জঙ্গলের প্রহরী
পর্ব - ২৮
❤♣❤♣❤♣❤
- "ভয় পেও না শুক্লা। তোমার দাদার কিচ্ছু হবে না। আমার শুধু তোমার সঙ্গে এই সম্পর্কের দায়িত্ব নিতে একটু সময় চাই। তুমি আমাকে সেইটুকু সময় দাও। আজ বাড়ি যাও।"
- "আমাকে প্রমিস করো, তুমি সাবধানে থাকবে, দাদার সঙ্গে কোনো ঝামেলা করবে না।" শুক্লা হাত পাতে।
সিদ্ধার্থ ওর হাত মুঠো করে ধরে, "প্রমিস। তুমিও প্রমিস করো, তুমি নর্মাল থাকবে। কেউ যেন কিছু না বোঝে।" শুক্লা জলভরা চোখে ওর দিকে চেয়ে থাকে। সেই চোখের ভাষায় যে প্রতিজ্ঞা লেখা, এবার তা পড়তে ভুল হয় না সিদ্ধার্থর।
সিদ্ধার্থ ঋষিকে ফোন করে, ওকে দেখতে পাচ্ছে জানালা দিয়ে, তাই ফোন রিসিভ করতেই, ফোন সহ হাত নেড়ে ডাকে, "ঋষি একটু আয়। ওদের বাড়ি পৌঁছে দে।"
ঋষি যখন আসে, তার মধ্যে শুক্লা যথাসম্ভব চোখ মুছেছে রুমালে। তবুও ঋষি আর শ্রীতমা বুঝতে পারে, অনেক নাটক হয়ে গেছে।
দুই বান্ধবী সিদ্ধার্থকে সাবধানে থাকতে বলে বিদায় নিয়ে ঋষির সঙ্গে বেরিয়ে আসে। সিদ্ধার্থও দরজায় এসে দাঁড়িয়েছিল, ঋষিকে বলে, "পল্টন কোথায়? তুই থাকবি না, ওকে আমার কাছে ডেকে দে। টিপকাকে বরং এবার বাড়ি যেতে বল।" ঋষি তাই করে।
গাড়িতে উঠে বসে শুক্লা ঋষিকে বলে, "ঋষিদা, মিঃ রায়কে সাবধানে রেখো।" চোখ ফেটে জল আসছে, জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে।
লুকিং গ্লাসে শুক্লাকে দেখে নিয়ে ঋষি বলে, "আমি থাকতে দাদার কোনো ক্ষতি হবে না। ওর যেটুকু চোট লেগেছে দেখলে, এগুলো ওর কাছে কিছু না। কিন্তু ওর সত্যিকারের ক্ষতি করতে হলে আগে আমাকে টপকাতে হবে।"
শুক্লা অসীম বিরক্তি নিয়ে ঋষির দিকে তাকায়, "তোমার দাদার খুব হিরো সাজার শখ। আর তুমি সেটাতে ধোঁয়া দাও, তাই না?"
ঋষির মজা লাগে, "হিরো সাজার শখ কেন হবে? আমার দাদা রিয়েল লাইফ হিরো। তুমি তো ওকে দেখোনি, তাই জানো না।"
- "জানতে চাইও না।"
- "শুক্লা টেনশন কোরো না। সব ঠিক থাকবে। আমি তোমাকে কথা দিলাম।"
- "সত্যি কথা দিলে তো?"
- "হ্যাঁ। তোমরা বাড়ি যাও। বন্ধুরা চিল করো। আমি দাদাকে ঠিক রাখব।"
- "আমাদের বাড়ির সামনে নামিও না। তুমি তো আরও এগিয়ে তারপর গাড়ি ঘোরাতে পারবে। সেখান থেকে নামার সময় বাড়ির কাছাকাছি নামিয়ে দিও।" শুক্লার কথা শুনে ঋষি মনে মনে ওর বুদ্ধির তারিফ করে।
বাড়ির কাছাকাছি ওদের নামিয়ে ঋষি একটু অপেক্ষা করে। দুজন বাংলোয় ঢুকে গেলে ও ফিরে আসে। বাংলোর সামনে তখন শাক্যর গাড়ি।
❤♣❤♣❤♣❤
ঘরে ঢুকে ঋষি দেখে সিদ্ধার্থ হেলান দিয়ে আরাম করে খাটে বসেছে, শাক্য একটা টুলে। অন্য টুলটা নিয়ে ও বসে যায়।
ঋষিকে দেখেই সিদ্ধার্থর আগে শাক্য মুখর হয়ে ওঠে, "এসো এসো। ওহ, আজ একটা দিন গেল বটে। সিদ্ধার্থকে তাই বলছিলাম, তোমাদের জন্য সবকিছু রক্ষা পেল।"
- "সবদিক এখনও রক্ষা হয়নি। আর সেটাতে তুমি এবার একটা হেল্প করো। পল্টন বলে ছেলেটিকে তোমার বাংলোয় নিয়ে রাখো আজ রাতে।" সিদ্ধার্থ বলে ওঠে।
- "পল্টনকে নিয়ে রাখা কোনো ব্যাপার না। কিন্তু তুমি ওকে বাড়ি থেকে নিয়ে এসেছ। এখন তোমার কাছেও রাখছ না। তার মানে কি? তুমি কি রাতে কিছু আশঙ্কা করছ?" শাক্য টানটান হয়ে বসেছে।
- "শাক্য তোমার সঙ্গে যখন বন্ধুত্ব হলই, তোমাকেই বলছি, ঋষি তোকেও বলার সময় পাইনি, একসঙ্গে বলছি, আমার জেঠুমণি রওনা হয়ে গেছেন, এখানে আসছেন। একটু আগে আমার বোন ফোন করেছিল। তখন কথা বলতে পারিনি। এখন যখন ঘুরিয়ে ফোন করলাম, ওরা ট্রেনে। কাল এসে যাবেন। ততক্ষণ পল্টনের দায়িত্ব নাও শাক্য। আর শঙ্কা আশঙ্কা আমাদের জীবনে থাকেই, তোমার আমার সবার আছে।"
- "তাহলে একটা কাজ করি, পল্টনকে বাড়িতে রেখে আমি এখানে চলে আসি।" শাক্য উৎসাহিত হয়ে ওঠে, "তোমার চোট লেগেছে, এসময় যদি কিছু ঘটে?"
- "পল্টনকে রেখে চলে এলেই হবে না, আরও কথা আছে।" সিদ্ধার্থ ঝুঁকে বসে।
তিনমাথা একজায়গায় করে পরামর্শ চলে। মাঝখানে শাক্য বাড়িতে ফোন করে জানিয়েছিল, আরও খানিক পরে আসছে, সিদ্ধার্থর সঙ্গে আছে। আর সিদ্ধার্থকে একধার থেকে ফোন করতে হয় সঞ্জয়, তাপস, ওসি দিবাকর নাথ, ডি আই জি, এ ডি জি, তালুকদার স্যারকে। জেঠুমণির সঙ্গেও দুবার কথা হয়।
ফোনের ফাঁকে ফাঁকে কার সঙ্গে কি কথা হল, সেগুলো অনুযায়ী ওরা তিনজনও দায়িত্ব ভাগ করে নেয়। দুবার কফি খাওয়া হয়। তবে শাক্য ওদের দুজনের অভ্যেসের ব্যাপারে খুব বেশি জানে না বলে যেমন খেয়াল করে না, সেটা উত্তেজিত থাকায় এদের দুজনেরও চোখে পড়ে না, দুজনেই আবার ধূমপান বন্ধ করেছে।
সাতটার সময় শাক্য আর ঋষি পল্টনকে নিয়ে রওনা দেয়। দুজনেই গাড়ি নিয়ে যাচ্ছে। ঋষি খানিকটা এগিয়ে যাবে, শুক্লাদের ছাড়তে গিয়ে যেখানে গাড়ি ঘুরিয়েছিল, সেখানে অপেক্ষা করবে। শাক্য পল্টনকে রেখে পায়ে হেঁটে গাড়িতে উঠবে।
এদিকে ঋষি আর শাক্য এসে না পৌঁছনো পর্যন্ত দরজা খুলবে না সিদ্ধার্থ। ওর বন্দুকের হাতটি হয়ত ঈর্ষনীয়, কিন্তু আজ ওর একটি হাত প্রায় অকেজো। আর যেকোনো ধরণের আক্রমণের আশঙ্কা করছে ওরা।
[ ❤ পল্টনকে কি নিরাপদে রাখতে পারবে শাক্য আর ঋষি? এই সময়ের মধ্যে সিদ্ধার্থর কোনো বিপদ হবে না তো?
❤ জানা যাবে পরের পর্বে। অনেক ধন্যবাদ এই পর্বটি পড়ার জন্য। আপনার মতামতের অপেক্ষা করছি। দয়া করে মন্তব্য করে জানাবেন। ]
চলবে