্ধার্থ বলে ডেকে ওঠে। তারপর আরও লজ্জা পেয়ে বলে, সিদ্ধার্থদা।
সিদ্ধার্থ একপা সামনে এগিয়ে এসে বলে, "আমি এই ডাকটা শুনতে চাইনি।" শুক্লা লজ্জায় মুখ ঘুরিয়ে নেয়। সিদ্ধার্থ ঘুরে গিয়ে ওর মুখোমুখি হয়ে যায়, "শুক্লা, অনেক ভুলভাল বুঝেছি, ভুল ভেবেছি। অনেক কষ্ট পেয়েছি আমি এ কদিন। তুমি আজ না এলে আমি কি করতাম জানি না। এখনও সব কথা বুঝতে পারছি না, বিশ্বাস হচ্ছে না। আমাকে শুধু এইটুকু বলো, তুমি আগামীকাল পর্যন্ত আমার জন্য অপেক্ষা করবে?"
- "শুধু আগামীকাল? আমি আজীবন অপেক্ষা করব। তুমি শুধু বলো, আমাকে ভুল বুঝবে না?" শুক্লা আবেগভরে ওর হাত ধরতে যায়। সিদ্ধার্থ ডান হাতে আবার ওর হাত ধরে বাঁ হাত সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। শুক্লা ওর ফোলা কনুইয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে খানিকক্ষণ, মুখ তুলে যখন সিদ্ধার্থর মুখের দিকে তাকায়, চোখভরা জল। সিদ্ধার্থ ফ্যাকাশে হাসার চেষ্টা করে।
- "খুব লেগেছে? তুমি জানো, দাদার কাছে যখন খবরটা এলো, আমি সবার সামনে কেঁদে ফেলেছিলাম? আমার বন্ধুরা সবাই আমার অবস্থা বুঝতে পারছে। শুধু তুমি এখনও আমাকে একবারও কিছু বলছ না।"
সিদ্ধার্থ আরও শক্ত মুঠোয় ওর হাত চেপে ধরে, "শুক্লা, আমি সরি। আমি তো বললাম কি ভেবেছিলাম। তার জন্য তোমার সঙ্গে অনেক মিসবিহেভ করেছি। সব যদি ক্ষমা করতে পার, কাল আমি তোমাকে সব কথা বলব।"
ইতিমধ্যে সিদ্ধার্থর ফোন বেজে ওঠে। শুক্লার হাত ছেড়ে ও ফোনটা তুলে নেয় টেবিলের উপর থেকে। শুক্লার অসম্ভব ক্লান্ত লাগছে। এত ঘটনার ঢেউ আর তারপর নিজের সমস্ত আত্মাভিমানকে নিজেই পরাজিত করে সিদ্ধার্থর কাছে আত্মসমর্পণ, ওকে ক্লান্তির চরম সীমায় পৌঁছে দিয়েছে। যেন কোনোমতে হেঁটে এসে খাটের উপর বসে পড়ে। যা করে ফেলেছে, যা হয়ে গেছে, তারপর খুব লজ্জা করছে, ভয় করছে।
সিদ্ধার্থ ফোনে কি শুনে শুধু বলে, "আমি একটু ব্যস্ত আছি। দশ মিনিট পর ফোন করছি।"
ফোন রেখে শুক্লার সামনে এসে দাঁড়ায়, "আজ সন্ধে হয়ে যাচ্ছে। এখন বাড়ি ফিরে যাও। কাল তোমার সঙ্গে কথা বলব। প্লিজ।"
শুক্লা ওর হাত জড়িয়ে ধরে দুহাতে, "তোমাকে এই অবস্থায় রেখে আমি কোত্থাও যাব না।"
- "শুক্লা, প্লিজ, ভয় পেয়ে না। তুমি, তোমার মতো মেয়ে ভয় পেলে আমার কিছু করার থাকবে না। আমার কিচ্ছু হবে না। আমি ঠিক থাকব। কাল আমি নিজে তোমাদের বাড়িতে যাব। এখন তোমাকে খোঁজাখুঁজি শুরু হবে। প্লিজ কাউকে বোলো না, আজ তুমি এখানে এসেছিলে। তোমার দাদাকেও না।"
শুক্লার চোখে আতঙ্কের ছাপ পড়ে, "দাদা জানলে কি হবে? তুমি কি মনে করো দাদা কোনো অন্যায় করতে পারে? আমাকে সত্যিটা বলো, কি ভাবছ তুমি।"
[❤ কি ভাবছে সিদ্ধার্থ, শাক্য সম্পর্কে? শুক্লা আর সিদ্ধার্থর ভালোবাসার পথের বাধা কি শাক্য?
❤ জানা যাবে পরের পর্বে। অনেক ধন্যবাদ এই পর্বটি পড়ার জন্য। আপনার মতামতের অপেক্ষা করছি। দয়া করে মন্তব্য করে জানাবেন। ]
চলবে