Featured Books
বিভাগ
শেয়ারড

জঙ্গলের প্রহরী - 32

জঙ্গলের প্রহরী

পর্ব - ৩২

♥♠♥♠♥♠♥

অপরাধী দুজন উকিল ছাড়া কোনো কথা বলতে অস্বীকার করে বটে, তবে কাউকে ফোন করতে এ্যালাও করা হয়না। কারণ অন ডিউটি পুলিশকে বেজায়গায় পেয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হচ্ছে। উকিল, জামিন এসব পরে হবে। 

তবুও সব মিটতে আরও অন্ততঃ দু ঘন্টা। তার মধ্যে কিছু গল্পও সবাইকে বলে সিদ্ধার্থ আর ঋষি। শাক্য আগেই বাড়িতে জানিয়ে দিয়েছে, কেসের সমাধান হয়ে গেছে। ও রাতে ফিরছে না, সকালে সবাই সব গল্প শুনবে। পল্টনের নিরাপত্তার জন্য ওর বাংলো ঘিরে সিদ্ধার্থর ঠিক করা পুলিশ পাহারা আগে থেকেই রয়েছে। 

পরদিন সকালে আলো ফুটতেই শুক্লার দলবল হাজির। তখন এরা সবাই যাচ্ছে নিচে পুলিশ কমিশনারের অফিসে। সিদ্ধার্থর বস তালুকদার স্যার আসছেন। ওর বাড়ি থেকে তো সবাই আসছেনই। 

শুক্লা চুপচাপ, ওর বন্ধুরা ঘিরে ধরে সিদ্ধার্থ আর ঋষিকে। দুজনেই কথা দেয়, ফিরে এসে নিজেরা সমস্ত গল্পটা বলবে। মন না চাইলেও একবার গাঢ় চোখে শুক্লার দিকে তাকিয়ে গাড়িতে ওঠে সিদ্ধার্থ। শুক্লার সেই মুহূর্তের দৃষ্টি ওর গলা শুকিয়ে দিয়েছে। 

♥♠♥♠♥♠♥

কমিশনার মোহিত বড়ুয়ার অফিসে এডিজি বিপ্লব সেনগুপ্ত আর ওসি দিবাকর নাথ আগেই পৌঁছে গেছিলেন। এসেছেন ফাদার বারটনও। উপরের রায়চৌধুরীদের এলাকা থেকে স্করপিও চড়ে এল সিদ্ধার্থ, ঋষি, পল্টন আর প্রসাদ। চালিয়ে আনল অবশ্যই সঞ্জয়। সে আজ আনন্দে আত্মহারা, "দেখলেন তো স্যার। এখানের লোকেরাও জেনে গেল আপনি একদম শার্লক হোমস।"

ঋষি টেরিয়ে দেখল সিদ্ধার্থকে। বাকি রাত কতটুকু ঘুমিয়েছে কে জানে। উসকোখুসকো চুল, শুকনো মুখ। বাঁ হাত গাড়ির জানালায় রাখতে পারছে না বলে এই প্রথম পিছনের সিটে ডানদিক চেপে বসে আছে। 

সঞ্জয়ের কথায় অবশ্য হাসি ফুটল মুখে, "এটা বোলো না সঞ্জয়। আমি সিদ্ধার্থ, সিদ্ধার্থ হয়ে থেকেই আমি আমার কাজটা করতে চাই। আর তুমি তো জানো, তুমি আমাকে কত বড় হেল্প করেছ এই কেসে।"

- "আপনাকে তো হেল্প করিনি স্যার, আপনারা পল্টনকে বাঁচানোর চেষ্টা করছিলেন, আমাদের দেশের লোককে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। সেই কাজে আমি যেটুকু পারতাম করেছি। অনাথ হলেও, লেখাপড়া কম করলেও, আমিও তো মানুষ।"

- "ঠিক তাই। অনাথরাও মানুষ সঞ্জয়।" সিদ্ধার্থ বাইরে তাকিয়ে আছে। ও জানে না, আজকের পর ওর ব্যাপারে যখন মূল্যায়ণ করা হবে, উলটোদিকের লোকগুলো, অন্ততঃ শুক্লা এটা ভেবে দেখবে কিনা। 

অন্য গাড়িটায় শাক্যর সঙ্গে বাবুয়া, শিচাং আর জনি। গাড়ি চালাচ্ছে বাবুয়া। রাতজাগা শাক্যকে স্টিয়ারিং এ বসতে দেয়নি ওর চ্যালারা। এ গাড়িতেও গত কয়েকদিনের সব ঘটনা নিয়েই আলোচনা হচ্ছে।

এদিকে গতকালই মণীষাকে মানিয়ে ফেলেছে রাজীব। মণীষার মতো এ্যাকাডেমিক, বুদ্ধিমতী মেয়ের সঙ্গে ভাবনার জগতে অনেক রকম মিল রয়েছে বলেই সম্পর্কটা গড়ে উঠেছিল। আর তারপরই রাজীবের মনে হয়েছিল, ওকে পুরো দলটার নেতার ইমেজ বজায় রাখতে হবে। এ নাহলে মণীষার বন্ধুরা ওকে ইয়ারদোস্তের পর্যায়ে ফেলে ওর সমস্ত এ্যাচিভমেন্ট ধুলোয় মিশিয়ে দেবে। 

সেই গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল রাজীবের মধ্যে হারিয়ে গেছিল সুগায়ক, সুরসিক, প্রাণবন্ত রাজীব। গতকাল অবশ্য নতুন গজানো বিরক্তিকর খোলসের মধ্যে থেকে পুরনো রাজীব বেরিয়ে এসেছে। তারপর রাতে এলাকার সমস্যা মেটার খবরে সব উদ্বেগের অবসান। 

সিদ্ধার্থর সঙ্গে যেটুকু কথা হয়েছে, তার উপর আবার শাক্যর সঙ্গে সিদ্ধার্থর বন্ধুত্বের খবরে শুক্লারও মন শান্ত। সম্পূর্ণ গল্প যদিও জানে না, তবে সিদ্ধার্থ এখন নিশ্চয়ই নিরাপদ। নতুন করে আর কোনো বিপদের আশঙ্কা নেই। যা চোট লেগেছে, কয়েকদিন বিশ্রাম নিলে সুস্থ হয়ে যাবে। এভাবেই মনকে বুঝিয়েছে শুক্লা। তাই পাহাড়ী জনপদের সকলের মধ্যে সমস্ত গল্প জানার জন্য উত্তেজনা থাকলেও, উদ্বেগ নেই। 

গাড়িতে শুধু নয়, অফিসে পৌঁছেও সিদ্ধার্থর মনে পড়ে কেবল শুক্লার মুখটা। সকালে সবার পিছনে চুপ করে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে ছিল ওর দিকে। ওর বন্ধুরা কলকল করে কথা বলছিল। তার মধ্যে যতবার চোখাচোখি হয়েছে, ওর মনে হয়েছে, শুক্লার নরম চোখের দৃষ্টি ওর হাতের ব্যথা জায়গাটায়। সেই ভালবাসা মাখা দৃষ্টিতে ওর ব্যথা যেন কমেই গেছে। 

বন্ধুদের মাঝখানে কেউ কথা বলেনি কারও সঙ্গে। গাড়িতে ওঠার আগে শেষবার যখন ও তাকিয়েছিল, শুক্লার চোখ মুখ যেন বলছিল, সাবধানে থেকো। সামান্য কয়েকজন লোক আছে সিদ্ধার্থর জীবনে, যারা ওকে এই দুটি কথা বলে। শুক্লার মুখ থেকেও আজ এই কথাগুলো কানে শুনতে ইচ্ছে করছে ওর। আর তাতেই ক্লান্ত লাগছে সিদ্ধার্থর। ও যে জানে না এর পরে কি? 

❤♣❤♣❤♣❤

ঋষি ল্যাপটপটা খুলে সিদ্ধার্থর পাশে বসে, "তোমার টাইপ করতে হবে না। রিপোর্ট আমি লিখছি। চেক কোরো পরে।"

সিদ্ধার্থ বলে দেয়, চেক করে, কমিশনারের অফিস থেকে শুরু করে লোকাল পুলিশ স্টেশন, প্রত্যেক ধাপের রিপোর্ট তৈরি হয়। চার্জশিট ফ্রেম করার জন্য সমস্ত প্রমাণ আলোচনা হচ্ছে। 

ফরেন্সিকের রিপোর্ট আসে মেইলে, বোতল এবং তার তলানি পানীয় পরিষ্কার, কোনো বিষাক্ত কেমিক্যালের ট্রেস পাওয়া যায়নি। কিন্তু গ্লাসভাঙা কাঁচের টুকরোতে প্রচুর পরিমাণে স্ট্রিকনিন। 

ঋষিই জোরে জোরে পড়ে শোনাচ্ছিল, ফিক করে হাসে, "বড় যত্ন করে গ্লাসগুলো মুছছিল তাপস। ঐ কাপড়টাতেই মাখিয়ে রেখেছিল।"

- "কিছু খাওয়াবে, শোঁকাবে, কোনো না কোনোভাবে আমাদের আউট করে পল্টনকে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে তো আমরাই প্রোভোক করেছি। তার জন্য তৈরি ছিলাম। তবে পাইথনের ঘটনাটা তোদের জন্য এ্যাডেড ইভেন্ট ছিল।" কফির কাপে চুমুক দেয় সিদ্ধার্থ। 

খবর এল কলকাতার ট্রেন আসছে। ঋষি আড়চোখে দেখে সিদ্ধার্থর মুখটা ছোট হয়ে গেছে। 

[ ❤ কলকাতার সবাই এলে কি ঘটবে? রায়চৌধুরীদের জমিদারি আর জঙ্গলের মিথের পিছনের কাহিনী কি এবারই প্রকাশ হবে? 

❤ জানা যাবে পরের পর্বে। অনেক ধন্যবাদ এই পর্বটি পড়ার জন্য। আপনার মতামতের অপেক্ষা করছি। দয়া করে মন্তব্য করে জানাবেন। ]

চলবে